SANTHALDISHOM(সানতাল দিশোম)

Wednesday, 10 October 2018

Tamil director to make biopic on Birsa Munda

Illustration: Deepak Harichandan

Gopi Nainar’s film on the tribal freedom fighter will be in Munda and other languages

In a novel pan-Indian effort, Tamil director Na. Gopi Nainar is chronicling the life of the iconic tribal leader and freedom fighter Birsa Munda in a film in the Munda language.

Isaignani Ilayaraja has been roped in to score the music for the film, which will include songs of the Munda people and songs composed to propagate the freedom struggle during Bisra Munda’s time.

The director said he was introduced to the Munda tribe and Birsa Munda, who died at the age of 25 in prison under mysterious circumstances, through the writings of Dr. Ambedkar.

“Later I read about him in Bengali writer Mahasweta Devi’s novel Aranyer Adhikar (Right to the Forest) and his biography presented by a Communist friend of mine,” said Mr. Nainar.

Current resonance

Asked why he had decided to make a film about a freedom fighter in a distant land, Mr Nainar said a theme on land rights led him towards Birsa Munda.

“Many tribal leaders fight for the community’s right over land and recognition for their community. Bisra Munda viewed freedom for the nation as part of the right over land for housing and agriculture. The fight against the landlords also included the British Raj,” he said.

“It is a feature film without glossing over the realities of the story,” said Mr. Nainar, whose 2017 commercial film Aram , portraying the water crisis, with Nayantara in the lead role, was a box office hit.

Though he has zeroed in on an actor to play Birsa, Mr Nainar said he was open to the idea of a member of the Munda tribe taking on the role.

Unlikely hero

“He is not a typical film hero — six feet tall and toned physique. Birsa was a tribal leader who was less than five feet tall,” Mr. Nainar said, adding that the film will be also made in Tamil, Hindi and other languages.

Though Birsa converted to Christianity, he later launched his own sect and posed a challenge to missionaries. His slogan, “Let the kingdom of the queen be ended and our kingdom be established,” is still remembered in tribal areas of Odisha, Bihar, West Bengal, and Madhya Pradesh.

His resistance resulted in the British enacting a law to protect the land rights of tribals.

Mr. Nainar already started the shooting and soon his unit would visit Jharkhand. “We will capture the world of tribals, their culture and language. I hope to complete the exercise in 45 days,” he said.

Monday, 8 October 2018

মহান শিক্ষাবিদ ও সমাজসেবি পদ্মশ্রী ডঃ রামদয়াল মুণ্ডা

ভারতীয় আদিবাসীদের মধ্যে উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক ডঃ রামদয়াল মুণ্ডাকে বেশীরভাগ ভারতবাসী রাঁচী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর এবং রাজ্যসভার মনোনীত সদস্য (এমপি) হিসাবেই জানেন। কিন্তু তাঁর ব্যাপক এবং বিশাল কর্মকান্ড তাঁকে একজন মানবদরদী ব্যাক্তি, পিছিয়ে পড়া-সমাজে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অৰ্থনৈতিক উন্নয়নের একজন ব্যস্ততম সৈনিক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। তিনি আদিবাসী মুণ্ডা সমাজে জন্মগ্রহণ করেছিলেন কিন্তু তাঁর কর্ম সংস্কৃতির দ্বারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভারতের সম্মান উচু করে গিয়েছেন। সারা জীবন তিনি আদিবাসী তথা সমাজের পিছিয়ে পড়া লোকদের জন্য সংগ্রাম করে গিয়েছেন। মানুষের প্রতি ভালোবাসাই তাঁকে প্রেরণা যুগিয়েছিল মানব সেবায় জীবন উৎসর্গ করতে।
রামদয়াল মুণ্ডা রাঁচীর নিকট অবস্থিত সিউড়ী নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ২৩শে আগষ্ট ১৯৩৯ সালে। তাঁর পিতা ছিলেন গন্দর্ভ সিং মুণ্ডা, মায়ের নাম লোকমা মুন্ডা। প্রাথমিক শিক্ষার জন্য ভর্তি হয়েছিলেন তাদের গ্রামের নিকট অমলেশা নামক জায়গায় লুথারেন মিশন স্কুলে। সেই স্কুলে বিদেশ থেকে অতিথিরা আসতেন। আর এভাবে বহির্জগতের সংগে প্রথম থেকেই তাঁর পরিচয় শুরু হয়। ছোটবেলা থেকেই আদিবাসীদের গান, নাচ, বাঁশী বাজানো, মাদল বাজানোর প্রতি
তাঁর প্রচন্ড আকর্ষণ ছিল। কিন্তু তাঁর পিতা এসব জিনিস পছন্দ করতেন না। তাঁর ঠাকুর্দা চামু সিং মুন্ডা তাঁকে বাঁশী বাজানো, মাদল বাজানো এবং নাচে গানে প্রশিক্ষিত করেন প্রতিদিন নিকটবর্তী জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে। মাধ্যমিক স্কুল মহকুমার শহর খুঁটিতে পড়াশোনা করেন। সেটা তাঁর গ্রাম থেকে ৪০ কিমি দূরে। বিরসা মুন্ডার আন্দোলনস্থল হওয়ার জন্য বিদেশ থেকে বহু মতবিদ আসতেন সেখানে । ডঃ মুন্ডা তাঁর কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে তাদের গাইড হিসাবে কাজ করতেন। 
উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি রাঁচী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখান থেকে নৃতত্ত্ব নিয়ে এম.এ. পাশ করেন ১৯৬৩ সালে। ভাষাতত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করার জন্য চিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে (আমেরিকা) সুযোগ পান। ১৯৬৩ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত সহকারী গবেষক হিসাবে দক্ষিণ এশিয়ার ভাষা (অস্ট্রিক সাঁওতাল, কোল, মুণ্ডারি) এবং সভ্যতা নিয়ে গবেষণা করেন এবং ১৯৭০ সালে তিনি সেখান থেকে পিএইচডি পান। তিনি সেই বছরেই আমেরিকার মিনোসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক হিসাবে নিয়োগপত্র পান। ১৯৮৫ সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন আর রাচিী বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। সেখানে ১৯৮৬ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত সহ উপাচার্য আর পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হন। তিনি অবসর গ্রহণ করেন ১৯৯৯ সালে।
মিনোসোটা বিশ্ববিদ্যালয় ও রাঁচিী বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও তিনি ভিজিটিং প্রফেসর হিসাবে অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৮৩), নিউ ইয়র্কের সিনাকুজ বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৯৬) এবং টোকিও ইউনিভাসিটি অফ ফরেন স্টাডিজ এ শিক্ষা দান করেন। কর্মসূত্রে আমেরিকাতে থাকাকালীন তিনি সাংস্কৃতিক দল তৈরী করেন ও আমেরিকার বিভিন্ন শহরে ভারতীয় সংস্কৃতির প্রচার করনে। ।
সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ডঃ রামদয়াল মুভার অবদানের জন্য ভারত সরকার ২০০৭ সঙ্গীত নাটক একাডেমী পুরস্কার’ দান করেন। এর কয়েক বছর বাদে ডঃ মুন্ডাকে ‘পদ্মশ্ৰী' উপাধিতে ভূষিত করা হয়। এই উপাধি দেশের জনসাধারণকে দেওয়া চতুর্থতম উচ্চ উপাধি যা ডঃ মুন্ডাকে রাষ্ট্রপতি ভবনে শ্রীমতি প্রতিভা পাতিল দেন।
তাঁর দীর্ঘজীবনে ডঃ মুন্ডা দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে জড়িত থেকে আদিবাসী তথা অন্যান্য দেশবাসীর জন্য অনেক কাজ করেছেন। যে সব প্রতিষ্ঠানে তিনি কাজ করেছেন সেগুলি হল 
(১) কমিটি অল ঝাড়খন্ড ম্যাটারস (১৯৯৮-১৯৯৫)
(২) এনথ্রোপলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া (১৯৮৯ -১৯৯৫),
৩) ন্যাশনাল এডুকেশন পলিসিরিভিউ কমিটি (১৯৯০)
(৪) জহরলাল ইউনিভার্সিটি পরিচালন সমিতি (১৯৯০-১৯৯৫), 
(৫) নর্থ ইস্টার্ন হিল ইউনিভার্সিটি (১৯৯৩-৯৬) ষ্টিয়ারিং প্রপ, 
(৬) প্ল্যানিং কমিশন (১৯১৬-২০০০) 
(৭) এক্সপার্ট কমিটি ন্যাশনাল কমিশন ফর উইমেন (১৯৯৭-২০০০)
(৮) ন্যাশনাল এডভাইজারী কমিটি আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংস্থা (১৯৯৭-২০০০) 
(৯)স্টাডিং কমিটি হিউম্যান রাইট
এডুকেশন - ইউ.জি.সি (১৯৯৮-২০০১) 
(১০) ন্যাশনাল কমিশন ফর প্রমোশন অফ সোসাল এন্ড ইকোনমিক ওয়েলফেয়ার (১৯৯৮-২০০১)
(১১) এক্সপার্ট কমিটি, সাহিত্য একাডেমি (১৯৯৯) (১২)ন্যাসানাল কমিটি ফর টিচার্স এডুকেশন (২০০০-২০০৩) 
(১৩) চেয়ারম্যান হিসাবে ওয়ার্কিং এপ অন এমপাওয়ারমেন্ট অফ..টি. প্ল্যানিং কমিশন (২০০০-২০০৫) 
(১৪) টেকনিক্যাল সাপোর্ট গ্রুপ ফর ফরমুলেশন অফ রুলস টু অপারেশনালাইজ দি.এসটি আড আদার ফরেষ্ট ডুয়েলার্স এক্ট (২০০৬-২০০৭) 
(১৫) কমিটি টু সেট আপ সেন্ট্রাল ট্রাইবাল ইউনিভার্সিটি (২০০৭)
(১৬) প্রেসিডেন্ট, আদিম জাতি সেবামণ্ডল (১৯৯০ থেকে) |
(১৭) প্রেসিডেন্ট, বিনরাই ইনস্টিটিউট অফ রিসার্চ অ্যান্ড আ্যকসন (১৯৯৭ থেকে) 
(১৮) প্রেসিডেন্ট, অল ইন্ডিয়া লিটারীর ফোরাম (২০০৫)
(১৯) সেক্রেটারী-ভারতীয় সাহিত্য বিকাশ ন্যাস (১৯৯৮ থেকে)।
সার্দরি ভাষায় ডঃ রামদয়াল মুণ্ডার স্লোগান ছিল, “যেহে নাচী সেহে বাঁচী‍‌" (যে নাচবে সে বাঁচবে) নৃত্যই তাঁর কাছে বেঁচে থাকার মন্ত্র। নাচের দ্বারাই তিনি জীবনকে উপভোগ করেছিলেন। ১৯৮৭ সালে রাশিয়াতে যে সাংস্কৃতিক দল পাঠানো হয়েছিল তিনি তার নেতৃত্ব দান করেন। ১৯৮৮ সালে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে, ফিলিপাইনসের ম্যানিলাতে, ১৯৮৯ সালে চীন, জাপান ইত্যাদি দেশে তাঁর সাংস্কৃতিক দল নিয়ে যান। ঝাড়খণ্ডের প্রতিটি গ্রামে যাতে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র তথা “আখড়া” তৈরী হয় তিনি তার জন্য অনেক ভাবে চেষ্টা করেন।
এছাড়া ডঃ মুন্ডা ইন্ডিয়ান কনফেডারেশন অফ ইন্ডিজেনাস অ্যান্ড ট্রাইবাল পিওপলস্ (Confederation of Indigineous & Tribal People) এর একজন প্রতিষ্ঠাতা। জীবিত থাকা অবধি ইনি এই সংস্থার চিফ প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তিনি ভারতীয় আদিবাসীদের প্রতিনিধত্ব করার জন্য জেনিভা(১৯৮৭),কেপেনহ্যাগেন, ডেনমার্ক (১৯৯৭), বার্লিন ভ্রমণ করেন। ভারতবর্ষের আদিবাসীদের নিয়ে ওয়ার্ড সোসাল ফোরাম মুম্বই (২০০৪) এবং নতুন দিল্লী(২০০৭), তিনি তাঁর সাংস্কৃতিক দলের অনুষ্ঠান করেন। ১৯৯৮ সালে নাগপুর ইন্টারন্যাশনাল এলিয়েন্স ফর ইন্ডিজেনাস পিওপলস্ অফ ট্রপিকাল ফরেষ্ট এর অনুষ্ঠানে তিনি যোগ দেন। ইন্দোরে ১৯৯৯ সালে অনুষ্ঠিত হয় এশিয়ান ইন্ডিজেনাস। পিওপলস্ কনফারেন্স অন ইউনাটেড নেশানস্ পারমানেন্ট ফোরাম অন ইন্ডিজেনাস পিওপলস্। এই অনুষ্ঠানে তিনি যোগদান করেন। লেখনীতেও তিনি পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। তিনি সর্বমোট ২৮টি বই লিখেছেন। তার মধ্যে কয়েকটি অনুবাদ সাহিত্য। তাঁর লেখা ‘আদিধরম”-ভারতীয় আদিবাসীদের ধর্মীয় বিশ্বাস বহুল প্রচারিত হয়। উল্লেখ্য, তিনি ঝাড়খণ্ড পিওপলস পার্টির চেয়ারম্যান ছিলেন এবং ঝাড়খণ্ড রাজ্য গঠনে তাঁর বিশাল অবদান ছিল।
৩০শে সেপ্টেম্বর ২০১১ তাঁর নশ্বর দেহ পৃথিবী ছেড়ে গেলেও ভারতবর্ষ তথা গোটা বিশ্বের আদিবাসীদের অন্তরের অন্তঃস্থলে দিশারী হয়ে যুগ যুগ ধরে ধ্রুবতারার মতো অম্লান হয়ে থাকবেন।

