আদিবাসী মূল বাসী আজ সত্যিই কি ধর্মান্তরিত হওয়ার পথে ? আদিবাসীরা কি সত্যিই অনুপ্রবেশকারী? আদিবাসীদের দেশ তাহলে কোথায়? প্রাচীনকালের প্রাচীন অধিবাসী আদিবাসীরাই কি? তাহলে কেন আজ আদিবাসীরা বঞ্চিত? তাহলে কি দ্য সিটিজেনশিপ আমেন্ডমেন্ট বিল (CAB) বা নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল অনুসারে আদিবাসীরা ধর্মান্তরিত হওয়ার পথে? এরকম আরো নানান প্রশ্ন আদিবাসী সমাজ ও বুদ্ধিজীবী মহলে ঘুরপাক খাচ্ছে। তাহলে কি আদিবাসীদের বাদ দিয়ে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল অনুসারে হিন্দু ,খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন এবং পারসি এই ছটি ধর্মকে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে? তাহলে আদিবাসীরা কোথায় থাকে? তাদের আদৌও কি নাগরিকত্ব দেওয়া হবে? নাকি ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখা হবে? নাকি দেশ থেকে তাড়ানো হবে? এখানে বলে রাখা দরকার আফগানিস্থান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ এই ৩ টিই মুসলিম কান্ট্রি। তাহলে আদিবাসীদের দেশটি কোথায়?সব থেকে বেশি সমস্যার মুখে পড়তে হবে আদিবাসীদের তাদের কোথাও যাওয়ার জায়গা থাকবেনা। ওই ছয় ধর্মের বাইরে, তাদের নিয়ে এখনো পরিষ্কার কিছু বলা হয়নি। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল অনুসারে আদিবাসী সমাজের বুদ্ধিজীবীদের মাথায় এখন হাত। সত্যিই কি আদিবাসীদের এদেশে থাকার জন্য অন্য ধর্মে ধর্মান্তরিত হতে হবে? না নিজের ধর্মকে রক্ষা করার তাগিদে অন্যত্রে দেশ ছেড়ে চলে যেতে হবে?যে দেশ কে রক্ষা করার জন্য ইংরেজদের বিরুদ্ধে আদিবাসীরা জীবন দিয়েছে এবং সে দেশে আজ আদিবাসীদের নাগরিকত্ব নিয়ে অনিশ্চিত। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে এই ভারত বর্ষ কে স্বাধীন করার জন্য টিলকা মাঝির নেতৃত্বে ১৭৮৫ সালে, সিধু কানুর নেতৃত্বে ১৮৫৫ সালে এবং বিরসা মুন্ডার নেতৃত্বে ১৮৯৯ সালে ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল প্রথম আদিবাসী জনগোষ্ঠী। আর আজ সেই স্বাধীন ভারতবর্ষে আদিবাসীদের নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে ভবিষ্যৎ কি হবে? এ নিয়ে আজ পর্যন্ত পার্লামেন্টেও কোন আদিবাসী এমপি নিজের জাতিসত্তার জন্য মুখ খুলেনি।
২২শে ডিসেম্বর সাঁওতালি ভাষা বিজয় দিবস।এবং এই দিনটি কে আদিবাসী সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মানুষরা নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতিবছর পালন করে থাকে। ২০০৩ সালের ২২শে ডিসেম্বর সংবিধানের অষ্টম তফসিলিতে সাঁওতালি ভাষা স্বীকৃতি পায়। সাঁওতাল সম্প্রদায় মানুষের কাছে এই দিনটিকে স্মরণীয় দিন হিসেবে প্রতিবছর নানান সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেশের প্রতিটি জায়গাতে পালন করা হয়। এমনই প্রতিবছর ওই দিনে পালিত হয়ে আসছে সাঁওতালি বই মেলা পশ্চিম মেদিনীপুরের গোয়ালতোড়ে।এই বছর এই সাঁওতালি বই মেলা চার বছরে পদার্পণ করল। আগামী ২২শে ডিসেম্বর থেকে ২৬ শে ডিসেম্বর পর্যন্ত এই বইমেলা চলতে থাকবে। গোয়ালতোড় সিধু কানু হুলসায় গাঁওতার উদ্যোগে প্রতিবছর চার দিনব্যাপী এই বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়। এই বই মেলায় বই ছাড়াও আদিবাসী সাঁওতাল সম্প্রদায়ের নানান সামাজিক সাংস্কৃতিক জিনিস ও বাদ্যযন্ত্রের স্টল বসানো হয়। এছাড়াও এই চারদিনব্যাপী আদিবাসীদের নানান সমাজ সচেতন মূলক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। বহু দূর-দূরান্ত থেকে এই বই মেলায় সাঁওতালি ভাষা প্রেমী মানুষ, সাহিত্যিক, লেখক, কবি ও সমাজসেবী রাও উপস্থিত হয়।
আগামী ২২শে ডিসেম্বর সাঁওতালি ভাষার বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে এবং সাঁওতালি ভাষা অলচিকি লিপির শতবার্ষিকী সাফল্য করার লক্ষে ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল এর সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হল। গত ৮ই ডিসেম্বর রবিবার কেশপুর বাবন ভুয় মুলুকের ৮নং পন্ডিত রঘুনাথ মুরমু লিখন গড়হন পীড়ের কাপাস টিকরী গ্রামে এই আলোচনা সভাটি হয়। এদিন ওই পীড়ে মাঝি বাবাদের সঙ্গে সঙ্গে মাঝি হপন ও হপন এরা রাও উপস্থিত ছিল।
