SANTHALDISHOM(সানতাল দিশোম): September 2018

Friday 28 September 2018

ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (Jharkhand Mukti Morcha - JMM) এর গঠন।

Image may contain: one or more people and beard
ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (Jharkhand Mukti Morcha - JMM) এর গঠন।
প্রদীপ কুমার হাঁসদা।
ঝাড়খণ্ড আন্দোলনের মহান নেতা দিশম গুরু শিবু সরেনের জন্ম ১৯৪৪ সালের ১১ ই জানুয়ারি তৎকালীন বিহার রাজ্যের হাজারীবাগ জেলার (বর্তমানে রামগড় জেলা) নেমরা গ্রামে হয়। পিতা শোবরান সরেন গ্রামের শিক্ষক ছিলেন। শোবরান সমাজ সচেতন শিক্ষক ছিলেন। আদিবাসীদের বিভিন্ন বিষয়ে সচেতন করতেন ও সুদখোর মহাজনদের থেকে দূরে থাকতে বলতেন। ওইসময় সুদখোর মহাজনরা গরীব আদিবাসীদের ঋণ দিয়ে মোটা টাকা সুদ আদায় করত। সুদ দিতে গিয়ে আদিবাসীরা তাদের সারা বছরের চাষ করা ধান মহাজনদের হাতে তুলে দিতে বাধ্য হত। শোবরান আদিবাসী গ্রামবাসীদের বোঝাতেন যে কোন অবস্থাতেই সুদখোর মহাজনদের কাছে থেকে ঋণ নেওয়া যাবে না আর সুদখোর মহাজনদের গ্রামে প্রবেশ করতে দেওয়া যাবে না। শোবরান সরেনের জন্য সুদখোর মহাজনেরা আদিবাসী গ্রামবাসীদের শোষণ করতে পারছিলনা, তাই তারা শোবরান সরেনকে খুন করার পরিকল্পনা করে। ২৭ নভেম্বর ১৯৫৭ সালে মাত্র ১২ বছর বয়সে শিবু সরেন তার পিতা কে সুদ খোর মহাজনদের গুণ্ডাদের হাতে খুন হতে দেখেন। শিবু সরেন তখন ক্লাস নাইন এর ছাত্র।
শিবু সরেনরা পাঁচ ভাই ছিলেন। শিবু সরেন ছিলেন দ্বিতীয় সন্তান। পিতার হত্যা বালক শিবুকে উগ্র করে তোলে কিন্তু শিবুর মা তাকে প্রতিশোধের পথে না হেঁটে মানুষের মত মানুষ তৈরি হতে পড়াশোনা করতে বলে। বালক শিবু মাধ্যমিক পাশ করেন কিন্তু সুদখোর মহাজনদের প্রতি তাঁর ক্ষোভ থেকেই যায়। তরুন শিবু উপলব্ধি করেন যে আদিবাসী সমাজে অত্যাধিক নেশা ও শিক্ষার অভাবই সুদখোর মহাজনদের আদিবাসী গ্রামগুলিতে টেনে আনছে। তাই আদিবাসী যুবকদের মধ্যে নেশাবিরোধী সচেতনতা গড়ে তোলার জন্য ১৯৬২ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে শিবু সরেন গঠন করেন “সাঁওতাল নবযুবক সংঘ” এবং আদিবাসী যুবকদের নেশাবিরোধী আন্দোলনে সামিল করেন। সুদখোর মহাজনেরা ঋণের ফাঁদে ফেলে এলাকার বেশীরভাগ আদিবাসী ও গরীব মানুষদের জমি দখল করে নিয়েছিল। তরুন শিবু বুঝতে পারছিলেন যে শুধু নেশাবিরোধী আন্দোলন চালালে হবে না, আদিবাসী ও গরীব মানুষদের জমিও উদ্ধার করে দিতে হবে, আর তাঁর জন্য চাই শক্তিশালী সংগঠন। শক্ত সাংগঠনিক ভিত যুক্ত সংগঠন গড়ে তুলতে ১৯৬৯ সালে মাত্র ২৫ বছর বয়সে শিবু সরেন গঠন করেন “সনত সাঁওতাল সমাজ” এবং ধানবাদ জেলার তুন্ডি ব্লকে গড়ে তোলেন আশ্রম। তুন্ডির আশ্রম স্থাপন করে শিবু সরেন “ধান কাটো” ও “জমি উদ্ধার” আন্দোলনের ডাক দেন। যে সমস্ত আদিবাসীদের জমি সুদখোর মহাজনেরা দখল করে নিয়েছিল, শিবু সরেনের নেতৃত্বে আদিবাসীরা সেই সব জমির ধান জোর করে কেটে নিতেন ও জমির দখল নিতেন। সুদখোর মহাজনদের বিরুদ্ধে আদিবাসী ও সাধারন গরীব মানুষদের নিয়ে যুদ্ধ ঘোষণা করলেন শিবু সরেন। শিবু সরেনের নেতৃত্বে এই “ধান কাটো” ও “জমি উদ্ধার” আন্দোলন সুদখোর মহাজনদের বিরুদ্ধে এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রুপান্তরিত হয়। তুন্ডির আশ্রম গড়ে তোলার পর থেকে উল্কার গতিতে শিবু সরেনের উত্থান ঘটে। আসে পাশের জেলাগুলিতে শিবু সরেনের নাম ও আন্দোলনের খবর ছড়িয়ে পড়ে। সুদখোর মহাজনদের জালে জড়িয়ে সর্বস্ব হারানো ও নিজ জমি থেকে বেদখল হওয়া আদিবাসী ও সাধারন আদিবাসীরা দলে দলে শিবু সরেনের দলে নাম লেখান। শিবু সরেন তাদের কাছে সাক্ষাৎ ভগবান রুপে দেখা দেন। শিক্ষক শোবরান সরেনের ছেলে শিবু সরেন আদিবাসী ও সাধারন মানুষদের কাছে পরিচিত হন “গুরুজি” নামে। সুদখোর মহাজনেরাও চুপ করে বসেছিল না, তারাও পাল্টা প্রত্যাঘাত হানতে শুরু করল। সুদখোর মহাজনেরা সঙ্গে নিল দুর্নীতিগ্রস্ত পুলিস প্রশাসনকে। শিবু সরেনের সঙ্গীদের ওপর সুদখোর মহাজনদের ভাড়া করা গুণ্ডারা প্রাণঘাতী হামলা শুরু করল, শিবু সরেনের আশ্রমগুলির ওপরেও হামলা হয়। প্রচুর মামলা শিবু সরেন ও তাঁর সাথীদের বিরুদ্ধে দায়ের হয়, পুলিস শিবু সরেন ও তাঁর সাথীদের খুঁজতে থাকে, অনেকেই পুলিসের হাতে ধরা পড়েন বা গুলিতে মারা যান, কেও কেও সুদখোর মহাজনদের ভাড়া করা গুণ্ডাদেরও হাতে মারা যান, কিন্তু সবার ধরা ছোঁওয়ার বাইরে থাকেন শিবু সরেন। ততদিনে শিবু সরেন পরিচিত হতে শুরু করেছেন “দিশম গুরু” নামে মানে দেশের নেতা হিসেবে। আন্দোলন থেমে থাকেনি, দিনে দিনে আরও জোরদার হয়েছে আর দিকে দিকে দিশম গুরু শিবু সরেনের নাম আগুনের মত ছড়িয়ে পড়তে লাগল। পুলিস যখন হন্য হয়ে দিশম গুরু শিবু সরেনকে খুঁজতে শুরু করেছে তখন শিবু সরেন আশ্রয় নিয়েছেন পরেশনাথ পাহাড়ের জঙ্গলে। পরেশনাথ পাহাড়ে রীতিমত দিশম গুরু শিবু সরেন সমান্তরাল সরকার গঠন করে ফেলেছেন। জঙ্গল থেকেই দিশম গুরু শিবু সরেন তাঁর আন্দোলন পরিচালনা করছেন। দিশম গুরু শিবু সরেনের এখন অনেক অনুগামী। পাহাড় জঙ্গল ছাড়িয়ে শহর ও শিল্পাঞ্চলেও দিশম গুরু শিবু সরেনের নাম ও অনুগামী তৈরি হয়ে গেছে। পুলিস প্রশাসনও জোরদার দমন পীড়ন শুরু করেছে। দিশম গুরু শিবু সরেন ও তাঁর অনুগামিদের ধরতে স্পেশাল পুলিস টিমও তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু দিশম গুরু শিবু সরেনকে কিছুতেই ধরতে পারছেনা পুলিস। শোনা যায় নাকি একসময় দিশম গুরু শিবু সরেনকে এনকাউন্টার করে মেরে ফেরাও ছক কষা হয়েছিল। কিন্তু সব চেষ্টা বিফলে যেতে লাগল। পুলিস গাদা গাদা মামলা দিশম গুরু শিবু সরেন ও তাঁর অনুগামীদের নামে দায়ের করতে লাগল।
১৯৭১ সালের দিকে ৫০ বছর বয়সী বিনোদ বিহারী মাহাতোর সাথে এক মামলার সুত্র ধরে পরিচয় ঘটে ২৭ বছর বয়সী তরুন যুবক শিবু সরেন। মামলা তদারকি করতে গিয়ে দিশম গুরু শিবু সরেন খোঁজ পান বিনোদ বিহারী মাহাতোর। বিনোদ বাবু উকিল ছিলেন এবং আদিবাসী ও গরীব মানুষদের মামলা বিনা পয়সায় লড়তেন। ১৯৭১ সালের মাঝামাঝি নাগাদ দিশম গুরু শিবু সরেন বিনোদ বিহারী মাহাতোর সাথে দেখা করেন। জানা যায় যে বিনোদ বিহারী বাবুও সংগ্রামী মানুষ, গঠন করেছেন শিবাজী সমাজ ও সমাজের বিভিন্ন কুরীতি, সুদখোরী, মহাজনী ও সামন্ত প্রথার শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে সংগ্রাম গড়ে তুলছেন। দিশম গুরু শিবু সরেন বুঝতে পারছিলেন যে আইনি বিষয় ও মামলা মোকদ্ধমা বিষয়ে বিনোদ বাবু তাকে সাহায্য করতে পারবেন আর তাই বিনোদ বাবুকে একসাথে আন্দোলন করার প্রস্তাব দিলেন। অভিজ্ঞ বিনোদ বিহারী মাহাতো সঙ্গে সঙ্গে দিশম গুরুর প্রস্তাবে সম্মতি জানালেন এবং সেই সঙ্গে শ্রমিক ইউনিয়ন নেতা অরুন কুমার রায় (এ কে রায়) এর ব্যপারে দিশম গুরু শিবু সরেনকে জানালেন এবং তাকেও সঙ্গে নেওয়ার প্রস্তাব দিলেন।
বিনোদ বিহারী মাহাতোর জন্ম ২৩ ই সেপ্টেম্বর ১৯২১ সালে বালিয়াপুর জেলার বড়াদাহা গ্রামে এক গরিব পরিবারে হয়। পিতার নাম মাহিন্দি মাহাত ও মাতার নাম মন্দাকিনী দেবী। বিনোদ বাবু প্রথমে করণিকের কাজ করতেন কিন্তু একবার উকিল দ্বারা অপমানিত হওয়ার পর উকিল হবার প্রতিজ্ঞা নেন ও পরবর্তীকালে ১৯৫৬ সালে আইন পাস করে উকিল হন। উকিল হিসেবে বিনোদ বাবু গরিব মানুষদের বিনা পয়সায় মামলা লড়তেন। ১৯৬৪ সাল নাগাদ ভারতের কম্যুনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী) তথা CPI(M) এর সঙ্গে যুক্ত হন। ৬ ই এপ্রিল, ১৯৬৯ সাল নাগাদ সমাজের বিভিন্ন কুরীতির সঙ্গে লড়াই করতে গঠন করেন শিবাজী সমাজ। শিবাজী সমাজের অধীনে বিনোদ বিহারী বাবু সুদখোরি, মহাজনী প্রথা, সামন্ত ব্যবস্থার বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেন। ১৯৬৭ ও ১৯৭১ সালের নির্বাচনে সিপিআই(এম) পার্টির হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন কিন্তু হেরে যান। পরবর্তীকালে সিপিআই (এম) দলের উচ্চ নেতৃত্বের সাথে মত বিরোধের কারনে সিপিআই (এম) দল ত্যাগ করেন।
১৯৬৫ সাল পরবর্তীকালে তরুন বাঙালি ইঞ্জিনিয়ার অরুন কুমার রায় বা এ কে রায় ধানবাদ জেলার সিন্ধ্রি সার কারখানায় চাকরি করতে আসেন। কিন্তু অচিরেই স্থানীয় আদিবাসী ও মুলবাসি শ্রমিকদের ওপর কয়লা মাফিয়া, সুদখোর মহাজন, কারখান কতৃপক্ষের জুলুম ও অত্যাচার দেখে চাকরি তে ইস্তফা দিয়ে গড়ে তোলেন “বিহার কোলিয়ারি শ্রমিক ইউনিয়ন” এবং শ্রমিকদের পাশে দাড়িয়ে কয়লা মাফিয়া, সুদখোর মহাজন, কারখান কতৃপক্ষের জুলুম ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু করেন। অরুন বাবু সিপিআই(এম) দলেরও সদস্য ছিলেন কিন্তু মতবিরোধের কারনে সিপিআই(এম) দল থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন। অরুন বাবুও নিজস্ব সংগঠন মার্ক্সবাদী সমন্বয় সমিতি (Marxists Cordination Committee) গঠন করেছিলেন।
সিপিআই(এম) দলের সদস্য থাকা কালীন বিনোদ বিহারী মাহাতোর সাথে অরুন কুমার রায়ের পরিচয় ছিল। তাই দিশম গুরু শিবু সরেন যখন বিনোদ বিহারী মাহাতোকে এক সঙ্গে আন্দোলনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন তখন অরুন কুমার রায়কেও সাথে নেবার কথা দিশম গুরু শিবু সরেনকে জানান। তাতে সম্মতি জানিয়ে এক মিটিং এর আয়োজন করার দায়িত্ব বিনোদ বিহারী মাহাতো কেই দেন দিশম গুরু শিবু সরেন।
৪ ই ফেব্রুয়ারি, ১৯৭২ সালে ঐতিহাসিক মিটিং হয় তিন দিকপাল নেতা দিশম গুরু শিবু সরেন, বিনোদ বিহারী মাহাতো ও অরুন কুমার রায়ের। মিটিং হয় বিনোদ বিহারী মাহাতোর ঘরে। ঠিক হয় শিবাজী সমাজ, সনত সাঁওতাল সমাজ ও মার্ক্সবাদী কোঅরডিনেশেন কমিটিকে মিলিয়ে দিয়ে এক যৌথ সংগঠন গড়ে তোলা হবে। সেই সময় বাংলাদেশের মুক্তি যুদ্ধে মুক্তি যোদ্ধাদের সংগ্রাম ভারতেও জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। বাংলাদেশের মুক্তি যোদ্ধাদের আদলে ঠিক হয় নতুন সংগঠনের নাম হবে “ঝাড়খণ্ড লিবারেশেন ফ্রন্ট – Jharkhand Liberation Front”। কিন্তু গ্রামীণ আদিবাসী ও সাধারন মানুষদের কাছে “ঝাড়খণ্ড লিবারেশেন ফ্রন্ট – Jharkhand Liberation Front” উচ্চারণ করতে বা বুঝতে অসুবিধা হতো তাই অচিরেই “ঝাড়খণ্ড লিবারেশেন ফ্রন্ট – Jharkhand Liberation Front” সাধারন মানুষের মুখে মুখে জনপ্রিয় হল “ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা- Jharkhand Mukti Morcha (JMM)” রুপে। ঠিক এক বছর বাদে ৪ ই ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৩ সালে ধানবাদে এক বিশাল জনসমাবেশ করে আনুষ্ঠানিক ভাবে আত্মপ্রকাশ করে “ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা”। বয়স ও অভিজ্ঞতার কারনে সভাপতি নির্বাচিত হন বিনোদ বিহারী মাহাত, সব থেকে জনপ্রিয়তম মুখ হিসেবে সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হন দিশম গুরু শিবু সরেন। ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা গঠিত হবার পর পৃথক ঝাড়খণ্ড আন্দোলন তাঁর সময়কালে তীব্রতম গতি লাভ করে।
(ঝাড়খণ্ড আন্দোলনের ওপর বাংলা ভাষায় লেখা বই সেই ভাবে পাওয়া যায়না। ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করে এই লেখা লেখা হয়েছে। ভুল ত্রুটি থাকলে ক্ষমা প্রার্থী।)

