SANTHALDISHOM(সানতাল দিশোম): 04/06/19

Saturday 6 April 2019

অলচিকি লিপি সাঁওতালি ভাষার রক্ষাকবচ

  

সাঁওতালি অস্ট্রো-এশিয়াটিক ভাষাগোষ্ঠীর মুন্ডারী শাখার এক প্রাচীন ভাষা। আজকের সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মানুষ রায় এই প্রাচীন প্রবাহমান ভাষাকে পন্থা করে  বিশ্ব দরবারে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছেন। এই সাঁওতালি ভাষা একটি সাংস্কৃতিক সম্পূর্ণ জাতিকে একটি  সুতোয় বেঁধে রেখেছে বহুদিন ধরে। তাই আমরা দেখি সাঁওতালি তে যারা কথা বলে তারা সাঁওতাল গোষ্ঠী বলে পরিচিতি। আবার উল্টোদিকে বলা হয় যে সাঁওতালদের মাতৃভাষা সাঁওতালি।

 আজকে আমরা দেখতে পাচ্ছি আমাদের দেশে অনেক জ্ঞানী পন্ডিত মনীষী স্বাধীনতা সংগ্রামী জন্মেছেন, যাদের মাতৃভাষা সাঁওতালি। যারা সাঁওতালি ভাষার কে ভালবাসেন তারা দেখতে পান যে সাঁওতালি ভাষা একটি সুস্থ রুচিশীল সংস্কৃতিকে সোহাগ দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছে এবং এটাও দেখতে পান যে এই ভাষার একটি উচ্চারণের স্বাতন্ত্র রীতিনীতি  উচ্চারণ শৈলী রয়েছে। যাহা অন্য অন্যান্য ভাষার লিপি বা হরফ দিয়ে সহজে লিখিত রূপ দেওয়া যায় না।

আমি কিন্তু কোন ভাষাবিদ নয় । কিন্তু আমরা আমার মাতৃভাষা সাঁওতালি। তাই বুঝতে পারছি কিভাবে কলকাতার "Sidu Kanhu Dahar"টিকিট বাংলা দৈনিক পত্রিকায় সিধু কানু ডহর হয়ে রয়েছে। সাঁওতালি তে ডাহার শব্দের অর্থ রাস্তা বা রোড। তাই ডাহার এর বিকৃত উচ্চারণ 'ডহর' শব্দটি যারা সাঁওতালি ভাষা কে ভালোবাসে অতিকষ্টে তাদেরকে হজম করতে হয়। এই ছোট্ট উদাহরণ দিয়ে আমাদের বোঝা দরকার যে নির্দিষ্ট ভাষার জন্য নির্দিষ্ট লিপি বা হরফ দরকার।

সাঁওতালি ভাষার সঠিক উচ্চারণ শৈলীকে বজায় রেখে লিখিত রূপ দেওয়ার জন্য পন্ডিত রঘুনাথ মুরমু কোন এক অলৌকিক শক্তি বলে একটি বিজ্ঞানসম্মত জাতিসত্তা বহনকারী অল চিকি নামক লিপি আবিষ্কার করেন। তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট সরকার শিক্ষার ক্ষেত্রে অলচিকি লিপি কে স্বীকৃতি দিয়ে গেছেন। কারণ অনেক ভাষাবিদ বুদ্ধিজীবী সম্মানিত  দিয়েছিলেন যে অলচিকি লিপি দিয়ে সাঁওতালি ভাষা কে সঠিকভাবে লিখিত রূপ দিতে পারে।

 অলচিকি লিপি আবিষ্কারের পূর্বে থেকে সাঁওতালি ভাষা চর্চা হয়েছে বর্তমানেও হচ্ছে বিভিন্ন লিপিতে। অনেক সাঁওতালি কবি লেখকরা তাদের লেখন বিভিন্ন ভাষার লিপিতে চাপাচ্ছেন অনেক ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও। কারণ সাঁওতালি ভাষার কোন সঠিক নিজস্ব লিপি না থাকার জন্য। কিন্তু প্রশ্ন জাগে,লিপির জন্য ভাষা না ভাষার জন্য লিপি? আমার মনে হয় ভাষার জন্যই লিপি। আসলে লিপি হচ্ছে একটি যান বা বহন করা গাড়ি যাহা যাত্রীর ন্যায় ভাষাকে সঠিক গন্তব্যে নিয়ে যায়। এতদিন আমাদের ভাষা ছিল কিন্তু লিপি বা হরফ ছিল না।