সৌজন্যে- সুবল চন্দ্র সরদার(সম্পাদক)
সুন্দরবন আদিবাসী জাগরণ সমিতি

সংরক্ষণ| কিছু কথা|

Image may contain: text
সংরক্ষণ নিয়ে সাধারণত যে আলোচনা হয়, সেটা Scheduled Cast (SC), Scheduled Tribe (ST) দের সংরক্ষণ নিয়ে। তারপরে আসে OBC দের সংরক্ষণ নিয়ে। এই সংরক্ষণ তিন প্রকার । (১) শিক্ষায় সংরক্ষণ (২) চাকরীতে সংরক্ষণ এবং (৩) নির্বাচনে সংরক্ষণ|
Scheduled Cast (SC), Scheduled Tribe (ST) এবং Other Backward class (OBC)| সংবিধানে SC দের সংরক্ষণ 15.% ST দের 7.50% এদের জন সংখ্যা হিসাবে এই সংরক্ষণ নির্ধারিত হয়েছিল। পরে OBC দের জনসংখ্যা 52% হওয়া সত্বেও 27% সংরক্ষণ কেন্দ্রীয় সরকারী হিসাবে নির্ধারিত হয়েছে । রাজ্য সরকারী হিসাবে এই % আরো কম। এক এক রাজ্যে একক রকম । এই তিন বর্ণের মোট সংরক্ষণ 49.5%. এদের মধ্যে ধর্ম পরিবর্তিদের অর্থাৎ যারা এই তিন বর্গ থেকে ধর্মান্তরিত হয়েছে তাদের জনসংখ্যা 10.5% মত । মোট জনসংখ্যা হচ্ছে (৭.৫+১৫+৫২+১০.৫) 85%| এই 85% জনগণের অধিকার 50% সংরক্ষণে। যদিও সংবিধানে এই কথা উল্যেখ নেই যে সংরক্ষণ 50% এর উর্ধে হতে পারবে না । দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলিতে 69% সংরক্ষণ আছে। আর সেখানকার প্রগতি ভারতবর্ষের অন্য যেকোন রাজ্যের থেকে অনেক বেশী ।
যে কথা বলছিলাম- 85% ভারতের জনসংখ্যার জন্য সংরক্ষণ 50% আর বাকি 15% লোকের জন্য অলিখিত সংরক্ষণ 50%| এর পরে আরো আছেন| 85% এর জন্য যে 50% সংরক্ষণ নির্ধারিত , তারা পায় বা পেয়ে থাকে বা ভোগ করে এই 50% এর অর্ধেকের ও কম । যেটা কম, সেটাও ভোগ করে ঐ 15% লোকেরা। এই 15% লোক কারা ? এরা ব্রাহ্মণ, ক্ষৈত্র এবং বৈশ্য। যাদের জনসংখ্যা যথাক্রমে 3.5%, 4.50%, 7% (এই % প্রায় এরকম )। এবার দেখুন এই তিন শ্রেণির লোকেরা 15% হয়েও 50% এর অধিক সুবিধা ভোগ করছে । কিন্তু এদের এতেও শান্তি নেই, তাই প্রতিনিয়ত SC, ST, OBCদের প্রতি বিষ নিক্ষেপ করে চলেছে । তাদের কথা হচ্ছে সংরক্ষণের জন্য দেশ পিছিয়ে পড়ছে । আপনারা একটু ভাবুন তো সত্যি সত্যি দেশ কাদের জন্য পিছিয়ে পড়ছে ? সেটা আপনারা কখনও ভাববেন না। প্রকৃত পক্ষে কারা সংরক্ষণের সিংহ ভাগ কারা ভোগ করছে দেখুন এই লিংকে।http://www.epaper.eisamay.com/Details.aspx…
এই পিছিয়া পড়া শ্রেণির লোকদের তো মানুষ বলে মনে করা হয় না। তাইতো তাদের SC- 1500, ST -700, OBC- 4743 জাতিতে বিভক্ত করা হয়েছে| জাতি হয় পশুদের মধ্যে। মনুবাদীরা এই SC, ST, OBC দের পশুর স্তরে নামিয়ে দিয়েছেন। তথাকথিত স্বাধীনতার পর শাসন ভার কাদের হাতে চলছে ? প্রশাসনে কয়জন SC, ST, OBC আছে ? তবুও যতো দোষ নন্দ ঘোষ ? কথায় কথায় বলা হয় সংরক্ষণ আর্থিকতার উপর হওয়া দরকার । কিন্তু সংবিধানে সংরক্ষন তো আর্থিকতার উপর ভিত্তিকরে নির্ধারিত হয়নি। সংরক্ষণ নির্ধারিত হয়েছে সামাজিক বৈষম্যের আধারে। আর সেই বৈষম্য করেন উচ্চবর্ণ মনুবাদীরা| কিন্তু সেকথা কেউ মনের ভুলেও উচ্চারণ করেন না কেন ?
একবার দেখে নেওয়া যাক এই সংরক্ষণের আধার কি ? তার আগে দেখি কাদের SC বলা হয়।
বহু শিক্ষিত লোক আছেন, যাঁরা Scheduled Caste কথাটার মর্মই বোঝেন না, এমনকি যারা চাকরিজীবি তারাও এর প্রকৃত অর্থ জানেন না। SC নামে কোন জাতি নেই। কতকগুলি জাতির সমষ্টি হচ্ছে SC . S-Scheduled, যার অর্থ অনুসূচী ।এখানে ‘অনু’ মানে ক্রমাঙ্ক এবং ‘সূচী’ মানে তালিকা। অর্থাৎ সূচী বা ক্রমবদ্ধ অর্থাৎ ধারাবাহিক তালিকাভুক্ত জাতি ।
কোন জাতিকে SC -এর তালিকাভুক্ত করার জন্যে তিনটি শর্ত আছে ।
(১) শিক্ষাগতভাবে অনগ্রসরতা, (২) সামাজিকভাবে অনগ্রসরতা, ও (৩) এদের সঙ্গে অস্পৃশ্যতামূলক আচরণ ।
ST- দের জন্যেও এরূপ তিনটি শর্ত আছে । (১) শিক্ষাগতভাবে অনগ্রসরতা, (২) সামাজিকভাবে অনগ্রসরতা, ও (৩) যাদের মধ্যে আদিম জীবন-যাত্রার বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায় ।
আর OBC -দের ক্ষেত্রেও তিনটি শর্ত আছে । (১) শিক্ষাগতভাবে অনগ্রসরতা, (২) সামাজিকভাবে অনগ্রসরতা, ও (৩)SC/ST নয়, অথচ অনগ্রসর ।
সংবিধানে যে তিন প্রকার মূল সংরক্ষণের উল্লেখ আছে , সেখান শিক্ষা ও চাকরির সংরক্ষণের কোন নির্ধারিত সময় সীমার উল্লেখ নেই । আর নির্বাচনে সংরক্ষণ ছিল দশ বছরের জন্য। কিন্তু প্রতি দশ বছর পরে পরবর্তি দশ বছরের জন্য নির্বাচনের সংরক্ষণ কে বাড়িয়ে দেওয়া হয় । কেন ? এই দশ বছরের জন্য বাড়ানোর জন্য কি কোন SC, ST রা কোন প্রকার আন্দোলন করেছে ? তবে কেন ? আর কেন বাড়াতে হবে তার জন্য সংসদে কি কোন চর্চা হয় ? কেন হয় না ? কারণ চর্চা হলে দেখা যেত নির্বাচনের সংরক্ষণের ফলে SC, ST রা কোন প্রকার উপকার পাচ্ছে না। সেটা পাচ্ছে বাকি শ্রেণির লোকেরা। SC, STদের মধ্যে থেকে যারা নির্বাচনে জয়ী হন , তারা পার্টির প্রতিনিধি রূপে কাজ করনে। তাঁর সমাজের নয়। যদি কেউ ভুল করে ও তাঁর সমাজের সমাজের কথা উল্লেখ করেন তবে তাঁকে জাত-পাত, সাম্প্রদায়িক বলে 'কুচে' মাছের চাল ছাড়ানোর মতো ছাল ছাড়ানো হয় মিডিয়ার মাধ্যমে। ফলে এরাঁ মনের ভুলে ও তাঁর সমাজের নাম নিতে সাহস পান না। গোলামিতে আনন্দ উপভোগ করে। তাই যে নির্বাচনে সংরক্ষণের বৃদ্ধি এটা উচ্চ শ্রেণির সুবিধার জন্যই। এখানে আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে যে , যখন এই নির্বাচনের সংরক্ষণ পরবর্তি দশ বছরের জন্য বাড়ানো হয়, তখন মিডিয়া প্রচার করে SC, ST দের জন্য শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রের সংরক্ষণ দশ বছরের জন্য বাড়ানো হোল। এটা শুনে SC, ST দের বাকিরা গালি দিতে শুরু করে। যে গালি দেওয়ানোর কাজ ইচ্ছা করে করানো হয়। কারণ যাকে নীচ্‌ করে রাখা হয় তাকে গালি দিতে নীচ্‌ করে রাখার লোকদের মজা হয় । তাহলে এবার বলুন তো কে প্রকৃত সংরক্ষণের সুবিধা ভোগ করছে ? এই 85% লোকেরা 50% নিয়ে, নাকি 15% লোকেরা 50% নিয়ে ?
(মূল লেখাটি লিখেছন জগদীশচন্দ্র রায়, কিছু অংশ সম্পাদনা করা হয়েছে|)