২২শে ডিসেম্বর সাঁওতালি ভাষার বিজয় দিবস উদযাপনকে কেন্দ্র করে এদিন পারগানা ও মাঝি বাবাদের সঙ্গে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়।এ দিনটি আদিবাসী সাঁওতাল সমাজের এক ঐতিহাসিক দিন এবং সেই ঐতিহাসিক দিনকে প্রতিবছর স্মরণীয় করে রাখার জন্য মাঝি বাবাদের এই বিশেষ আলোচনা সভা বলে জানা যায় সংগঠনের পক্ষ থেকে। তাছাড়া এদিন সংগঠনের পক্ষ থেকে জানা যায় যে আগামী ২০২৫ সাল অল চিকি লিপির শতবার্ষিকী । এবং সেই শতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রতিটি গ্রামে অল চিকি সাক্ষরতা যাতে করা যায় সেনিয়ে ঐদিন আলোচনা করা হয়।
প্রতিটি গ্রামে গ্রামে ১০০% অল চিকি সাক্ষরতা মিশন অভিযান চালানো হবে। এদিন এই আলোচনায় কেশপুর বাবন ভুয় মুলুকের মুলুক কমিটি পুনর্গঠন নিয়েও আলোচনা করা হয় সংগঠনের পক্ষ থেকে। এদিন এই আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল এর অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার জগপারগানা মনোরঞ্জন মুর্মু,মেদিনীপুর সদর তল্লাট পারগানা স্বপন মান্ডি এবং এছাড়া উপস্থিত ছিল ওই মুলুক ও পীড়ের পারগানা ও মাঝি বাবারাও।
#বাঁকুড়া২৪X৭প্রতিবেদন : এবার সাঁওতালী ভাষাকে অফিস,আদালত ও সরকারী কাজে অন্তর্ভুক্ত করার দাবীতে আন্দোলনে নামল সারা ভারত কৃষক মজদুর সভা। বুধবার এই দাবীর পাশাপাশি, ক্ষেত মজুরদের সরকারী নির্ধারিত হারে মজুরী প্রদান,কৃষকদের পেনশনের আওতায় আনা,ক্ষেতমজুরদের জন্য সর্বাঙ্গীন সামাজিক কল্যানকর আইন তৈরি, কৃষকদের বার্ধক্য ও বিধবা ভাতার পরিমান দ্বিগুণ করা,সমস্ত প্রবীন নাগরিকদের মাসে দেড় হাজার টাকা করে ভাতা চালি,প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্তর পর্যন্ত অলচিকি মাধ্যমে পঠনপাঠনের ব্যবস্থা করা সহ এক গুচ্ছ দাবীতে সংগঠনের সারেঙ্গা ও রাইপুর শাখার থেকে আজ রাইপুর বিডিওকে একটি স্মারকলিপিও দেওয়া হয়।
সোহরায়
আদিবাসী জনগোষ্ঠি সাঁওতালদের প্রধান উৎসব সহরায়। সহরায় উৎসব হয়ে থাকে
কার্তিক মাসে। তাই সাঁওতালি বর্ষপুঞ্জিতে কার্তিক মাসকে ‘সহরায় বঙগা’ বলে।
তবে অর্থনৈতিক কারণে বাংলাদেশের সাঁওতালরা পৌষ মাসে সহরায় পালন করে থাকে।
সাম্প্রতিক পৌষ সংক্রান্তিতে সারা বাংলাদেশের সাঁওতালদের মাঝে একযোগে
সহরায় পালনের প্রচেষ্টা দেখা যাচ্ছে। সহরায় উৎসবে মানুষসহ গৃহপালিত
প্রাণিরও মঙ্গল কামনা করা হয় ঠাকুর জিউ-ঠাকরাণ(স্রষ্টা) এবং
বঙগা(দেবতা)দের কাছে।
সময়
সান্তালদের
সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব সহরায়।এই উৎসব কার্তিক(অক্টোবর-নভেম্বর) ও
পৌষ(ডিসেম্বর-জানুয়ারি) মাসে হয়।প্রথমটিকে বলা হয় 'সারি সহরায়' এবং
দ্বিতীয়টিকে বলা হয় 'সাকারাত সহরায়'। কেন এবং কখন থেকে এই বিভক্তি এ
সম্পর্কে স্পষ্ট তথ্য পাওয়া যায়না। তবে ধারণা করা হয় অর্থনৈতিক কারনেই
এই বিভক্তি হতে পারে। তবে প্রতি বছর যেকোন একটি পালন করা হয়ে থাকে।
পালনরীতি
বিভিন্ন
দলিল, শ্রুতি ও সহরায় গান থেকে জানা যায় সান্তাল সমাজে সহরায় পাঁচ
পর্বের।এই পাঁচ পর্ব পাঁচ দিন ধরে পালন করা হয়। সময়ের প্রয়োজনে অনেক
গ্রামেই তিন দিনে এই পাঁটি পর্ব পালন করা হয়ে থাকে। পর্ব গুলো হলো-
উম
দাকা
খুন্টাউ
জালে
সাকরাত
উম
সহরায়ের
প্রথম দিনকে বলা হয় ‘উম মাহা’ যার অর্থ শুচিকরণ বা পবিত্র দিন। এই দিনে
ঘরবাড়ি ও পোশাক পরিচ্ছদ পরিষ্কার করার কাজ সমাপ্ত হয়। এই দিনে গ্রামের
বাইরে যেকোনো জায়গায় অস্থায়ী পূজার স্থান নির্ধারণ করা হয়। যাকে বলা
হয় ‘গট’ বা ‘গট টৗন্ডি’। নায়কে(পুরোহিত)সহ গ্রামের সকালে স্নান করে নতুন
পোশাক পরে গট টৗন্ডিতে যায়। সেখানে নায়কে কলা, বাতাসা অন্যান্য ফলে
প্রসাদ দিয়ে পূজা করেন এবং গ্রামের সব বাড়ি থেকে নিজ নিজ নিয়ে আসা কবুতর
অথবা মুরগি স্রষ্টা ও দেবতার নামে উৎসর্গ করেন। কোথাও সবার অনুদানে কবুতর ও
মুরগি কেনা হয়ে থাকে। গ্রামের সকল মানুষ ও গাবাদি পশু এতদিন সুস্থ ছিল সে
জন্য নায়কে সেখানে ঠাকুর-ঠাকরান ও মারাং বুরু(প্রধান দেবতা) সহ সকল
বঙগাদের ধন্যবাদ জানান এ সময় । সেই সাথে ভবিষতের মঙ্গল কামনা করেন। তারপর
কুডৗম নায়কে(সহকারী পুরোহিত) একটু পৃথক জায়গায় প্রার্থনা করেন গ্রামে
যেন কোন রোগ, মহামারি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ না আসে। সেই সাথে প্রার্থনা
করেন বিভিন্ন জায়গায় অবস্থিত সাঁওতালসহ বিশে^র সকল মানুষের মঙ্গল। তারপর
উৎসর্গকৃত মুরগি ও কবুতর দিয়ে পোলাও তৈরি করা হয় গ্রামের সকলের জন্য।
দুপুরের খাওয়া হয় সেখানেই। এরপর বাইরে চরানো গ্রামের গাবাদি পশুগুলোকে