Thursday 27 September 2018

জিতুর রক্তে রাঙা সাঁওতাল-রাজের গড় আদিনা মসজিদ

Image may contain: outdoor
জিতুর রক্তে রাঙা সাঁওতাল-রাজের গড় আদিনা মসজিদ
চন্দ্রশেখর
সিধো-কানু-র বিদ্রোহ ‘দামিনে কোহ’-র অনেক পরে মালদার বুকে জ্বলে উঠেছিল সাঁওতাল বিদ্রোহের আগুন। সেই অগ্নিশিখার নাম জিতু সাঁওতাল। জিতুর কাহিনী বাঙলার সামাজিক-রাজনৈতিক জীবনের এক অনন্য উপাখ্যান। না, বাঙলার কোনও ক্লাসের ইতিহাস বইতে জিতু সাঁওতালের নাম নেই, কলকাতায় কোনও চক নেই। অথচ, জিতুর কাহিনী জানলে মানুষের অধিকারের সংগ্রামকে দমন করতে ধনিক শ্রেণি আর প্রশাসন কিভাবে হাত মেলায়, কিভাবে ধর্মীয় শক্তি প্রতিবাদী আন্দোলনকে দমন করতে ধর্মকে ব্যবহার করে আর পরে চোখ পালটায়, তা স্পষ্ট হবে।
এসব কথা এখন বলে রাখি, কারণ আমরা তো মালদা গিয়ে হজরত পাণ্ডুয়ায় আদিনা মসজিদ দেখতে যাব। এত কথা কি তখন বলার সময় হবে?
মালদহের হবিবপুরের মঙ্গলপুরায় কীর্তনের আসর বসেছে। কোচাকাদর গ্রামে কীর্তনে শিবের গান চলছে। তাঁর ঢঙ – গম্ভীরা। এই গ্রামেই বাড়ি বীরেন হেমব্রমের। আদি বাড়ি বিহারের দুমকায়। হবিবপুর থেকে কয়েক ক্রোশ দূরেই দুমকার সোহোরপুরা। চাষবাসের সুবিধার জন্য বীরেন তাঁর স্ত্রী তেলে মুর্মুকে নিয়ে চড়াই-উতরাই ভেঙে বনবাদার ডিঙিয়ে এসেছিল এই কোচাকাদর গ্রামে। দুমকা থেকে মালদায় আসা প্রথম আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অংশ তাঁরা। তাঁর ছেলে জিতু বেশ ডাগরডোগর। লড়িয়ে ছেলে। বাবা-মায়ের খুব আনন্দ, ছেলের দেবদ্বিজে ভক্তি দেখে। নিজেরা তো বোঙ্গাকে, পিলচু বুড়ি আর পিলচু হারামকে দেবতা মেনেছেন। জিতু মানে শিবজীকে। সত্যম শিবম নামে একটা ধর্মসঙ্ঘে আছে সে। সেখানে বাবাজীরা আছেন। তাঁরা কীর্তন শেখান। পুজোআচ্চা হয়, প্রসাদ দেয় হিন্দু বাবুদের আর আদিবাসীদের সবাইকে। এলাকায় অনেক মুসলমান আছেন, তাদের দেয় না।
মালদা ছিল তুর্কি আমল থেকে মুসলমান সুলতান-নবাবদের অধীনে। ফলে এখানকার বড় বড় জমিদারদের বেশির ভাগই ছিল মুসলমান। স্থানীয় জমিদারদের, কি হিন্দু বা মুসলমান, অত্যাচার ছিল খুব বেশি। তাদের বিরুদ্ধে সাধারণ বাঙালি হিন্দুদের মাথা তোলার সাহস ছিল না। তাঁর উপর ধর্ম তাদের ‘কপালের ফের’, ‘পূর্ব জন্মের পাপের ফল’ ইত্যাদি ট্যাবলেটে প্রতিরোধের ইচ্ছাটাকেই দমন করে রেখেছিল। নীল চাষীদের উপর ইংরেজের দমননীতি দেখে আরও দমে গিয়েছিল তাদের মন। কিন্তু, আদিবাসীদের মনে ‘দামিনে কোহ’, সিধু-কানু, বিরষার স্মৃতি, শরীরে তাদের রক্ত। জিতু তাদের মধ্যে সবচেয়ে সাহসী প্রতিবাদী। জিতু তাদের ‘সাঁওতাল রাজ’-এর স্বপ্ন দেখায়। লড়ার কথা বলে। আর, হিন্দু মহাসভার ধর্মগুরুরা জিতুকে কীর্তন করার কথা বলে, শিবের কথা বলে, সঙ্গে মুসলমানদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য উসকে দেয়।
জিতু বোঝে, মুসলমান মানে জমিদার। সে স্মরণ করায় ‘চায় চম্পা’-র কথা। আদিবাসীদের ইতিহাস বলে, সিন্ধু সভ্যতায় গোটা ভারত ভূখণ্ডটাই ছিল ‘চায় চম্পা’ আর তাঁর পশ্চিমে ছিল গান্ধার (কান্দাহার)। সে গ্রামবাসীদের বলে ‘সাঁওতাল রাজ’ স্থাপন হলে চাষীকে ফসলের দু' ভাগ জমিদারকে দিয়ে না খেয়ে মরতে হবে না। সাঁওতাল সরকারকে মাত্র এক ধামা ধান দিতে হবে কর হিসাবে। আর সাঁওতালরা সবাই হবেন স্বাধীন। স্বাধীনতার স্বপ্ন উজ্জীবিত করে সাঁওতালদের।
১৯২৪ সাল। তাঁর আগেই চম্পারণের কৃষক আন্দোলন করেছেন। গান্ধীজী তখন ব্রিটিশের বিরুদ্ধে সত্যাগ্রহ আর অসহযোগ আন্দোলন করে চলেছেন। জিতুর কাছে ‘গান্ধিবাবা’-র (মনে পড়ে ঢোঁড়াই-এর গানহী বাবা) রাজ মানে সেখানে ‘সাহুকার, জোতদার, জমিদার’ থাকবে না। সব জমি হবে চাষীর নিজের। সাহুকার মানে যারা গরিব চাষীদের ঋণের ফাঁদে ফেলে জমি লুঠে নেয়। গান্ধী কে, তা না জানলেও জিতু নাম নেয় 'গান্ধী সেনাপতি'। ‘গান্ধী’ মানে তাদের কাছে ইংরেজ ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ।
একদিকে জমিদারদের উপর রাগ, অন্যদিকে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে গান্ধীজীর সংগ্রাম আর পিছনে হিন্দু মহাসভার ধর্মীয় উসকানি – জিতু ঝাঁপ দিল ‘সাঁওতাল রাজ’ প্রতিষ্ঠার জন্য। তীর-ধনুক, টাঙ্গি, বল্লম, তলোয়ার নিয়ে সাঁওতালরা রাজ প্রতিষ্ঠা করতে গেল। না, কাউকে হত্যা করার দিকে নয়, তাঁরা নামল মাঠে, জমিদারের ক্ষেতের ফসল কেটে তুলতে লাগলো। জিতুর বিশ্বাস, এভাবেই সাঁওতাল রাজ প্রতিষ্ঠা হবে। গান্ধীরাজ আসবে।
ফসল লুঠতে এলে বাধাও এল। সেই সংঘর্ষে আদিবাসীদের তীরে একজন নিহত হল। পুলিশ জিতুকে গ্রেফতার করল। ছাড়াও পেল। এর পর থেকে বার বারই জিতুকে নানা অজুহাতে কারাগারে পাঠানোর খেলা শুরু হল জমিদার আর ইংরেজ প্রশাসনের ষড়যন্ত্রে। এই সুযোগকে কাজে লাগাতে হিন্দু মহাসভার লোকেরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে জিতুর মগজ ধোলাই করতে শুরু করলো। সাঁওতালদের হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তর, আদিবাসীদের প্রিয় গরু-শুয়োরের মাংস না খাওয়া আর মূর্তি পুজোর জন্য চাপ দিতে থাকলো। শিক্ষা আর কূট বুদ্ধির অভাবে থাকা জিতু ভাবতেও পারেনি এভাবে তাঁকে সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্বের চোরা টানে ফেলে দেওয়া হবে।
কিভাবে তখন আদিবাসীদের প্রতারণা হতো, তাঁর নমুনা পাওয়া যায়। কেউ দশ কি বারো টাকা ধার নিয়েছিল মহাজনের থেকে, ফেরাতে পারেনি। তাঁর জমি চলে গেছে জমিদারদের দখলে। মহাজনের থেকে এক মুঠো নুন নিয়েছিল। সেই নুনের ঋণ শত মুঠোতেও মেটেনি, জমিটা গ্রাস করেছে মহাজন। এমন সম্যে ১৯৩১-এ অক্টোবরে কোতোয়ালির জমিদাররা দাবি করলো, ফসলের তিন-ভাগের দু' ভাগ জমিদারকে দিতে হবে। সাঁওতালরা জিতুর নেতৃত্বে তা দিতে অস্বীকার করলো। এই নিয়ে জমিদারের লেঠেলদের সঙ্গে জিতুর সাঁওতালদের সংঘর্ষ হল। পুলিশ এল, কিন্তু পুলিশ অদ্ভূতভাবে জমিদারদেরই পক্ষ নিল। জমি আর পুঁজির পাশেই থাকল পুলিশ, আজও যেমন থাকে, সর্বহারা মাটির সন্তানেরা বঞ্চিতই রইল।
আরও এক বছর কাটল। ১৯৩২-এর ডিসেম্বরে জিতুর নেতৃত্বে সাঁওতালরা আবার বিদ্রোহ করেন। ততদিনে চট্টগ্রামে সূর্য সেনের নেতৃত্বে যুব বিদ্রোহে ইংরেজের শিরদাঁড়া দিয়ে ঠাণ্ডা স্রোত নেমে গেছে। লণ্ডনে গোল টেবিল বৈঠকে গান্ধীজীকে ডেকে বৈঠক করেছে ইংরেজ। ভারতে একের পর এক বিপ্লবী কাজকর্ম মানুষকে ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলনে উৎসাহ জোগাচ্ছে। আদিবাসীরা তাদের সরকার প্রতিষ্ঠা করবেন বলে মালদা শহরে কিছু দূরে আদিনা মসজিদ দখল নেয়। এই মসজিদ ১৩৬৪ থেকে ১৩৭৪-এর মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হলেও বহুদিন ধরেই এখানে আর নামাজ পড়া হয় না। জিতুর প্রতিনিধি হিসাবে দিনাজপুরের বংশীহারির রাম ওরফে সাউনা এসে আদিনা দখল করে। রাজ প্রতিষ্ঠা করে। গড় তৈরি হয়। জিতু সাঁওতালের নেতৃত্বে বিদ্রোহে জমিদাররা কোণঠাসা হয়ে যায়।
প্রায় ৬০০ সাঁওতাল যোদ্ধা ১৯৩২-এর ১৩ ডিসেম্বর দখল নেয় আদিনার। দখল মুক্ত করতে আসে পুলিশ। সাওতালদের গ্রেফতারের চেষ্টা হলে শুরু হয় যুদ্ধ। একদিকে তীর-তলোয়ার-বল্লম; অন্যদিকে গুলি। পাঁচ জন সাঁওতাল নিহত হয়। তীরের ঘায়ে একজন আর জিতুর তলোয়ারের ঘায়েও আরেকজন কনস্টেবলের মৃত্যু হয়। জেলাশাসক, পুলিশের সুপার থেকে শুরু করে বিরাট বাহিনী ঘিরে ফেলে আদিনা। তাঁরা প্রথমে বোঝানোর চেষ্টা করে জিতুদের। ব্যর্থ হয়ে ঘুষ দেওয়ার চেষ্টা হয় জিতুকে। তাতেও ব্যর্থ হয় পুলিশ। জিতুরা জানিয়ে দেয়, ব্যক্তিগত লাভের জন্য এই বিদ্রোহ নয়। সাঁওতালদের জমি ফেরত দিলে তবেই বিদ্রোহ তুলে নেওয়া হবে। এই সম্যে কেউ ভয়ে চাষের মাঠেও যেত না। মাঠে পা রাখলেই উড়ে আসতো তীর।
এরপরের ঘটনা নানা মতে পল্লবিত। শোনা যায়, পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয় জিতুর। তবে এটা ইংরেজের ভাষ্য। স্থানীয় আদিবাসীদের মতে, পুলিশ আর জিতুদের মধ্যে মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব দেওয়া হয় কোতোয়ালির জমিদারদের। তাঁরাই ইংরেজের সবচেয়ে আস্থাভাজন সেই সময়ে। কোতোয়ালির তৎকালীন প্রধান জমিদার সমঝোতার প্রস্তাব দেয় জিতুদের। আদিনার ভিতরেই সেই বৈঠক ডাকা হয়। হাতিতে চেপে জমিদার আসেন মেহরাবের পিছনে। বন্দুকধারী পুলিশ তাঁকে ঘিরে রেখেছে। জিতু মাত্র কয়েকজনকে নিয়ে এগিয়ে আসার সময়েই জমিদারের বন্দুক গর্জে ওঠে। জিতু নিহত হন। জিতু সামনে এসে দাঁড়ালে তাকে গুলি করে হত্যা করেন কোতোয়ালির জমিদাররা। গুলি চালিয়ে বন্দুকের মুখে ১৬ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মসজিদের ভেতরে মিহরাবে যার দাগ আজও গুলির আছে। জিতু হেমব্রমের মৃত্যুর পর আদিবাসীদের আন্দোলন নেতৃত্বের অভাবে আর দানা বাঁধতে পারেনি।
আর, কোতোয়ালির জমিদারদের ইংরেজ সরকার ‘খান চৌধুরী’ জমিদারের উপাধি দেয়। জিতুর মৃত্যুতে আদিবাসীদের বুকে গভীর আঘাত লাগলেও ‘অসভ্য সাঁওতালদের’ বিদ্রোহ দমন করাকে দৃঢ় সমর্থন জানায় হিন্দু মহাসভার স্থানীয় নেতারা, যাদের কারও আছে জমিদারি, কারণ মহাজনী ব্যবসা, কেউ সাহুকার।
জিতুর আন্দোলন কিন্তু পুরোপুরি ব্যর্থ হয়নি। এক অন্য ধরণের আন্দোলন দেখল মানুষ, যে লড়াইয়ে ক্ষমতার চেয়েও বড় ছিল ফসলের উপর অধিকারের প্রশ্ন। জমির প্রশ্ন। কৃষকের হাতে জমির অধিকারের প্রশ্ন। ‘লাঙল যার, জমি তার’- এই সত্যটাই উঠে নেসেছিল। তাঁর প্রমাণ পাওয়া গেল ১৯৩৩-এ। জমিদারদের অত্যাচারে আর কৌশলে আদিবাসী সমাজ মূল স্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বিদ্রোহ করেছে, এটা বলা হল জিতু সাঁওতালের বিদ্রোহ প্রসঙ্গে গড়া ইংরেজের তদন্ত কমিটির প্রধান স্পেশাল অফিসার ক্ষিতিজ চন্দ্র বর্মণের রিপোর্টে। ১৯২৩-এর রিপোর্টের ভিত্তিতে শুনানী করে তিনি সাঁওতাল ও ওরাওঁদের জমির উপর অধিকার কায়েমের পক্ষে অনেকটাই কাজ করে যান।
আদিনা
মালদা শহর বা ইংলিশ বাজারের থেকে ২০ কিমি দূরে ইতিহাস বিখ্যাত আদিনা মসজিদ। দিল্লীর নবাব ফিরোজ শাহ তুঘলককে পরাজয়ের স্মারক হিসাবে এটি ১৩৬৪ থেকে ১৩৭৪-এর মধ্যে এটি বানান ইলিয়াস বংশের দ্বিতীয় সুলতান সিকান্দর শাহ। সিরিয়ার উমাইয়া মসজিদের আদলে তৈরি উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত মসজিদটির আয়তন ৫২৪ ফুট লম্বা ও ৩২২ ফুট চওড়া। গঠনশৈলী ও বিশালত্বে অনন্য মসজিদটি দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ। ঊনবিংশ ও বিশ শতকে বড় বড় ভূমিকম্পে এর পিলার ও ছাদ ভেঙেছে।
স্থাপত্য শিল্প, কারুকার্য ও বিশালতায় এই মসজিদ অতুলনীয়। এ মসজিদটি সুলতান সিকান্দর শাহ প্রচুর অর্থ খরচ করে বানান। এ মসজিদে সুলতান, তার পারিষদবর্গ ও পাণ্ডুয়ার প্রায় দশ হাজার অধিবাসী একসঙ্গে জুম্মার নামাজ পড়তেন। ভেতরে ৪০০ ফুট লম্বা ও ১৫৫ ফুট চওড়া প্রাঙ্গণ আছে, যেটা পুরু দেয়াল দিয়ে ঘেরা। এতে ২৬০টি থাম ও ৩৮৭টি গম্বুজ আছে। এখানে ৯৮টি খিলান ছিল। অনেকটাই ধ্বংসপ্রাপ্ত এই মসজিদের সংরক্ষণের কাজ করছে ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ। নীলচে-ছাই রঙা কষ্টিপাথরে তৈরি 'মিহরাবের অংশটির কারুকাজ সংরক্ষণ করেছে।
দামাস্কাসের বড় মসজিদের ধাঁচে তৈরি এই মসজিদের কিছু উপাদান অমুসলিম শিল্পরীতির। মসজিদটির মাঝে ছাদহীন চত্বরটি ৪২৬.৬ ফুট লম্বা ও ১৪৭.৭ ফুট চওড়া। কলামের ওপর ছাদবিশিষ্ট এ গঠনশৈলীর নাম 'হাইপোস্টাইল'। অবিভক্ত ভারতীয় উপমহাদেশে এ ধাঁচের একমাত্র মসজিদ এটি। পশ্চিমে নামাজের অংশটিকে দুটি কক্ষে ভাগ করেছে একটি ৭৮ ফুট লম্বা ৩৪ ফুট চওড়া অলিন্দ, যার উচ্চতা ৬৪ ফুট। দক্ষিণ-পূর্বে আর্চবিশিষ্ট তিনটি তোরণ পেরিয়ে মসজিদে ঢুকতে হতো। এখন পূর্ব দিকের প্রবেশ পথটিই আছে। এছাড়া উত্তর-পশ্চিমে তিনটি পথ আছে।
ভিতরে মেঝে থেকে ৮ ফুট উঁচুতে বাদশাহর নামাজের স্থান 'বাদশাহ কি তখত', যার পিছনে পাথরের জালির আড়ালে সুলতান পরিবারের মহিলারা নামাজ পড়তেন। মূল গম্বুজটি রয়েছে কেন্দ্রীয় অলিন্দের শেষে। গম্বুজে খুদিত আছে ইসলামিক ও হিন্দু সংস্কৃতির বহু মোটিফ। বাদশাহ-কি-তখতের অভ্যন্তরের ইংরেজি 'এল' আকৃতির অলিন্দের শেষের দুটি দরজা। তার একটির ভেতরের সিকান্দর শাহর সমাধি। অনেকের মতে, এটি তার আসল সমাধি নয়, বরং শাহের প্রবেশপথ।
(ছবি - ইন্টারনেট থেকে। মাঝের কালো দেওয়ালটি মেহরাব। এতে গুলির চিহ্ন আজও আছে)