Wednesday, 3 October 2018

আদিবাসী বীরসম্রাট হুদুড়দুর্গার কাহিনী

Image may contain: 1 person

আদিবাসী বীরসম্রাট হুদুড়দুর্গার কাহিনী🍁
- - - দুর্গা সাঁওতাল ভাষায় পুংলিঙ্গ। এর স্ত্রীলিঙ্গ শব্দটি দূর্গী। সাঁওতালী লোকসাহিত্যে উল্লেখ রয়েছে যে তাঁদের রাজা দুর্গার কণ্ঠস্বর ছিল বজ্রের মত। ঝড়ের মত(প্রচন্ড জোরে বয়ে চলা বাতাস বা ঝড়কে সাঁওতাল ভাষায় হুদুড় বলে)তাঁর গতি। তিনি ছিলেন পরাক্রান্ত বীর। আর্য সেনাপতি ইন্দ্র চাইচম্পাগড় আক্রমণ করে হুদূর দুর্গার হাতে পর্যুদস্ত হয়। পরপর সাতবার আক্রমণ করে পরাজিত হওয়ার পরে ইন্দ্র বুঝতে পারেন যে সরাসরি যুদ্ধে হুদুড়দুর্গাকে পরাজিত করা সম্ভব নয়। তাই ছলনা এবং কৌশলের আশ্রয় নেন ইন্দ্র। হুদুড়ের রণকৌশলের মধ্যে কোন দুর্বলতা আছে কিনা এই খোঁজ শুরু করেন ইন্দ্র। ইন্দ্র জানতে পারেন যে অসুর নিয়ম অনুসারে এ দেশের রাজারা আশ্রিতের সাথে, শিশুর সাথে, দিবাবসানে, রাত্রে এবং নারীর সঙ্গে যুদ্ধ করেন না। সুযোগ পেয়ে যান ইন্দ্র। তিনি লাবণ্যময়ী বারাঙ্গনা “দেবী”কে উপঢৌকন হিসেবে হুদূরদুর্গার কাছে প্রেরণ করেন। এক মহিষী থাকতে দ্বিতীয় নারীকে গ্রহণ করা যায় না এই অসুরনীতি মেনে দেবীকে প্রত্যাখ্যান করেন হুদূরদুর্গা। ইন্দ্র এবার নিজেই সন্ধির প্রস্তাব দেন। ঠিক হয় বৈবাহিক সম্পর্কের মাধ্যমে তাঁরা বৈরিতা দূর করবেন। বিশ্বাস অর্জনের জন্য দেবীর সাথে হুদুড়দুর্গার বিয়ের প্রস্তাব দেন ইন্দ্র। হুদুড়দুর্গা আবার এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। ইন্দ্র জানান যে হুদুড়দুর্গা দেবীকে প্রত্যাখ্যান করলে লোকে তাঁর পৌরুষ নিয়ে প্রশ্ন তুলবে। উপায়ান্তর না ভেবে হুদূড়দুর্গা দেবীকে বিয়ে করতে রাজি হন।
ইন্দ্রের আসল উদ্দেশ্য ছিল দেবীর মাধ্যমে হুদুড়দুর্গার দুর্বল মুহূর্তগুলির খোঁজ নেওয়া এবং সেই সুযোগে তাকে হত্যা করা। দেবীর মাধ্যমেই ইন্দ্র জানতে পারেন যে একমাত্র রাতের বেলায় ঘুমাতে যাবার আগে হুদুড়দুর্গা শস্ত্র খুলে রাখেন এবং তার দুর্ধর্ষ রক্ষীরা কাছে থাকে না। বিয়ে করার অষ্টম দিনে হুদূড়দুর্গাকে হত্যা করার কৌশল ঠিক করে নিলেন ইন্দ্র। তিনি দেবীকে জানালেন যে নবমীর রাতেই হুদূড়কে হত্যা করতে হবে। তাকে কামাসক্ত করে সুরাসক্ত করে মহাঘোরের মধ্যেই হত্যা করতে হবে। আদিবাসীদের বিশ্বাস নবমীর রাতেই দেবী নিজে আকন্ঠ সুরাপান করে এবং হুদুড়দুর্গাকে সুরাসক্ত অচৈতন্য করে তার বুকে খঞ্জর বসিয়ে দেয় এবং পরেরদিন ভোর রাতে তার দেহকে ইন্দ্রের শিবিরে নিয়ে আসে। হুদুড়দুর্গাকে হত্যা করার ফলে তার নাম হয় “দেবীদুর্গা”
#পারস্যের বারাঙ্গনা দেবী
দুর্গা #কে?
এই নিয়ে লোকসাহিত্যে নানা কাহিনী রয়েছে। একটি কাহিনীতে পাওয়া যায় যে, ইন্দ্র মহিষাসুরের কাছে পরাজিত হয়ে পারস্যের বিখ্যাত বারাঙ্গনা অ্যানার সাহায্য গ্রহণ করেন। উল্লেখ থাকে যে, এই অ্যানা "কাম ও যুদ্ধের দেবী"। আবেস্তা গ্রন্থে এই "দেবাস"দের শয়তানের অংশে জাত বলা হয়েছে। লোককথায় বলা হয়েছে যে, বারাঙ্গনা অ্যানা মহিষাসুরকে কামাসক্ত করে অচৈতন্য অবস্থায় তাকে হত্যা করেন। তাছাড়া দুর্গা প্রতিমার পরিকল্পনায়ও হুবহু উঠে এসেছে অ্যানার প্রতিচ্ছায়া। দুর্গার সিংহবাহিনী রূপ, হাতের আয়ুধ সব কিছুই অ্যানার প্রতিরূপ। গবেষকেরা এইখানেই দেবাসুরের দ্বন্দ্বের মধ্যে আর্য এবং অনার্যের একটি চিরায়ত লড়াইয়ের সূত্র খুঁজে পাচ্ছেন।
আর একটি উপকথায় পাওয়া যায় এই নারী ছিলেন ইন্দ্রের নিজের বোন দেবী। অন্যদিকে ভীল আদিবাসীরা দাবী করেন দুর্গা তাদের মেয়ে। দেবতারা তাকে শিবিরে নিয়ে গিয়ে মহিষাসুরকে হত্যা করার জন্য প্রশিক্ষণ দেয়। দেবীর আর এক নাম চণ্ডী। হাঁড়ি সম্প্রদায়ের দাবী চণ্ডী তাঁদের মেয়ে। দেবতারা তাকে দিয়ে তাঁদেরই রাজাকে হত্যা করে। এখনো হাঁড়ি সম্প্রদায়ের চণ্ডী পূজায় কোন ব্রাহ্মণ ব্যবহার করা হয় না।
সাঁওতালরা দাঁশায় গানের মধ্য দিয়েই প্রকাশ করেন যে হুদুড়দুর্গা বা মহিষাসুরকে অন্যায় ভাবে হত্যা করে ইন্দ্র চাইচম্পাগড় বা হড়প্পা থেকে আদিবাসীদের বিতাড়িত করেন। তাঁরা প্রাণ বাঁচাতে নারীর ছদ্মবেশ ধারন করে “ইয়ায় নায়ে দিশম চাম্পা” বা সপ্ত নদীর দেশ হড়প্পা থেকে গাঙ্গেয় উপত্যকা অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। স্বদেশ হারানোর যন্ত্রণা বুকে নিয়ে আজও তাঁরা বুক চাপড়ে ও হায়রে-ও হায়রে আওয়াজ করে ভুয়াং নাচের মাধ্যমে তাঁদের রাজাকে খুঁজে বেড়ায়। দেবী দূর্গার হাতে হুদুরদুর্গা বা মহিষাসুরের হত্যার কাহিনী এভাবেই লোকায়ত হয়ে আছে আদিবাসীদের মধ্যে। আদিবাসী সত্তায় রাজত্ব হারানোর স্মৃতি এখনও সমান ভাবেই বর্তমান।
#পৌরাণিক কাহিনীতে মহিষাসুরঃ
আদিবাসীদের এই লোকসাহিত্যের অনেকটাই সমর্থন পাওয়া যায় নানা পুরাণ কাহিনীতে। শব্দকল্পদ্রুম অনুসারে, “দোর্গং নাশয়তি যা নিত্যং সা দুর্গা”। অর্থাৎ দুর্গা নামক অসুরকে বধ করেন তিনিই নিত্য দুর্গা নামে অভিহিতা হলেন।
দেবীপুরানে যে ঘোড়াসুরের বর্ণনা পাওয়া যায় তা হুদুড়দুর্গাকেই স্মরণ করিয়ে দেয়। 'সার্বনি' নামে অষ্টম মনুর মন্বন্তরের সময় যখন পুরন্দর দেবতাদের ইন্দ্র হয়েছিলেন (মার্কন্ডেয় পুরান 80 অঃ) সেই সময় রম্ভাসুরের পুত্র ' ঘোরাসুর' কুশদীপের অধিপতি ছিলেন। সেই ঘোরাসুরই মহিষাসুর নামে খ্যাত (দেবীপুরান- 1ম অঃ)। তিনি নিজে বাহুবলে জম্বুদ্বীপ, ক্রোঞ্চদ্বীপ, শাল্মদ্বীপ, পুস্করদ্বীপ, মানসদ্বীপ (স্বর্গ) ও নাগরাজ (পাতাল) জয় করে সপ্তদীপ ও সপ্তসমুদ্রের অধিপতি ছিলেন। তিনি যেমন ছিলেন বলবান, বীর্যবান, বুদ্ধিমান, ও সর্ব্ববিদ্যায় পারদর্শি তেমনি ছিলেন ধর্মপরায়ন, সংযমী, বিলাসহীন, ন্যায়নিষ্ঠ ও মানবতাবাদের আদর্শে প্রজাহিতৈষী। প্রজাগন শ্রদ্ধার সঙ্গে তার নাম বুকের মধ্যে খোদাই করে রাখত (দেবি পুরান -2 ও 16 তম অঃ)। পরস্ত্রী কে তিনি সর্বদা কন্যা ও মাতা হিসেবে বিবেচনা করতেন (দেবিপুরান ষোড়ষ অধ্যায় শ্লোক নং 2-12) । তার মতো সর্বগুন সম্পন্ন মহান রাজা মহাভারত, রামায়ন এমনকি অনান্য পুরাণ কাহিনীগুলিতেও দ্বিতীয় কোনো রাজার পরিচয় পাওয়া যায় নি। কেবলাত্র রাজা হরিশচন্দ্রের মধ্যে কিঞ্চিৎ এই গুন থাকলেও হরিশচন্দ্রের তুলনায় তিনি বহুগুনে শ্রেষ্ঠ ছিলেন।
কোন সর্বগুণ সম্পন্না, কল্যাণময়ী নারীকে যেমন মহিষী বা মহিয়সী উপাধী দেওয়া হয় তেমনি শ্রেষ্ঠ পুরুষ হিসেবে ঘোড়াসুরকে মহিষ , মহিয়ষ তথা (মহিষ+ অসুর ) মহিষাসুর উপাধি তে ভূষিত করা হয়েছিল। পরবর্তী কালের পুরাণগুলিতে বিশেষ করে ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ, বৃহদ্ধর্ম পুরাণ এবং ইদানীং কালের মহিষাসুর মর্দিনীতে মহিষাসুরকে মহিষের গর্ভজাত অথবা মহিষেররূপী এক মায়াবী এবং দুরাচারী অসুর হিসেবে দেখানো হয়। মূলত দুর্গা শক্তির নামে এক ব্রাহ্মন্যবাদী, সাম্রাজ্যবাদী এবং ভোগবাদী সংস্কৃতির বিস্তার ঘটানোর জন্যই জনকল্যাণকারী, মঙ্গলময় আদিকৌম সংস্কৃতির মহান রাজা হুদুড় দুর্গা, ঘোড়াসুর বা মহিষাসুরকে 'অশুভ শক্তি'র প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
শুভ এবং অশুভের #দ্বন্দ্ব ?
পণ্ডিতেরা বলছেন, অশুভ শক্তির বিনাশ ও শুভ শক্তির বিকাশ নাকি দুর্গা পূজার অন্যতম অভিধা। কিন্তু এই ধাঁধার যথার্থ উত্তর খোঁজা প্রয়োজন বলে মনে করি। মনে করি যে আমাদের খুঁজে দেখা উচিৎ বাংলা তথা ভারতের ইতিহাসে কারা এই অশুভ শক্তির প্রতীক! কাদের দুর্দম্য, দুর্বিনীত আচরণের জন্য সাম্যবাদের এই মহান ভূমি কলুষিত হয়েছে বার বার? কারাই বা নারীকে ক্লেদাক্ত পঙ্কে নিক্ষিপ্ত করেছে। কারা নিমজ্জিত হয়েছে লুন্ঠন, ধর্ষণ ও জিঘাংসায়? কারা পূজার অছিলায় দুর্গা শক্তির নামে সমগ্র নারীসমাজকে গণিকার পর্যায়ে নামিয়ে দিয়েছে? কারা এখনো পর্যন্ত নারীকে নরকের দ্বার মনে করে? কারাই বা শুধুমাত্র পুত্র কামনার্থে নারীকে ভোগের সামগ্রী মনে করে? কারাইবা নারীকে বহুগামিতা ও বহুবিবাহে প্রলুব্ধ করে?
এই সমস্ত কাজ যদি সমাজ বিকাশে অকল্যাণকারী হয় এবং এদেরকেই যদি অশুভ শক্তির ধারক বাহক হিসেবে চিহ্নিত করতে হয়; তবে নিশ্চিত ভবেই ভারতের ব্রাহ্মন্যবাদ এই অশুভ শক্তি হিসেবে চিহ্নিত হবে।
ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের ১৫টি জেলায় অনুষ্ঠিত হয়েছে মহিষাসুর স্মরণ সভা। রাজ্যের প্রতিটি আদিবাসী গ্রামে পূর্ণ উদ্যমে দাঁশাই পালন করার জন্য প্রস্তুতি সেরে নিয়েছে মূলনিবাসী-বহুজন সমাজ। সমগ্র রাজ্যের অনুষ্ঠানগুলিকে একসূত্রে গাঁথার জন্য গঠিত হয়েছে “পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য অসুর স্মরণসভা কমিটি”। এই কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, অসুর সংস্কৃতির শিকড়ের অণুসন্ধানই তাদের মূল উদ্দেশ্য। পুঁজিবাদীদের মদতে দুর্গাপূজার অছিলায় যে সাম্রাজ্যবাদী, ভোগবাদী এবং আগ্রাসী শক্তি ভারতীয় সাংস্কৃতিক বৈচিত্র এবং মানবিক মূল্যবোধকে ধ্বংস করে দিচ্ছে তাতে বহুজন সংস্কৃতিতে নেমে এসেছে এক অস্তিত্বের সংকট। মহিষাসুর স্মরণ সভা সেই স্বাধিকার এবং শিকড়ের সন্ধানের এক সাংস্কৃতিক জাগরণ। এই জাগরণ ভাবি কালের জন্য এক নব নির্মাণের ইঙ্গিত বহন করছে।
“দাঁশায়” আদিবাসীদের একটি শোকপালনের ব্রত। পাঁচদিন ধরে চলে এই শোক পালন। এই শোক পালন হয় নাচ, গান এবং ভিক্ষার মাধ্যমে। ভিক্ষা বৃত্তি সাঁওতাল সমাজে এক সামাজিক অপরাধ হলেও দাঁশায়ের দিনগুলিতে তাঁরা প্রতীকী ভিক্ষা করে। বুক চাপড়ে ও হায়রে, ও হায়রে ধ্বনি তুলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নাচ করে। এই নাচকে বলা হয় “দাঁড়ান ভুয়াং” নাচ। লাউয়ের শুকনো বসের উপর ধনুকের মত ভুয়াং বাদ্যযন্ত্রতে টঙ্কার তুলে এই আর্তনাদ আসলে তাঁদের হারিয়ে যাওয়া রাজার উদ্দেশ্যে নিবেদিত। তাঁরা বিশ্বাস করে “দেবী” নামে কোন এক গৌরবর্ণা নারী তাঁদের রাজাকে বন্দী করে নিয়ে গেছে গোপন ডেরায় অথবা তাকে ছলনার আশ্রয় নিয়ে হত্যা করেছে। এই দাঁশায় নাচের সমস্ত পুরুষেরা নারীর ছদ্মবেশে সজ্জিত হয়ে নেয়। পরনে শাড়ি, মাথায় ময়ূরপুচ্ছ ধারণ করেন তাঁরা। শোনা যায় তাঁদের প্রাণপ্রিয় রাজা হুদুরদুর্গা বা ঘোড়াসুরকে সব সময় ঘিরে থাকত সাত জন বীর যোদ্ধা। এই যোদ্ধারাই নারীর ছদ্মবেশ ধারণ করে তাদের রাজাকে খুঁজতে বেরিয়ে পড়ে। হাতের শস্ত্রগুলিকে বাদ্যযন্ত্রের আদল দেওয়া হয়। যাতে সন্ধিক্ষনে যুদ্ধ বিজয়ে সেগুলো কাজে লাগে। “হায়রে ও হায়রে” ধ্বনি তুলে তাঁরা টিকটিকি, মাকড়সা গাছপালা, পশুপাখিদের তাঁদের রাজাকে দেখেছে কি না প্রশ্ন করে। সাংকেতিক ভাষায় প্রশ্ন করে এই ভুয়াং এর জন্ম কেমন করে হয়েছে। তাঁরা বিশ্বাস করেন যে এই প্রশ্নের উত্তর কেবল হুদুড়দুর্গা বা মহিষাসুরই দিতে পারেন। গানের সুরে তাঁরা প্রশ্ন করেনঃ
"অকারে দ ভুয়াং এম জানামলেনা রে? অকারে দ ভুয়াং এম বুঁসাড়লেনা রে?
খত মাদের রে ভুয়াং এম জানামলেনা রে গড়া সাড়িমরে ভুয়াং এম বুঁসাড়লেনা রে
চেতে লাগিৎ ভুয়াং এম জানামলেনা রে চেতে লাগিৎ ভুয়াং এম বুসাঁড়লেনা রে
দেশ দাড়ান লাগিৎ ভুয়াং এম জানাম লেনা রে দিসম সাঙ্গার লাগিৎ ভুয়াং এম বুঁসাড়লেনা রে"।
- - - ( সংগৃহিত)।

কোটা বহালের দাবিতে আদিবাসী ছাত্র পরিষদের মানববন্ধন

Image may contain: 2 people, people standing and people on stageImage may contain: 2 people, outdoor
Image may contain: 7 people, people standing and outdoor
কৃতজ্ঞতা: সাবিত্রী হেমব্রম,বাংলাদেশ
কোটা বহালের দাবিতে আদিবাসী ছাত্র পরিষদের মানববন্ধন
সরকারী চাকরিতে আদিবাসীদের জন্য বরাদ্ধকৃত ৫ শতাংশ কোটা বহাল রাখার দাবিতে রাজশাহীতে আদিবাসী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে মঙ্গলবার (২ অক্টোবর) সকালে রাজশাহী সাহেব বাজার জিরোপয়েন্টে মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলটি গণকপাড়া মোড় থেকে শুরু হয়ে প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে নগরীর জিরো পয়েন্টে সমাবেশের অয়োজন করা হয়।
সংক্ষিপ্ত সমাবেশে আদিবাসী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নকুল পাহানের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন আদিবাসী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক তরুন মুন্ডা, রাজশাহী কলেজ শাখার সভাপতি সাবিত্রী হেমব্রম, চাঁপাইনাবাবগঞ্জ জেলা সাধারণ সম্পাদক দিলীপা পাহান, কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক পলাশ পাহান, অর্থ সম্পাদক অনিল রবিদাস, প্রচার সম্পাদক পলাশ পাহান (২), সদস্য নয়ন পাহান, অনিল গজার প্রমুখ।
সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তারা সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে কোটা বাতিলের প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে সকল শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে আদিবাসীদের জন্য বরাদ্ধকৃত ৫ শতাংশ কোটা বহালের দাবি জানান।
বক্তারা বলেন, বর্তমান সরকার সকলের দাবি পূরণ করছে আদিবাসীদের কোটা বহালের দাবিও পুরন করবে। আদিবাসীদের কোটা পূর্ণ বাস্তবায়ন না হওয়ার আগেই সরকার আদিবাসীদের কোটা বাতিল করছে। আদিবাসীরা কোটা সুবিধা না নিতেই কোটা সুবিধা কেড়ে নিচ্ছে সরকার। আদিবাসীদের জন্য বরাদ্ধকৃত কোটা বাতিল সংবিধানের ২৮ (৪) ও ২৯ (৩) অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন হবে। কোটা পর্যালোচনা কমিটিকে আদিবাসীদের কোটা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। আদিবাসী এলাকা গুলোতে গিয়ে সঠিকভাবে পর্যবেক্ষন করতে হবে আদিবাসীদের কোটা কতটা বাস্তবায়ন হয়েছে এবং সেই রিপোর্ট অনুযায়ী আদিবাসীদের কোটা বহালের সিদ্ধান্ত নিতে হবে সরকারের কাছে দাবি করেন বক্তারা।
এসময় আরো বক্তব্য দেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদ রাজশাহী মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক আন্দ্রিয়াস বিশ্বাস, আদিবাসী নারী পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক লিপি টুডু, কেন্দ্রীয় সদস্য ও আদিবাসী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি বিভূতি ভূষণ মাহাতো প্রমুখ।
সমাবেশের দাবির সাথে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন বিশিষ্ট লেখক ও কলামিষ্ট প্রশান্ত কুমার সাহা, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ রাজশাহী জেলার সভাপতি কল্পনা রায়, জনউদ্যোগ রাজশাহীর ফেলো জুলফিকর আহমেদ গোলাপ, নবজাগর ছাত্র সমাজের উপদেষ্টা তামিম সিরাজী প্রমুখ।

Monday, 1 October 2018

Saptahik atu Dulub.ASA/JDP.at-BAD PALSA.BAHALDA BLOCK.MBJ(O)

Saptahik atu Dulub.ASA/JDP.at-BAD PALSA.BAHALDA BLOCK.MBJ(O)
https://www.facebook.com/Hajam.Hansdah.9/videos/326023651507458/