নিয়ে আসা হয় পূজার স্থানে। পূজার জন্য ব্যবহৃত কলার পাতা যে গাবাদি পশু
খাবে তাকে মাথায় সিঁদুর দেওয়া হয়। তার মালিককে সুভাগ্যবান মনে করা হয়।
কেননা এটাকে ঐ ব্যক্তির ভবিষৎ মঙ্গলের লক্ষণ মনে করা হয়। সেই খুশিতে মালি
পরের বছরের সহরায়ে বড় কোনো অনুদান দেওয়ার কথা দেন। তারপর সবাই নাচ গান
করতে করতে গ্রামে ফিরে আসে। সব শেষে বাড়িতে এসে প্রত্যেক বাড়ির গৃহ কর্তা
নিজ নিজ বাড়ির ভেতরে মারাং বুরু
ও পরিবারে মৃত ব্যক্তিদের আত্মার উদ্দেশ্যে হান্ডি(বিশেষ ধরনের পানীয়)
উৎসর্গ করে এবং তারাও যেন তাদের জগতে আনন্দের সাথে সহরায় করে এই কামনা
করে। তারপর অবশিষ্ট্য হান্ডি পরিবারের সবাইকে দেওয়া হয়।
দাকা
সহরায়ের
দ্বিতীয় দিনকে বল হয় বঙগা মাহা(দেবতা দিবস) ও দাকা মাহা(ভোজ দিবস)। এই
দিনে প্রতি বাড়িতেই আত্মীয় সজন চলে আসে। এই দিনে বিশেষ গুরুত্ব পান মেয়ে
জামাই। তাকে পা ধুয়ে বরণ করা হয় এবং নতুন কাপড় উপহার দেওয়া হয়। পা
ধোওয়ার দায়িত্ব থাকে শালীকার। অনুপস্থিতিতে বাড়ির অন্য মহিলারা দায়িত্ব
পালন করে। এই দিনে ব্যাপক খাওয়া দাওয়ার আয়োজন করা হয়। বিকাল থেকে
সন্ধ্যা পর্যন্ত জগমাঞ্জহির বাড়ি থেকে শুরু করে গ্রামের এক প্রান্ত থেকে
আর এক প্রান্ত পর্যন্ত নাচ গান হয়। আবার জগমাঞ্জহির বাড়িতে গিয়েই সমাপ্ত
করা হয়।
খুন্টাউ
সহরায়ের
তৃতীয় দিনকে বলা হয় ‘খুন্টাউ’ যার অর্থ গাবাদি পশুকে ঘাস খাওয়ানোর জন্য
বাইরে বেধে রাখা। এর আগের দিন ময়দা পানি দিয়ে গোওয়াল ঘরের দুওয়ারে
সাঁওতালদের পদবী ভেদে ভিন্ন ভিন্ন বিশেষ নকশা আঁকা হয়। এই দিন সকালে
গাবাদি পশুর মাথায় শিঙে ধানের শিশের মাল পিঠা বেধে দিয়ে বের করে দেওয়া
হয়। তারপর নায়কে, জগমাঞ্জহি ও অন্যান্য দায়িত্ব প্রাপ্ত ব্যক্তিসহ
গ্রামের অনেকে বাড়ি গিয়ে গোওয়াল ঘরের সামনে গাবাদি পশুর মঙ্গল কামনা করে
গানের মাধ্যমে বন্দনা করে। প্রতি বাড়িতেই তাদের আপ্যায়ন করা হয়। এই
দিনও বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জগমাঞ্জহির বাড়ি থেকে শুরু করে গ্রামের
এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্ত পর্যন্ত নাচ গান হয়। আবার জগমাঞ্জহির
বাড়িতে গিয়েই সমাপ্ত করা হয়।
জালে
সহরায়ের
চতুর্থ দিনকে বলা হয় ‘জালে’ যার অর্থ তৃপ্তি ভোরে খাওয়া। এই দিনে সবাই
সবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে হান্ডি পান করে। এই দিনও বিকাল থেকে সন্ধ্যা
পর্যন্ত জগমাঞ্জহির বাড়ি থেকে শুরু করে গ্রামের এক প্রান্ত থেকে আর এক
প্রান্ত পর্যন্ত নাচ গান হয়। তবে জগমাঞ্জহির বাড়িতে না গিয়ে
মাঞ্জহি(গ্রাম প্রধান)র বাড়িতে গিয়েই সমাপ্ত করা হয়। এই দিন মাঞ্জহির
বাড়িতে পিঠা ও মুড়ি দিয়ে সবাইকে আপ্যায়ন করা হয়। যারা হান্ডি পান করে
তাদের হান্ডি দেওয়া হয়।
সাকরাত
সাকরাত
কে ভিন্ন উৎসব হিসেবেও পালন হয়ে থাকে। তবে যে সব জায়গায় কার্তিক মাসের
পরিবর্তে পৌষ মাসে সহরায় পালন করা হয় সেখানে এই চারটি দিনের সাথে আর একটি
দিন যুক্ত করা হয়। সেটা হলো ‘সাকরাত’ যা অর্থ সমাপ্তি বা সংক্রান্তি। এই
সাকরাত উৎসবের মাধ্যমে সাঁওতালি বর্ষে সমাপ্ত হয়। এই দিনে গ্রামরে
পুরুষেরা শিকার করতে যায়। শিকার থেকে ফিরে এসে নাচ গানের মাধ্যমে তাদের
গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর হাত পা ধুয়ে যে যার বাড়ি যায়। তারপর তীর
ধনুক নিয়ে ‘বজহা তুঞ’ করতে যায়। বজহা তুঞ হচ্ছে একটি কলা গাছকে অশুভ
শক্তির প্রতীক হিসেবে তার উদ্দেশে তীর নিক্ষেপ করা। যে কলা গাছকে তীরবিদ্ধ
করতে পারে তাকে জগমাঞ্জহি ঘাড়ে করে গ্রাম পর্যন্ত নিয়ে আসে। কলাগাছকে ৭টি
ভাগে ভাগ করে নাগরা বাজাতে বাজাতে গ্রামরে দায়িত্ব প্রাপ্ত সাত
জনের(নায়কে, জগমাঞ্জহি, মাঞ্জহি, পারানিক, জগপারানিক, গডিৎ, কুডৗম নায়কে)
বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়।
আবার কোথাও কোথাও এই পাঁচ দিনের সাথে আরও একদিন পালন করা হয়। যাকে বল হয় 'হাকো কাটকম' যার অর্থ 'মাছ কাকড়া'। এই দিনে দল বেধে মাছ ধরতে যায় গ্রামের অনেকেই।
সব শেষে বলা যায় সহরায় উৎসবের গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এই উৎসবে শুধু
মানুষে অংশগ্রহণে পূর্ণতা লাভ করেনি। এখানে গাবাদি পশুর জন্যও একটি অংশ
রাখা হয়েছে। কেননা এই গাবাদি পশুর মাধ্যমে চাষ আবাদ থেকে শুরু করে একটি
পরিবারের অনেক অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধিত হয়। আপদ বিপদ থেকে গাবাদি পশুর
