SANTHALDISHOM(সানতাল দিশোম): 09/24/18

Monday 24 September 2018

ভাষা আন্দোলন

Image may contain: 2 people
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গা একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলতে পারি। নিজের ভাইয়ের রক্ত দিয়ে মায়ের ভাষার অধিকার আদায়ের আরেক নাম একুশে ফেব্রুয়ারি। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি মাতৃ ভাষার দাবীতে রক্তাক্ত হয়েছিল বাংলার ভুমি, তারই পরিণামে তৈরি হয়েছিল বাংলাদেশ। ভাষা শুধু মাত্র মানব সভ্যতার কথা বার্তা আদান প্রদানের মাধ্যম বা শিক্ষার মাধ্যম নয়, একটি জাতীর ভাষার মাধ্যমেই তার ভাষা, ধর্ম-সংস্কৃতির বিকাশ ঘটে ।ভাষা হল জাতীর শিকড়, যে জাতীর ভাষা থাকেনা সেই জাতীর সমাজ সংস্কৃতি ধর্ম সবই পঙ্গু হতে বাধ্য ঠিক পোলিয় আক্রান্ত শিশুর মতোই বেঁচে থাকবে, পড়ন্ত বিকেলের সূর্যের মতো ডুবে যেতে শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র। সাঁওতালী ভাষা পৃথিবীর আদিমতম ভাষার মধ্যে একটি উল্লেখ যোগ্য ভাষা । সাঁওতালী ভাষাকে পৃথিবীর সমস্ত ভাষার ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়। আজ দেশ স্বাধীনতার ৭১ বছর পরেও আদিবাসী সাঁওতালদেরকে মাতৃ ভাষা শিক্ষার জন্য লড়াই করতে হচ্ছে এটা লজ্জার বিষয় ।আমরা কি সত্যিই স্বাধীন ?? তাহলে কেন একটা জাতীকে তার মাতৃ ভাষার জন্য লড়াই করতে হবে, এটা তখনই হয় যখন একটা জাতীর উপর ভিন্ন জাতীর ভাষা ধর্ম সংস্কৃতির আগ্রাসন যখন চলে। পশ্চিমবঙ্গের সাঁওতাল আদিবাসীরা মাতৃ ভাষা শিক্ষার জন্য বার বার দাবী করা সত্বেও বাংলা-কেন্দ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থায় বলপূর্বক এনে তাদের সংস্কৃতি, বৈশিষ্ট্য, ভাষা, ধ্বংস করা হচ্ছে। এক স্বাধীন দেশে ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক আদান প্রদান কক্ষনোয় একতরফা ভাবে কাম্য নয়। তাহলে কেন একতরফা সাংস্কৃতিক আদান প্রদান ? এটা আদান প্রদান বলা যায় না । এটা কে বলা হয় "চাপিয়ে দেওয়া ", এটা বাংলা সংস্কৃতির আগ্রাসন এবং ঔপনিবেশিক মানসিকতার পরিচয়। অষ্টম তফসিলভুক্ত একটি ভারতীয় ভাষা সাঁওতালীতে পঠনপাঠন সুপরিকল্পিত ভাবে সরকার চালু করতে ইচ্ছুক নয়।
আজকে যারা আদিবাসীদের সামাজিক সাংবিধানিক অধিকার কে উপেক্ষা করছেন; তাদের ভাষা সংস্কৃতি বৈশিষ্ট্য কে পদদলিত করে; তাদের ধর্মীয় আত্মপরিচয় কে মিশিয়ে দিয়ে; জাতি হিসাবে তাদের বাঁচার আকাঙ্ক্ষা কে হেয় করে 24-09-2018 তারিখ সাঁওতালদের ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহলের রেল ও সড়ক পথ অবরোধকে লাঠিপেটা করে তুলে দেওয়ার কথা বলছেন আপনারা হয়তো নিজেদের ইতিহাস ভুলে গেছেন কেননা রক্তে রাঙ্গা একুশে ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ মাতৃ ভাষা আন্দলনের ইতিহাস আপনাদেরই লেখা। আপনারা সবাই জানেন পশ্চিম বঙ্গে বাংলা ভাষার পরেই সর্বাধিক মানুষ সাঁওতালী ভাষায় কথা বলেন । কথ্য ভাষার দিক থেকে পশ্চিম বঙ্গে সাঁওতালি ভাষা দ্বিতীয় । ১৯৬১ পঃবঃ ভাষা আইন সংশোধন করে সাঁওতালি মাধ্যমে সম্পূর্ণ রূপে পড়াশুনা শুরু হলে বর্তমানে আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় যে হারে বাংলায় পড়াশুনা করছে তার কিছুটা হলেও ব্যঘাত ঘটবে এটা নিঃসন্দেহে বলা যায় । এ ছাড়াও সাঁওতালী ভাষীদের শিক্ষক শিক্ষিকাদের জন্য এক বিশাল কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রও তৈরি হবে, আদিবাসী সাঁওতালদের উপর চলা ভিন্ন ভাষা-ধর্ম-সংস্কৃতির আগ্রাসন থেকে মুক্তি পাবে এবং সর্বোপরি আদিবাসী সাঁওতাল জাতী হিসাবে তার সমাজ ধর্ম সংস্কৃতি নিয়ে মাথা উচু করে বেঁচে থাকবে ।
আদিবাসী সাঁওতাল সংস্কৃতিকে দাবিয়ে রেখে সাঁওতালদের মূল্যবোধ কে যতই কিনে নেবার চেষ্টা করা হোক না কেন আজকে সাঁওতালরা অনেক সচেতন আর তার প্রতিফলনই হল মাতৃ ভাষা আন্দোলন এবং 24-9-2018 তারিখের রেল ও জাতীয় সড়ক পথ অবরোধ । সাঁওতাল জাতীয়তাবাদ প্রতিটি আদিবাসী সাঁওতাল গণের অন্তরের অন্তঃস্থলে প্রথিত। শত ঝড় ঝাপটা অত্যাচার বিচ্ছিন্নতার মধ্যেও এই বোধ কে শক হূন পাঠান মুঘল ফরাসি ইংরাজ ধ্বংস করতে পারেনি। সাঁওতাল আদিবাসী জাতীয়তাবাদ সুপ্ত আগ্নেয়গিরির মতো বর্তমান।শতাব্দী প্রাচীন এই বীজ কে যতই আলো বাতাস হীন পরিবেশে প্রোথিত করা হোক, অঙ্কুরিত সে ঠিক হবেই। আদিবাসী সাঁওতালরা তাদের সমস্ত সাংবিধানিক অধিকার যথার্থ মর্যাদা পূর্বক আদায় করতে সচেষ্ট। সেই প্রাচীন কাল থেকেই ঐক্য বদ্ধ আদিবাসী জাতীয়তা বোধকে পাথেয় করে একসাথে সাঁওতালদের পথ চলা শুরু কক্ষনো কোন মুহূর্তে তাদের আদিবাসী জাতী সত্ত্বাকে বিসর্জন দিতে রাজি নয়, ঐক্য বদ্ধ আন্দোলনই হবে আগামি দিনের অসীম সম্ভাবনাময় আলোক বার্তা ।

বীরভূম জেলার সিউড়িতে স্বাধীনতা সংগ্রামী বাজাল এর নামে মেলা

 বীরভূম জেলার সিউড়ির বড়বাগানের আব্দারপুর ফুটবল ময়দানে আয়োজিত হতে চলেছে ‘বীরবান্টা বাজাল মেলা-২০১৯’। ১৯শে জানুয়ারি এই মেলা আয়োজিত...