হুদুরদুর্গার কাহিনীর বাস্তবতা সন্ধানে ইদানিং কতিপয় মতুয়া কু-বুদ্ধিজীবী

Image may contain: one or more people, people standing, plant and outdoor
হুদুরদুর্গার কাহিনীর বাস্তবতা সন্ধানে
- সমীর কুমার মন্ডল
ইদানিং কতিপয় মতুয়া কু-বুদ্ধিজীবী দাবী করে হুদুরদুর্গা অর্থ্যাৎ উপজাতীয় গল্পের রাজা মহিষ নাকি হিন্দু পুরাণ সমূহে বর্ণিত সেই মহিষাসুর এবং মা দূর্গা নাকি উপজাতীয় গল্প অনুসারে এক ছলনাময়ী দেবী! যা বাস্তবে নিতান্তই একটি ভ্রান্ত ধারণা ছাড়া আর কিছু নয়।
তবুও এইসব মতুয়া কু-বুদ্ধিজীবী নিজেকে হাইলাইট করার জন্য এই ভ্রান্ত ধারণার অগ্নিকুণ্ডে তেলের ছিটা মারার মতো কাজ করে এবং মতুয়া সম্প্রদায়ের সাথে বাকি হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ তৈরী করার জন্য এই হুদুরদুর্গার কাহিনীকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যাবহার।
আসুন এবার এক এক করে সত্যের দাঁড়িপাল্লাতে ওজন করে দেখে নিই এইসব কু-বুদ্ধিজীবীর প্রচার করা মন্তব্য গুলোতে কত ভাগ সত্য ও কত ভাগ মিথ্যা আছে।
[কু-বুদ্ধিজীবীর মন্তব্য]
দেবী নামে কোন এক গৌরবর্ণা নারী তাঁদের রাজাকে বন্দী করে নিয়ে গেছে গোপন ডেরায় অথবা তাকে ছলনার আশ্রয় নিয়ে হত্যা করেছে। দুর্গা সাঁওতাল ভাষায় পুংলিঙ্গ। এর স্ত্রীলিঙ্গ শব্দটি দূর্গী। সাঁওতালী লোকসাহিত্যে উল্লেখ রয়েছে যে তাঁদের রাজা দুর্গার কণ্ঠস্বর ছিল বজ্রের(হুদুড়) মত। তিনি পরাক্রান্ত বীর।
[বিশ্লেষণ]
মন্তব্যটি অনেকটি দাদু দিদিমাদের শোনানো গল্পের ন্যায় যেখানে হঠাৎ করে এক রাজার কীর্তি শোনানো হয়। রাজা কি ভাবে জন্ম নিলো? কি ভাবে বড় হল? ইত্যাদি কোনো প্রসঙ্গই থাকে না সেখানে। যেখানে বক্তা শুধু বলে যাবে এবং শ্রোতা শুধু শুনে যাবে, যুক্তি প্রমাণের কোনো প্রসঙ্গই থাকে না সেখানে।
এখানে যে সাঁওতালী লোকসাহিত্যের কথা বলা হয়েছে সেটা কত বছরের প্রাচীন? সেটার ব্যাপারে উক্ত মতুয়া কু-বুদ্ধিজীবী কোনো স্পস্ট প্রমাণের প্রসঙ্গ উল্লেখই করলো না!
বাস্তবে এই সাঁওতালী লোকসাহিত্যটি আধুনিক সময় কালে রচিত হয়েছে, এছাড়াও কোনো প্রাচীন সাহিত্যকার কে উক্ত বিষয় নিয়ে কিছু বর্ণনা করতে শোনা যায়নি এবং সুপ্রাচীন উপজাতীয় ভাষাই প্রাপ্ত লিপি গুলো থেকে এই হুদুরদুর্গা বা মহিষাসুরের কাহিনীর কোনো বর্ণনাও পাওয়া যায় না। কাজেই এই লোকসাহিত্যটি আধুনিক সময়কালে রচিত হয়েছে। এছাড়া কাহিনীর উক্ত রাজাটিও একটি সাহিত্যিক কাল্পনিক চরিত্র ছাড়া আর কিছুই নয়! কারণ কোনো মানুষের কন্ঠস্বর মেঘের মধ্যে গর্জন করা বজ্রের সম পরিমাণ প্রাবল্যতা বিশিষ্ট হয় না।
[কু-বুদ্ধিজীবীর মন্তব্য]
আর্য সেনাপতি ইন্দ্র চাইচম্পাগড় আক্রমণ করে হুদূর দুর্গার হাতে পর্যুদস্ত হয়। পরপর সাতবার আক্রমণ করে পরাজিত হওয়ার পরে ইন্দ্র বুঝতে পারেন যে সরাসরি যুদ্ধে হুদুড়দুর্গাকে পরাজিত করা সম্ভব নয়। তাই ছলনা এবং কৌশলের আশ্রয় নেন ইন্দ্র।
[বিশ্লেষণ]
প্রথমত, এই চাইচম্পাগড় ভারতের কোন প্রান্তে? এবং কত শতাব্দীর উল্লেখিত স্থান? সেটার সাপেক্ষে স্পস্ট প্রমাণ দেখিয়ে দেক উক্ত কু-বুদ্ধিজীবী মহাশয়।
দ্বিতীয়ত, ইন্দ্র কোনো আর্য সেনাপতি নয়! ঋক, সাম, যর্জু ও অথর্ব্বেদে উল্লেখিত মন্ত্রে ইন্দ্র শব্দের একাধিক প্রায়োগিক অর্থ আছে। তাই বেদে বর্ণিত ইন্দ্র কোথাও বৃষ্টি বর্ষণের নিয়ামক, কোথাও মানুষের ইন্দ্রিয়, কোথাও রাজ ধর্ম পালনকারী রাজা, কোথাও পরব্রহ্মের একটি গুণবাচক নাম। কিন্তু কোথাও উল্লেখ নেই ইন্দ্র প্রায়োগিক অর্থে একজন "আর্য সেনাপতি"। কাজেই ইন্দ্র কে আর্য সেনাপতি বানানোর আগে উক্ত কু-বুদ্ধিজীবী মহাশয় আগে প্রমাণ দেখিয়ে দেক বেদ সংহিতা থেকে যেখানে ইন্দ্র কে একজন আর্য সেনাপতি হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
তৃতীয়ত, উক্ত কু-বুদ্ধিজীবী মহাশয় আগে একটি সু-প্রাচীন উপজাতীয় শিলালিপি বা পত্রলিপি থেকে এই হুদুরদুর্গা বা মহিষাসুর কাহিনীটি উল্লেখ আছে কি না দেখিয়ে দেক, তারপর মা দূর্গার উপর কুৎসা আরোপ করবে।
[কু-বুদ্ধিজীবীর মন্তব্য]
হুদুড়ের রণকৌশলের মধ্যে কোন দুর্বলতা আছে কিনা এই খোঁজ শুরু করেন ইন্দ্র। ইন্দ্র জানতে পারেন যে অসুর নিয়ম অনুসারে এ দেশের রাজারা আশ্রিতের সাথে, শিশুর সাথে, দিবাবসানে, রাত্রে এবং নারীর সঙ্গে যুদ্ধ করেন না। সুযোগ পেয়ে যান ইন্দ্র। তিনি লাবণ্যময়ী বারাঙ্গনা “দেবী”কে উপঢৌকন হিসেবে হুদূরদুর্গার কাছে প্রেরণ করেন। এক মহিষী থাকতে দ্বিতীয় নারীকে গ্রহণ করা যায় না এই অসুরনীতি মেনে দেবীকে প্রত্যাখ্যান করেন হুদূরদুর্গা। ইন্দ্র এবার নিজেই সন্ধির প্রস্তাব দেন। ঠিক হয় বৈবাহিক সম্পর্কের মাধ্যমে তাঁরা বৈরিতা দূর করবেন। বিশ্বাস অর্জনের জন্য দেবীর সাথে হুদুড়দুর্গার বিয়ের প্রস্তাব দেন ইন্দ্র। হুদুড়দুর্গা আবার এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। ইন্দ্র জানান যে হুদুড়দুর্গা দেবীকে প্রত্যাখ্যান করলে লোকে তার পৌরুষ নিয়ে প্রশ্ন তুলবে। উপায়ান্তর না ভেবে হুদূড়দুর্গা দেবীকে বিয়ে করতে রাজি হন।
[বিশ্লেষণ]
আমি আগেই বলেছি উক্ত চরিত্র গুলি সৃষ্টি হয়েছে আধুনিক উপজাতীয় সাহিত্যের দৃষ্টিকোণে, কাজেই উক্ত কাহিনীকার নিজের মতো করে ইন্দ্রের চরিত্র টিকে সাজিয়েছেন, যার সাথে ২০০০ থেকে ১০০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দ ঋগ্বেদে বর্ণিত ইন্দ্রের সাথে কোনো মিল নেই!
এছাড়া কাহিনীকার এখানে ধরা পড়ে গেলো অসুরের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে। আনুমানিক ৪০০ খ্রীস্টাব্দে রচিত অমরকোষের ১.১.২৩ অনুসারে অসুর = অ + সুর, সুর বলতে বোঝানো হয়েছে দেব স্বভাবকে অর্থ্যাৎ দেব স্বভাবের বিপরীত যার চরিত্র সেই হল অসুর।
এখন এই দেব স্বভাব কি? ও অসুর স্বভাব কি? তা দেখে নিতে পারেন গীতার নিম্নলিখিত এই নিবন্ধটি থেকে :-
(দৈবিক ও আসুরিক ব্যাক্তিকে চেনার উপায় কি ?)
আশা করি গীতাটা উক্ত মতুয়া কু-বুদ্ধিজীবী নিশ্চয় মানেন? কারণ উনাদের প্রাণ প্রিয় জনক - ঠাকুর হরিচাঁদ তো আর গীতার বিরোধীতা করেন নাই! উলটে প্রশংসা করেছিলেন।
তাহলে অসুর স্বভাবের বিশ্লেষণ করে পাওয়া গেলো অসুর স্বভাবের ব্যাক্তি না কোনো নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা করে, না শিশু নারী আশ্রিতার বিচার করে যুদ্ধ করে, আর সবচেয়ে বড় চরিত্র হল ভোগবাদী স্বভাবের।
তবে এখান থেকে এটা পরিস্কার হচ্ছে হুদুরদুর্গার কাহিনীর রচয়িতার (অবশ্যয় আধুনিক যুগের) চরিত্রিক দিক দিয়ে ছিলেন অসুর স্বভাবের। তাই মহিষাসুর কে একজন আদর্শ রাজা হিসাবে জাহির করলেও, নিজের অজান্তেই নিজের আসুরিক স্বভাবকে প্রচ্ছন্ন ভাবে মহিষাসুরের উপর আরোপ করে ফেলেছেন তার সাহিত্যের কয়েকটি জাইগাতে, নিম্নরূপ :-
১. "তিনি লাবণ্যময়ী বারাঙ্গনা দেবী কে উপঢৌকন হিসেবে হুদূরদুর্গার কাছে প্রেরণ করেন" → উপহার হিসাবে নারী, নারী সম্ভোগী চরিত্রের প্রচ্ছন্ন প্রকাশ।
২. "ইন্দ্র জানান যে হুদুড়দুর্গা দেবীকে প্রত্যাখ্যান করলে লোকে তার পৌরুষ নিয়ে প্রশ্ন তুলবে" → পুরুষত্ব হল বিবাহ করতে ভয় না পাওয়া, যৌনসংগমী চরিত্রের প্রচ্ছন্ন প্রকাশ।
৩. "একমাত্র রাতের বেলায় ঘুমাতে যাবার আগে হুদুড়দুর্গা শস্ত্র খুলে রাখেন এবং তার দুর্ধর্ষ রক্ষীরা কাছে থাকে না" → দূর্বল মূহর্ত হল রাত্রে বিছানাতে, গভীর ঘুমে আসক্তির প্রচ্ছন্ন প্রকাশ।
৪. "তাকে কামাসক্ত করে সুরাসক্ত করে মহাঘোরের মধ্যেই হত্যা করতে হবে। আদিবাসীদের বিশ্বাস নবমীর রাতেই দেবী নিজে আকন্ঠ সুরাপান করে এবং হুদুড়দুর্গাকে সুরাসক্ত অচৈতন্য করে" → মদে আসক্ত, নারী সম্ভোগে আসক্তির প্রচ্ছন্ন প্রকাশ।
তাহলে রচয়িতার উক্ত প্রচ্ছন্ন মনোভাব থেকে কি প্রমাণ হচ্ছে?
তিনি কোন স্বভাবে আসক্ত?
এছাড়াও রচয়িতার উদ্দেশ্য ছিলো হিন্দু সমাজ থেকে উপজাতীয় গোষ্ঠীকে আলাদা করে রাখা, তাই নিজস্ব ব্যাক্তিগত হিন্দু বিরোধী মনোভাব পোষণ করার জন্য উনি উক্ত হুদুরদুর্গার কাহিনীকে উপজাতীয় সমাজে প্রচলিত করেছেন।
এখানে উক্ত মতুয়া কু-বুদ্ধিজীবী হিন্দু গ্রন্থাকারদের উপর দোষ আরোপ করতে পারবে না, কারণ এই উপজাতীয় আধুনিক গ্রন্থাকারদের দ্বারা বর্ণিত মহিষাসুরের কাহিনীর বহু আগেই হিন্দু গ্রন্থকাররা মহিষাসুর কে একজন আসুরিক স্বভাবে আসক্তকারী হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
[কু-বুদ্ধিজীবীর মন্তব্য]
ইন্দ্রের আসল উদ্দেশ্য ছিল দেবীর মাধ্যমে হুদুড়দুর্গার দুর্বল মুহূর্তগুলির খোঁজ নেওয়া এবং সেই সুযোগে তাকে হত্যা করা। দেবীর মাধ্যমেই ইন্দ্র জানতে পারেন যে একমাত্র রাতের বেলায় ঘুমাতে যাবার আগে হুদুড়দুর্গা শস্ত্র খুলে রাখেন এবং তার দুর্ধর্ষ রক্ষীরা কাছে থাকে না। বিয়ে করার অষ্টম দিনে হুদূড়দুর্গাকে হত্যা করার কৌশল ঠিক করে নিলেন ইন্দ্র। তিনি দেবীকে জানালেন যে নবমীর রাতেই হুদূড়কে হত্যা করতে হবে। তাকে কামাসক্ত করে সুরাসক্ত করে মহাঘোরের মধ্যেই হত্যা করতে হবে। আদিবাসীদের বিশ্বাস নবমীর রাতেই দেবী নিজে আকন্ঠ সুরাপান করে এবং হুদুড়দুর্গাকে সুরাসক্ত অচৈতন্য করে তার বুকে খঞ্জর বসিয়ে দেয় এবং পরেরদিন ভোর রাতে তার দেহকে ইন্দ্রের শিবিরে নিয়ে আসে। হুদুড়দুর্গাকে হত্যা করার ফলে তার নাম হয় “দেবীদুর্গা”
[বিশ্লেষণ]
আগেই উক্ত কু-বুদ্ধিজীবী উল্লেখ করেছিলো "দুর্গা সাঁওতাল ভাষায় পুংলিঙ্গ" তো এখানে দেবী নামক এক স্ত্রীলিঙ্গ বাচক শব্দের সাথে পুংলিঙ্গ বাচক শব্দ কে যুক্ত করে, স্ত্রীলিঙ্গ বাচক নাম হিসাবে দেখাচ্ছে কেনো?
তাহলে সাঁওতাল ভাষা অনুসারে দেবীদূর্গা শব্দটি দিয়ে না কোনো নারী কে বোঝানো হচ্ছে, না কোনো পুরুষকে বোঝানো হচ্ছে!! উক্ত মতুয়া কু-বুদ্ধিজীবীর জোচ্চুরি তো এখানেই ধরা পড়ছে।
এছাড়া ৪০০-৬০০ খ্রীষ্টাব্দের দেবীমাহাত্ম্যম এর বর্ণনা অনুসারে অষ্টমী তিথিতে মহিষাসুর বধ হয়, তাই মহিষাসুরের বধের প্রতিক স্বরূপ ছাগ বলিটাও অষ্টমীতেই দেওয়া হয়। কিন্তু উক্ত মতুয়া কু-বুদ্ধিজীবী এখানে বলছে যে নবমীতে হুদুড়দুর্গা বধ হয়েছে? তাহলে যদি প্রাচীন তথ্যগত মিলই না দেখাতে পারে তবে কিসের ভিত্তিতে দাবী করে উপজাতীয় কাহিনীর হুদুড়দুর্গাই হল হিন্দু পুরাণের মহিষাসুর এবং উপজাতীয় দেবীই হল দেবীমাহাত্ম্যমের মা দূর্গা?
[কু-বুদ্ধিজীবীর মন্তব্য]
দুর্গা কে? এই নিয়ে লোকসাহিত্যে নানা কাহিনী রয়েছে। একটি কাহিনীতে পাওয়া যায় যে, ইন্দ্র মহিষাসুরের কাছে পরাজিত হয়ে পারস্যের বিখ্যাত বারাঙ্গনা অ্যানির সাহায্য গ্রহণ করেন। বারাঙ্গনা অ্যানি মহিষাসুরকে কামাসক্ত করে অচৈতন্য অবস্থায় তাকে হত্যা করেন।
আর একটি উপ কথায় পাওয়া যায় এই নারী ছিলেন ইন্দ্রের নিজের বোন দেবী। অন্যদিকে ভীল আদিবাসীরা দাবী করেন দুর্গা তাদের মেয়ে। দেবতারা তাকে শিবিরে নিয়ে গিয়ে মহিষাসুরকে হত্যা করার জন্য প্রশিক্ষণ দেয়। দেবীর আর এক নাম চণ্ডী। হাঁড়ি সম্প্রদায়ের দাবী চণ্ডী তাঁদের মেয়ে। দেবতারা তাকে দিয়ে তাঁদেরই রাজাকে হত্যা করে।
সাঁওতালরা দাঁসায় গানের মধ্য দিয়েই প্রকাশ করেন যে হুদুড়দুর্গা বা মহিষাসুরকে অন্যায় ভাবে হত্যা করে ইন্দ্র চাইচম্পাগড় থেকে আদিবাসীদের বিতাড়িত করেন। তাই আজও বুক চাপড়ে ও হায়রে-ও হায়রে আওয়াজ করে ভুয়াং নাচের মাধ্যমে আদিবাসীরা তাঁদের রাজাকে খুঁজে বেড়ায়। বরাঙ্গনা দেবী দূর্গার হাতে হুদুরদুর্গার বা মহিষাসুরের হত্যার কাহিনী এভাবেই লোকায়ত হয়ে আছে আদিবাসীদের মধ্যে।