বিনিময়ে অনেক সময় মানুষ মুক্তি পায়। সহরায় আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়
শুধু মানুষ নয় সকল প্রাণিই প্রকৃতির সন্তান। তাই সব আনন্দই সবার মাঝে ভাগ
করা উচিৎ।
মহামিলনের বীজ মন্ত্রে দীক্ষিত মানব সমাজ একে অপরের পরিপূরক ৷ অন্যান্য ভাষাভাষীর মতোই আদি সমাজ জীবনেও খুশির প্রাবল্য ধরা পড়ে সারি সহরায় পরব বা উৎসবে ৷৷
সারি অর্থ্যাৎ সত্য, আর সহর+ আয়(লাভ/উপার্জন ) =সহরায় ৷
সহর এর আক্ষরিক কোনো অর্থ বাংলা শব্দ ভান্ডারে নেই ৷ তবে আদিবাসী সাঁওতালি শব্দ সহর অর্থে আগমন বোঝায় ৷ সহরেনায় বা সহর সেটেরেনায় ৷শহর ও সহর শব্দ দুটি বিশেষ্য পদ,এবং ফার্সি গোত্রিয় ৷ প্রাচীন সিন্ধু বা হরপ্পা মহেঞ্জোদারো সভ্যতায় তিন ধরনের সামাজিক বিন্যাস চোখে পড়ে ৷ সহর অর্থে শষ্যপূর্ন আধার কে বোঝানো হয়েছে ৷ আর শহর অর্থে নগর কে বোঝানো হয়েছে ৷
আদিবাসী ঘরানায় সহরায় (কার্তিক)মাস বর্তমান ৷ কার্তিক মাস জুড়ে শষ্যপূর্ন ভান্ডার ভরে ওঠে ৷ সেই জন্যই পুরো মাসের নাম সহরায় ৷
আদিবাসী মাইথোলোজিতে দেখা যায় গিরু নাই এর উপস্থিতি ৷ লোহিত সাগর আর সিন্ধু নদ এর তীরে আদিবাসী অনার্যরাই প্রথম কৃষির পত্তন করেছিল ৷
সব মিলিয়ে এ কথায় প্রমান করে আদিবাসী মাইথোলোজিতে শষ্যপূর্ন আধার কে সামনে রেখে তৎকালিন কৃষিজীবি মানুষ মাসের নাম সহরায় (কার্তিক) রেখেছিল ৷ আর ফসল ভরে ওঠার কাল কে সত্য অর্থাৎ সারি বলে মান্যতা দিয়েছিল , আবাহন করেছিল ,বন্দনা করেছিল ৷ আদিবাসী মানুষ সত্যের উপাসক ,তাঁরা সবকিছুতে সত্যকে প্রতিষ্ঠা করেন !তাই হয়ত কৃষি বন্দনার মাসটিতে তাঁরা শষ্যপুর্নতার কারন সমূহের সারসত্ব কেই সারি অর্থে স্বীকৃতি দিয়েছেন ৷
সহরায় উৎসবে গোরুকে বন্দনা করার চল প্রচলিত ৷ শষ্যপূর্ন্য গোলা ভরে উঠতে লাঙ্গল বলদের ভূমিকা ছিল ৷ তাই নিজেদের অানন্দ যজ্ঞে সেই পশুদের অবদানকেও স্বীকার করে পৃথিবীর এই প্রাচীন জনপদ ৷
গো জাগরন (জাগানো )করে তাদের কে চুমাড়া (বন্দনা)করে ৷ তাদের প্রাকৃতিক রং দিয়ে ছাপ দেওয়া হয় গোটা গায়ে ৷ আমরা যেমন নূতন পোশাকে সেজে উঠি তাদেরকেও সাজানো হয় ৷ এই সময় গোায়াল ঘরের দুয়ারে ঘাসের আঁটি বাঁধা হয় ৷ধান, দূর্বা , এবং প্রদীপ জ্বালিয়ে তাদের সিং এ তেল মাখানো হয় ৷শষ্যপূর্ন গোলার পিছনে তাদের ভূমিকা অপরিসীম ৷ কি অসাধারন গার্হস্থ জীবন চর্চা ৷ দুধি লটা (বন্য লতা) ওই লতা থেকে দুধের মতো আঠালো রস বের হয় বলে এই নাম ৷দুধ +লতা=দুধলতা অপভ্রংসে দুধের লতা বা দুধিলটা ৷ দুধিলটা গলায় পরিয়ে বলদের সঙ্গে গাভীর বিবাহ দেওয়া হয় ৷ এখানেও সামাজিক রসবোধের পরিচয় পাওয়া যায়
সৃষ্টির ধারা বজায় রাখার প্রথাকে মান্যতা দেওয়া পশুদের ক্ষেত্রেও ৷ জীবনাদর্শের পরতে পরতে বাস্তুতন্ত্রের এমন প্রতিফলন শিক্ষনীয় ৷ ছবি ঋণ : পল্লব মন্ডল
( পরবর্তী সংখ্যায় বাকি টা)
#রাঁচি: গো-হত্যার অভিযোগে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে খুন করা হল ঝাড়খণ্ডের গুমলা জেলায় ৷ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন আরও তিনজন ৷ মৃত ব্যক্তির নাম প্রকাশ লাখরা ৷
পুলিশ সূত্রে খবর, বুধবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে ৷ গো-হত্যার অভিযোগে আচমকা গ্রামের বেশ কয়েকজন এসে ওই চার ব্যক্তির সঙ্গে বচসা শুরু করে ৷ এরপর তাদের উপর চড়াও হয় ৷ বেধড়ক মারধার করা হয় ৷ ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয় একজনের ৷ বাকি তিনজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ৷ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ ৷ অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চালানো হচ্ছে
অযোধ্যা পাহাড়ে এফআরএ’র সাংবিধানিক অধিকার লুণ্ঠন করে জঙ্গলে বসবাসকারী আদিবাসীদের তাড়িয়ে অন্ততঃ ১০ লক্ষ গাছ ধ্বংস করার প্রকল্প হল ঠুরগা পাওয়ার ড্যাম প্রকল্প। পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ের সাধারণ মানুষ জমির লড়াইয়ের পাশাপাশি চালাচ্ছেন কোর্টের লড়াইও।
