হাতি লেকান সারি সহরায়..
সেটের আকান দাই না...
দেসে দাই না, দেসে দাই না..
আতাং দারাম মেম ৷
দেসে দাই না,লটা দাঃ,
দেসে দাই না, টেন্ডার মাচি...
হাতি লেকান সারি সহরায়....
দাই না লাং আতাং দারামে ৷
সেটের আকান দাই না...
দেসে দাই না, দেসে দাই না..
আতাং দারাম মেম ৷
দেসে দাই না,লটা দাঃ,
দেসে দাই না, টেন্ডার মাচি...
হাতি লেকান সারি সহরায়....
দাই না লাং আতাং দারামে ৷
( হাতি এখানে বৃহৎ অর্থে উপমা অলঙ্কার)
হাতি সম পরব দিদি...
মোদের ঘরে এসেছে...
এসো দিদি এসো দিদি....
বরন করি তাকে...৷৷
ঘটির জলে আতিথ্য করো
বসার জন্য চেয়ার দিওয়ো..
হাতি সম পরব দিদি
বরন করি এসো )
মহামিলনের বীজ মন্ত্রে দীক্ষিত মানব সমাজ একে অপরের পরিপূরক ৷ অন্যান্য ভাষাভাষীর মতোই আদি সমাজ জীবনেও খুশির প্রাবল্য ধরা পড়ে সারি সহরায় পরব বা উৎসবে ৷৷
সারি অর্থ্যাৎ সত্য, আর সহর+ আয়(লাভ/উপার্জন ) =সহরায় ৷
সহর এর আক্ষরিক কোনো অর্থ বাংলা শব্দ ভান্ডারে নেই ৷ তবে আদিবাসী সাঁওতালি শব্দ সহর অর্থে আগমন বোঝায় ৷ সহরেনায় বা সহর সেটেরেনায় ৷শহর ও সহর শব্দ দুটি বিশেষ্য পদ,এবং ফার্সি গোত্রিয় ৷ প্রাচীন সিন্ধু বা হরপ্পা মহেঞ্জোদারো সভ্যতায় তিন ধরনের সামাজিক বিন্যাস চোখে পড়ে ৷ সহর অর্থে শষ্যপূর্ন আধার কে বোঝানো হয়েছে ৷ আর শহর অর্থে নগর কে বোঝানো হয়েছে ৷
আদিবাসী ঘরানায় সহরায় (কার্তিক)মাস বর্তমান ৷ কার্তিক মাস জুড়ে শষ্যপূর্ন ভান্ডার ভরে ওঠে ৷ সেই জন্যই পুরো মাসের নাম সহরায় ৷
আদিবাসী মাইথোলোজিতে দেখা যায় গিরু নাই এর উপস্থিতি ৷ লোহিত সাগর আর সিন্ধু নদ এর তীরে আদিবাসী অনার্যরাই প্রথম কৃষির পত্তন করেছিল ৷
সব মিলিয়ে এ কথায় প্রমান করে আদিবাসী মাইথোলোজিতে শষ্যপূর্ন আধার কে সামনে রেখে তৎকালিন কৃষিজীবি মানুষ মাসের নাম সহরায় (কার্তিক) রেখেছিল ৷ আর ফসল ভরে ওঠার কাল কে সত্য অর্থাৎ সারি বলে মান্যতা দিয়েছিল , আবাহন করেছিল ,বন্দনা করেছিল ৷ আদিবাসী মানুষ সত্যের উপাসক ,তাঁরা সবকিছুতে সত্যকে প্রতিষ্ঠা করেন !তাই হয়ত কৃষি বন্দনার মাসটিতে তাঁরা শষ্যপুর্নতার কারন সমূহের সারসত্ব কেই সারি অর্থে স্বীকৃতি দিয়েছেন ৷
সহরায় উৎসবে গোরুকে বন্দনা করার চল প্রচলিত ৷ শষ্যপূর্ন্য গোলা ভরে উঠতে লাঙ্গল বলদের ভূমিকা ছিল ৷ তাই নিজেদের অানন্দ যজ্ঞে সেই পশুদের অবদানকেও স্বীকার করে পৃথিবীর এই প্রাচীন জনপদ ৷
গো জাগরন (জাগানো )করে তাদের কে চুমাড়া (বন্দনা)করে ৷ তাদের প্রাকৃতিক রং দিয়ে ছাপ দেওয়া হয় গোটা গায়ে ৷ আমরা যেমন নূতন পোশাকে সেজে উঠি তাদেরকেও সাজানো হয় ৷ এই সময় গোায়াল ঘরের দুয়ারে ঘাসের আঁটি বাঁধা হয় ৷ধান, দূর্বা , এবং প্রদীপ জ্বালিয়ে তাদের সিং এ তেল মাখানো হয় ৷শষ্যপূর্ন গোলার পিছনে তাদের ভূমিকা অপরিসীম ৷ কি অসাধারন গার্হস্থ জীবন চর্চা ৷ দুধি লটা (বন্য লতা) ওই লতা থেকে দুধের মতো আঠালো রস বের হয় বলে এই নাম ৷দুধ +লতা=দুধলতা অপভ্রংসে দুধের লতা বা দুধিলটা ৷ দুধিলটা গলায় পরিয়ে বলদের সঙ্গে গাভীর বিবাহ দেওয়া হয় ৷ এখানেও সামাজিক রসবোধের পরিচয় পাওয়া যায়
সৃষ্টির ধারা বজায় রাখার প্রথাকে মান্যতা দেওয়া পশুদের ক্ষেত্রেও ৷ জীবনাদর্শের পরতে পরতে বাস্তুতন্ত্রের এমন প্রতিফলন শিক্ষনীয় ৷ ছবি ঋণ : পল্লব মন্ডল
( পরবর্তী সংখ্যায় বাকি টা)