আদিবাসীদের এই লোকসাহিত্যের অনেকটাই সমর্থন পাওয়া যায় নানা পুরাণ কাহিনীতে। শব্দকল্পদ্রুম অনুসারে, “দোর্গং নাশয়তি যা নিত্যং সা দুর্গা”। অর্থাৎ দুর্গা নামক অসুরকে বধ করেন তিনিই নিত্য দুর্গা নামে অভিহিতা হলেন।দেবীপুরানে যে ঘোড়াসুরের বর্ণনা পাওয়া যায় তা হুদুড়দুর্গাকেই স্মরণ করিয়ে দেয়।
[বিশ্লেষণ]
উক্ত অংশ দেখে এটা বোঝা যাচ্ছে মা দূর্গার পরিচয় নিয়ে উক্ত মতুয়া কু-বুদ্ধিজীবী বিতর্কের মধ্যে জড়িয়ে আছেন, তাই এক এক আদিবাসী ও উপজাতিরা ভিন্ন ভিন্ন মত পোষণ করেন উনি সেটি নিজেই উল্লেখ করেছে। তাহলে এখান থেকে প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে উপজাতীয় কাহিনীতে বর্ণনাকারী ছলনাময়ী নারী কে হিন্দুদের আরাধ্য মা দূর্গা বলাটি একটি আন্দাজে ঢ়িল ছোঁড়া ব্যাতিত অন্য কিছু নয়!
এছাড়া এখানে যে মতুয়া কু-বুদ্ধিজীবী উল্লেখ করেছেন - "হুদুড়দুর্গা বা মহিষাসুরকে অন্যায় ভাবে হত্যা করে ইন্দ্র চাইচম্পাগড় থেকে আদিবাসীদের বিতাড়িত করেন" এর প্রমাণ কি তারা কোনো ঋগ্বেদের সমতুল্য খ্রীস্টপূর্ব প্রাচীন আদিবাসী বা উপজাতীয় লিপি থেকে দেখাতে পারবে?
লেখকের হিন্দুশাস্ত্র সম্পর্কে সিকিভাগও জ্ঞান নাই তাই ইন্দ্রের উপর উক্ত আরোপ এনেছে, বৈদিক সাহিত্যে ইন্দ্র হল একটি বৈদিক আধ্যাত্মিক প্রায়োগিক অর্থ বা গুণ সমূহের প্রতিক - যা দিয়ে বৃষ্টির নিয়ামক, একজন আদর্শ রাজা, মানুষের ইন্দ্রিয়, পরব্রহ্ম, রক্ষকর্তা, যাজ্ঞিক ইত্যাদি কে বুঝানো হয় এবং পুরাণে ইন্দ্রের মাধ্যমে - রাজা, ঋষি, বীর পুরুষ, দেবত্ব, মনুষ্য প্রবৃত্তি, রজঃ গুণ প্রভৃতির আধ্যাত্ম ও দার্শনিক উপমা হিসাবে বোঝানো হয়।
এরপর প্রসঙ্গ তুলেছেন শব্দকল্পদ্রুমের! যা রাধাকান্ত দেব (১৭৮৩-১৮৬৭) দ্বারা সংকলিত একটি সংস্কৃত অভিধান, এখানে যে “দোর্গং নাশয়তি যা নিত্যং সা দুর্গা” বলা হয়েছে তার উৎস হল দেবীমাহাত্ম্যমের ৭/২৮/৭৪-৮০। এখানে উল্লেখ করা হয়েছে দূর্গম নামক অসুরকে বধ করেই আদিশক্তি নিত্য দুর্গা নামে অভিহিতা হলেছিলেন।
এই দূর্গম অসুর সম্পর্কে দেবীভাগবতের ৭/২৮/৪-১০ তে বলা হয়ে সে ছিলো রাক্ষস রাজ হিরণ্যাক্ষের বংশভূত এক অসুর, চারিত্রিক দিক দিয়ে ছিলো অতিব নিষ্ঠুর প্রকৃতির এবং যজ্ঞের হবি সমগ্রহ চুরি করাই ছিলো তার জীবিকা। এবার উক্ত কু-বুদ্ধিজীবী নিজেই বিচার করুক দূর্গম কাদের দৃষ্টিকোণে একজন আদর্শ রাজা হবে?
এছাড়া এখানে কু-বুদ্ধিজীবী মহাশয় যে দাবী করেছে "দেবীপুরানে ঘোড়াসুরের বর্ণনা নিয়ে" তা নিছক তাদের কল্পনা ছাড়া আর কিছুই নয়! কারণ ঘোড়াসুরের আরেক নাম হল "কেশী" যে শ্রীকৃষ্ণের হাতে বধ হয়েছে, যার বর্ণনা দেবীপুরাণ নয় বরং বিষ্ণু পুরাণ, ভাগবত পুরাণ ও হরিবংশ প্রভৃতি জাইগাতে আছে। যেহেতু কেশী নামটা লিখলে কু-বুদ্ধিজীবীর জোচ্চুরি অনেকে ধরে ফেলবে তাই বিকল্প হিসাবে ঘোড়াসুর লিখেছে। এছাড়া তারা যে ছবিটি কে তাদের পোস্টে এড করে মহান হুদুড়দুর্গা বা মহিষাসুর বলে চালাচ্ছে
বাস্তবে সেটি হল কৃষ্ণের কেশী বধের একটি পাথরের মূর্তি, যা আনুমানিক গুপ্ত যুগের এবং বর্তমানে যা মেট্রোপলিটান মিউসিয়াম অফ আর্টে রেখে দেওয়া হয়েছে।
[কু-বুদ্ধিজীবীর মন্তব্য]
'সার্বনি' নামে অষ্টম মনুর মন্বন্তরের সময় যখন পুরন্দর দেবতাদের ইন্দ্র হয়েছিলেন (মার্কন্ডেয় পুরান 80 অঃ) সেই সময় রম্ভাসুরের পুত্র ' ঘোরাসুর' কুশদীপের অধিপতি ছিলেন। সেই ঘোরাসুরই মহিষাসুর নামে খ্যাত (দেবীপুরান- 1ম অঃ)। তিনি নিজে বাহুবলে জম্বুদ্বীপ, ক্রোঞ্চদ্বীপ, শাল্মদ্বীপ, পুস্করদ্বীপ, মানসদ্বীপ (স্বর্গ) ও নাগরাজ (পাতাল) জয় করে সপ্তদীপ ও সপ্তসমুদ্রের অধিপতি ছিলেন। তিনি যেমন ছিলেন বলবান, বীর্যবান, বুদ্ধিমান, ও সর্ব্ববিদ্যায় পারদর্শি তেমনি ছিলেন ধর্মপরায়ন, সংযমী, বিলাসহীন, ন্যায়নিষ্ঠ ও মানবতাবাদের আদর্শে প্রজাহিতৈষী। প্রজাগন শ্রদ্ধার সঙ্গে তার নাম বুকের মধ্যে খোদাই করে রাখত (দেবি পুরান -2 ও 16 তম অঃ)। পরস্ত্রী কে তিনি সর্বদা কন্যা ও মাতা হিসেবে বিবেচনা করতেন (দেবিপুরান ষোড়ষ অধ্যায় শ্লোক নং 2-12) । তার মতো সর্বগুন সম্পন্ন মহান রাজা মহাভারত, রামায়ন এমনকি অনান্য পুরাণ কাহিনীগুলিতেও দ্বিতীয় কোনো রাজার পরিচয় পাওয়া যায় নি। কেবলাত্র রাজা হরিশচন্দ্রের মধ্যে কিঞ্চিৎ এই গুন থাকলেও হরিশচন্দ্রের তুলনায় তিনি বহুগুনে শ্রেষ্ঠ ছিলেন।
[বিশ্লেষণ]
কু-বুদ্ধিজীবী মহাশয় এখানে এসে জোচ্চুরির সব সীমা অতিক্রম করে গেছেন। এখানে তিনি বলছেন রম্ভ অসুরের পুত্র নাকি ঘোড়াসুর (কেশী)! মহিষাসুর থাকলে হয়তো এটা শুনে উনার পশ্চাৎদেশে গুঁতোতেন।
তবে এখানেই শেষ নয়, উনি যে দেবীপুরাণ ও মার্কন্ডেয় পুরাণের রেফারেন্স গুলি প্রদান করেছেন তার সাথে মূল দেবীপুরাণ বা মার্কন্ডেয় পুরাণের কোনো মিল নেই, নিম্নরূপ :-
* সার্বনি' নামে অষ্টম মনুর মন্বন্তরের সময় যখন পুরন্দর দেবতাদের ইন্দ্র হয়েছিলেন (মার্কন্ডেয় পুরান 80 অঃ)
→ অর্ধসত্য কথা! উক্ত অংশে কি বলা হয়েছে নিজেই দেখুন :- (লিংক এ দেখুন)
* সেই সময় রম্ভাসুরের পুত্র ' ঘোরাসুর' কুশদীপের অধিপতি ছিলেন। সেই ঘোরাসুরই মহিষাসুর নামে খ্যাত (দেবীপুরান- 1ম অঃ)।
→ পুরো মিথ্যা কথা! দেবীপুরাণের প্রথম অধ্যায় উক্ত মন্তব্যের বিন্দুমাত্র অংশ নেই, এই অধ্যায়ে দেবীপুরাণের ভূমিকা, পুরাণের তাৎপর্য, পুরাণের প্রয়োজনীয়তা ইত্যাদি সম্পর্কে বর্ণনা করেছে। সবচেয়ে মজার বিষয় এখানে ঘোড়াসুর নাম পর্যন্ত নেই! এরজন্য বোধয় কু-বুদ্ধিজীবী মহাশয় রেফারেন্সে অধ্যায় নং লিখে ছেড়ে দিয়েছে। স্কন্ধ নং, অধ্যায় নং, শ্লোক নং আর ভয়ে উল্লেখ করেন নাই।
* তিনি নিজে বাহুবলে জম্বুদ্বীপ, ক্রোঞ্চদ্বীপ, শাল্মদ্বীপ, পুস্করদ্বীপ, মানসদ্বীপ (স্বর্গ) ও নাগরাজ (পাতাল) জয় করে সপ্তদীপ ও সপ্তসমুদ্রের অধিপতি ছিলেন। তিনি যেমন ছিলেন বলবান, বীর্যবান, বুদ্ধিমান, ও সর্ব্ববিদ্যায় পারদর্শি তেমনি ছিলেন ধর্মপরায়ন, সংযমী, বিলাসহীন, ন্যায়নিষ্ঠ ও মানবতাবাদের আদর্শে প্রজাহিতৈষী। প্রজাগন শ্রদ্ধার সঙ্গে তার নাম বুকের মধ্যে খোদাই করে রাখত (দেবি পুরান -2 ও 16 তম অঃ)।
→ আবার জোচ্চুরি! দেবী পুরাণের রেফারেন্স স্কন্ধ, অধ্যায় ও শ্লোক আকারে হয়, কিন্তু লেখক এখানে শুধু অধ্যায় বলে ছেড়ে দিলেন কিন্তু ওই অধ্যায়টি কত স্কন্ধের তার স্পস্ট আর করলেন না এবং শ্লোক নং টাও উল্লেখ করলেন না।বাস্তবে কু-বুদ্ধিজীবীরা উক্ত মন্তব্যটি নিজেই লিখেছেন এবং পুরাণের নাম ও অধ্যায় লিখে সেটাকে পৌরাণিক বলে চালিয়ে দিচ্ছেন।
* পরস্ত্রী কে তিনি সর্বদা কন্যা ও মাতা হিসেবে বিবেচনা করতেন (দেবিপুরান ষোড়ষ অধ্যায় শ্লোক নং 2-12) । তার মতো সর্বগুন সম্পন্ন মহান রাজা মহাভারত, রামায়ন এমনকি অনান্য পুরাণ কাহিনীগুলিতেও দ্বিতীয় কোনো রাজার পরিচয় পাওয়া যায় নি। কেবলাত্র রাজা হরিশচন্দ্রের মধ্যে কিঞ্চিৎ এই গুন থাকলেও হরিশচন্দ্রের তুলনায় তিনি বহুগুনে শ্রেষ্ঠ ছিলেন।
→ "চোরের মায়ের বড় গলা" বাগধারাটির প্রয়োগ কোথাও দেখেছেন? না দেখলে এখানে দেখে নেন।
প্রথমে, কু-বুদ্ধিজীবীরা নিজে মনগড়া মন্তব্য লিখে সেটাকে পৌরাণিক মন্তব্য বলে চালিয়ে দিলেন। এরপরে পাবলিক কে বিভ্রান্ত করার জন্য মিথ্যা রেফারেন্স গুলো যোগ করলেন, এখানেই শেষ নয় - দেবীপুরাণের যে ১ম, ২য় ও ১৬নং অধ্যায় কে রেফারেন্স হিসাবে দিয়েছেন তার অধ্যায় ভিত্তিক বিষয় বস্তু পরস্পর থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।
বস্তুত লেখক এই দেবীপুরাণ ও মার্কন্ডেয় পুরাণ আদৌও দেখেছে কি না সন্দেহ আছে। উক্ত লেখক আবার এর মধ্যে আবার রাজা হরিশচন্দ্র কে টেনে আনলেন! কু-বুদ্ধিজীবী লেখক হয়তো জানেন না পৌরাণিক গ্রন্থ শুধু নয়, খ্রীস্টপূর্বাব্দ প্রাচীন বৈদিক ব্রাহ্মণ গ্রন্থ সমূহে রাজা হরিশচন্দ্রকে একজন ন্যায়বান ও দানবীর রাজা হিসাবে মর্যাদা প্রদান করেছে, সেই তুলনায় খ্রীস্টপূর্বাব্দ প্রাচীন কোনো উপজাতীয় শিলালিপি বা পত্রলিপিতে এই হুদুড়দুর্গা, ঘোড়াসুর বা মহিষাসুরের নামটিরও উল্লেখ নেই।
[কু-বুদ্ধিজীবীর মন্তব্য]
কোন সর্বগুণ সম্পন্না, কল্যাণময়ী নারীকে যেমন মহিষী বা মহিয়সী উপাধী দেওয়া হয় তেমনি শ্রেষ্ঠ পুরুষ হিসেবে ঘোড়াসুরকে মহিষ , মহিয়ষ তথা (মহিষ+ অসুর ) মহিষাসুর উপাধি তে ভূষিত করা হয়েছিল। পরবর্তী কালের পুরাণগুলিতে বিশেষ করে ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ, বৃহদ্ধর্ম পুরাণ এবং ইদানীং কালের মহিষাসুর মর্দিনীতে মহিষাসুরকে মহিষের গর্ভজাত অথবা মহিষেররূপী এক মায়াবী এবং দুরাচারী অসুর হিসেবে দেখানো হয়। মূলত দুর্গা শক্তির নামে এক ব্রাহ্মন্যবাদী, সাম্রাজ্যবাদী এবং ভোগবাদী সংস্কৃতির বিস্তার ঘটানোর জন্যই জনকল্যাণকারী, মঙ্গলময় আদিকৌম সংস্কৃতির মহান রাজা হুদুড় দুর্গা, ঘোড়াসুর বা মহিষাসুরকে 'অশুভ শক্তি'র প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
[বিশ্লেষণ]
সেইভাবে যদি কু-বুদ্ধিজীবী লেখকের দৃষ্টিকোণে বিচার করি তো পাবো ইংরেজি fool এবং বাংলা ফুল একই জিনিস!
মহিষী বা মহিয়সী (স্ত্রীলিঙ্গ) বলতে বোঝানো হয় রাজপত্নী হিসাবে অভিষিক্তা নারী বা রাজ কন্যা কে এবং এই মহিষীর পুংলিঙ্গ টি হল "মহিষ" যা দিয়ে বোঝানো হই কোনো রাজা কে, সেখানে মহিষাসুর = মহিষ + অসুর অর্থ্যাৎ যিনি অসুরদের রাজা (লেখকের দৃষ্টি সাপেক্ষে বিচারে)।
এছাড়া আমি আগেই বলেছি আনুমানিক ৪০০ খ্রীস্টাব্দে রচিত অমরকোষের ১.১.২৩ অনুসারে অসুর = অ + সুর, সুর বলতে বোঝানো হয়েছে দেব স্বভাবকে অর্থ্যাৎ দেব স্বভাবের বিপরীত যার চরিত্র সেই হল অসুর।
এখন এই অসুর স্বভাব কি রকম? তা দেখে নেন গীতা থেকে
:- (দৈবিক ও আসুরিক ব্যাক্তিকে চেনার উপায় কি ?)
কাজেই সহজ ভাষাই বলতে গেলে মহিষাসুর হল - ভোগবাদী, অধার্মিক, অশুচি, কদাচারী, জোচ্চোরী ইত্যাদি গুণবাদীদের রাজা। তাই মহিষাসুর হিন্দু পৌরাণিক দৃষ্টিকোণে পশুত্ব ও অসুরত্ব উভয় গুণের অধিকারী, এর জন্য পুরাণে উল্লেখ করা হয়েছে মহিষাসুরের জন্ম হয়েছে মহিষ (পশু) ও অসুরের মিলনের ফলে, তার নাম পুরাণকারেরা রেখেছেন মহিষাসুর।
বাকি থাকে ঘোড়াসুর বা কেশীর কথা তবে সে কোনো ভাবেই মহিষাসুর নয়। পৌরাণিক ঘটনা গুলোর সাপেক্ষে কেশীর আর্বিভাব হয়েছে মহিষাসুরের মৃত্যুর বহু পরে।
শেষে লাইনে উক্ত লেখক আবার সনাতন ধর্ম নিয়ে ঘেউ ঘেউ করেছে অনেকটা "চোরের মায়ের বড় গলার" মতো ব্যাপার।
এখানে যে মা দূর্গা কে নিয়ে উক্ত কু-বুদ্ধিজীবী এতো ঘেউ ঘেউ করেছেন, হিন্দুদের দৃষ্টিকোণে সেই মা দূর্গা কে? এবং কি? দেখে নিতে পারেন নিম্নলিখিত নিবন্ধ থেকে :-
(দূর্গাতত্ত্ব)
সবশেষে উপজাতীয় ও মতুয়া ভাই ও বোনেদের বলবো এইসব ভণ্ড বুদ্ধিজীবীদের কথাই কর্ণপাত করে অহেতুক সাধারণ হিন্দুদের সাথে বিবাদে জড়াবেন না। এইসব ভণ্ডদের কাজই হল ব্রিটিশদের divided and rule এর নীতির মতো কাজ করে এক বিশেষ গোষ্ঠীদের কাছে celebrity হওয়ার এবং পলিটিকাল ফাইদা লুটা।
আর সত্য কে স্বীকার করতে শিখুন আধুনিক উপজাতীয় লোকসাহিত্যের মহিষাসুরের ও হিন্দু পৌরাণিক শাস্ত্রের মহিষাসুর কোনো ভাবেই এক নয়! এবং মা দূর্গা না কোনো ছলনাময়ী নারী!
লিংক :-[হুদুরদুর্গার কাহিনীর বাস্তবতা সন্ধানে] is good,have a look at it!