সরকারি চাকরির পদোন্নতিতে তফশিলি জাতি ও উপজাতি (SC/ST) প্রার্থীদের জন্য জারি থাকবে সংরক্ষণ


সরকারি চাকরির পদোন্নতিতে তফশিলি জাতি ও উপজাতি (SC/ST) প্রার্থীদের জন্য জারি থাকবে সংরক্ষণ, রায় দিল সুপ্রিম কোর্ট।

সরকারি চাকরিতে তফশিলি জাতি ও উপজাতি (SC/ST) প্রার্থীদের পদোন্নতিতে সংরক্ষণের ক্ষেত্রে কোনও রকম শর্ত আরোপ করা যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দিল ভারতের সর্বোচ্চ আদালত তথা সুপ্রিম কোর্ট। বুধবার ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ এই রায় দিল সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের ডিভিশন বেঞ্চ। একই সঙ্গে বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য আরও ক্ষমতাসম্পন্ন সাত সদস্যের ডিভিশন বেঞ্চে নিয়ে যাওয়ার আর্জিও খারিজ করে দিয়েছে ভারতের শীর্ষ আদালত। সুপ্রিম কোর্টের এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন বহুজন সমাজ পার্টি সুপ্রিমো মায়াবতী।
সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে পদোন্নতিতে তফশিলি জাতি ও উপজাতি (SC/ST) প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষণ চালু রাখা উচিত কিনা, মামলা ছিল তাই নিয়েই। ২০০৬ সালের একটি মামলার রায়ে ভারতের শীর্ষ আদালত জানিয়েছিল, প্রতিটি পদোন্নতির ক্ষেত্রে তা আদৌ প্রয়োজন কিনা, সেই তথ্য জোগাড় করতে হবে। তার পরই তফশিলি জাতি ও উপজাতি প্রার্থীরা পদোন্নতিতে সংরক্ষণের সুযোগ পাবেন। এক্ষেত্রে ওই প্রার্থী আদৌ কতটা পিছিয়ে পড়া, সরকারি চাকরিতে সংরক্ষিত পদের কোনও অভাব আছে কিনা, এবং সামগ্রিক প্রশাসনিক দক্ষতার বিষয়গুলি মাথায় রাখার কথা জানিয়েছিল শীর্ষ আদালত। নতুন রায়ে এই তথ্য জোগাড় করার কোনও বাধ্যবাধকতা নেই বলেই জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র নেতৃত্বধীন পাঁচ সদস্যের ডিভিশন বেঞ্চ।
২০০৬ সালের রায়ের বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতে আবেদন জানিয়েছিল কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলি। তাদের যুক্তি ছিল সুপ্রিম কোর্টের আগের রায়টি সরকারি চাকরিতে তফশিলি জাতি ও উপজাতি (SC/ST) প্রার্থীদের পদোন্নতিতে সংরক্ষণের ক্ষেত্রে অহেতুক শর্ত আরোপ করছে। সরকারি চাকরি পেলেও তফশিলি জাতি ও উপজাতি শ্রেণির মানুষেরা সামাজিক সম্মান পাওয়ার দিক থেকে পিছিয়েই থাকেন। তাই পদোন্নতির ক্ষেত্রেও কোনও শর্ত রাখা উচিত নয়। অন্যদিকে সংরক্ষণ বিরোধীদের সওয়াল ছিল, একবার সরকারি চাকরি পেলেই একজন তফশিলি জাতি ও উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষের সামাজিক উত্তরণ ঘটে। তাই পদোন্নতিতে আর তাঁর সেই সুবিধে পাওয়ার কথা নয়। যদিও এই যুক্তিকে আমল দেয়নি শীর্ষ আদালত। তাই সরকারি চাকরির পদোন্নতিতে সংরক্ষণ চালু থাকার পথ আরও মসৃণ হলো শীর্ষ আদালতের এই রায়ে।
Image may contain: 2 people
আগামী ১০ ই অক্টোবর, ২০১৮ মালদা জেলায় ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (Jharkhand Mukti Morcha - JMM) এর কর্মী সভা। উপস্থিত থাকবেন ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার পশ্চিমবাংলা রাজ্য সভাপতি পরেশ মারান্ডি, পশ্চিমবাংলা রাজ্য সম্পাদক বিট্টু মুরমু, ঝাড়খণ্ড রাজ্যের প্রাত্তন খাদ্য প্রতিমন্ত্রী লবিন হেম্ব্রম, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা সভাপতি লক্ষণ মুরমু, মালদা জেলা সভাপতি সোমনাথ হেম্ব্রম, মালদা জেলা সম্পাদক ইমানুয়েল হেম্ব্রম, সহ কেন্দ্রীয় ও রাজ্য স্তরীয় নেতা কর্মীবৃন্দ