গত ১১ এপ্রিল সরকার পক্ষের উকিল অনুপস্থতিত হওয়ায় ১২ এপ্রিল আবার শুনানি হলো। বিচারক দেবাংশু বসাকের এজলাসে পুরুলিয়া জেলা শাসকের পক্ষের উকিল অবশেষে স্বীকার করেই নিলেন যে, জেলাশাসকের দফতর থেকে অযোধ্যায় প্রকল্পগুলির যে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছিলো তাতে রয়েছে অনেক ‘ভ্রান্তি’। বলার অপেক্ষা রাখে না এই ‘ভ্রান্তি’ আসলে পরিকল্পনা মাফিক দুর্নীতি। ইতিমধ্যেই জেলাশাসক তার অধঃস্তন আধিকারিকদের চাপ দিয়েছিলেন ফরেস্ট ক্লিয়ারেন্সের ব্যাপারে। দ্রুত ক্লিয়ারেন্স দিতে হবে এই মর্মে তিনি ম্যান্ডেটও জারী করেছেন অতীতে। এই কথাগুলি যে আসলে সত্যি সেটিই কোর্টে প্রমানিত হলো। আগামী শুনানি বুধবার।
পরিবেশ আন্দোলন-কর্মী সৌরভ প্রকৃতিবাদী আমাদের জানান, জেলাশাসক প্রশাসনের অন্তর্ভুক্ত একজন উচ্চপদস্থ আধিকারিক। তার ওপর ন্যাস্ত থাকে সাংবিধানিক অধিকার রক্ষার দায়। সেই এই ‘ভ্রান্তি’ আসলে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রশাসনিক স্বৈরচারিতার প্রকাশ। রাজ্য সরকার এই অসংবিধানিক কাজ করার জন্য আগামী দিনে অভিযুক্ত হবেন এই আশা রাখি। সেই সঙ্গে আমাদের প্রত্যাশা অযোধ্যা পাহাড়ের জঙ্গল-নির্ভর আদিবাসী মানুষের সাংবিধানিক অধিকার রক্ষিত হবে এবং জল-জঙ্গল-নদী প্রকৃতির অধিকার রক্ষিত হবে।
সাঁওতাল সমাজের সাথে বিশ্বাসঘাতকতার দায়ে ঝাড়্গ্রাম লোকসভার তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী রবিন টুডুর স্ত্রী বিরবাহা সরেন(টুডু) কে একটি ভোটও নয়। এমনই আবেদন জানিয়ে WhatsApp এ একটি হ্যান্ডবিল ভাইরাল।
The Santal indigenous welcomed spring in a festive manner through “Baha Porob,” traditional spring celebration
The Santal indigenous community in Gobindaganj subdistrict of Gaibandha district welcomed spring in a festive manner through “Baha Porob,” traditional spring celebration on 12 March.
Baha means flower in the Santal language, for which the festival is also known as festival of flower
The Baha Porob celebration community organized the festival jointly with Obolombon, a non-profit organization, with support from the Human Rights Programme of the United Nations Development Programme (UNDP).
People of the Santal community joined the festival with enthusiasm. Santal women wore flowers, and danced and sang which created the festive mood.
Besides villagers, various Santali cultural groups and artistes performed on the occasion. Everybody was mesmerized by their performances on Santali music and dance.
The program was presided over by Philemon Basak, president of the celebration committee. Gaibandha-4 MP Monowar Hossain Chowdhury was present on the occasion as chief guest while municipal Mayor Ataur Rahman was present there as special guest.
Shankar Pal and Mahbubul Haque from UNDP, advocate Sirajul Islam Babu, researcher Kerina Hasda, Prisila Murmu, Naren Basak, president of Pargana Parishad were also present during the festival, among others.
Sohrai ( ᱥᱚᱦᱨᱟᱤ ᱯᱟᱨᱟᱵ ) is the principal and the most important public event of the Santals; it is also the largest of the festivals. Sohrai is usually celebrated in the month of Pous (December-January) when the paddy has been reaped, thrashed and stored.
During the Sohrai the village spirits and the ancestor spirits are worshipped and thanked; the rituals include sacrificing of fowls.
Sohrai Harvesting Festival Of Santhals House Art Painting
Sohrai celebrations usually continue for six days - each day having special activities. The important and the usual components of Sohrai festival include blessing and baiting of cattle (gai-dangra sunum ojok'ar charhao) fishing expedition (hako-katkom) and a village hunt (Sendra).
Sohrai is the biggest annual event for the Santals to relax and enjoy. During this period the married daughters return to their houses and relatives from other villages also come with gifts. It is the biggest community celebration during which the whole community eat and drink, dance and sing and make merry.
This is the occasion for the great communion whereby the whole villagers with their relatives along with the ancestors and the spirits come together to join in the merriest of festivities.