Friday, 28 September 2018

ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (Jharkhand Mukti Morcha - JMM) এর গঠন।

Image may contain: one or more people and beard
ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (Jharkhand Mukti Morcha - JMM) এর গঠন।
প্রদীপ কুমার হাঁসদা।
ঝাড়খণ্ড আন্দোলনের মহান নেতা দিশম গুরু শিবু সরেনের জন্ম ১৯৪৪ সালের ১১ ই জানুয়ারি তৎকালীন বিহার রাজ্যের হাজারীবাগ জেলার (বর্তমানে রামগড় জেলা) নেমরা গ্রামে হয়। পিতা শোবরান সরেন গ্রামের শিক্ষক ছিলেন। শোবরান সমাজ সচেতন শিক্ষক ছিলেন। আদিবাসীদের বিভিন্ন বিষয়ে সচেতন করতেন ও সুদখোর মহাজনদের থেকে দূরে থাকতে বলতেন। ওইসময় সুদখোর মহাজনরা গরীব আদিবাসীদের ঋণ দিয়ে মোটা টাকা সুদ আদায় করত। সুদ দিতে গিয়ে আদিবাসীরা তাদের সারা বছরের চাষ করা ধান মহাজনদের হাতে তুলে দিতে বাধ্য হত। শোবরান আদিবাসী গ্রামবাসীদের বোঝাতেন যে কোন অবস্থাতেই সুদখোর মহাজনদের কাছে থেকে ঋণ নেওয়া যাবে না আর সুদখোর মহাজনদের গ্রামে প্রবেশ করতে দেওয়া যাবে না। শোবরান সরেনের জন্য সুদখোর মহাজনেরা আদিবাসী গ্রামবাসীদের শোষণ করতে পারছিলনা, তাই তারা শোবরান সরেনকে খুন করার পরিকল্পনা করে। ২৭ নভেম্বর ১৯৫৭ সালে মাত্র ১২ বছর বয়সে শিবু সরেন তার পিতা কে সুদ খোর মহাজনদের গুণ্ডাদের হাতে খুন হতে দেখেন। শিবু সরেন তখন ক্লাস নাইন এর ছাত্র।
শিবু সরেনরা পাঁচ ভাই ছিলেন। শিবু সরেন ছিলেন দ্বিতীয় সন্তান। পিতার হত্যা বালক শিবুকে উগ্র করে তোলে কিন্তু শিবুর মা তাকে প্রতিশোধের পথে না হেঁটে মানুষের মত মানুষ তৈরি হতে পড়াশোনা করতে বলে। বালক শিবু মাধ্যমিক পাশ করেন কিন্তু সুদখোর মহাজনদের প্রতি তাঁর ক্ষোভ থেকেই যায়। তরুন শিবু উপলব্ধি করেন যে আদিবাসী সমাজে অত্যাধিক নেশা ও শিক্ষার অভাবই সুদখোর মহাজনদের আদিবাসী গ্রামগুলিতে টেনে আনছে। তাই আদিবাসী যুবকদের মধ্যে নেশাবিরোধী সচেতনতা গড়ে তোলার জন্য ১৯৬২ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে শিবু সরেন গঠন করেন “সাঁওতাল নবযুবক সংঘ” এবং আদিবাসী যুবকদের নেশাবিরোধী আন্দোলনে সামিল করেন। সুদখোর মহাজনেরা ঋণের ফাঁদে ফেলে এলাকার বেশীরভাগ আদিবাসী ও গরীব মানুষদের জমি দখল করে নিয়েছিল। তরুন শিবু বুঝতে পারছিলেন যে শুধু নেশাবিরোধী আন্দোলন চালালে হবে না, আদিবাসী ও গরীব মানুষদের জমিও উদ্ধার করে দিতে হবে, আর তাঁর জন্য চাই শক্তিশালী সংগঠন। শক্ত সাংগঠনিক ভিত যুক্ত সংগঠন গড়ে তুলতে ১৯৬৯ সালে মাত্র ২৫ বছর বয়সে শিবু সরেন গঠন করেন “সনত সাঁওতাল সমাজ” এবং ধানবাদ জেলার তুন্ডি ব্লকে গড়ে তোলেন আশ্রম। তুন্ডির আশ্রম স্থাপন করে শিবু সরেন “ধান কাটো” ও “জমি উদ্ধার” আন্দোলনের ডাক দেন। যে সমস্ত আদিবাসীদের জমি সুদখোর মহাজনেরা দখল করে নিয়েছিল, শিবু সরেনের নেতৃত্বে আদিবাসীরা সেই সব জমির ধান জোর করে কেটে নিতেন ও জমির দখল নিতেন। সুদখোর মহাজনদের বিরুদ্ধে আদিবাসী ও সাধারন গরীব মানুষদের নিয়ে যুদ্ধ ঘোষণা করলেন শিবু সরেন। শিবু সরেনের নেতৃত্বে এই “ধান কাটো” ও “জমি উদ্ধার” আন্দোলন সুদখোর মহাজনদের বিরুদ্ধে এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রুপান্তরিত হয়। তুন্ডির আশ্রম গড়ে তোলার পর থেকে উল্কার গতিতে শিবু সরেনের উত্থান ঘটে। আসে পাশের জেলাগুলিতে শিবু সরেনের নাম ও আন্দোলনের খবর ছড়িয়ে পড়ে। সুদখোর মহাজনদের জালে জড়িয়ে সর্বস্ব হারানো ও নিজ জমি থেকে বেদখল হওয়া আদিবাসী ও সাধারন আদিবাসীরা দলে দলে শিবু সরেনের দলে নাম লেখান। শিবু সরেন তাদের কাছে সাক্ষাৎ ভগবান রুপে দেখা দেন। শিক্ষক শোবরান সরেনের ছেলে শিবু সরেন আদিবাসী ও সাধারন মানুষদের কাছে পরিচিত হন “গুরুজি” নামে। সুদখোর মহাজনেরাও চুপ করে বসেছিল না, তারাও পাল্টা প্রত্যাঘাত হানতে শুরু করল। সুদখোর মহাজনেরা সঙ্গে নিল দুর্নীতিগ্রস্ত পুলিস প্রশাসনকে। শিবু সরেনের সঙ্গীদের ওপর সুদখোর মহাজনদের ভাড়া করা গুণ্ডারা প্রাণঘাতী হামলা শুরু করল, শিবু সরেনের আশ্রমগুলির ওপরেও হামলা হয়। প্রচুর মামলা শিবু সরেন ও তাঁর সাথীদের বিরুদ্ধে দায়ের হয়, পুলিস শিবু সরেন ও তাঁর সাথীদের খুঁজতে থাকে, অনেকেই পুলিসের হাতে ধরা পড়েন বা গুলিতে মারা যান, কেও কেও সুদখোর মহাজনদের ভাড়া করা গুণ্ডাদেরও হাতে মারা যান, কিন্তু সবার ধরা ছোঁওয়ার বাইরে থাকেন শিবু সরেন। ততদিনে শিবু সরেন পরিচিত হতে শুরু করেছেন “দিশম গুরু” নামে মানে দেশের নেতা হিসেবে। আন্দোলন থেমে থাকেনি, দিনে দিনে আরও জোরদার হয়েছে আর দিকে দিকে দিশম গুরু শিবু সরেনের নাম আগুনের মত ছড়িয়ে পড়তে লাগল। পুলিস যখন হন্য হয়ে দিশম গুরু শিবু সরেনকে খুঁজতে শুরু করেছে তখন শিবু সরেন আশ্রয় নিয়েছেন পরেশনাথ পাহাড়ের জঙ্গলে। পরেশনাথ পাহাড়ে রীতিমত দিশম গুরু শিবু সরেন সমান্তরাল সরকার গঠন করে ফেলেছেন। জঙ্গল থেকেই দিশম গুরু শিবু সরেন তাঁর আন্দোলন পরিচালনা করছেন। দিশম গুরু শিবু সরেনের এখন অনেক অনুগামী। পাহাড় জঙ্গল ছাড়িয়ে শহর ও শিল্পাঞ্চলেও দিশম গুরু শিবু সরেনের নাম ও অনুগামী তৈরি হয়ে গেছে। পুলিস প্রশাসনও জোরদার দমন পীড়ন শুরু করেছে। দিশম গুরু শিবু সরেন ও তাঁর অনুগামিদের ধরতে স্পেশাল পুলিস টিমও তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু দিশম গুরু শিবু সরেনকে কিছুতেই ধরতে পারছেনা পুলিস। শোনা যায় নাকি একসময় দিশম গুরু শিবু সরেনকে এনকাউন্টার করে মেরে ফেরাও ছক কষা হয়েছিল। কিন্তু সব চেষ্টা বিফলে যেতে লাগল। পুলিস গাদা গাদা মামলা দিশম গুরু শিবু সরেন ও তাঁর অনুগামীদের নামে দায়ের করতে লাগল।
১৯৭১ সালের দিকে ৫০ বছর বয়সী বিনোদ বিহারী মাহাতোর সাথে এক মামলার সুত্র ধরে পরিচয় ঘটে ২৭ বছর বয়সী তরুন যুবক শিবু সরেন। মামলা তদারকি করতে গিয়ে দিশম গুরু শিবু সরেন খোঁজ পান বিনোদ বিহারী মাহাতোর। বিনোদ বাবু উকিল ছিলেন এবং আদিবাসী ও গরীব মানুষদের মামলা বিনা পয়সায় লড়তেন। ১৯৭১ সালের মাঝামাঝি নাগাদ দিশম গুরু শিবু সরেন বিনোদ বিহারী মাহাতোর সাথে দেখা করেন। জানা যায় যে বিনোদ বিহারী বাবুও সংগ্রামী মানুষ, গঠন করেছেন শিবাজী সমাজ ও সমাজের বিভিন্ন কুরীতি, সুদখোরী, মহাজনী ও সামন্ত প্রথার শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে সংগ্রাম গড়ে তুলছেন। দিশম গুরু শিবু সরেন বুঝতে পারছিলেন যে আইনি বিষয় ও মামলা মোকদ্ধমা বিষয়ে বিনোদ বাবু তাকে সাহায্য করতে পারবেন আর তাই বিনোদ বাবুকে একসাথে আন্দোলন করার প্রস্তাব দিলেন। অভিজ্ঞ বিনোদ বিহারী মাহাতো সঙ্গে সঙ্গে দিশম গুরুর প্রস্তাবে সম্মতি জানালেন এবং সেই সঙ্গে শ্রমিক ইউনিয়ন নেতা অরুন কুমার রায় (এ কে রায়) এর ব্যপারে দিশম গুরু শিবু সরেনকে জানালেন এবং তাকেও সঙ্গে নেওয়ার প্রস্তাব দিলেন।
বিনোদ বিহারী মাহাতোর জন্ম ২৩ ই সেপ্টেম্বর ১৯২১ সালে বালিয়াপুর জেলার বড়াদাহা গ্রামে এক গরিব পরিবারে হয়। পিতার নাম মাহিন্দি মাহাত ও মাতার নাম মন্দাকিনী দেবী। বিনোদ বাবু প্রথমে করণিকের কাজ করতেন কিন্তু একবার উকিল দ্বারা অপমানিত হওয়ার পর উকিল হবার প্রতিজ্ঞা নেন ও পরবর্তীকালে ১৯৫৬ সালে আইন পাস করে উকিল হন। উকিল হিসেবে বিনোদ বাবু গরিব মানুষদের বিনা পয়সায় মামলা লড়তেন। ১৯৬৪ সাল নাগাদ ভারতের কম্যুনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী) তথা CPI(M) এর সঙ্গে যুক্ত হন। ৬ ই এপ্রিল, ১৯৬৯ সাল নাগাদ সমাজের বিভিন্ন কুরীতির সঙ্গে লড়াই করতে গঠন করেন শিবাজী সমাজ। শিবাজী সমাজের অধীনে বিনোদ বিহারী বাবু সুদখোরি, মহাজনী প্রথা, সামন্ত ব্যবস্থার বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেন। ১৯৬৭ ও ১৯৭১ সালের নির্বাচনে সিপিআই(এম) পার্টির হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন কিন্তু হেরে যান। পরবর্তীকালে সিপিআই (এম) দলের উচ্চ নেতৃত্বের সাথে মত বিরোধের কারনে সিপিআই (এম) দল ত্যাগ করেন।
১৯৬৫ সাল পরবর্তীকালে তরুন বাঙালি ইঞ্জিনিয়ার অরুন কুমার রায় বা এ কে রায় ধানবাদ জেলার সিন্ধ্রি সার কারখানায় চাকরি করতে আসেন। কিন্তু অচিরেই স্থানীয় আদিবাসী ও মুলবাসি শ্রমিকদের ওপর কয়লা মাফিয়া, সুদখোর মহাজন, কারখান কতৃপক্ষের জুলুম ও অত্যাচার দেখে চাকরি তে ইস্তফা দিয়ে গড়ে তোলেন “বিহার কোলিয়ারি শ্রমিক ইউনিয়ন” এবং শ্রমিকদের পাশে দাড়িয়ে কয়লা মাফিয়া, সুদখোর মহাজন, কারখান কতৃপক্ষের জুলুম ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু করেন। অরুন বাবু সিপিআই(এম) দলেরও সদস্য ছিলেন কিন্তু মতবিরোধের কারনে সিপিআই(এম) দল থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন। অরুন বাবুও নিজস্ব সংগঠন মার্ক্সবাদী সমন্বয় সমিতি (Marxists Cordination Committee) গঠন করেছিলেন।
সিপিআই(এম) দলের সদস্য থাকা কালীন বিনোদ বিহারী মাহাতোর সাথে অরুন কুমার রায়ের পরিচয় ছিল। তাই দিশম গুরু শিবু সরেন যখন বিনোদ বিহারী মাহাতোকে এক সঙ্গে আন্দোলনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন তখন অরুন কুমার রায়কেও সাথে নেবার কথা দিশম গুরু শিবু সরেনকে জানান। তাতে সম্মতি জানিয়ে এক মিটিং এর আয়োজন করার দায়িত্ব বিনোদ বিহারী মাহাতো কেই দেন দিশম গুরু শিবু সরেন।
৪ ই ফেব্রুয়ারি, ১৯৭২ সালে ঐতিহাসিক মিটিং হয় তিন দিকপাল নেতা দিশম গুরু শিবু সরেন, বিনোদ বিহারী মাহাতো ও অরুন কুমার রায়ের। মিটিং হয় বিনোদ বিহারী মাহাতোর ঘরে। ঠিক হয় শিবাজী সমাজ, সনত সাঁওতাল সমাজ ও মার্ক্সবাদী কোঅরডিনেশেন কমিটিকে মিলিয়ে দিয়ে এক যৌথ সংগঠন গড়ে তোলা হবে। সেই সময় বাংলাদেশের মুক্তি যুদ্ধে মুক্তি যোদ্ধাদের সংগ্রাম ভারতেও জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। বাংলাদেশের মুক্তি যোদ্ধাদের আদলে ঠিক হয় নতুন সংগঠনের নাম হবে “ঝাড়খণ্ড লিবারেশেন ফ্রন্ট – Jharkhand Liberation Front”। কিন্তু গ্রামীণ আদিবাসী ও সাধারন মানুষদের কাছে “ঝাড়খণ্ড লিবারেশেন ফ্রন্ট – Jharkhand Liberation Front” উচ্চারণ করতে বা বুঝতে অসুবিধা হতো তাই অচিরেই “ঝাড়খণ্ড লিবারেশেন ফ্রন্ট – Jharkhand Liberation Front” সাধারন মানুষের মুখে মুখে জনপ্রিয় হল “ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা- Jharkhand Mukti Morcha (JMM)” রুপে। ঠিক এক বছর বাদে ৪ ই ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৩ সালে ধানবাদে এক বিশাল জনসমাবেশ করে আনুষ্ঠানিক ভাবে আত্মপ্রকাশ করে “ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা”। বয়স ও অভিজ্ঞতার কারনে সভাপতি নির্বাচিত হন বিনোদ বিহারী মাহাত, সব থেকে জনপ্রিয়তম মুখ হিসেবে সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হন দিশম গুরু শিবু সরেন। ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা গঠিত হবার পর পৃথক ঝাড়খণ্ড আন্দোলন তাঁর সময়কালে তীব্রতম গতি লাভ করে।
(ঝাড়খণ্ড আন্দোলনের ওপর বাংলা ভাষায় লেখা বই সেই ভাবে পাওয়া যায়না। ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করে এই লেখা লেখা হয়েছে। ভুল ত্রুটি থাকলে ক্ষমা প্রার্থী।)