Tuesday 25 September 2018

নিচু জাতের জামাই খুনে সুপারি ১ কোটি! মিলল আইএসআই যোগও।

তেলেঙ্গানা রাজ্যের নালগোন্ডা জেলার অনার কিলিংয়ে সুপারি দেওয়া হয়েছিল এক কোটি টাকা! আগাম দেওয়া হয়েছিল ৫০ লাখ। ভাড়াটে খুনি দিয়ে নিজের জামাইকে হত্যার ছক কষেছিল অম্রুতাবর্ষিণীর বাবা টি মারুথি রাও। সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়া ভাড়াটে খুনি সুভাষ শর্মাকে বিহার থেকে গ্রেফতারের পর এই বিস্ফোরক দাবি করেছে তেলঙ্গানা পুলিশ। সুপারি দেওয়া হয়েছিল কুখ্যাত দুষ্কৃতী মহম্মদ আবদুল বারির মাধ্যমে। তাকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এই খুনে জড়িত সন্দেহে স্থানীয় কংগ্রেস নেতা মহম্মদ করিমও পুলিশের জালে। পুলিশের দাবি, গোটা বিষয়টিতে মধ্যস্থতাকারী হিসাবে কাজ করেছিলেন এই কংগ্রেস নেতা।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ তেলঙ্গানার মিরিয়ালগুড়ায় অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী অম্রুতাবর্ষিণীর রুটিন চেক আপ সেরে ফিরছিলেন প্রণয় পেরুমাল্লা। সঙ্গে ছিলেন তাঁর মা-ও। হাসপাতাল থেকে বেরোতেই পিছন থেকে একটি মুগুর জাতীয় মোটা লাঠি দিয়ে আঘাত করে এক দুষ্কৃতী। পড়ে যাওয়ার পর ফের আঘাত করে পালিয়ে যায় ওই দুষ্কৃতী। ঘটনাস্থলেই মারা যান প্রণয়। গোটা ঘটনা ধরা পড়ে হাসপাতালের বাইরে লাগানো সিসিটিভিতে।
ঘটনার পরই অম্রুতাবর্ষিণী অভিযোগ করেন, নিচু জাতের ছেলেকে ভালবেসে বিয়ে মেনে নিতে পারেনি তাঁর পরিবার। পাশাপাশি তাঁকে গর্ভপাত করানোর জন্য চাপও দিচ্ছিল। তাঁর বাবা এবং কাকা মিলেই তাঁর স্বামীকে খুন করেছে। এই অভিযোগের পরই অম্রুতাবর্ষিণীর বাবা এবং কাকাকে পুলিশ গ্রেফতার করে। তদন্তে নেমে সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে এবং দুই ধৃতের বয়ান শুনে সোমবারই বিহার থেকে ওই ভাড়াটে খুনি শর্মাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
তেলেঙ্গানা পুলিশের দাবি, এই ভাড়াটে খুনিকে গ্রেফতারের পরই উঠে আসে চক্রান্তের ব্লু-প্রিন্ট। তেলেঙ্গানা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, উচ্চবর্ণের মেয়ে অম্রুতাবর্ষিণী নিচু জাতে বিয়ে করায় জামাই প্রণয়কে হত্যার পরিকল্পনা করেন অম্রুতাবর্ষিণীর বাবা মারুথি রাও। তাঁরই বন্ধু কংগ্রেস নেতা করিমের মাধ্যমে যোগাযোগ হয় আব্দুল বারির সঙ্গে। এই বারি সন্দেহভাজন আইএসআই জঙ্গি আজগর আলির ঘনিষ্ঠ। দু’জনই গুজরাতের প্রাক্তন মন্ত্রী হরেন পাণ্ড্য খুনে অভিযুক্ত ছিল। যদিও তথ্য প্রমাণের অভাবে সেই মামলায় বেকসুর খালাস হয়ে যায় দু’জন।
তেলেঙ্গানা পুলিশের দাবি, আবদুল বারি এবং শর্মাকে জেরায় জানা গিয়েছে, প্রণয়কে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে রফা হয় এক কোটি টাকায়। অগ্রিম হিসাবে ৫০ লক্ষ টাকাও দিয়ে দেন অম্রুতাবর্ষিণীর বাবা মারুথি রাও। বারির নির্দেশে সমস্তিপুরের একটি গ্যাং অপারেশন চালায়। হাসপাতালের বাইরেই নৃশংস ভাবে খুন করে প্রণয়কে। তদন্তে আরও উঠে এসেছে, খুনের সময় ঘটনাস্থলের আশপাশেই ছিল বারি। বারি-ই বাইকে করে শর্মাকে ঘটনাস্থলে নিয়ে আসে। খুনের পর ওই বাইকেই পলিয়ে যায় দু’জন।
মারিয়ালগুড়ির ধনীতম ব্যবসায়ীদের মধ্যে অন্যতম অম্রুতাবর্ষিণীর বাবা মারুথি রাও। জমি-বাড়ি কেনা-বেচার কারবার। কিন্তু গ্রেফতারির পরই এই মারুথি রাওয়ের নানা কুকীর্তি সামনে আসতে শুরু করেছে। পুলিশ সূত্রে খবর, জমি-বাড়ির কারবারে দুষ্কৃতীদের সাহায্য নিতেন মারুথি। কেউ জমি দিতে রাজি না হলে ভয় দেখানো, মারধর করে রাজি করাতেন তিনি। এমনকি, স্বাধীনতা সংগ্রামীদের জমি নিজের নামে লিখে নিতে ভুয়ো দলিল তৈরি করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এবার সেসবের বিষয়েও খোঁজখবর শুরু করেছে নালগোন্ডা পুলিশ।

সাঁওতালি ভাষায় শপথ গ্রহণ পূর্ব বর্ধমানের সহকারী সভাধিপতি মাননীয় দেবু টুডু মহাশয়ের।

সাঁওতালি ভাষায় শপথ গ্রহণ করলেন পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের নব নির্বাচিত সহকারী সভাধিপতি মাননীয় দেবু টুডু মহাশয়।

পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদে গত মঙ্গলবার ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি হিসেবে শপথ নিলেন শম্পা ধাড়া। সহকারী সভাধিপতি হিসেবে শপথ নেন দেবু টুডু। শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ, দুই সংসদ সদস্য মমতাজ সংঘমিতা ও সুনীল মণ্ডল, জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব, পুলিস সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় সহ বিভিন্ন বিধানসভার বিধায়ক, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি এবং জেলা পরিষদ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এদিন শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানকে স্মরণীয় করতে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা, কর্মী ও সমর্থকরা বাসে চেপে বর্ধমানে আসেন। সভা পরিচালনা করেন অতিরিক্ত জেলাশাসক(জেলা পরিষদ) প্রবীরকুমার চট্টোপাধ্যায়।
এদিন দেবু টুডু সাঁওতালি ভাষায় শপথ নেন। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আদিবাসী শিল্পীরা শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে এসে আদিবাসী নৃত্য পরিবেশন করেন। নিউ কালেক্টরেট বিল্ডিং লাগোয়া গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গায় বিশাল ম্যারাপ বেঁধে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান উপলক্ষে ভালোই ভিড় হয়। সেজন্য জেলাশাসকের অফিসের সামনের রাস্তায় যাবতীয় যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছিল।
পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের ৫৮টি আসনই তৃণমূল কংগ্রেস দখল করায় তারা বিরোধীশূন্য বোর্ড গঠন করেছে। এদিন প্রত্যেক জেলা পরিষদ সদস্য শপথ নেন। সভাধিপতি হিসেবে শম্পা ধাড়া ও সহকারী সভাধিপতি হিসেবে দেবু টুডু শপথ নিয়েছেন। পুজোর পর ন’টি স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ নির্বাচন সম্পন্ন হবে। আগের বোর্ডের সভাধিপতি ও সহকারী সভাধিপতির মধ্যে চেয়ার বদল হয়েছে। এবার পুরনো কর্মাধ্যক্ষদের মধ্যে কারা থাকবেন এবং কারা বাদ পড়বেন সেটাই আলোচনার মূল বিষয়বস্তু। এবার বেশ কয়েকজন ওজনদার নেতা জেলা পরিষদে জয়ী হয়েছেন।
এদিন সভাধিপতি শম্পা ধাড়া শপথ নেওয়ার পর জেলা পরিষদে তৃণমূল কংগ্রেসের জয়কে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেন। তিনি বলেন, এই জয়ের কারিগর স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। তাই এই জয় তাঁকেই উৎসর্গ করছি।
এদিন সহকারী সভাধিপতির শপথ নেওয়ার পর দেবু টুডু বলেন, আমরা পাঁচ বছর জেলা পরিষদ বোর্ড পরিচালনা করেছি। সেখানে কিছু ত্রুটিবিচ্যুতি হয়েছে। তবে কথা দিচ্ছি, আগামী পাঁচ বছর নিজেদের ভুল, ত্রুটি সংশোধন করে নেব। সেইসঙ্গে এই পথ চলার ক্ষেত্রে সকলের সহযোগিতা চাইছি।

Monday 24 September 2018

ভাষা আন্দোলন

Image may contain: 2 people
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গা একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলতে পারি। নিজের ভাইয়ের রক্ত দিয়ে মায়ের ভাষার অধিকার আদায়ের আরেক নাম একুশে ফেব্রুয়ারি। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি মাতৃ ভাষার দাবীতে রক্তাক্ত হয়েছিল বাংলার ভুমি, তারই পরিণামে তৈরি হয়েছিল বাংলাদেশ। ভাষা শুধু মাত্র মানব সভ্যতার কথা বার্তা আদান প্রদানের মাধ্যম বা শিক্ষার মাধ্যম নয়, একটি জাতীর ভাষার মাধ্যমেই তার ভাষা, ধর্ম-সংস্কৃতির বিকাশ ঘটে ।ভাষা হল জাতীর শিকড়, যে জাতীর ভাষা থাকেনা সেই জাতীর সমাজ সংস্কৃতি ধর্ম সবই পঙ্গু হতে বাধ্য ঠিক পোলিয় আক্রান্ত শিশুর মতোই বেঁচে থাকবে, পড়ন্ত বিকেলের সূর্যের মতো ডুবে যেতে শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র। সাঁওতালী ভাষা পৃথিবীর আদিমতম ভাষার মধ্যে একটি উল্লেখ যোগ্য ভাষা । সাঁওতালী ভাষাকে পৃথিবীর সমস্ত ভাষার ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়। আজ দেশ স্বাধীনতার ৭১ বছর পরেও আদিবাসী সাঁওতালদেরকে মাতৃ ভাষা শিক্ষার জন্য লড়াই করতে হচ্ছে এটা লজ্জার বিষয় ।আমরা কি সত্যিই স্বাধীন ?? তাহলে কেন একটা জাতীকে তার মাতৃ ভাষার জন্য লড়াই করতে হবে, এটা তখনই হয় যখন একটা জাতীর উপর ভিন্ন জাতীর ভাষা ধর্ম সংস্কৃতির আগ্রাসন যখন চলে। পশ্চিমবঙ্গের সাঁওতাল আদিবাসীরা মাতৃ ভাষা শিক্ষার জন্য বার বার দাবী করা সত্বেও বাংলা-কেন্দ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থায় বলপূর্বক এনে তাদের সংস্কৃতি, বৈশিষ্ট্য, ভাষা, ধ্বংস করা হচ্ছে। এক স্বাধীন দেশে ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক আদান প্রদান কক্ষনোয় একতরফা ভাবে কাম্য নয়। তাহলে কেন একতরফা সাংস্কৃতিক আদান প্রদান ? এটা আদান প্রদান বলা যায় না । এটা কে বলা হয় "চাপিয়ে দেওয়া ", এটা বাংলা সংস্কৃতির আগ্রাসন এবং ঔপনিবেশিক মানসিকতার পরিচয়। অষ্টম তফসিলভুক্ত একটি ভারতীয় ভাষা সাঁওতালীতে পঠনপাঠন সুপরিকল্পিত ভাবে সরকার চালু করতে ইচ্ছুক নয়।
আজকে যারা আদিবাসীদের সামাজিক সাংবিধানিক অধিকার কে উপেক্ষা করছেন; তাদের ভাষা সংস্কৃতি বৈশিষ্ট্য কে পদদলিত করে; তাদের ধর্মীয় আত্মপরিচয় কে মিশিয়ে দিয়ে; জাতি হিসাবে তাদের বাঁচার আকাঙ্ক্ষা কে হেয় করে 24-09-2018 তারিখ সাঁওতালদের ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহলের রেল ও সড়ক পথ অবরোধকে লাঠিপেটা করে তুলে দেওয়ার কথা বলছেন আপনারা হয়তো নিজেদের ইতিহাস ভুলে গেছেন কেননা রক্তে রাঙ্গা একুশে ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ মাতৃ ভাষা আন্দলনের ইতিহাস আপনাদেরই লেখা। আপনারা সবাই জানেন পশ্চিম বঙ্গে বাংলা ভাষার পরেই সর্বাধিক মানুষ সাঁওতালী ভাষায় কথা বলেন । কথ্য ভাষার দিক থেকে পশ্চিম বঙ্গে সাঁওতালি ভাষা দ্বিতীয় । ১৯৬১ পঃবঃ ভাষা আইন সংশোধন করে সাঁওতালি মাধ্যমে সম্পূর্ণ রূপে পড়াশুনা শুরু হলে বর্তমানে আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় যে হারে বাংলায় পড়াশুনা করছে তার কিছুটা হলেও ব্যঘাত ঘটবে এটা নিঃসন্দেহে বলা যায় । এ ছাড়াও সাঁওতালী ভাষীদের শিক্ষক শিক্ষিকাদের জন্য এক বিশাল কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রও তৈরি হবে, আদিবাসী সাঁওতালদের উপর চলা ভিন্ন ভাষা-ধর্ম-সংস্কৃতির আগ্রাসন থেকে মুক্তি পাবে এবং সর্বোপরি আদিবাসী সাঁওতাল জাতী হিসাবে তার সমাজ ধর্ম সংস্কৃতি নিয়ে মাথা উচু করে বেঁচে থাকবে ।
আদিবাসী সাঁওতাল সংস্কৃতিকে দাবিয়ে রেখে সাঁওতালদের মূল্যবোধ কে যতই কিনে নেবার চেষ্টা করা হোক না কেন আজকে সাঁওতালরা অনেক সচেতন আর তার প্রতিফলনই হল মাতৃ ভাষা আন্দোলন এবং 24-9-2018 তারিখের রেল ও জাতীয় সড়ক পথ অবরোধ । সাঁওতাল জাতীয়তাবাদ প্রতিটি আদিবাসী সাঁওতাল গণের অন্তরের অন্তঃস্থলে প্রথিত। শত ঝড় ঝাপটা অত্যাচার বিচ্ছিন্নতার মধ্যেও এই বোধ কে শক হূন পাঠান মুঘল ফরাসি ইংরাজ ধ্বংস করতে পারেনি। সাঁওতাল আদিবাসী জাতীয়তাবাদ সুপ্ত আগ্নেয়গিরির মতো বর্তমান।শতাব্দী প্রাচীন এই বীজ কে যতই আলো বাতাস হীন পরিবেশে প্রোথিত করা হোক, অঙ্কুরিত সে ঠিক হবেই। আদিবাসী সাঁওতালরা তাদের সমস্ত সাংবিধানিক অধিকার যথার্থ মর্যাদা পূর্বক আদায় করতে সচেষ্ট। সেই প্রাচীন কাল থেকেই ঐক্য বদ্ধ আদিবাসী জাতীয়তা বোধকে পাথেয় করে একসাথে সাঁওতালদের পথ চলা শুরু কক্ষনো কোন মুহূর্তে তাদের আদিবাসী জাতী সত্ত্বাকে বিসর্জন দিতে রাজি নয়, ঐক্য বদ্ধ আন্দোলনই হবে আগামি দিনের অসীম সম্ভাবনাময় আলোক বার্তা ।