''বাইরে থেকে মিষ্টিসুরে আওয়াজ এল, 'বাবু, ডেকেছিস কেনে।'/বেরিয়ে এসে দেখি ক্যামেলিয়া/ সাঁওতাল মেয়ের কানে,/ কালো গালের উপর আলো করেছে।" সাঁওতাল মেয়েকে নিয়ে এমন মধুর বর্ণনা পাওয়া যায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'ক্যামেলিয়া' কাব্যে। এবার সেই সাঁওতাল মেয়েরা সেজেছেন শালফুলের সাজে। পার্বতীপুরের চন্ডিপুর ইউনিয়নের বারকোনা কলম সরেন-আলমা সরেন মাঠে গতকাল শুক্রবার শুরু হয়েছে সাঁওতালদের দুই দিনব্যাপী বাহা পরব উৎসব। উৎসবের প্রথম দিন সাঁওতাল মেয়েদের এমন বাহারি সাজে দেখা মিলল। তবে উৎসবের আগে সাঁওতালরা শিকারে যান না; ফুলের মধুও পান করেন না। এমনকি মেয়েরা শালফুল মাথায় দেন না। সাঁওতালদের সেই পুরনো জৌলুস ফিরিয়ে আনতেই এ উৎসব। ভারতসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আদিবাসী সাঁওতালসহ নানা সম্প্রদায়ের হাজারো মানুষ এসেছেন উৎসবে।
ফাল্কগ্দুন মাসের পূর্ণিমা তিথির পর সাঁওতালরা তাদের এই দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎসব পালন করে থাকে। বাহা পর্বের প্রথম দিনকে বলা হয় উম আর দ্বিতীয় দিনকে বলা হয় বাহা সারদী। বাহা পর্বের জন্য নির্দিষ্ট পূজার স্থান তৈরি করা হয়, যাকে বলে জাহের থান। গ্রামের নাইকে অর্থাৎ পুরোহিত সাদা ধূতি পরে যান পূজার ঘরে। নাইকে হাতে কাঁসার থালায় সিঁদুর, কলা, ধূপ, শালফুলসহ নতুন নতুন ফুল। সেখান থেকে নাইকে পূজা করে গ্রামে ফিরে আসেন। পূজা শেষে গ্রামের ছেলেরা যান শিকারে। ফিরে আসেন সন্ধ্যার আগে। এর পর নাইকের বাড়িতে জমায়েত হন। সেখানে নেচে-গেয়ে মেতে ওঠেন তারা। এ সময় সাঁওতালের তিন দেবতা জাহের এঁরা (গ্রামের দেবী), মারাঙবুরু ( প্রধান দেবতা), পারগানা বঙ্গা (এলাকার দেবতা) তিন যুবকের ওপর ভর করেন। জাহের এঁরা পুরোহিতের কাছে সাকম (হাতের বালা) দাবি করেন। মারাঙবারু তীর-ধনুক এবং পারগানা বঙ্গা ডালি ও ঝাড়ূ দাবি করেন। এর পর সবাই মিলে পূজার স্থানে চলে যান। সেখানে সবাই মিলে গান ধরেন। গানে তারা তিন দেবতার কাছে গ্রামের মানুষের সুখ-শান্তি কামনা করেন। রোগ-শোক দূর এবং বৃষ্টি-বাদলে জমির ফসল যাতে ভালো হয় এই কামনা করে দেবতাদের বিদায় জানানো হয়। এরপর চলে গাছে গাছে নতুন ফুল ফোটার গান ও নাচ।
উৎসবের উদ্বোধন করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার। প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। উৎসব উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক বাসন্তী মুরমুর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী পর্বে বক্তব্য দেন দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক মাহমুদুল আলম, উপজেলা চেয়ারম্যান হাফিজুল ইসলাম প্রামানিক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেহানুল হক, গ্রামবিকাশ কেন্দ্রের পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন, গবেষক ও কথাসাহিত্যিক ড. মাসুদুল হক, আমজাদ হোসেন, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন ও সাধারণ সম্পাদক সবিন চন্দ্র মুন্ডা। প্রথম দিনের বাহা উম অনুষ্ঠানে ভারতের রথিন কিসকু, ডগর টুডু, বিজলী মুরমু, রামেশ্বর
মুরমু ও তার দলের পরিবেশনায় সাঁওতালি এবং বাউল শিল্পীদের মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।
মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার বলেন, বর্তমান সরকার আদিবাসীদের অধিকার রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে। এ দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই। ধর্ম যার যার, উৎসব সবার।
প্রধান অতিথি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, সমতলের আদিবাসীদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। আদিবাসী তরুণ-তরুণীরা শিক্ষায় এগিয়ে গেছে। বিভিন্ন চাকরিতে তাদের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।
জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন বলেন, আদিবাসীদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষায় সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। সেই সঙ্গে ভূমি কমিশন, পৃথক মন্ত্রণালয় গঠনসহ আদিবাসী গ্রামগুলোতে মন্দির নির্মাণ করে দিতে হবে।
এর আগে অতিথিরা মেলায় পৌঁছলে আদিবাসী তরুণীরা তাদের নিজস্ব বাজনার তালে তালে নৃত্যের মাধ্যমে স্বাগত জানিয়ে কানে শাল ফুল পরিয়ে দেন। অতিথিরা জাহের থান পূজাও পরিদর্শন করেন। উৎসবের দ্বিতীয় দিন আজ শনিবার মেলায় অতিথি হিসেবে আসবেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ ও দিনাজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপাল।
পৃথিবীতে পুঁজিবাদী শাসন ব্যবস্থা তথা জমিদারের শাসন ব্যবস্থা ধ্বংস করে কমিউনিস্টরা শ্রমজীবী মানুষদের জন্য বিপ্লব করেছিলেন। বিখ্যাত কমিউনিস্ট নেতাদের মতে শ্রমজীবী মানুষদের জয় গান এবং লড়াইয়ের জন্য বিশ্ব পৃথিবীতে সভ্যতার বিজয় রথ এগিয়ে চলেছে। আমরা শিক্ষানিবেশ ব্যক্তিরা যদি কমিউনিস্টদের রীতিমতো চুলচেরা বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখতে পারবো ভারতবর্ষের আসল নাগরিক আদিবাসিরা়ই।