Thursday, 27 September 2018

জিতুর রক্তে রাঙা সাঁওতাল-রাজের গড় আদিনা মসজিদ

Image may contain: outdoor
জিতুর রক্তে রাঙা সাঁওতাল-রাজের গড় আদিনা মসজিদ
চন্দ্রশেখর
সিধো-কানু-র বিদ্রোহ ‘দামিনে কোহ’-র অনেক পরে মালদার বুকে জ্বলে উঠেছিল সাঁওতাল বিদ্রোহের আগুন। সেই অগ্নিশিখার নাম জিতু সাঁওতাল। জিতুর কাহিনী বাঙলার সামাজিক-রাজনৈতিক জীবনের এক অনন্য উপাখ্যান। না, বাঙলার কোনও ক্লাসের ইতিহাস বইতে জিতু সাঁওতালের নাম নেই, কলকাতায় কোনও চক নেই। অথচ, জিতুর কাহিনী জানলে মানুষের অধিকারের সংগ্রামকে দমন করতে ধনিক শ্রেণি আর প্রশাসন কিভাবে হাত মেলায়, কিভাবে ধর্মীয় শক্তি প্রতিবাদী আন্দোলনকে দমন করতে ধর্মকে ব্যবহার করে আর পরে চোখ পালটায়, তা স্পষ্ট হবে।
এসব কথা এখন বলে রাখি, কারণ আমরা তো মালদা গিয়ে হজরত পাণ্ডুয়ায় আদিনা মসজিদ দেখতে যাব। এত কথা কি তখন বলার সময় হবে?
মালদহের হবিবপুরের মঙ্গলপুরায় কীর্তনের আসর বসেছে। কোচাকাদর গ্রামে কীর্তনে শিবের গান চলছে। তাঁর ঢঙ – গম্ভীরা। এই গ্রামেই বাড়ি বীরেন হেমব্রমের। আদি বাড়ি বিহারের দুমকায়। হবিবপুর থেকে কয়েক ক্রোশ দূরেই দুমকার সোহোরপুরা। চাষবাসের সুবিধার জন্য বীরেন তাঁর স্ত্রী তেলে মুর্মুকে নিয়ে চড়াই-উতরাই ভেঙে বনবাদার ডিঙিয়ে এসেছিল এই কোচাকাদর গ্রামে। দুমকা থেকে মালদায় আসা প্রথম আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অংশ তাঁরা। তাঁর ছেলে জিতু বেশ ডাগরডোগর। লড়িয়ে ছেলে। বাবা-মায়ের খুব আনন্দ, ছেলের দেবদ্বিজে ভক্তি দেখে। নিজেরা তো বোঙ্গাকে, পিলচু বুড়ি আর পিলচু হারামকে দেবতা মেনেছেন। জিতু মানে শিবজীকে। সত্যম শিবম নামে একটা ধর্মসঙ্ঘে আছে সে। সেখানে বাবাজীরা আছেন। তাঁরা কীর্তন শেখান। পুজোআচ্চা হয়, প্রসাদ দেয় হিন্দু বাবুদের আর আদিবাসীদের সবাইকে। এলাকায় অনেক মুসলমান আছেন, তাদের দেয় না।
মালদা ছিল তুর্কি আমল থেকে মুসলমান সুলতান-নবাবদের অধীনে। ফলে এখানকার বড় বড় জমিদারদের বেশির ভাগই ছিল মুসলমান। স্থানীয় জমিদারদের, কি হিন্দু বা মুসলমান, অত্যাচার ছিল খুব বেশি। তাদের বিরুদ্ধে সাধারণ বাঙালি হিন্দুদের মাথা তোলার সাহস ছিল না। তাঁর উপর ধর্ম তাদের ‘কপালের ফের’, ‘পূর্ব জন্মের পাপের ফল’ ইত্যাদি ট্যাবলেটে প্রতিরোধের ইচ্ছাটাকেই দমন করে রেখেছিল। নীল চাষীদের উপর ইংরেজের দমননীতি দেখে আরও দমে গিয়েছিল তাদের মন। কিন্তু, আদিবাসীদের মনে ‘দামিনে কোহ’, সিধু-কানু, বিরষার স্মৃতি, শরীরে তাদের রক্ত। জিতু তাদের মধ্যে সবচেয়ে সাহসী প্রতিবাদী। জিতু তাদের ‘সাঁওতাল রাজ’-এর স্বপ্ন দেখায়। লড়ার কথা বলে। আর, হিন্দু মহাসভার ধর্মগুরুরা জিতুকে কীর্তন করার কথা বলে, শিবের কথা বলে, সঙ্গে মুসলমানদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য উসকে দেয়।
জিতু বোঝে, মুসলমান মানে জমিদার। সে স্মরণ করায় ‘চায় চম্পা’-র কথা। আদিবাসীদের ইতিহাস বলে, সিন্ধু সভ্যতায় গোটা ভারত ভূখণ্ডটাই ছিল ‘চায় চম্পা’ আর তাঁর পশ্চিমে ছিল গান্ধার (কান্দাহার)। সে গ্রামবাসীদের বলে ‘সাঁওতাল রাজ’ স্থাপন হলে চাষীকে ফসলের দু' ভাগ জমিদারকে দিয়ে না খেয়ে মরতে হবে না। সাঁওতাল সরকারকে মাত্র এক ধামা ধান দিতে হবে কর হিসাবে। আর সাঁওতালরা সবাই হবেন স্বাধীন। স্বাধীনতার স্বপ্ন উজ্জীবিত করে সাঁওতালদের।
১৯২৪ সাল। তাঁর আগেই চম্পারণের কৃষক আন্দোলন করেছেন। গান্ধীজী তখন ব্রিটিশের বিরুদ্ধে সত্যাগ্রহ আর অসহযোগ আন্দোলন করে চলেছেন। জিতুর কাছে ‘গান্ধিবাবা’-র (মনে পড়ে ঢোঁড়াই-এর গানহী বাবা) রাজ মানে সেখানে ‘সাহুকার, জোতদার, জমিদার’ থাকবে না। সব জমি হবে চাষীর নিজের। সাহুকার মানে যারা গরিব চাষীদের ঋণের ফাঁদে ফেলে জমি লুঠে নেয়। গান্ধী কে, তা না জানলেও জিতু নাম নেয় 'গান্ধী সেনাপতি'। ‘গান্ধী’ মানে তাদের কাছে ইংরেজ ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ।
একদিকে জমিদারদের উপর রাগ, অন্যদিকে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে গান্ধীজীর সংগ্রাম আর পিছনে হিন্দু মহাসভার ধর্মীয় উসকানি – জিতু ঝাঁপ দিল ‘সাঁওতাল রাজ’ প্রতিষ্ঠার জন্য। তীর-ধনুক, টাঙ্গি, বল্লম, তলোয়ার নিয়ে সাঁওতালরা রাজ প্রতিষ্ঠা করতে গেল। না, কাউকে হত্যা করার দিকে নয়, তাঁরা নামল মাঠে, জমিদারের ক্ষেতের ফসল কেটে তুলতে লাগলো। জিতুর বিশ্বাস, এভাবেই সাঁওতাল রাজ প্রতিষ্ঠা হবে। গান্ধীরাজ আসবে।
ফসল লুঠতে এলে বাধাও এল। সেই সংঘর্ষে আদিবাসীদের তীরে একজন নিহত হল। পুলিশ জিতুকে গ্রেফতার করল। ছাড়াও পেল। এর পর থেকে বার বারই জিতুকে নানা অজুহাতে কারাগারে পাঠানোর খেলা শুরু হল জমিদার আর ইংরেজ প্রশাসনের ষড়যন্ত্রে। এই সুযোগকে কাজে লাগাতে হিন্দু মহাসভার লোকেরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে জিতুর মগজ ধোলাই করতে শুরু করলো। সাঁওতালদের হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তর, আদিবাসীদের প্রিয় গরু-শুয়োরের মাংস না খাওয়া আর মূর্তি পুজোর জন্য চাপ দিতে থাকলো। শিক্ষা আর কূট বুদ্ধির অভাবে থাকা জিতু ভাবতেও পারেনি এভাবে তাঁকে সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্বের চোরা টানে ফেলে দেওয়া হবে।
কিভাবে তখন আদিবাসীদের প্রতারণা হতো, তাঁর নমুনা পাওয়া যায়। কেউ দশ কি বারো টাকা ধার নিয়েছিল মহাজনের থেকে, ফেরাতে পারেনি। তাঁর জমি চলে গেছে জমিদারদের দখলে। মহাজনের থেকে এক মুঠো নুন নিয়েছিল। সেই নুনের ঋণ শত মুঠোতেও মেটেনি, জমিটা গ্রাস করেছে মহাজন। এমন সম্যে ১৯৩১-এ অক্টোবরে কোতোয়ালির জমিদাররা দাবি করলো, ফসলের তিন-ভাগের দু' ভাগ জমিদারকে দিতে হবে। সাঁওতালরা জিতুর নেতৃত্বে তা দিতে অস্বীকার করলো। এই নিয়ে জমিদারের লেঠেলদের সঙ্গে জিতুর সাঁওতালদের সংঘর্ষ হল। পুলিশ এল, কিন্তু পুলিশ অদ্ভূতভাবে জমিদারদেরই পক্ষ নিল। জমি আর পুঁজির পাশেই থাকল পুলিশ, আজও যেমন থাকে, সর্বহারা মাটির সন্তানেরা বঞ্চিতই রইল।
আরও এক বছর কাটল। ১৯৩২-এর ডিসেম্বরে জিতুর নেতৃত্বে সাঁওতালরা আবার বিদ্রোহ করেন। ততদিনে চট্টগ্রামে সূর্য সেনের নেতৃত্বে যুব বিদ্রোহে ইংরেজের শিরদাঁড়া দিয়ে ঠাণ্ডা স্রোত নেমে গেছে। লণ্ডনে গোল টেবিল বৈঠকে গান্ধীজীকে ডেকে বৈঠক করেছে ইংরেজ। ভারতে একের পর এক বিপ্লবী কাজকর্ম মানুষকে ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলনে উৎসাহ জোগাচ্ছে। আদিবাসীরা তাদের সরকার প্রতিষ্ঠা করবেন বলে মালদা শহরে কিছু দূরে আদিনা মসজিদ দখল নেয়। এই মসজিদ ১৩৬৪ থেকে ১৩৭৪-এর মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হলেও বহুদিন ধরেই এখানে আর নামাজ পড়া হয় না। জিতুর প্রতিনিধি হিসাবে দিনাজপুরের বংশীহারির রাম ওরফে সাউনা এসে আদিনা দখল করে। রাজ প্রতিষ্ঠা করে। গড় তৈরি হয়। জিতু সাঁওতালের নেতৃত্বে বিদ্রোহে জমিদাররা কোণঠাসা হয়ে যায়।
প্রায় ৬০০ সাঁওতাল যোদ্ধা ১৯৩২-এর ১৩ ডিসেম্বর দখল নেয় আদিনার। দখল মুক্ত করতে আসে পুলিশ। সাওতালদের গ্রেফতারের চেষ্টা হলে শুরু হয় যুদ্ধ। একদিকে তীর-তলোয়ার-বল্লম; অন্যদিকে গুলি। পাঁচ জন সাঁওতাল নিহত হয়। তীরের ঘায়ে একজন আর জিতুর তলোয়ারের ঘায়েও আরেকজন কনস্টেবলের মৃত্যু হয়। জেলাশাসক, পুলিশের সুপার থেকে শুরু করে বিরাট বাহিনী ঘিরে ফেলে আদিনা। তাঁরা প্রথমে বোঝানোর চেষ্টা করে জিতুদের। ব্যর্থ হয়ে ঘুষ দেওয়ার চেষ্টা হয় জিতুকে। তাতেও ব্যর্থ হয় পুলিশ। জিতুরা জানিয়ে দেয়, ব্যক্তিগত লাভের জন্য এই বিদ্রোহ নয়। সাঁওতালদের জমি ফেরত দিলে তবেই বিদ্রোহ তুলে নেওয়া হবে। এই সম্যে কেউ ভয়ে চাষের মাঠেও যেত না। মাঠে পা রাখলেই উড়ে আসতো তীর।
এরপরের ঘটনা নানা মতে পল্লবিত। শোনা যায়, পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয় জিতুর। তবে এটা ইংরেজের ভাষ্য। স্থানীয় আদিবাসীদের মতে, পুলিশ আর জিতুদের মধ্যে মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব দেওয়া হয় কোতোয়ালির জমিদারদের। তাঁরাই ইংরেজের সবচেয়ে আস্থাভাজন সেই সময়ে। কোতোয়ালির তৎকালীন প্রধান জমিদার সমঝোতার প্রস্তাব দেয় জিতুদের। আদিনার ভিতরেই সেই বৈঠক ডাকা হয়। হাতিতে চেপে জমিদার আসেন মেহরাবের পিছনে। বন্দুকধারী পুলিশ তাঁকে ঘিরে রেখেছে। জিতু মাত্র কয়েকজনকে নিয়ে এগিয়ে আসার সময়েই জমিদারের বন্দুক গর্জে ওঠে। জিতু নিহত হন। জিতু সামনে এসে দাঁড়ালে তাকে গুলি করে হত্যা করেন কোতোয়ালির জমিদাররা। গুলি চালিয়ে বন্দুকের মুখে ১৬ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মসজিদের ভেতরে মিহরাবে যার দাগ আজও গুলির আছে। জিতু হেমব্রমের মৃত্যুর পর আদিবাসীদের আন্দোলন নেতৃত্বের অভাবে আর দানা বাঁধতে পারেনি।
আর, কোতোয়ালির জমিদারদের ইংরেজ সরকার ‘খান চৌধুরী’ জমিদারের উপাধি দেয়। জিতুর মৃত্যুতে আদিবাসীদের বুকে গভীর আঘাত লাগলেও ‘অসভ্য সাঁওতালদের’ বিদ্রোহ দমন করাকে দৃঢ় সমর্থন জানায় হিন্দু মহাসভার স্থানীয় নেতারা, যাদের কারও আছে জমিদারি, কারণ মহাজনী ব্যবসা, কেউ সাহুকার।
জিতুর আন্দোলন কিন্তু পুরোপুরি ব্যর্থ হয়নি। এক অন্য ধরণের আন্দোলন দেখল মানুষ, যে লড়াইয়ে ক্ষমতার চেয়েও বড় ছিল ফসলের উপর অধিকারের প্রশ্ন। জমির প্রশ্ন। কৃষকের হাতে জমির অধিকারের প্রশ্ন। ‘লাঙল যার, জমি তার’- এই সত্যটাই উঠে নেসেছিল। তাঁর প্রমাণ পাওয়া গেল ১৯৩৩-এ। জমিদারদের অত্যাচারে আর কৌশলে আদিবাসী সমাজ মূল স্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বিদ্রোহ করেছে, এটা বলা হল জিতু সাঁওতালের বিদ্রোহ প্রসঙ্গে গড়া ইংরেজের তদন্ত কমিটির প্রধান স্পেশাল অফিসার ক্ষিতিজ চন্দ্র বর্মণের রিপোর্টে। ১৯২৩-এর রিপোর্টের ভিত্তিতে শুনানী করে তিনি সাঁওতাল ও ওরাওঁদের জমির উপর অধিকার কায়েমের পক্ষে অনেকটাই কাজ করে যান।
আদিনা
মালদা শহর বা ইংলিশ বাজারের থেকে ২০ কিমি দূরে ইতিহাস বিখ্যাত আদিনা মসজিদ। দিল্লীর নবাব ফিরোজ শাহ তুঘলককে পরাজয়ের স্মারক হিসাবে এটি ১৩৬৪ থেকে ১৩৭৪-এর মধ্যে এটি বানান ইলিয়াস বংশের দ্বিতীয় সুলতান সিকান্দর শাহ। সিরিয়ার উমাইয়া মসজিদের আদলে তৈরি উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত মসজিদটির আয়তন ৫২৪ ফুট লম্বা ও ৩২২ ফুট চওড়া। গঠনশৈলী ও বিশালত্বে অনন্য মসজিদটি দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ। ঊনবিংশ ও বিশ শতকে বড় বড় ভূমিকম্পে এর পিলার ও ছাদ ভেঙেছে।
স্থাপত্য শিল্প, কারুকার্য ও বিশালতায় এই মসজিদ অতুলনীয়। এ মসজিদটি সুলতান সিকান্দর শাহ প্রচুর অর্থ খরচ করে বানান। এ মসজিদে সুলতান, তার পারিষদবর্গ ও পাণ্ডুয়ার প্রায় দশ হাজার অধিবাসী একসঙ্গে জুম্মার নামাজ পড়তেন। ভেতরে ৪০০ ফুট লম্বা ও ১৫৫ ফুট চওড়া প্রাঙ্গণ আছে, যেটা পুরু দেয়াল দিয়ে ঘেরা। এতে ২৬০টি থাম ও ৩৮৭টি গম্বুজ আছে। এখানে ৯৮টি খিলান ছিল। অনেকটাই ধ্বংসপ্রাপ্ত এই মসজিদের সংরক্ষণের কাজ করছে ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ। নীলচে-ছাই রঙা কষ্টিপাথরে তৈরি 'মিহরাবের অংশটির কারুকাজ সংরক্ষণ করেছে।
দামাস্কাসের বড় মসজিদের ধাঁচে তৈরি এই মসজিদের কিছু উপাদান অমুসলিম শিল্পরীতির। মসজিদটির মাঝে ছাদহীন চত্বরটি ৪২৬.৬ ফুট লম্বা ও ১৪৭.৭ ফুট চওড়া। কলামের ওপর ছাদবিশিষ্ট এ গঠনশৈলীর নাম 'হাইপোস্টাইল'। অবিভক্ত ভারতীয় উপমহাদেশে এ ধাঁচের একমাত্র মসজিদ এটি। পশ্চিমে নামাজের অংশটিকে দুটি কক্ষে ভাগ করেছে একটি ৭৮ ফুট লম্বা ৩৪ ফুট চওড়া অলিন্দ, যার উচ্চতা ৬৪ ফুট। দক্ষিণ-পূর্বে আর্চবিশিষ্ট তিনটি তোরণ পেরিয়ে মসজিদে ঢুকতে হতো। এখন পূর্ব দিকের প্রবেশ পথটিই আছে। এছাড়া উত্তর-পশ্চিমে তিনটি পথ আছে।
ভিতরে মেঝে থেকে ৮ ফুট উঁচুতে বাদশাহর নামাজের স্থান 'বাদশাহ কি তখত', যার পিছনে পাথরের জালির আড়ালে সুলতান পরিবারের মহিলারা নামাজ পড়তেন। মূল গম্বুজটি রয়েছে কেন্দ্রীয় অলিন্দের শেষে। গম্বুজে খুদিত আছে ইসলামিক ও হিন্দু সংস্কৃতির বহু মোটিফ। বাদশাহ-কি-তখতের অভ্যন্তরের ইংরেজি 'এল' আকৃতির অলিন্দের শেষের দুটি দরজা। তার একটির ভেতরের সিকান্দর শাহর সমাধি। অনেকের মতে, এটি তার আসল সমাধি নয়, বরং শাহের প্রবেশপথ।
(ছবি - ইন্টারনেট থেকে। মাঝের কালো দেওয়ালটি মেহরাব। এতে গুলির চিহ্ন আজও আছে)