Monday 17 September 2018

আদিবাসী শিল্পীদের নিয়ে একটি ভিডিয়ো করার ইচ্ছে প্রকাশ সঙ্গীতশিল্পী জোজোর।

অনেক দিন পর পুজোয় একটি সিঙ্গল নিয়ে ফিরে আসছেন বিখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী মিস জোজো। সম্প্রতি শেষ করলেন গানটির রেকর্ডিং। গানের নাম ‘মরেছি ভালন্ত বাসিয়া’। জোজোর কথায়, ‘‘গানটা কিন্তু পুরোটা বাংলা ভাষায় নয়। এটা একটা মডার্ন ফোক সং। মানুষ যেহেতু এখন একটু মাটির গানের দিকে ঝুঁকেছেন, সেই কারণেই এই গানটা করলাম আমরা। তার সঙ্গে মানুষ আমার কাছ থেকে একটু চটকদারি গান পছন্দ করেন, তাই সেই এসেন্সও রয়েছে এই গানে।’’ জানালেন, এই গানের সঙ্গে আদিবাসী শিল্পীদের নিয়ে একটি ভিডিয়ো করার ইচ্ছেও রয়েছে তাঁদের। গানটি লিখেছেন দীপঙ্কর ঘোষ। গানের সঙ্গে যন্ত্রানুষঙ্গে ব্যবহার করা হয়েছে ধামসা মাদল, ম্যান্ডোলিন ও বাঁশি। পুজোর আগেই ইউটিউবে মুক্তি পাবে জোজোর এই গান।

Friday 7 September 2018

অন্য রাজ্যে সংরক্ষণের সুবিধে পাবেন না SC, ST ও OBC রা, জানাল সুপ্রিম কোর্ট।

অন্য রাজ্যে সংরক্ষণের সুবিধে পাবেন না তফসিলি জাতি, তফসিলি উপজাতি ও অনগ্রসর শ্রেণীভুক্তরা, জানাল সুপ্রিম কোর্ট। এক রাজ্যের দলিত, আদিবাসী কিংবা অনগ্রসর শ্রেণিভুক্ত ব্যক্তি পড়াশুনো বা চাকরির জন্য অন্য রাজ্যে গেলে সেখানে সংরক্ষণের সুবিধা পাবেন না৷ ব্যতিক্রম শুধু দিল্লি৷ গত বৃহস্পতিবার ৩০ শে আগস্ট, ২০১৮ এমনই রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ জানিয়ে দিয়েছে, জাতিভিত্তিক সংরক্ষণের সুবিধা শুধুমাত্র নিজের রাজ্যতেই পাওয়া যাবে। উদাহরণ হিসেবে বিচারপতিরা বলেছেন, ‘অন্ধ্রপ্রদেশের কোনও তফশিলি জাতি-উপজাতি, দলিত বা আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ যদি মহারাষ্ট্রে গিয়ে সংরক্ষণের দাবি জানান, তা হলে ওই রাজ্যের বাসিন্দাদের সংরক্ষণের সুযোগ কমে যাবে।’তাই একটি রাজ্যের দলিত, আদিবাসী, অনগ্রসররা শুধুমাত্র সেই রাজ্যেরই সংরক্ষণের সুবিধা পাবেন৷ আদালতের বক্তব্য, এমনটা না হলে অরাজকতা দেখা দেবে৷ তবে পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চে এই রায় নিয়ে সম্পূর্ণ মতৈক্য হয়নি৷ বিচারপতি ভানুমতির মত ছিল, দিল্লিকে ব্যতিক্রম হিসেবে ধার্য করা ঠিক হয়নি।
বিচারপতি গগৈয়ের লেখা ১৬৩ পাতার রায়ে সবিস্তারে উল্লেখ করা হয়েছে, কেন তাঁরা এক রাজ্যের মানুষকে অন্য রাজ্যের সংরক্ষণ থেকে দূরে রাখতে চাইছেন। রায়ে বলা হয়েছে, ‘সংবিধানের ৩৪১ ও ৩৪২ নম্বর ধারার ক্ষমতাবলে তৈরি তফশিলি জাতি ও উপজাতি সম্প্রদায়ের তালিকায় রদবদল একমাত্র সংসদই করতে পারে। সংবিধানের ১৬(৪) ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির আদেশানুসারে তফশিলি জাতি ও উপজাতি সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষণের ক্ষেত্রটি শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট রাজ্যের ভৌগোলিক গণ্ডির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে৷ কোনও রাজ্য যদি এই নিয়মকে অন্য রাজ্যের সঙ্গে যুক্ত করতে চায়, তা হলে তাকে সংসদের অনুমতি নিয়ে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনতে হবে। অন্যথায় অরাজকতা তৈরি হবে।’

ঝাড়গ্রাম পঞ্চায়েত সমিতি গঠন করল তৃণমূল কংগ্রেস।

ঝাড়গ্রাম পঞ্চায়েত সমিতি গঠন করল তৃণমূল কংগ্রেস, সভাপতি রেখা সরেন ও সহ-সভাপতি সুবোধ টুডু নির্বাচিত। গত বুধবার ০৫/০৯/২০১৮ ঝাড়গ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠন করল তৃণমূল কংগ্রেস। দ্বিতীয়বারের জন্য সভাপতি পুনঃনির্বাচিত হলেন রেখা সরেন। সহ-সভাপতি নির্বাচিত হলেন সুবোধ টুডু।
ঝাড়গ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির মোট আসন ৩০টি। ১৮টি আসনে তৃণমূল ও ১২টি আসনে বিজেপি জয়ী হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠতার বিচারে তৃণমূলেই বোর্ড গঠন করল। ভোটাভুটিতে রেখা সরেন সভাপতি পদে নির্বাচিত হন। সহ-সভাপতি নির্বাচিত হলেন সুবোধ টুডু। সভাপতি ও সহ-সভাপতি নির্বাচনের পর আবির খেলায় মেতে ওঠেন তৃণমূল কর্মীরা। দুই বিধায়ক সুকুমার হাঁসদা ও চূড়ামণি মাহাত উপস্থিত থেকে নতুন বোর্ডকে সংর্বধনা জানান। জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান তথা বিধায়ক সুকুমারবাবু বলেন, জঙ্গলমহলের মানুষ তৃণমূলের পক্ষেই রয়েছে। দ্বিতীয়বার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পদে নির্বাচিত হওয়ার পরে রেখাদেবী বলেন, ব্লকের এখনও যে সমস্ত অবহেলিত মানুষ রয়েছেন, তাঁদের কাছে যাব। বিশেষ করে প্রত্যন্ত আদিবাসী গ্রামগুলিতে গিয়ে মানুষের জন্য আরও কাজ করব।

পুরুলিয়ার মানবাজারে আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকার প্রাথমিক প্রধান শিক্ষক জাতীয় পুরস্কারে পুরস্কৃত।

এবার এই রাজ্য থেকে ৫ সেপ্টেম্বর  শিক্ষক দিবসে জাতীয় শিক্ষকের সম্মানের জন্য নির্বাচিত হলেন পুরুলিয়ার আদিবাসী অধ্যুষিত মানবাজার এক নম্বর ব্লকের গোবিন্দপুর প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক অমিতাভ মিশ্র। এই রাজ্যে তিনিই একমাত্র শিক্ষক, যাকে কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক এই সম্মানের জন্য বেছে নিয়েছেন। গোটা দেশ থেকে এবার এই সন্মান পাচ্ছেন ৪৫ জন শিক্ষক–শিক্ষিকা। সেই তালিকায় পুরুলিয়ার প্রত্যন্ত এলাকার এই শিক্ষকের নাম নির্বাচিত হতেই খুশি জেলার শিক্ষক মহল থেকে শিক্ষা অনুরাগীরা। মানবাজারের গোবিন্দপুর প্রাথমিক স্কুল গোটা দেশের কাছে পরিচিত। স্কুলকে নির্মল বিদ্যালয়, শিশু মিত্র, যামিনী রায়, রাজ্য সেরা বিদ্যালয় ও দেশের সেরা সম্মান স্বচ্ছ বিদ্যালয়ের পুরস্কার এনে দেওয়া ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অমিতাভ মিশ্র এবার নিজে পাচ্ছেন শিক্ষকতার সেরা সম্মান রাষ্ট্রপতি পুরস্কার। গত রবিবার ০২/০৯/২০১৮ পুরস্কার নিতে দিল্লি রওনা হয়েছিলেন তিনি। যাওয়ার আগে তিনি বলেন, ‘‌স্কুলের জন্য প্রায় সব পুরস্কার এনেছি। এবার নিজে শিক্ষকতার সেরা সন্মান নিতে যাচ্ছি। খুব ভাল লাগছে। যে কোনও শিক্ষকের কাছে এই সম্মান জীবনের সেরা সম্মান।’‌ তিনি আরও বলেন, ‘‌রাজ্য থেকে আমি একা এই পুরস্কার পাচ্ছি। সত্যি ভাল লাগছে। কারণ আমি না পেলে খুব খারাপ লাগত, কারণ রাজ্য থেকে আর কেউ পুরস্কারপ্রাপকদের মধ্যে নেই।’‌ দেশে এমন রাজ্য অনেক আছে, যে সব রাজ্য থেকে একজনও এবার এই পুরস্কার পাচ্ছেন না। পুরুলিয়ার জেলাশাসক অলোকেশপ্রসাদ রায় বলেছেন, ‘‌এটা আমাদের কাছে আনন্দের বিষয়। রাজ্য থেকে একমাত্র অমিতাভবাবুই এই সম্মান পাচ্ছেন। তাঁর এই কৃতিত্বে আমরা গর্বিত।’‌
অমিতাভবাবু পুরুলিয়ার গোবিন্দপুর স্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন ২০০৬ সালে। তখন কয়েকজন পড়ুয়াকে নিয়ে স্কুল ভাঙাচোরা অবস্থায় ছিল। আজ স্কুল দেখলে মনে হবে বিদেশের কোনও অত্যাধুনিক একটি স্কুল। বর্তমানে এই স্কুলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১১৮ জন। আদিবাসী অধ্যুসিত গ্রামে স্কুলের পড়ুয়াদের দেখলে যে কেউ অবাক হয়ে যাবেন। স্কুলের চেহারা বদলে দেওয়া শিক্ষককেই এবার দেওয়া হচ্ছে শিক্ষকতার সেরা সম্মান। স্থানীয় বাসিন্দা সমাজসেবী মনোজ মুখার্জি বলেন, ‘‌অমিতাভবাবুর জন্য ওই এলাকায় শিক্ষায় একটা বিশাল পরিবর্তন এসেছে। তাঁর স্কুল দেখলে যে কেউই মুগ্ধ হয়ে যাবেন।’‌
গত বুধবার ০৫ ই সেপ্টেম্বর ২০১৮ জাতীয় শিক্ষক দিবসে নয়াদিল্লির বিজ্ঞানভবনে উপরাষ্ট্রপতি ভেঙ্কাইয়া নাইডুর হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন তিনি। ছিলেন মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর প্রমুখ। এ দিন সম্মানিত হওয়া শিক্ষক শিক্ষিকাদের হাতে পঞ্চাশ হাজার টাকা, রৌপ্য পদক ও শংসাপত্র তুলে দেওয়া হয়।
আগের দিন মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এ বার জাতীয় শিক্ষক হিসেবে নির্বাচিত দেশের বিভিন্ন এলাকার শিক্ষকদের সঙ্গে মিলিত হন। প্রধানমন্ত্রী অমিতাভ মিশ্রকে শুভেচ্ছা জানিয়ে তাঁর সঙ্গে তোলা ছবি টুইট করেন। তিনি টুইটে লেখেন —‘‘বাসিন্দাদের উৎসাহীত করে তিনি স্কুলে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছেন। তিনি প্রান্তিক এলাকার পড়ুয়াদের ক্লাসের পরে, এমনকী ছুটির দিনেও পড়ান শুনে খুশি হয়েছি।’’
বস্তুত, মানবাজার ১ ব্লকের এই স্কুল ইতিপূর্বেই নির্মল বিদ্যালয়, যামিনী রায় পুরস্কার, শিশুমিত্র পুরস্কার প্রভৃতি স্বীকৃতি পেয়েছে। এ বার তাই মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক থেকে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক অমিতাভবাবুকে জাতীয় শিক্ষকের স্বীকৃতি দেওয়ার কথা শোনার পর থেকেই উচ্ছ্বাস ছড়িয়েছে এলাকায়। এ দিন সম্মানপ্রাপ্তির পরে নয়াদিল্লি থেকে তিনি বলেন, ‘‘মঙ্গলবার আমরা প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে এক চা চক্রে মিলিত হয়েছিলাম। সেখানে অন্যান্য শিক্ষক শিক্ষিকাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে কিছুক্ষণ কথা বলেন। আমাদের স্কুলে আদিবাসী পড়ুয়া কত জন, তাদের কী ভাবে পাঠ দেওয়া হয়, এই সব বিষয়ে জানতে চান তিনি। পরে পিছিয়ে থাকা জনজাতির পড়ুয়াদের আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।’’
মানবাজার শহর থেকে তিন কিমি দূরে আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় স্কুলটি অবস্থিত। পড়ুয়ার সংখ্যা ১১৮। প্রধান শিক্ষক ও দুই শিক্ষিকা রয়েছেন স্কুলে। পড়ুয়াদের ৯৫ শতাংশ আদিবাসী। মন্দির ও আশ্রমের মিশেলে স্কুলটি গড়া হয়েছে। স্কুলে মহাকাশ পর্যবেক্ষণের জন্যে দূরবীন থেকে সৌর শক্তির বিদ্যুতের ব্যবস্থা, পরিশোধিত পানীয় জলের ব্যবস্থা থেকে পাখিরালয় পর্যন্ত রয়েছে। স্কুল-পত্রিকা রয়েছে। সেখানে নিয়মিত কচিকাঁচাদের লেখা প্রকাশিত হয়। পড়ুয়ারাই বাড়িতে শৌচালয় গড়া, খাবার আগে হাত ধোয়ার কথা বলে গ্রামেও পরিবর্তন এনেছে। সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে অমিতাভবাবু বলেন, ‘‘এই স্বীকৃতি শুধু আমার নয়, স্কুলের সব শিক্ষক, পড়ুয়াদেরও। সবাই মিলে আমরা স্কুলের সঙ্গে এলাকার পরিবর্তনের কাজ করে যাচ্ছি।’’