তাই নিজস্ব যান বা গাড়ি না থাকলে আমরা যেমন অপরের গাড়ি ভাড়া করে যাত্রা সম্পূর্ণ করি। তেমনি সাঁওতালি ভাষার লিখিত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে চর্চার ক্ষেত্রে অন্য ভাষার লিপি কে ধার করে সাঁওতালি ভাষার বাহন হিসেবে ব্যবহার করে আসছি। কিন্তু অন্য ভাষার লিপি কে ব্যবহার করে সাঁওতালি ভাষা কে তার সঠিক গন্তব্যে পৌছাতে গিয়ে দেখা যাবে যে কোথাও যেন সাঁওতালি ভাষা নিজের স্বাধীনতা তার সর্বশ্রীকে হারিয়ে এক অজানা ব্যক্তি হিসেবে উপস্থিত  হচ্ছে। আর তাই যদি হয়,ভাষার শিখরে যেতে গিয়ে সাঁওতালি ভাষা কে আরো কয়েকদশক পিছিয়ে পড়তে হবে।   

ভারতবর্ষের আদিতম ভাষা হওয়া সত্ত্বেও আজ একবিংশ শতাব্দীতে সাঁওতালি ভাষা ভারত সরকারের স্বীকৃতি পেয়েছে। এত পিছিয়ে থেকেও শিক্ষার ক্ষেত্রে সাঁওতালি ভাষীদের মধ্যে চরম বিরোধিতার লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কারণ সাঁওতালি ভাষা কে সঠিক চর্চা ও মূল্যায়ন করার জন্য কোন লিপি কে বহন করে নিয়ে যাওয়া হবে - অল চিকি তে না বাংলাতে না দেব নাগরিতে না রোমান লিপিতে।

 এই সনাতনী সাঁওতালি ভাষার শিক্ষা ব্যবস্থা এতদিন পিছিয়ে থেকেও যারা এই তর্কে মত্ত তাদের উদ্দেশ্যে বলি নিজেদের ক্ষুদ্র স্বার্থে থেকে বেরিয়ে সাঁওতালি ভাষার বৃহত্তর স্বার্থের দিকে চোখ রাখুন। কারণ অলচিকি ছাড়া অন্যান্য ভাষার লিপি দিয়ে সাঁওতালি ভাষা কে সঠিক ভাবে চর্চা বা মূল্যায়ন করা যাবে না। কারণ অল চিকির যেমন গঠন বৈশিষ্ট্য তেমন সাঁওতালি ভাষা উচ্চারণ ক্ষেত্রেও। যেসব লিপি সাঁওতালি শব্দকোষ কে অজান্তে বিকৃত করতে পারে, সেই সব লিপির জন্য  কতটা অকালতির দরকার। তা আমাদের ভাবা দরকার।

 বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন ভাষার জন্য উপযুক্ত লিপি বা হপর তৈরি করা হয়েছে। তেমনি সাঁওতালি ভাষার জন্য উপযুক্ত লিপি অল চিকি। আর এই লিপি সাঁওতালি ভাষার জন্য কতটা অবাস্তব কতটা ত্রুটিপূর্ণ তার কোনো সমালোচনা নিশ্চয়ই নেই। অথট কিছু ব্যক্তি নিজেদের অলচিকি লিপির অজ্ঞতাকে আড়াল করে বেমানান বিভিন্ন প্রাদেশিক ভাষার লিপি কে সোয়াল করে নিজ সাঁওতাল গোষ্ঠীর মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি করার চেষ্টা করেছেন।

 আমরা অনেক ভাষা ও লিপি জানি এবং আরোও জানতে চেষ্টা করছি। তেমনি আসুন না একজন সাঁওতালি ভাষী মনীষীর অমর সৃষ্টি অলচিকি হরফ কে জানবো চিহ্নব এবং লিখব। আর তাই যদি করি তাহলে জানা যাবে অল চিকি শুধু সাঁওতালি ভাষার ধারক ও বাহক নয় অলংকারও। কারণ অল চিকি শুধুমাত্র সাঁওতালি ভাষার জন্যই তৈরি।

আমরা আমাদের সৃজনী গুণের নতুন কিছু ভাবতে পারি আলোচনা, সমালোচনার মাধ্যমে একজন স্রষ্টা কে ঘৃণা করতে পারি। কিন্তু নিশ্চয়ই ঘৃণা করতে পারি না তার সৃষ্টিকে। তাই সবাই আসুন না একটা সৃষ্টি কে বাঁচিয়ে রেখে তাকে সমৃদ্ধ করব। তবে সাঁওতালি ভাষা যথাযথ মর্যাদা পাবে। থাকবে সাঁওতালি ভাষার নিজস্বতা তার মৌলিকতা আর স্বাতন্ত্রতা হবে।