প্রাচীন যুগের ভারত বর্ষ বর্তমানে ভারতবর্ষের মতো অবস্থায় কোন দিনই ছিল না। প্রাচীন যুগের কিংবা বৈদিক যুগে ভারতবর্ষের সমস্ত প্রান্তে জঙ্গলে পরিপূর্ণ ছিল। ভারতবর্ষের আদি জনগোষ্ঠীর মানুষগন জঙ্গল কেটে অনেক জমিকে চাষযোগ্য জমিতে রূপান্তরিত করে এবং আদিবাসী গ্রামগুলোতে চাষ আবাদ পশুপালন প্রভৃতি কার্য বৈদিক যুগের থেকে প্রচলন হয়ে আসছে।
উপনিবেশিক ইংরেজরাও আদিবাসীদের পশুর মত অত্যাচার করে জঙ্গল কেটে রেললাইন ও অন্যান্য যাতায়াত ব্যবস্থার জন্য সড়ক কিংবা রাস্তা নির্মাণ করেন। বর্তমান যুগে অর্থাৎ বিশ্বায়ন যুগে আদিবাসীরাই কারখানাতে, কৃষিকার্য বড় বড় অট্টালিকা এবং বড় বড় ইমারৎ নির্মাণে, রাস্তা নির্মাণে, ইটভাটাতে নতুন রেললাইন নির্মাণে কয়লা খনিতে
অর্থাৎ প্রায় সমস্ত স্থানে আদিবাসী মানুষেরা পশুর মতন পরিশ্রম করে ভারত বর্ষ নামক দেশকে ঝলমল করে তুলেছে আজ আদিবাসীরা অনাহারে, অভুক্ত অবস্থায় থেকে দেশের শ্রীবৃদ্ধিতে প্রাণপাত করে চলেছে। আদিবাসীরা আজ দেশের উন্নতির স্বার্থে নিজেদেরকে সঁপে দিয়েছেন। আদিবাসী মানুষদের পরিশ্রমের বিরাম নেই তবু আদিবাসীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন না।
ভারতবর্ষের আসল নাগরিক আদিবাসীরা হওয়া সত্বেও তাদের নিত্যদিন লাঞ্ছনা অপমান ও আদিবাসীদের উপর পাশবিক অত্যাচার হচ্ছে। ভারতবর্ষের অন্যান্য সম্প্রদায় অর্থাৎ ব্রাহ্মণ বাদীরা আদিবাসীদের উপর পশুর থেকেও নির্মম অত্যাচার করছেন। ভারতবর্ষের বিভিন্ন রাজ্যের অগ্রগতির ক্ষেত্রে আদিবাসী শ্রমিকদের অবদান সব থেকে বেশি। ঝাড়খন্ড উড়িষ্যা ও ছত্রিশগড় রাজ্যের আকার-আকৃতি সমতল নয় কোথাও পাহাড় কোথাও ঢালু অনুর্বর জমি শস্য শ্যামলা হতে পারছে।
আদিবাসী শ্রমিকদের জন্যই ঝাড়খন্ড উড়িষ্যা ছত্রিশগড়ের বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদ সংগ্রহ করতে পারছে। আদিবাসী শ্রমিকরা স্বল্প বেতনে পুঁজিপতিদের কারবারকে ক্রমশঃ ঊর্ধ্বমুখী করে চলেছে। আদিবাসী শ্রমিকরা চালক ও বেমান নয় বলে পুঁজিবাদীরা ছলনা করে অত্যাধিক পরিশ্রম করাচ্ছে। আদিবাসী শ্রমিকরা কৃষিকার্যে পটু হওয়ার জন্য ভারতবর্ষের কৃষি প্রধান রাজ্যগুলির সিংহভাগ শ্রমিকই আদিবাসী যেমন পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমান হুগলি নদীয়া হাওড়া ও পাঞ্জাব বিহার উত্তর প্রদেশের অনেক স্থানে।. (দ্বিতীয় অংশের জন্য অপেক্ষা করুন)
लोकसभा चुनावों के पहले चरण में छत्तीसगढ़ की सिर्फ़ एक सीट पर मतदान होगा. ये सीट है बस्तर, जहाँ चुनाव करवाना एक जंग लड़ने के बराबर है.
बस्तर के सुदूर इलाक़ों में माओवादी छापामारों की समानांतर सरकार चलती है जो चुनावी प्रक्रिया को ख़ारिज करते हैं और चुनावों के बहिष्कार की घोषणा करते हैं.
माओवादी अपनी सरकार को 'जनताना सरकार' कहते हैं जिसका बस्तर संभाग के बड़े हिस्से में ख़ासा प्रभाव देखा जा सकता है.
इस संभाग के बड़े हिस्से पूरी तरह से कटे हुए हैं, जहां न मोबाइल नेटवर्क है और ना ही सड़कें. कई गांव ऐसे हैं जहां तक पहुंचना और चुनाव कराना बड़ी चुनौती है.
वैसे तो बस्तर संभाग का हर बूथ संवेदनशील है, मगर माओवादी हमलों को देखते हुए कई मतदान केंद्रों का स्थानांतरण किया गया है.
कुछ बूथ 20 किलोमीटर तो कुछ उससे भी ज़्यादा दूर स्थानांतरित किये गए हैं जिससे ग्रामीणों को काफ़ी परेशानी होती है. ग्रामीणों के सामने वोट डालना एक बड़ी चुनौती है.
इस संघर्ष ने बस्तर के सुदूर जंगल के इलाकों के रणभूमि में तब्दील कर दिया है. और, संघर्ष की वजह से चुनाव कराना भी एक जंग ही लड़ने के बराबर है.
इलाक़े की भौगोलिक परिस्थिति और संवेदनशीलता को देखते हुए अर्ध सैनिक बलों के पचास हज़ार जवान मैदान में उतारे गए हैं. इनके अलावा राज्य पुलिस के जवान भी तैनात किये गए हैं.
सिर्फ एक सीट पर उतने सुरक्षा बल के जवान उतारे गए हैं जिनसे पूरे राज्य में चुनाव करवाया जा सकता है.
माओवादी छापामारों और सुरक्षा बलों के बीच लंबे समय से चल रहे संघर्ष की वजह से सुदूर इलाकों में आवाजाही के साधन नहीं हैं. माओवादी रह रह कर धमाके कर चुनावी प्रक्रिया को बाधित करने की कोशिश करते रहते हैं.
माओवादियों के चुनाव बहिष्कार के आव्हान के बाद बस्तर के अंदरूनी संवेदनशील इलाकों से मतदान केंद्रों को दूसरी जगहों पर 'शिफ्ट' कर दिया गया है. और जहाँ पर बूथ बनाए गए हैं उनकी दूरी दस किलोमीटर से 15 किलोमीटर या 20 किलोमीटर तक की है. ग्रामीण आदिवासियों का कहना है कि उनके लिए इतनी दूर तक जाकर वोट डालना बहुत मुश्किल का काम है."
Image captionदंतेवाडा जिले के फुल्फार्ड गांव के निवासी सोनाराम बरती.
दंतेवाडा जिले के फुल्फार्ड गांव के निवासी सोनाराम बरती का मानना है कि मतदान केन्द्रों को इतनी दूर ले जाना ग़लत है क्योंकि इससे गाँव के लोगों को बड़ी परेशानी होती है. खास कर तब जब आवाजाही के साधन न हों.
मगर चुनाव आयोग और प्रशासनिक अधिकारियों का कहना है कि चुनावों के दौरान माओवादी हमले बढ़ा देते हैं. वो सुरक्षा बलों और मतदान कर्मियों पर हमले करते हैं इस लिए मतदान कर्मियों के दल को सुदूर इलाकों में भेजना मुश्किल काम है.