SC/ST অত্যাচার নিরোধক আইন পুনরায় কঠোর করার বিরুদ্ধে ০৬/০৯/২০১৮ ভারত বনধ।


SC/ST অত্যাচার নিরোধক আইন পুনরায় কঠোর করার বিরুদ্ধে ০৬ ই সেপ্টেম্বর ২০১৮ ভারত বনধ পালন উচ্চবর্ণদের সংগঠনগুলির।
তপশিলি জাতি ও তপশিলি উপজাতি অত্যাচার নিরোধক আইন, ১৯৮৯ বা The Scheduled Castes And The Scheduled Tribes (Prevention Of Atrocities) Act, 1989 পুনরায় সংশোধন করে পূর্বকার অবস্থায় ফিরিয়ে আনার বিরুদ্ধে গত ৬ ই সেপ্টেম্বর ২০১৮ ভারত বন ধের ডাক দিয়েছিল উচ্চবর্ণদের কয়েকটি সংগঠন। এই সংশোধনীর প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তাণ্ডব চালাল উচ্চবর্ণের একাধিক সংগঠন। উচ্চবর্ণ সংগঠনগুলির ডাকা ভারত বন্‌ধে বিহার, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান-সহ একাধিক রাজ্যে গোলমাল ছড়ায়। ভোটের আগে উচ্চবর্ণের এই বিক্ষোভ চিন্তা বাড়িয়েছে বিজেপির।
মধ্যপ্রদেশ, বিহার, উত্তরপ্রদেশের নানা জায়গায় টায়ার, কুশপুতুল পোড়ানো হয়। রেল অবরোধ হয়। বহু জায়গায় ক্ষোভের মুখে পড়েন বিজেপি নেতারা। মার খান বিহারের সাংসদ পাপ্পু যাদব। মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ঝাড়খণ্ড ও মহারাষ্ট্রেও বিক্ষিপ্ত গোলমাল হয়। রাজস্থানে তিন ধর্মঘটী গ্রেফতার হন।
সব চেয়ে বেশি অশান্তি হয়েছে বিহারে। জোর করে বন্ধ করে দেওয়া হয় দোকান। রেললাইন অবরোধ করা হয়। মুজফ্‌ফরপুরে হেনস্থার মুখে পড়েন জন অধিকারী পার্টির প্রধান ও বিহারের সাংসদ রাজেশ রঞ্জন ওরফে পাপ্পু যাদব। গুরুতর জখম পাপ্পু বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন, ‘‘ওরা জাত জানতে চাইল। মুখ খুলতেই মার।’’ পটনায় বিহার বিজেপির সদর দফতরও ঘেরা হয়।
মধ্যপ্রদেশে কিছু দিন ধরেই মোরেনা, ভিন্দ, গ্বালিয়র, মন্দসৌর প্রভৃতি জায়গায় বিক্ষোভ চলছিল। আগেই কিছু জায়গায় ১৪৪ ধারা জারি হয়। মোটের উপর শান্তিপূর্ণ ছিল উত্তরপ্রদেশ। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ জানান, এই ভারত বন্‌ধের মানে নেই। সংশোধিত আইনের যাতে অপব্যবহার না হয়, খেয়াল রাখবে তাঁর সরকার। জাতীয় তফশিলি কমিশনের চেয়ারম্যান রামশঙ্কর কাঠেরিয়ার অভিযোগ, একটি বিশেষ গোষ্ঠী একই সঙ্গে তফশিলি ও উচ্চবর্ণের আন্দোলনে ইন্ধন দিয়ে আখেরে বিজেপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।
মধ্যপ্রদেশজুড়ে ১৪৪ ধারা জারি। মোতায়েন রয়েছে ৩৪ কোম্পানি নিরাপত্তাবাহিনী এবং ৫০০০ নিরাপত্তাকর্মী। স্থগিত ইন্টারনেট এবং মোবাইল পরিষেবা। বিহার, মধ্যপ্রদেশ, উত্তর প্রদেশে বন্ধ দোকানপাট, স্কুল, কলেজ সহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনেও বিক্ষোভ দেখান শিক্ষক এবং ছাত্রছাত্রীরা। ভোপালে পেট্রোল পাম্পগুলি সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত খোলা রাখার কথা জানানো হয়েছে পাম্প কর্তৃপক্ষের তরফে।
গ্বালিয়রে নজরদারি চালাচ্ছে ড্রোন। বিহারের মোকামায় বিক্ষোভকারীরা টায়ার জ্বালিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। আরা, দ্বারভাঙা, মুঙ্গেরের মসুদনে ট্রেন অবরোধ করে বিক্ষোভকারীরা। মধ্যপ্রদেশ এবং বিহারে রেললাইনজুড়ে কড়া নিরাপত্তা জারি হয়েছে। রাজস্থানের কোটায় বন্‌ধ সমর্থকরা সাধারণ মানুষের হাতে ফুল দিয়ে তাঁদেরও বন্‌ধ সমর্থনের আবেদন জানান। মধ্যপ্রদেশে মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান পুরো পরিস্থিতি হেলিকপ্টারে পরিদর্শন করেন। মধ্যপ্রদেশ, উত্তর প্রদেশে বিক্ষোভকারীরা সরকারের কুশপুতুল পোড়ায়।
বিহারে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের বাসভবনের সামনেও বিক্ষোভ দেখানোর চেষ্টা করেন বনধ সমর্থকেরা। আগাম সতর্কতা হিসেবে এদিন বিহারের সব স্কুল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছিল। এছাড়া বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানেও বনধের ব্যাপক প্রভাব পড়ে।
গোটা মধ্যপ্রদেশেই এদিন বন্ধ পালিত হয়। সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান আগেই হুমকি দিয়েছিলেন, তিনি থাকতে রাজ্য থেকে সংরক্ষণ তুলে দেওয়া যাবে না। যদিও রাজ্যবাসীর উদ্দেশে তিনি বার্তা দিয়েছিলেন, ‘মধ্যপ্রদেশ শান্তির জায়গা। আমি আশা করব আমরা সবাই মিলে রাজ্যের সেই শান্তি বজায় রাখব। তাই কারও যদি কোনও বক্তব্য থাকে তাহলে তিনি শান্তিপূর্ণভাবে কথা বলুক। আমার কাছে আসার রাস্তা সবসময়েই খোলা।’ ভিন্দ, শিবপুরী, গোয়ালিয়রের মতো বেশ কয়েকটি জেলায় আগাম সতর্কতা হিসেবে আগে থেকেই স্কুল ছুটি ঘোষণা করা হয়। পুলিস জানিয়েছে, শান্তিপূর্ণভাবেই রাজ্যে বন্ধ পালিত হয়েছে। কোনও জায়গা থেকে অপ্রীতিকর ঘটনার খবর মেলেনি।
ব্রহ্মা সমাগম স্বর্ণ জনকল্যাণ সংগঠনের জাতীয় সভাপতি ধর্মেন্দ্র শর্মা বলেন, মোট ১৫০টি সংগঠন এই বনধের ডাক দিয়েছে বলে তিনি জানান। গোটা রাজ্যেই বনধের খুব ভালোমতো সাড়া মিলেছে বলে শর্মা দাবি করেন। বিশেষ করে কাটনি, বিদিশা, সেহোর, দেওয়াস, ইন্দোর, গোয়ালিয়র, ঝাবুয়া, ছাত্তারপুর, মন্দসৌর, সাগর, উজ্জয়ীন প্রভৃতি শহরে পুরোপুরি বন্ধ পালন করা হয়। অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটলেও ছিন্দওয়াড়ায় স্থানীয় বাসিন্দারা কালো পোশাক পরে প্রতিবাদ জানান। পুলিস সুপার অতুল সিং বলেন, আগে থেকেই এলাকায় অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন ছিল।
এই বনধের বিরোধিতা করেও গোয়ালিয়র, ভোপাল এবং অন্যান্য শহরে মানুষকে রাস্তায় নামতে দেখা গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বিরোধীরা তাঁদের মাথার টুপিতে লেখেন, ‘আমিই সেই মায়ের ছেলে’। প্রসঙ্গত, কয়েকদিন আগেই মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান চ্যালেঞ্জ ছুড়েছিলেন, ‘আমি থাকতে কোন মায়ের ছেলের এত ক্ষমতা যে সংরক্ষণ তুলে দেবে।’ এদিন বনধের সমর্থনে বেশ কয়েকজন মুখ্যমন্ত্রীর সেই মন্তব্যকে ইঙ্গিত করে প্রতিবাদে রাস্তায় নামেন। উল্লেখ্য, রাজ্য পুলিসের ইন্টেলিজেন্স বিভাগের আইজি মকরন্দ দিউসকর বুধবারই জানিয়েছিলেন, আগাম সতর্কতা হিসেবে রাজ্যের বেশ কয়েকটি জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ৩৪ কোম্পানি বিশেষ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।

Saturday 1 September 2018

আদিবাসী নাবালিকাকে গণধর্ষণের অভিযোগ পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়গপুরে৷

বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে বন্ধুদের সাথে মিলে গণধর্ষণের অভিযোগ আদিবাসী নাবালিকাকে। আদিবাসী নাবালিকাকে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠল পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়গপুরে৷ খড়গপুর গ্রামীণ থানার অন্তর্গত কয়তা গ্রামের ওই নাবালিকাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিয়ে গিয়ে গ্রামের পাশে একটি পাম্প হাউসে আটকে রাখা হয়েছিল৷ রাজু মান্ডি নামে এক ব্যক্তি নাবালিকাকে সেখানে তিনদিন আটকে রাখে। ৬ বন্ধু মিলে গণধর্ষণ করে বলে অভিযোগ৷ ৯ অগস্ট সকালে গ্রামের বাসিন্দারা রাস্তার পাশে অচৈতন্য অবস্থায় ওই নাবালিকাকে পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দিয়ে উদ্ধার করে৷ অভিযোগ পেয়ে পুলিশ ৪ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে৷
খড়গপুরের ২ নম্বর ব্লকের কয়তা গ্রামের এক আদিবাসী নাবালিকাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ৬ অগস্ট, ২০১৮ বাড়ি থেকে নিয়ে যায় ওই গ্রামের বাসিন্দা রাজু মান্ডি৷ রাজুর সঙ্গে ওই নাবালিকার পুরনো প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে স্থানীয়রা জানান৷ ৬ তারিখ থেকে মেয়েকে নিখোঁজ দেখে আত্মীয়দের বাড়িতে খোঁজ করছিলেন ওই নাবালিকার মা৷ কোথাও কেউ তাঁর সন্ধান দিতে পারছিলেন না৷ এর পরে ৮ অগস্ট খড়গপুর গ্রামীণ থানাতে একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেছিলেন তিনি৷ পুলিশও খোঁজ শুরু করে৷ এরই মাঝে ৯ অগস্ট গ্রাম থেকে কিছুটা দূরে রাস্তার পাশে ওই নাবালিকাকে অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন গ্রামবাসীরা৷ গ্রামবাসীদের কাছে খবর পেয়ে পুলিশ ওই নাবালিকাকে উদ্ধার করে খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করে৷ সেখানে পুলিশের কাছে ওই নাবালিকা সমস্ত কিছু খুলে বলে৷
ওই নাবালিকা পুলিশকে জানায়পুরনো প্রেমের সম্পর্ক থেকেই রাজু মান্ডি তাঁকে বিয়ে করবে বলে ডেকেছিল৷ সেই মতো ৬ অগস্ট রাজুর সঙ্গে বেরিয়ে পড়েছিল বাড়ি থেকে৷ রাজু সন্ধার সময়‌ে গ্রামের পাশে একটি পাম্প হাউসে তাঁকে নিয়ে ওঠে৷ সেখানে রাতে তাঁকে ধর্ষণ করে৷ পরে আরও ৫ বন্ধু মিলে তাকে গণধর্ষণ করে বলে অভিযোগ৷ সেদিন থেকেই তিন দিন ধরে ওই পাম্প হাউসে তাকে আটকে রেখে গণধর্ষণ চালায় ৬ জন আদিবাসী যুবক৷ পরে ওই নাবালিকার পরিস্থিতি খারাপ মনে হওয়াতে রাস্তার পাশে ফেলে পালায় তারা৷ ওই নাবালিকার মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে শনিবার রাজু মান্ডি-সহ চর যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ৷ বাকি দুজন অভিযুক্ত ফেরার৷