 অনেক ব্যক্তি বিভিন্নভাবে সাঁওতালি ভাষা দরদী বলে প্রমাণ করতে চাইছেন কিন্তু আমি মনে করি যারা উচ্চারণগত ধ্বনিগত শব্দগত অক্ষুন্নতা ও অর্থগত বিকৃতি থেকে রক্ষা করে সাঁওতালি ভাষার নিজস্বতা, মৌলিকতা বজায় রেখে চর্চা করেন তারাই প্রকৃত সাঁওতালি ভাষা দরদী। তাই সবার মুখে একটি দাবি সাঁওতালি ভাষা শিক্ষার ক্ষেত্রে অলচিকি ব্যবহার করতে হবে । আর আমরাও বলতে পারি সাঁওতালি ভাষার মৌলিকতা রক্ষার একমাত্র রক্ষাকবচ অলচিকি ।

কলকাতা লোক সংস্কৃতি(ভবন) মঞ্চ থেকে নরেন হাঁসদা কে সম্বর্ধনা দেওয়া হল

  


কলকাতা:- গতকাল কলকাতা লোকসংস্কৃতি মঞ্চে(ভবন) পুরুলিয়ার বিখ্যাত লোক শিল্পী ও সাঁওতালি সাংস্কৃতি পারসি সাগাড়িয়া নরেন হাঁসদা কে সম্বর্ধনা দেওয়া হল। গতকাল অনুষ্ঠিত হলো কলকাতা লোকসংস্কৃতি ভবনে বিভিন্ন দেশের সংগীত শিল্পী ও নাট্য শিল্পীদের নিয়ে বিশাল লোক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

ভারতবর্ষের বিভিন্ন রাজ্য থেকে এই অনুষ্ঠানে শিল্পীরা অংশগ্রহণ করে এবং সেই সাথে সাথে বাংলাদেশ থেকেও এই অনুষ্ঠানে বহু শিল্পী অংশগ্রহণ করে।সেই বিশাল লোক সাংস্কৃতি(ভবন) মঞ্চ থেকে পুরুলিয়া জঙ্গলমহলের লোকশিল্পী ও সিধু কানু মিশনের নরেন হাঁসদা কে সম্বর্ধনা দেওয়া হল।পারসি সাগাড়িয়া নরেন হাঁসদা সঙ্গে কথা বলে জানা যায় যে, আমি খুবই গর্বিত কলকাতা লোক  সংস্কৃতি(ভবন) মঞ্চ থেকে আমাকে সংবর্ধনা দেওয়ার জন্য এবং আমি এখানকার লোক সংস্কৃতি মঞ্চের কর্তৃপক্ষদের অভিনন্দন জানাই।

আমি একজন সংগীত শিল্পী এবং সেই সংগীত শিল্পী হিসেবে আমার পরিচয় যথেষ্ট আছে এবং সেই সঙ্গে সঙ্গে এখানে আমাকে সম্বর্ধনা দেওয়া হলো সিধু কানু মিশন পরিচালনা করার জন্য। কিন্তু এখানে আমার অবাক লাগছে আমি যে সমাজের জন্য যে ছেলে মেয়েদের জন্য যে সাংস্কৃতিক এর জন্য আমি কাজ করছি। সেই সমাজের সেই মানুষদের কাছে থেকে আমি এখনো পর্যন্ত সম্বর্ধনা ও সহযোগিতা সঠিকভাবে পায়নি।

কিন্তু কিছু দয়ালু মানুষ আছে আমাকে সহযোগিতা করার জন্য এগিয়ে এসেছে এবং সিধু কানু মিশনের চলার পথ কি করে আবার এগিয়ে নিয়ে যায় সে নিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। এবং আমি তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। কলকাতা লোকসংস্কৃতি মঞ্চ থেকে ঐদিন সম্বর্ধনা পাওয়ার পর নরেন হাঁসদার মধ্যে বেশ উৎসাহ লক্ষ্য করা যায়। কলকাতার মতন লোক সংস্কৃতি মঞ্চ থেকে বিভিন্ন দেশের শিল্পীদের মধ্যে তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়ার জন্য।

ঐদিন কলকাতা লোক সংস্কৃতি মঞ্চ এর প্রধান অতিথি ও উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পুরুলিয়ার লোক শিল্পী  ও বিশিষ্ট সমাজকর্মী নরেন হাঁসদা, সম্মানীয় প্রধান অতিথি শুভেন্দু মাইতি লোকসংগীত শিল্পী, স্বপন বসু লোকসংগীত শিল্পী, উদ্বোধক সংগীত সবুজ ঘোষ, ঢোল বাদ্য ধনঞ্জয় রায় আসাম, নাজমুল হাসান প্রভাত বাংলাদেশ ও আরোও উপস্থিত ছিল বিভিন্ন দেশের সংগীত শিল্পী ও নৃত্যশিল্পী।





বীরভূম জেলার সিউড়িতে স্বাধীনতা সংগ্রামী বাজাল এর নামে মেলা

 বীরভূম জেলার সিউড়ির বড়বাগানের আব্দারপুর ফুটবল ময়দানে আয়োজিত হতে চলেছে ‘বীরবান্টা বাজাল মেলা-২০১৯’। ১৯শে জানুয়ারি এই মেলা আয়োজিত...