SANTHALDISHOM(সানতাল দিশোম): October 2019

Saturday 26 October 2019

"সারি সহরায়" ।। জ্যোৎস্না সোরেন ।।


হাতি লেকান সারি সহরায়..
      সেটের আকান দাই না...
    দেসে দাই না, দেসে দাই না..
      আতাং দারাম মেম ৷
       দেসে দাই না,লটা দাঃ,
       দেসে দাই না, টেন্ডার মাচি...
   হাতি লেকান সারি সহরায়....
      দাই না লাং আতাং দারামে ৷

( হাতি এখানে বৃহৎ অর্থে উপমা অলঙ্কার)
  হাতি সম পরব দিদি...
   মোদের ঘরে এসেছে...
এসো দিদি এসো দিদি....
    বরন করি তাকে...৷৷
ঘটির জলে আতিথ্য করো
    বসার জন্য চেয়ার দিওয়ো..
হাতি সম পরব দিদি
           বরন করি এসো )

মহামিলনের বীজ মন্ত্রে দীক্ষিত মানব সমাজ একে অপরের পরিপূরক ৷ অন্যান্য ভাষাভাষীর মতোই আদি সমাজ জীবনেও খুশির প্রাবল্য ধরা পড়ে সারি সহরায় পরব বা উৎসবে ৷৷
সারি অর্থ্যাৎ সত্য, আর সহর+ আয়(লাভ/উপার্জন ) =সহরায় ৷
সহর এর আক্ষরিক কোনো অর্থ বাংলা শব্দ ভান্ডারে নেই ৷ তবে আদিবাসী সাঁওতালি শব্দ সহর অর্থে আগমন বোঝায় ৷ সহরেনায় বা সহর সেটেরেনায় ৷শহর ও সহর শব্দ দুটি বিশেষ্য পদ,এবং ফার্সি গোত্রিয় ৷  প্রাচীন সিন্ধু  বা হরপ্পা মহেঞ্জোদারো সভ্যতায় তিন ধরনের সামাজিক বিন্যাস চোখে পড়ে ৷ সহর অর্থে শষ্যপূর্ন আধার কে বোঝানো হয়েছে ৷ আর শহর অর্থে নগর কে বোঝানো হয়েছে ৷

আদিবাসী ঘরানায় সহরায় (কার্তিক)মাস বর্তমান ৷ কার্তিক মাস জুড়ে  শষ্যপূর্ন ভান্ডার ভরে ওঠে ৷ সেই জন্যই পুরো মাসের নাম সহরায় ৷

আদিবাসী মাইথোলোজিতে দেখা যায় গিরু নাই এর উপস্থিতি ৷ লোহিত সাগর আর সিন্ধু নদ এর তীরে আদিবাসী অনার্যরাই প্রথম কৃষির পত্তন করেছিল ৷

সব মিলিয়ে এ কথায় প্রমান করে আদিবাসী মাইথোলোজিতে শষ্যপূর্ন আধার কে সামনে রেখে তৎকালিন কৃষিজীবি মানুষ মাসের নাম সহরায়  (কার্তিক) রেখেছিল ৷ আর ফসল ভরে ওঠার কাল কে  সত্য অর্থাৎ সারি বলে মান্যতা দিয়েছিল , আবাহন করেছিল ,বন্দনা করেছিল ৷ আদিবাসী মানুষ সত্যের উপাসক ,তাঁরা সবকিছুতে সত্যকে প্রতিষ্ঠা করেন !তাই হয়ত কৃষি বন্দনার মাসটিতে তাঁরা  শষ্যপুর্নতার কারন সমূহের  সারসত্ব কেই সারি অর্থে স্বীকৃতি দিয়েছেন ৷

সহরায় উৎসবে গোরুকে বন্দনা করার চল প্রচলিত ৷ শষ্যপূর্ন্য গোলা ভরে উঠতে লাঙ্গল বলদের ভূমিকা ছিল ৷ তাই নিজেদের   অানন্দ যজ্ঞে সেই পশুদের অবদানকেও স্বীকার করে পৃথিবীর এই প্রাচীন জনপদ ৷

গো জাগরন (জাগানো )করে তাদের কে চুমাড়া (বন্দনা)করে ৷  তাদের প্রাকৃতিক রং দিয়ে ছাপ দেওয়া হয় গোটা গায়ে ৷ আমরা যেমন নূতন পোশাকে সেজে উঠি তাদেরকেও সাজানো হয় ৷ এই সময়  গোায়াল ঘরের দুয়ারে ঘাসের আঁটি বাঁধা হয় ৷ধান, দূর্বা , এবং প্রদীপ জ্বালিয়ে তাদের সিং এ তেল মাখানো হয় ৷শষ্যপূর্ন গোলার পিছনে তাদের ভূমিকা অপরিসীম ৷ কি অসাধারন গার্হস্থ জীবন চর্চা ৷ দুধি লটা (বন্য লতা) ওই লতা থেকে দুধের মতো আঠালো রস বের হয় বলে এই নাম ৷দুধ +লতা=দুধলতা অপভ্রংসে দুধের লতা বা দুধিলটা ৷ দুধিলটা  গলায় পরিয়ে বলদের সঙ্গে গাভীর বিবাহ দেওয়া হয় ৷ এখানেও সামাজিক রসবোধের পরিচয় পাওয়া যায়
সৃষ্টির ধারা বজায় রাখার প্রথাকে মান্যতা দেওয়া পশুদের ক্ষেত্রেও ৷ জীবনাদর্শের  পরতে পরতে বাস্তুতন্ত্রের এমন প্রতিফলন    শিক্ষনীয় ৷  ছবি ঋণ : পল্লব মন্ডল
        ( পরবর্তী সংখ্যায় বাকি টা)

বীরভূম জেলার সিউড়িতে স্বাধীনতা সংগ্রামী বাজাল এর নামে মেলা

 বীরভূম জেলার সিউড়ির বড়বাগানের আব্দারপুর ফুটবল ময়দানে আয়োজিত হতে চলেছে ‘বীরবান্টা বাজাল মেলা-২০১৯’। ১৯শে জানুয়ারি এই মেলা আয়োজিত...