বীরভূম জেলার আবাসিক স্কুলে শিক্ষার নামে আদিবাসী নাবালক ছাত্রদের বেদম মারধরের অভিযোগ, প্রতিবাদ স্থানীয় বাসিন্দাদের।

আদিবাসী শিশুদের শিক্ষা সামাজিক উন্নয়নে কেন্দ্রের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার একাধিক পরিকল্পনা নিয়েছে। গড়ে তোলা হয়েছে একাধিক বিদ্যালয়। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা এগিয়ে এলে তাদের আর্থিক সাহায্য করছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার। কিন্তু সেই রকমেই এক বিদ্যালয়েই শারীরিক অত্যাচারের শিকার আদিবাসী শিশুরা। ঘটনাটি বোলপুরের মির্জাপুরের ‘বিবেকানন্দ এডুকেশনাল কালচারাল অ্যান্ড সোশ্যাল ইনস্টিটিউট’ নামের এক বেসরকারি বিদ্যালয়ে। এখানে শিশুদের গরুর গোয়াল পরিষ্কার, বালি সিমেন্ট মাখানোর কাজ করানো হচ্ছে। এমনকী, লাঠি দিয়ে পেটানো হচ্ছে বাচ্চাদের। পুরো বিষয়টির ভিডিও সামনে আসতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয় গ্রামবাসীরা।
অভিযুক্ত বিদ্যালয়ের সম্পাদক শৈলেন্দ্রনাথ ডিঙ্গল শিশুদের মারধরের অভিযোগ স্বীকার করেছেন। তবে তাঁর বক্তব্য, তিনি স্থানীয় শাসক দলের রাজনীতির শিকার।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৪ সালে ১৩ নভেম্বর মির্জাপুরে ‘বিবেকানন্দ  এডুকেশনাল কালচারাল অ্যান্ড সোশ্যাল ইনস্টিটিউট’ বিদ্যালয়ের উদ্বোধন হয়। বর্তমানে এখানে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত আদিবাসী শিশুদের ইংরেজি মাধ্যামে পড়ানো হয়। ১৯০ জন ছাত্র রয়েছে এবং ২৩ জন স্থায়ী-অস্থায়ী শিক্ষক রয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই আদিবাসী শিশুদের পারিবারিক এবং আর্থিক অসহায়তার সুযোগ নিয়ে বিদ্যালয়ের ভিতর বিভিন্ন ধরনের কাজ করানো হয়।
সম্প্রতি একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, বাচ্চারা গরুর গোয়াল ঘর পরিষ্কারের কাজ করছে। কয়েকটি বাচ্চা বালি-সিমেন্ট মাখাচ্ছে। সব থেকে নির্মম অত্যাচার, ৮-১০ জন বাচ্চাকে পরপর সারি দিয়ে দাঁড় করিয়ে লাঠি দিয়ে পেটানো হচ্ছে। বাচ্চারা অনেকেই চিৎকার করছে। আর এই কাজ করছেন বিদ্যালয়ের সম্পাদক শৈলেন্দ্রনাথ ডিঙ্গল।
এদিকে এই বিষয়টি সামনে আসতেই  ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয় গ্রামবাসীরা। গ্রামবাসী আনন্দ গোপাল রক্ষিত বলেন, ‘‘বাচ্চাদের পরিমাণ মতো খাবার দেওয়া হয় না। বিভিন্ন কাজ করানো হয়, না করলেই মার। ছোট ছোট বাচ্চাগুলি প্রাণের ভয়ে চিৎকার করতে পারে না।’’
স্থানীয় আদিবাসী নেতা ভিম কিসকু বলেন, ‘‘বিদ্যালয় যখন তৈরি হয়, তখন শুনেছিলাম অনাথ আদিবাসী বাচ্চাদের পড়ানো হবে। কিন্তু এখন দেখছি বাচ্চাদের মারধর করা হচ্ছে, কাজ করানো হচ্ছে। আমরা দোষীদের শাস্তি চাই।’’
অভিযুক্ত বিদ্যালয়ের সম্পাদক শৈলেন্দ্রনাথ ডিঙ্গল বলেন, ‘‘বাচ্চারা দুষ্টমি করেছিল। তাই তাদের একটু মারধর করা হয়েছে। গোপনে সেই ছবি তোলা হয়েছে। আমি তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠীর রাজনীতির শিকার।’’
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য মৎস্য মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ প্রথম থেকে এই বিদ্যলয়কে সাহায্য করেছেন। সম্প্রতি তিনি ৫ বিঘা জমি বিদ্যালয়কে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। তার পর থেকেই এই আশ্রম দখলের চেষ্টা চলছে।
বীরভূমের জেলাশাসক মৌমিতা গোধারা বলেন, পুরো বিষয়টি শুনেছি। একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে এবং তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঘটনার ভিডিও লিংক –

ছত্তিসগড়ে মাওবাদী দমনের নামে সাধারণ আদিবাসী খুনের অভিযোগ।

গত ৬ অগস্ট, ২০১৮ কাকভোরে ছত্তিসগড়ের গোম্পদে ১৫ জন মাওবাদীকে গুলি করে খতম করার খবর পাওয়া জায়। জঙ্গলে অভিজান চালিয়ে মাওবাদীদের গুলির লড়াইয়ে খতম করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। খবরটা এ ভাবেই এসেছিল। মাও-সন্ত্রাস দমনে ছত্তিসগড় পুলিশের ‘সাফল্যে’ অভিভূত হয়েছিলেন অনেকেই। কিন্তু, যত সময় যাচ্ছে ততই প্রকট হয়ে পড়ছে এই মাওবাদী দমন-অভিযানের আসল চেহারাটা। আদিবাসী এই গ্রামের দিকে তাকালেই স্পষ্ট হয়ে যাবে সেই সকালে কোন মাওবাদীদের শেষ করেছিল পুলিশ!
পাঁচ ‘মাওবাদী’র তো ১৮ বছর বয়সই হয়নি। আরেক ‘মাওবাদী’র বয়স আরও কম, ১২! ছত্তিসগড় পুলিশের দাবি অনুযায়ী, এরাই জড়ো হয়েছিলেন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করতে। গ্রামবাসীদের দাবি, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধ ষড়যন্ত্র নয়, ওই রাতে চাষের জমির কাছে খাটিয়া বিছিয়ে একসঙ্গে ঘুমিয়ে ছিলেন তাঁরা। ভোরে ওই ঘুমন্ত আদিবাসী মানুষগুলোর উপরই নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করা হয়েছিল। সংসারের একমাত্র রোজগেরে খুঁটি, তাঁর ১৭ বছরের ছেলেকে হারানোর শোক এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি মুচাকি লাকমা। সেই সকালের কথা জিজ্ঞাসা করতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। গ্রামের অন্য এক বাসিন্দা জানান, ঘটনার পর একটি তথ্য অনুসন্ধান কমিটি গ্রামে এসেছিল। মানবাধিকার কর্মী থেকে সমাজকর্মী, অনেকেই ছিলেন ওই দলে। কিন্তু, দলটি গ্রামে ঢোকার আগেই পুলিশ এসে গ্রামবাসীদের জঙ্গলে পাঠিয়ে দেয়। তাঁদের শাসিয়ে বলা হয়, মানবাধিকার কর্মী কিংবা সাংবাদিক, কারও সঙ্গেই যেন গ্রামবাসীরা কথা না বলেন। প্রবল বৃষ্টির মধ্যে জঙ্গলেই ঘুরে বেড়াতে হয় অসহায় মানুষগুলোকে। তাঁদের সঙ্গে কথা না বলেই ফিরে যেতে হয় কমিটিকে। এ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলাও দায়ের হয়েছে।
আদিবাসী গ্রামবাসীদের বক্তব্য, ঘটনার দু’দিন আগে গ্রামে আসে পুলিশের বিরাট বাহিনী। গ্রামের রীতি হল, পুরুষেরা হয় চাষের জমির কাছে তৈরি অস্থায়ী ছাউনিতে থাকেন, না হলে পাশের গ্রামে কোনও আত্মীয়ের বাড়িতে। সে দিনও পরিস্থিতি তেমনই ছিল। পরের দিন কয়েকজন গ্রামে ফিরে পুলিশ দেখে আবার ওই চাউনিতে চলে যান। ৬ তারিখ গুলির শব্দে ঘুম ভাঙে গ্রামের। গ্রামবাসীদের বক্তব্য, তাঁরা ছাউনির কাছে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাঁদের সরিয়ে দেন নিরাপত্তারক্ষীরা। এমনকী, দেহ পর্যন্ত দেখতে দেওয়া হয়নি। পরে ময়নাতদন্তের পর নিজেদেরই ব্যবস্থা করে মৃতদেহ ঘরে ফেরাতে হয় গ্রামবাসীদের। তাতেও প্রশাসন কোনও সাহায্য করেনি বলেই অভিযোগ। নিহত সোয়াম চন্দ্রর বাড়ির লোকের দাবি, নিজেকে পঞ্চায়েতের সদস্য পরিচয় দিয়েও প্রাণে বাঁচতে পারেননি সোয়াম।
ঘটনা হল, এই অভিযানের পরই প্রশ্ন উঠেছিল পুলিশের মাওবাদী তত্ত্ব ঘিরে। কংগ্রেস বিধায়ক কাওয়াসি লাখমা দাবি করেছিলেন, ‘নিহত ১৫ জনই সাধারণ গ্রামবাসী। বিজেপি সরকার নিরীহ আদিবাসীদের হত্যা করছে।’ কড়া প্রতিক্রিয়ায় তখন বিজেপি বলেছিল, এমন কথা বলে নিরাপত্তা বাহিনীর কৃতিত্বকে খাটো করে দেখানোর চেষ্টা করছে কংগ্রেস। কিন্তু, এবার সেই কথাই শোনা গেল গ্রামবাসীদের মুখে। রক্তাক্ত নাল্কটং এখন বিচারের অপেক্ষায়।

ঝাড়খণ্ড পিপলস পার্টি (JHARKHAND PEOPLES PARTY – JPP) – এর দাবিপত্র পেশ।

বাঁকুড়ার খাতরা কলেজ কতৃপক্ষের কাছে দাবিপত্র পেশ করল ঝাড়খণ্ড পিপলস পার্টি (Jharkhand Peoples Party – JPP) – এর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি।
দাবিগুলি –
১) আদিবাসী মহাকবি সাধু রাম চাঁদ মুরমুর মূর্তি স্থাপন,
২) কলেজের একটি ভবনকে স্বাধীনতা সংগ্রামী “বাবা তিলকা মুরমু”-র নামে নামাঙ্কিত করতে হবে,
৩) মহান সাঁওতাল বিদ্রোহের অমর নায়ক “সিধু মুরমু ও কানহু মুরমু” –র প্রতি সন্মান প্রদর্শন করতে হবে।

বীরভূম জেলার রামপুরহাটে আদিবাসী পরিবারকে গ্রামে ফেরানোর দাবিতে বিক্ষোভ।


গ্রামছাড়া এক আদিবাসী পরিবারকে ফেরানোর দাবিতে গত মঙ্গলবার ২৮/০৮/২০১৮ দুপুরে রামপুরহাটের ঝাড়খণ্ড ঘেঁষা পাথর শিল্পাঞ্চলের চাদনি গ্রামে অবস্থান-বিক্ষোভ ও মিছিল করে এলাকার শতাধিক আদিবাসী। মিছিলে ছিলেন বীরভূম আদিবাসী গাঁওতার কনভেনর সুনীল সোরেন। তিনি বলেন, বাইকা সোরেনের বিরুদ্ধে তোলাবাজির মিথ্যা অভিযোগ তোলা হয়েছে। এমনকী তাঁর বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়েছে। তাই এলাকাবাসীর সঙ্গে এই আন্দোলনে শামিল হয়েছি।
জানা গিয়েছে, পাথর লোড করতে আসা গাড়ির চালকদের কাছ থেকে জোর করে দীর্ঘদিন ধরে তোলা আদায় করা হচ্ছিল বলে অভিযোগ। তোলা না দেওয়ায় শিল্পাঞ্চলে যাওয়ার রাস্তায় ঠাকুরপুরা গ্রামের কাছে বাঁশ পুঁতে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে এলাকার বাসিন্দা বাইকা সোরেন ও তাঁর দলবলের বিরুদ্ধে। যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় স্তব্ধ হয়ে পড়ে শিল্পাঞ্চল। কর্মহীন হন কয়েক হাজার শ্রমিক। মাস তিনেক আগে বাইকাকে গ্রেপ্তার করে পুলিস। পরে তিনি জামিন পান। বাইকার বাড়িতে চড়াও হয়ে ভাঙচুর, লুটপাট চালানো হয় বলে অভিযোগ। প্রাণভয়ে গ্রামছাড়া হন বাইকা ও তাঁর পরিবার। এদিন চাঁদনি গ্রামে অবস্থান-বিক্ষোভে ওই পরিবারকে গ্রামে ফেরানোর দাবি জানান এলাকার আদিবাসীরা।
বিক্ষোভের জেরে এদিন বিকেলে রামপুরহাট-১-এর বিডিও নীতীশ বালা ও রামপুরহাট থানার আইসি সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দেখা করে বৃহস্পতিবার সবপক্ষকে নিয়ে এসডিও অফিসে আলোচনায় বসার আশ্বাস দিলে বিক্ষোভ ওঠে। বিডিও বলেন, দ্রুত সবপক্ষকে নিয়ে আলোচনায় বসে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হবে।

