SANTHALDISHOM(সানতাল দিশোম): ছত্তিসগড়ে মাওবাদী দমনের নামে সাধারণ আদিবাসী খুনের অভিযোগ।

Saturday 1 September 2018

ছত্তিসগড়ে মাওবাদী দমনের নামে সাধারণ আদিবাসী খুনের অভিযোগ।

গত ৬ অগস্ট, ২০১৮ কাকভোরে ছত্তিসগড়ের গোম্পদে ১৫ জন মাওবাদীকে গুলি করে খতম করার খবর পাওয়া জায়। জঙ্গলে অভিজান চালিয়ে মাওবাদীদের গুলির লড়াইয়ে খতম করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। খবরটা এ ভাবেই এসেছিল। মাও-সন্ত্রাস দমনে ছত্তিসগড় পুলিশের ‘সাফল্যে’ অভিভূত হয়েছিলেন অনেকেই। কিন্তু, যত সময় যাচ্ছে ততই প্রকট হয়ে পড়ছে এই মাওবাদী দমন-অভিযানের আসল চেহারাটা। আদিবাসী এই গ্রামের দিকে তাকালেই স্পষ্ট হয়ে যাবে সেই সকালে কোন মাওবাদীদের শেষ করেছিল পুলিশ!
পাঁচ ‘মাওবাদী’র তো ১৮ বছর বয়সই হয়নি। আরেক ‘মাওবাদী’র বয়স আরও কম, ১২! ছত্তিসগড় পুলিশের দাবি অনুযায়ী, এরাই জড়ো হয়েছিলেন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করতে। গ্রামবাসীদের দাবি, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধ ষড়যন্ত্র নয়, ওই রাতে চাষের জমির কাছে খাটিয়া বিছিয়ে একসঙ্গে ঘুমিয়ে ছিলেন তাঁরা। ভোরে ওই ঘুমন্ত আদিবাসী মানুষগুলোর উপরই নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করা হয়েছিল। সংসারের একমাত্র রোজগেরে খুঁটি, তাঁর ১৭ বছরের ছেলেকে হারানোর শোক এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি মুচাকি লাকমা। সেই সকালের কথা জিজ্ঞাসা করতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। গ্রামের অন্য এক বাসিন্দা জানান, ঘটনার পর একটি তথ্য অনুসন্ধান কমিটি গ্রামে এসেছিল। মানবাধিকার কর্মী থেকে সমাজকর্মী, অনেকেই ছিলেন ওই দলে। কিন্তু, দলটি গ্রামে ঢোকার আগেই পুলিশ এসে গ্রামবাসীদের জঙ্গলে পাঠিয়ে দেয়। তাঁদের শাসিয়ে বলা হয়, মানবাধিকার কর্মী কিংবা সাংবাদিক, কারও সঙ্গেই যেন গ্রামবাসীরা কথা না বলেন। প্রবল বৃষ্টির মধ্যে জঙ্গলেই ঘুরে বেড়াতে হয় অসহায় মানুষগুলোকে। তাঁদের সঙ্গে কথা না বলেই ফিরে যেতে হয় কমিটিকে। এ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলাও দায়ের হয়েছে।
আদিবাসী গ্রামবাসীদের বক্তব্য, ঘটনার দু’দিন আগে গ্রামে আসে পুলিশের বিরাট বাহিনী। গ্রামের রীতি হল, পুরুষেরা হয় চাষের জমির কাছে তৈরি অস্থায়ী ছাউনিতে থাকেন, না হলে পাশের গ্রামে কোনও আত্মীয়ের বাড়িতে। সে দিনও পরিস্থিতি তেমনই ছিল। পরের দিন কয়েকজন গ্রামে ফিরে পুলিশ দেখে আবার ওই চাউনিতে চলে যান। ৬ তারিখ গুলির শব্দে ঘুম ভাঙে গ্রামের। গ্রামবাসীদের বক্তব্য, তাঁরা ছাউনির কাছে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাঁদের সরিয়ে দেন নিরাপত্তারক্ষীরা। এমনকী, দেহ পর্যন্ত দেখতে দেওয়া হয়নি। পরে ময়নাতদন্তের পর নিজেদেরই ব্যবস্থা করে মৃতদেহ ঘরে ফেরাতে হয় গ্রামবাসীদের। তাতেও প্রশাসন কোনও সাহায্য করেনি বলেই অভিযোগ। নিহত সোয়াম চন্দ্রর বাড়ির লোকের দাবি, নিজেকে পঞ্চায়েতের সদস্য পরিচয় দিয়েও প্রাণে বাঁচতে পারেননি সোয়াম।
ঘটনা হল, এই অভিযানের পরই প্রশ্ন উঠেছিল পুলিশের মাওবাদী তত্ত্ব ঘিরে। কংগ্রেস বিধায়ক কাওয়াসি লাখমা দাবি করেছিলেন, ‘নিহত ১৫ জনই সাধারণ গ্রামবাসী। বিজেপি সরকার নিরীহ আদিবাসীদের হত্যা করছে।’ কড়া প্রতিক্রিয়ায় তখন বিজেপি বলেছিল, এমন কথা বলে নিরাপত্তা বাহিনীর কৃতিত্বকে খাটো করে দেখানোর চেষ্টা করছে কংগ্রেস। কিন্তু, এবার সেই কথাই শোনা গেল গ্রামবাসীদের মুখে। রক্তাক্ত নাল্কটং এখন বিচারের অপেক্ষায়।

No comments:

Post a Comment

বীরভূম জেলার সিউড়িতে স্বাধীনতা সংগ্রামী বাজাল এর নামে মেলা

 বীরভূম জেলার সিউড়ির বড়বাগানের আব্দারপুর ফুটবল ময়দানে আয়োজিত হতে চলেছে ‘বীরবান্টা বাজাল মেলা-২০১৯’। ১৯শে জানুয়ারি এই মেলা আয়োজিত...