अनुमंडलीय पुलिस अधिकारी पिताम्बर पटेल कहते हैं कि माओवादी चुनावों के दौरान सबसे ज्यादा हमले इसलिए करते हैं ताकि वो सुरक्षा बलों से हथियार और असलाहा छीन सकें.
जंगलों तक जाने वाले रास्तों पर बारूदी सुरंगों का जाल बिछे होने का ख़तरा बना रहता है.
इमेज कॉपीरइटBBC SPORTImage captionअनुमंडलीय पुलिस अधिकारी पिताम्बर पटेल
बीबीसी से बात करते हुए पटेल कहते हैं , "स्थानीय स्तर पर अनेक परिस्थितियाँ ऐसीं हैं कि मतदान दलों को सुरक्षा के दृष्टिकोण से उतनी दूर पहुंचाना संभव नहीं होता. इसलिए मतदान केंद्रों को ही दूसरी सुरक्षित जगहों पर ले जाया जाता है. प्रशासन की ओर से पूरे प्रयास रहते हैं कि ग्रामीण अधिक से अधिक संख्या में आयें और वोट डाल पाएं. साल 2018 के चुनावों में एक भी मतदान केंद्र ऐसा नहीं रहा जिसमे मतदाता ना आया हो. भले ही उसको 60 किलोमीटर शिफ्ट किया गया था."
सरकारी दावों के हिसाब से उन बूथों पर भी अब वोट पड़ने लगे हैं जहां पहले एक भी वोट नहीं डाला जाता था. मगर गाँव के लोगों के दावे अलग हैं.
हेमंत कुमार मंडावी, सुदूर गिरोली गाँव के रहने वाले हैं. ग्रामीणों की परेशानियों को साझा करते हुए वो मतदानकर्मियों पर ही फ़र्ज़ी तरीके से वोट डालने का आरोप लगाते हैं.
वो कहते हैं: "पिछली बार, पोलिंग बूथ पर जिन लोगों की ड्यूटी लगती थी, उन्होंने दो चार लोगों के वोट खुद ही दबा दिए थे. गाँव वाले तो कोई गए ही नहीं थे डर के मारे. सब अपनी खेती बाड़ी में लगे हुए थे."
बस्तर संभाग में चुनावी प्रक्रिया उतनी आसान भी नहीं है. कई लोग ऐसे हैं जिन्होंने न पिछली बार वोट डाला था और ना इस बार वो वोट डालेंगे. सबकी अपनी अपनी मजबूरियां हैं.
जनजातीय समुदाय से आने वाले मंगल कुंजाम ने माओवादी इलाकों में चुनाव की समस्या पर बनी हिंदी फिल्म 'न्यूटन' में पत्रकार की भूमिका निभायी थी. उनका गाँव गुमियापाल भी शहरी इलाके से 12 किलोमीटर दूर है और वहां भी माओवादियों के बहिष्कार का ख़ासा असर है.
गुमियापाल से मतदान केंद्र को 12 किलोमीटर दूर स्थानांतरित कर दिया गया है. मगर मंगल कुंजाम कहते हैं कि उनके गांव के लोग वोट डालने नहीं जाते.
कुंजाम का कहते हैं, "2005 से पहले जो चुनाव होते थे तब हमारे इलाक़े में सभी लोग वोट डालते थे. जब से माओवाद का प्रभाव पड़ा इलाक़े में, तब से तो हमलोग वोट ही नहीं डाल रहे हैं. पिछले विधान सभा के चुनावों में भी वोट नहीं डाले, इस बार भी नहीं डालेंगे. किसी इलाके में माओवादियों का क़ब्ज़ा हो और मैं बहिष्कार के आव्हान के बावजूद वोट डालने जाता हूँ तो मेरी सुरक्षा की जवाबदेही किसकी होगी ?"
अपना अनुभव बताते हुए वो कहते हैं कि एक बार उन्हें वोट डालने के लिए माओवादियों के ग़ुस्से का सामना करना पड़ा और माफ़ी भी मांगनी पड़ी.
बस्तर का पूरा संभाग आदिवासी बहुल है. यहाँ के सर्व आदिवासी समाज का कहना है कि सुदूर अंचलों में रहने वाले जनजातीय समुदाय के लोग बाक़ी की दुनिया से कटे हुए हैं. उन्हें आजतक चुनावी प्रक्रिया के बारे में कुछ भी पता नहीं है.
समाज के महासचिव धीरज राणा कहते हैं, ''जैसे मुखिया या सरपंच ने कह दिया चलने को तो गाँव के लोग आँख बंद कर के चल देते हैं. चाहे वोट देनें जाना हो या फिर किसी पार्टी की रैली में जाना हो. उनका कहना है कि आदिवासी समाज के लोगों को ये नहीं मालूम कि वहां पर किस लिए जा रहे हैं. कोई जानकारी नहीं है. वोट देना है तो बटन कहाँ दबाना है, इसकी भी जानकारी उनको नहीं होती है.''
इमेज कॉपीरइटGETTY IMAGES
चुनाव आयोग और स्थानीय प्रशासन ने मतदाताओं को जागरुक करने की मुहिम तो चलायी है. मगर ये मुहिम सिर्फ शहरी इलाकों तक ही सीमित है. चुनाव के दौरान अंदरूनी इलाकों में रहने वालों के बीच डर समाया रहता है.
मलोश्नार गाँव के रहने वाले बलराम भास्कर के अनुसार, जब से माओवादियों और सुरक्षा बलों के बीच संघर्ष और भी ज़्यादा सघन हुआ है, तब से आदिवासी समाज के लोग, अधिकतर जो लोग शहर से 15 या 20 किलोमीटर दूर रहते हैं, वो डर डर के ही रहते हैं. उन्हें भरोसा नहीं है कि इन इलाकों में संघर्ष के बीच उनकी और उनके परिवार वालों की ज़िन्दगी कितने दिनों की है.
राजनीतिक दलों के कार्यकर्ताओं के बीच चुनावों का उत्साह सिर्फ शहरी इलाकों तक ही सीमित क्यों ना हो, दहशत के साए के बीच बस्तर के सुदूर इलाकों के आदिवासियों में लोकतंत्र की इस प्रक्रिया के लिए कोई रूचि नहीं दिखती. वो तो बस अपनी संस्कृति और अपने जंगलों तक ही सीमित रहना चाहते हैं.