সমবায়ের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের।


সমবায়ের মাধ্যমে অভাবী মানুষকে উপার্জনের পথ করে দিতে বদ্ধপরিকর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতিগুলিকে ধান সংগ্রহের কাজে নামিয়ে ব্যাপক সুফল মিলেছে। এ বার সমবায়ের মাধ্যমে এক লক্ষ পরিবারের একজন মহিলাকে পশুপালনের জন্য ১৮ হাজার টাকা করে ঋণ দেবে সরকার। অন্য দিকে, ধানের অভাবী বিক্রি বন্ধ করতে খরিফ মরসুমে সমবায়গুলিকে নিয়ে সরকার কোমর বেঁধে নামছে। গত সোমবার ২৭/০৮/২০১৮ কলকাতার নজরুল মঞ্চে এক আলোচনাসভায় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সমবায়মন্ত্রী অরূপ রায় এবং রাজ্য খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক তাঁদের পরিকল্পনা ও প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন।
রাজ্যের বিভিন্ন সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির হাজার তিনেক সদস্য এসেছিলেন। সমবায়মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, ‘এক লক্ষ পরিবারকে সমবায় সমিতির মাধ্যমে ১৮ হাজার টাকা করে স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়া হবে। ওই টাকায় হাঁস-মুরগি, ছাগল কিনে প্রতিপালনের জন্য।’এই পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত জানতে চাওয়া হলে অরূপ বাবু বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী প্রায়ই স্বামীজির ওই কথাটি বলেন, না-জাগিলে ভারত ললনা এ ভারত জাগে না। গাঁয়েগঞ্জে প্রকৃত অভাবী পরিবারের মহিলাদের এই ঋণ দেওয়া হবে। হাঁস-মুরগি-ছাগল পালন করে এক জন মহিলা অন্তত সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকা মাসে আয় করতে পারবেন বলে আমাদের আশা। মহিলারা নিয়মিত আয় করলে তার সুফল সুদূরপ্রসারী। এই প্রকল্প অনুমোদন পেয়ে গিয়েছে। একটি পরিবারের এক জন মহিলাকে অনুদান দেওয়া হবে।’
রাজ্যে এখন সমবায়গুলির আওতায় প্রায় ২ লক্ষ ১৮ হাজার স্বনির্ভর গোষ্ঠী আছে। সেই স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিতে ২০ লক্ষেরও বেশি মহিলা সদস্য আছেন। গত সাত বছরে গ্রামীণ অর্থনীতিতে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির মহিলাদের অবদান অনস্বীকার্য। ১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ২০০০ সমবায়কে কৃষি-যন্ত্রপাতি কিনে দেওয়া হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর পরিকল্পনা অনুযায়ী সেই ‘কৃষি-যন্ত্রপাতি হাব’থেকে কম ভাড়ায় কৃষকরা চাষের যন্ত্র পাবেন।
এই মঞ্চেই খাদ্যমন্ত্রী জানান, ১ নভেম্বর থেকে (মূলত কালীপুজোর আগে থেকেই) ধান সংগ্রহ করতে নামছে সরকার। তাঁর কথায়, ‘বাংলায় এখন আর অভাবী বিক্রি হয় না। এই বছর ধান কেনার জন্য তিন হাজার সমবায় সমিতিকে আমরা মাঠে নামানোর টার্গেট করেছি।’তবে কেন্দ্রীয় অসহযোগিতা এখনও অব্যাহত বলে অভিযোগ করেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘মিড ডে মিলের জন্য এফসিআই চাল নিয়েছে অথচ দু’বছর ধরে কেন্দ্র একটা টাকাও দেয়নি। ৩০০ কোটি টাকা পাই। একবার কেন্দ্রীয় খাদ্য দপ্তরের কাছে বিল পাঠাই। একবার এফসিআইয়ের কাছে বিল পাঠাই। গত বছরও চাল দিয়েছি। এই বছরও দিচ্ছি। চাইলে আরও চাল দেব। কিন্তু টাকা তো এখনও দিচ্ছে না। কেন্দ্র বঞ্চনা চালিয়ে যাচ্ছে।’
সমবায় মন্ত্রী জানিয়েছেন, কয়েকটা রাইস মিল ধান কিনে চাল ফেরত দিচ্ছে না। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এ নিয়ে কথা হয়েছে। খাদ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এই মঞ্চেই পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘বাংলার চাষিদের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাজকে দিল্লিও মেনে নিয়েছে।’কেন্দ্র এ রাজ্যর ধান কেনার পদ্ধতিকে ‘রোল মডেল’করছে বলে দাবি খাদ্যমন্ত্রীর। আলোচনাসভায় উপস্থিত শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় প্রস্তাব দেন, ‘শাক-সব্জি সংরক্ষণের ব্যবস্থা ঠিক মতো নেই। চাষিরা সঠিক ভাবে জানে না কোথায় রাখতে হবে। সেখানে ফড়েরা সব নিয়ে চলে যাচ্ছে। তাই সমবায়ের মাধ্যমে ধান সংগ্রহের যেমন ব্যবস্থা করা গিয়েছে, সেই রকম ভাবে যদি আলু, টম্যাটো, পান, উচ্ছে-সহ অন্য শাক-সব্জি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা যায় সেটা দেখা হোক। সংরক্ষণের অভাবে শাক-সব্জি নষ্ট হয়ে যায় বছর বছর।’
এক নজরে –
�� রাজ্যের এক লক্ষ মহিলাকে ১৮,০০০ টাকা করে ঋণ দেওয়া হবে। হাঁস, মুরগি-ছাগল প্রতিপালন করার জন্য।
�� অর্থসাহায্য দেওয়া হচ্ছে দু’হাজার সমবায়কে। সব মিলিয়ে ১০০০ কোটি টাকার প্রকল্প— ‘কৃষি যন্ত্রপাতি হাব’।
�� ১ নভেম্বর থেকে ধান সংগ্রহ করতে নামছে সরকার। ধান কেনার জন্য তিন হাজার সমবায় সমিতিকে নামাতে চলেছে রাজ্য।

দলিত-আদিবাসী ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষায় কেন্দ্রীয় অর্থ বরাদ্দে বঞ্চনা কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারের।


অতি বিলম্বে, অতি সামান্য। দলিত-আদিবাসী ছাত্রছাত্রীদের অনুদান দিবার ইহাই যেন নীতি নরেন্দ্র মোদী সরকারের। সংবাদে প্রকাশ, ২০১৫ সাল হইতে পর পর তিন বৎসর তফসিলি জনজাতির জন্য উচ্চশিক্ষায় জাতীয় বৃত্তি দেওয়া হয় নাই। ভূতপূর্ব প্রধানমন্ত্রী রাজীব গাঁধীর নামাঙ্কিত ওই বৃত্তিটির নাম পরিবর্তন করিয়া গত বৎসর ফের বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। কিন্তু যত জনকে বৃত্তি দিবার ঘোষণা ছিল, তালিকায় নাম উঠিয়াছে তাহার অর্ধেকের। বৃত্তি পাইবার আশায় যাঁহারা ইতিমধ্যে গবেষণা শুরু করিয়াছিলেন, তাঁহাদের অধিকাংশই নিরাশ হইয়াছেন। অনেকেই গবেষণা সম্পূর্ণ করিতে পারিবেন না, তাহা প্রায় নিশ্চিত। মোদীর শাসনকালে দলিত-আদিবাসীদের শিক্ষাবৃত্তি প্রদানে সরকারের কার্পণ্য ও দীর্ঘসূত্রিতা লইয়া বারংবার অভিযোগ উঠিয়াছে। দলিত-আদিবাসীদের উন্নয়ন ও সামাজিক সহায়তার বরাদ্দ পড়িয়া আছে, অথচ সেই অর্থ তাঁহাদের নিকট পৌঁছাইতে সরকার ব্যর্থ। ‘পোস্ট-ম্যাট্রিক স্কলারশিপ’খাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ বকেয়া রাখিয়াছে কেন্দ্র। সামাজিক ন্যায় ও সক্ষমতা বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির রিপোর্ট অনুসারে, ওই খাতে আট হাজার কোটি টাকারও অধিক বকেয়া রহিয়াছে কেন্দ্রের। বিরোধী দলগুলির অভিযোগ, দলিত ও আদিবাসী মিলিয়া দরিদ্রতম ছাত্রদের উচ্চশিক্ষায় বৃত্তির খাতে তিন বৎসরে বকেয়া ছাড়াইয়াছে তেরো হাজার কোটি টাকা। ‘প্রি-ম্যাট্রিক স্কলারশিপ’লইয়াও একই অভিযোগ। দলিতদের ছাত্রাবাস নির্মাণের জন্য নির্দিষ্ট বরাদ্দের এক-তৃতীয়াংশও রাজ্যগুলিকে পাঠায় নাই কেন্দ্র। এই হিসাব গত আর্থিক বৎসরের।
কিন্তু অর্থের অঙ্ক দিয়া ক্ষতির হিসাব করিয়া লাভ কী? প্রকৃত ক্ষতি মানবসম্পদের অপচয়ে। দলিত-আদিবাসীরা সমাজের দরিদ্রতম দুই বর্গ। সন্তানকে উচ্চশিক্ষিত করিতে হইলে যে দীর্ঘ বিনিয়োগ প্রয়োজন, তাহা জোগান দিবার সামর্থ্য অধিকাংশ দলিত-আদিবাসী পরিবারের নাই। তাহা স্পষ্ট হইয়াছে ২০১১ সালের জনগণনার ফলেও। দলিতদের মধ্যে স্নাতকের হার দেশের গড় হারের অর্ধেক, আদিবাসীদের মধ্যে তাহার চাইতেও কম। দুই সম্প্রদায়েই তরুণীদের মধ্যে সে হার আরও সামান্য। নানা সমীক্ষায় দেখা গিয়াছে, দলিত-আদিবাসী ছাত্রদের অধিকাংশই আসে গ্রাম হইতে, তাহারা পড়াশোনা করে ভারতীয় ভাষায়। স্বভাবতই, উচ্চশিক্ষা সম্পূর্ণ করিতে হইলে নানা প্রকার সহায়তা তাহাদের একান্ত প্রয়োজন।
বিশ্ববিদ্যালয়-সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দলিত-আদিবাসী ছাত্রদের জন্য সংরক্ষণ নূতন সুযোগ তৈরি করিয়াছে, কিন্তু সরকারি অসহযোগিতা ও সামাজিক অমর্যাদা তাহাদের মুখের উপর দরজা বন্ধ করিতেছে। ২০১৬ সালে হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞানের ছাত্র রোহিত ভেমুলার আত্মহত্যা সেই বঞ্চনা ও অমর্যাদার পরিণাম। কত দলিত ছাত্রের এই পরিণাম হইয়াছে, কেন হইতেছে, তাহাদের কী সহায়তা প্রয়োজন, সে বিষয়ে সরকারি তরফে অনুসন্ধান করিয়া রিপোর্টও জমা পড়িয়াছে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে সরকারের যাহা ন্যূনতম কর্তব্য, ছাত্রছাত্রীদের প্রাপ্য সহায়তা যথাসময়ে তাহাদের নিকট পৌঁছাইয়া দেওয়া, সে কাজটুকু করিতে সরকার ব্যর্থ। অপর দিকে, দূরশিক্ষার সুযোগকে সঙ্কুচিত করিয়াছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। ইহা নিঃসন্দেহে দরিদ্র ও প্রান্তবাসী ছাত্রছাত্রীদের সর্বাধিক বিপন্ন করিবে। শিক্ষায় সংস্কার আনিতে হইবে ঠিকই, কিন্তু এই কি তাহার উপায়? ভারতে দরিদ্রের উচ্চশিক্ষার সুযোগ প্রসারিত হইবার পরিবর্তে সঙ্কুচিত হইতেছে। তফসিলি জাতি ও জনজাতির প্রতি মোদী সরকারের বঞ্চনা বহুমুখী। কিন্তু শিক্ষাবঞ্চনার ফল দেশের পক্ষে সর্বাধিক সুদূরপ্রসারী হইবে।

বীরভূম জেলার সিউড়িতে স্বাধীনতা সংগ্রামী বাজাল এর নামে মেলা

 বীরভূম জেলার সিউড়ির বড়বাগানের আব্দারপুর ফুটবল ময়দানে আয়োজিত হতে চলেছে ‘বীরবান্টা বাজাল মেলা-২০১৯’। ১৯শে জানুয়ারি এই মেলা আয়োজিত...