SANTHALDISHOM(সানতাল দিশোম): পার্বতীপুরে বাহা পরব উৎসব শালফুলে সেজেছে সাঁওতাল মেয়েরা

Wednesday 10 April 2019

পার্বতীপুরে বাহা পরব উৎসব শালফুলে সেজেছে সাঁওতাল মেয়েরা

শালফুলে সেজেছে সাঁওতাল মেয়েরা

পার্বতীপুর (দিনাজপুর)
''বাইরে থেকে মিষ্টিসুরে আওয়াজ এল, 'বাবু, ডেকেছিস কেনে।'/বেরিয়ে এসে দেখি ক্যামেলিয়া/ সাঁওতাল মেয়ের কানে,/ কালো গালের উপর আলো করেছে।" সাঁওতাল মেয়েকে নিয়ে এমন মধুর বর্ণনা পাওয়া যায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'ক্যামেলিয়া' কাব্যে। এবার সেই সাঁওতাল মেয়েরা সেজেছেন শালফুলের সাজে। পার্বতীপুরের চন্ডিপুর ইউনিয়নের বারকোনা কলম সরেন-আলমা সরেন মাঠে গতকাল শুক্রবার শুরু হয়েছে সাঁওতালদের দুই দিনব্যাপী বাহা পরব উৎসব। উৎসবের প্রথম দিন সাঁওতাল মেয়েদের এমন বাহারি সাজে দেখা মিলল। তবে উৎসবের আগে সাঁওতালরা শিকারে যান না; ফুলের মধুও পান করেন না। এমনকি মেয়েরা শালফুল মাথায় দেন না। সাঁওতালদের সেই পুরনো জৌলুস ফিরিয়ে আনতেই এ উৎসব। ভারতসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আদিবাসী সাঁওতালসহ নানা সম্প্রদায়ের হাজারো মানুষ এসেছেন উৎসবে।

ফাল্কগ্দুন মাসের পূর্ণিমা তিথির পর সাঁওতালরা তাদের এই দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎসব পালন করে থাকে। বাহা পর্বের প্রথম দিনকে বলা হয় উম আর দ্বিতীয় দিনকে বলা হয় বাহা সারদী। বাহা পর্বের জন্য নির্দিষ্ট পূজার স্থান তৈরি করা হয়, যাকে বলে জাহের থান। গ্রামের নাইকে অর্থাৎ পুরোহিত সাদা ধূতি পরে যান পূজার ঘরে। নাইকে হাতে কাঁসার থালায় সিঁদুর, কলা, ধূপ, শালফুলসহ নতুন নতুন ফুল। সেখান থেকে নাইকে পূজা করে গ্রামে ফিরে আসেন। পূজা শেষে গ্রামের ছেলেরা যান শিকারে। ফিরে আসেন সন্ধ্যার আগে। এর পর নাইকের বাড়িতে জমায়েত হন। সেখানে নেচে-গেয়ে মেতে ওঠেন তারা। এ সময় সাঁওতালের তিন দেবতা জাহের এঁরা (গ্রামের দেবী), মারাঙবুরু ( প্রধান দেবতা), পারগানা বঙ্গা (এলাকার দেবতা) তিন যুবকের ওপর ভর করেন। জাহের এঁরা পুরোহিতের কাছে সাকম (হাতের বালা) দাবি করেন। মারাঙবারু তীর-ধনুক এবং পারগানা বঙ্গা ডালি ও ঝাড়ূ দাবি করেন। এর পর সবাই মিলে পূজার স্থানে চলে যান। সেখানে সবাই মিলে গান ধরেন। গানে তারা তিন দেবতার কাছে গ্রামের মানুষের সুখ-শান্তি কামনা করেন। রোগ-শোক দূর এবং বৃষ্টি-বাদলে জমির ফসল যাতে ভালো হয় এই কামনা করে দেবতাদের বিদায় জানানো হয়। এরপর চলে গাছে গাছে নতুন ফুল ফোটার গান ও নাচ।

উৎসবের উদ্বোধন করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার। প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। উৎসব উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক বাসন্তী মুরমুর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী পর্বে বক্তব্য দেন দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক মাহমুদুল আলম, উপজেলা চেয়ারম্যান হাফিজুল ইসলাম প্রামানিক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেহানুল হক, গ্রামবিকাশ কেন্দ্রের পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন, গবেষক ও কথাসাহিত্যিক ড. মাসুদুল হক, আমজাদ হোসেন, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন ও সাধারণ সম্পাদক সবিন চন্দ্র মুন্ডা। প্রথম দিনের বাহা উম অনুষ্ঠানে ভারতের রথিন কিসকু, ডগর টুডু, বিজলী মুরমু, রামেশ্বর 

মুরমু ও তার দলের পরিবেশনায় সাঁওতালি এবং বাউল শিল্পীদের মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।

মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার বলেন, বর্তমান সরকার আদিবাসীদের অধিকার রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে। এ দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই। ধর্ম যার যার, উৎসব সবার।

প্রধান অতিথি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, সমতলের আদিবাসীদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। আদিবাসী তরুণ-তরুণীরা শিক্ষায় এগিয়ে গেছে। বিভিন্ন চাকরিতে তাদের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। 

জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন বলেন, আদিবাসীদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষায় সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। সেই সঙ্গে ভূমি কমিশন, পৃথক মন্ত্রণালয় গঠনসহ আদিবাসী গ্রামগুলোতে মন্দির নির্মাণ করে দিতে হবে। 

এর আগে অতিথিরা মেলায় পৌঁছলে আদিবাসী তরুণীরা তাদের নিজস্ব বাজনার তালে তালে নৃত্যের মাধ্যমে স্বাগত জানিয়ে কানে শাল ফুল পরিয়ে দেন। অতিথিরা জাহের থান পূজাও পরিদর্শন করেন। উৎসবের দ্বিতীয় দিন আজ শনিবার মেলায় অতিথি হিসেবে আসবেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ ও দিনাজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপাল।

No comments:

Post a Comment

বীরভূম জেলার সিউড়িতে স্বাধীনতা সংগ্রামী বাজাল এর নামে মেলা

 বীরভূম জেলার সিউড়ির বড়বাগানের আব্দারপুর ফুটবল ময়দানে আয়োজিত হতে চলেছে ‘বীরবান্টা বাজাল মেলা-২০১৯’। ১৯শে জানুয়ারি এই মেলা আয়োজিত...