সরকারি চাকরির পদোন্নতিতে তফশিলি জাতি ও উপজাতি (SC/ST) প্রার্থীদের জন্য জারি থাকবে সংরক্ষণ


সরকারি চাকরির পদোন্নতিতে তফশিলি জাতি ও উপজাতি (SC/ST) প্রার্থীদের জন্য জারি থাকবে সংরক্ষণ, রায় দিল সুপ্রিম কোর্ট।

সরকারি চাকরিতে তফশিলি জাতি ও উপজাতি (SC/ST) প্রার্থীদের পদোন্নতিতে সংরক্ষণের ক্ষেত্রে কোনও রকম শর্ত আরোপ করা যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দিল ভারতের সর্বোচ্চ আদালত তথা সুপ্রিম কোর্ট। বুধবার ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ এই রায় দিল সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের ডিভিশন বেঞ্চ। একই সঙ্গে বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য আরও ক্ষমতাসম্পন্ন সাত সদস্যের ডিভিশন বেঞ্চে নিয়ে যাওয়ার আর্জিও খারিজ করে দিয়েছে ভারতের শীর্ষ আদালত। সুপ্রিম কোর্টের এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন বহুজন সমাজ পার্টি সুপ্রিমো মায়াবতী।
সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে পদোন্নতিতে তফশিলি জাতি ও উপজাতি (SC/ST) প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষণ চালু রাখা উচিত কিনা, মামলা ছিল তাই নিয়েই। ২০০৬ সালের একটি মামলার রায়ে ভারতের শীর্ষ আদালত জানিয়েছিল, প্রতিটি পদোন্নতির ক্ষেত্রে তা আদৌ প্রয়োজন কিনা, সেই তথ্য জোগাড় করতে হবে। তার পরই তফশিলি জাতি ও উপজাতি প্রার্থীরা পদোন্নতিতে সংরক্ষণের সুযোগ পাবেন। এক্ষেত্রে ওই প্রার্থী আদৌ কতটা পিছিয়ে পড়া, সরকারি চাকরিতে সংরক্ষিত পদের কোনও অভাব আছে কিনা, এবং সামগ্রিক প্রশাসনিক দক্ষতার বিষয়গুলি মাথায় রাখার কথা জানিয়েছিল শীর্ষ আদালত। নতুন রায়ে এই তথ্য জোগাড় করার কোনও বাধ্যবাধকতা নেই বলেই জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র নেতৃত্বধীন পাঁচ সদস্যের ডিভিশন বেঞ্চ।
২০০৬ সালের রায়ের বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতে আবেদন জানিয়েছিল কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলি। তাদের যুক্তি ছিল সুপ্রিম কোর্টের আগের রায়টি সরকারি চাকরিতে তফশিলি জাতি ও উপজাতি (SC/ST) প্রার্থীদের পদোন্নতিতে সংরক্ষণের ক্ষেত্রে অহেতুক শর্ত আরোপ করছে। সরকারি চাকরি পেলেও তফশিলি জাতি ও উপজাতি শ্রেণির মানুষেরা সামাজিক সম্মান পাওয়ার দিক থেকে পিছিয়েই থাকেন। তাই পদোন্নতির ক্ষেত্রেও কোনও শর্ত রাখা উচিত নয়। অন্যদিকে সংরক্ষণ বিরোধীদের সওয়াল ছিল, একবার সরকারি চাকরি পেলেই একজন তফশিলি জাতি ও উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষের সামাজিক উত্তরণ ঘটে। তাই পদোন্নতিতে আর তাঁর সেই সুবিধে পাওয়ার কথা নয়। যদিও এই যুক্তিকে আমল দেয়নি শীর্ষ আদালত। তাই সরকারি চাকরির পদোন্নতিতে সংরক্ষণ চালু থাকার পথ আরও মসৃণ হলো শীর্ষ আদালতের এই রায়ে।
Image may contain: 2 people
আগামী ১০ ই অক্টোবর, ২০১৮ মালদা জেলায় ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (Jharkhand Mukti Morcha - JMM) এর কর্মী সভা। উপস্থিত থাকবেন ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার পশ্চিমবাংলা রাজ্য সভাপতি পরেশ মারান্ডি, পশ্চিমবাংলা রাজ্য সম্পাদক বিট্টু মুরমু, ঝাড়খণ্ড রাজ্যের প্রাত্তন খাদ্য প্রতিমন্ত্রী লবিন হেম্ব্রম, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা সভাপতি লক্ষণ মুরমু, মালদা জেলা সভাপতি সোমনাথ হেম্ব্রম, মালদা জেলা সম্পাদক ইমানুয়েল হেম্ব্রম, সহ কেন্দ্রীয় ও রাজ্য স্তরীয় নেতা কর্মীবৃন্দ

Tuesday, 25 September 2018

নিচু জাতের জামাই খুনে সুপারি ১ কোটি! মিলল আইএসআই যোগও।

তেলেঙ্গানা রাজ্যের নালগোন্ডা জেলার অনার কিলিংয়ে সুপারি দেওয়া হয়েছিল এক কোটি টাকা! আগাম দেওয়া হয়েছিল ৫০ লাখ। ভাড়াটে খুনি দিয়ে নিজের জামাইকে হত্যার ছক কষেছিল অম্রুতাবর্ষিণীর বাবা টি মারুথি রাও। সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়া ভাড়াটে খুনি সুভাষ শর্মাকে বিহার থেকে গ্রেফতারের পর এই বিস্ফোরক দাবি করেছে তেলঙ্গানা পুলিশ। সুপারি দেওয়া হয়েছিল কুখ্যাত দুষ্কৃতী মহম্মদ আবদুল বারির মাধ্যমে। তাকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এই খুনে জড়িত সন্দেহে স্থানীয় কংগ্রেস নেতা মহম্মদ করিমও পুলিশের জালে। পুলিশের দাবি, গোটা বিষয়টিতে মধ্যস্থতাকারী হিসাবে কাজ করেছিলেন এই কংগ্রেস নেতা।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ তেলঙ্গানার মিরিয়ালগুড়ায় অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী অম্রুতাবর্ষিণীর রুটিন চেক আপ সেরে ফিরছিলেন প্রণয় পেরুমাল্লা। সঙ্গে ছিলেন তাঁর মা-ও। হাসপাতাল থেকে বেরোতেই পিছন থেকে একটি মুগুর জাতীয় মোটা লাঠি দিয়ে আঘাত করে এক দুষ্কৃতী। পড়ে যাওয়ার পর ফের আঘাত করে পালিয়ে যায় ওই দুষ্কৃতী। ঘটনাস্থলেই মারা যান প্রণয়। গোটা ঘটনা ধরা পড়ে হাসপাতালের বাইরে লাগানো সিসিটিভিতে।
ঘটনার পরই অম্রুতাবর্ষিণী অভিযোগ করেন, নিচু জাতের ছেলেকে ভালবেসে বিয়ে মেনে নিতে পারেনি তাঁর পরিবার। পাশাপাশি তাঁকে গর্ভপাত করানোর জন্য চাপও দিচ্ছিল। তাঁর বাবা এবং কাকা মিলেই তাঁর স্বামীকে খুন করেছে। এই অভিযোগের পরই অম্রুতাবর্ষিণীর বাবা এবং কাকাকে পুলিশ গ্রেফতার করে। তদন্তে নেমে সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে এবং দুই ধৃতের বয়ান শুনে সোমবারই বিহার থেকে ওই ভাড়াটে খুনি শর্মাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
তেলেঙ্গানা পুলিশের দাবি, এই ভাড়াটে খুনিকে গ্রেফতারের পরই উঠে আসে চক্রান্তের ব্লু-প্রিন্ট। তেলেঙ্গানা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, উচ্চবর্ণের মেয়ে অম্রুতাবর্ষিণী নিচু জাতে বিয়ে করায় জামাই প্রণয়কে হত্যার পরিকল্পনা করেন অম্রুতাবর্ষিণীর বাবা মারুথি রাও। তাঁরই বন্ধু কংগ্রেস নেতা করিমের মাধ্যমে যোগাযোগ হয় আব্দুল বারির সঙ্গে। এই বারি সন্দেহভাজন আইএসআই জঙ্গি আজগর আলির ঘনিষ্ঠ। দু’জনই গুজরাতের প্রাক্তন মন্ত্রী হরেন পাণ্ড্য খুনে অভিযুক্ত ছিল। যদিও তথ্য প্রমাণের অভাবে সেই মামলায় বেকসুর খালাস হয়ে যায় দু’জন।
তেলেঙ্গানা পুলিশের দাবি, আবদুল বারি এবং শর্মাকে জেরায় জানা গিয়েছে, প্রণয়কে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে রফা হয় এক কোটি টাকায়। অগ্রিম হিসাবে ৫০ লক্ষ টাকাও দিয়ে দেন অম্রুতাবর্ষিণীর বাবা মারুথি রাও। বারির নির্দেশে সমস্তিপুরের একটি গ্যাং অপারেশন চালায়। হাসপাতালের বাইরেই নৃশংস ভাবে খুন করে প্রণয়কে। তদন্তে আরও উঠে এসেছে, খুনের সময় ঘটনাস্থলের আশপাশেই ছিল বারি। বারি-ই বাইকে করে শর্মাকে ঘটনাস্থলে নিয়ে আসে। খুনের পর ওই বাইকেই পলিয়ে যায় দু’জন।
মারিয়ালগুড়ির ধনীতম ব্যবসায়ীদের মধ্যে অন্যতম অম্রুতাবর্ষিণীর বাবা মারুথি রাও। জমি-বাড়ি কেনা-বেচার কারবার। কিন্তু গ্রেফতারির পরই এই মারুথি রাওয়ের নানা কুকীর্তি সামনে আসতে শুরু করেছে। পুলিশ সূত্রে খবর, জমি-বাড়ির কারবারে দুষ্কৃতীদের সাহায্য নিতেন মারুথি। কেউ জমি দিতে রাজি না হলে ভয় দেখানো, মারধর করে রাজি করাতেন তিনি। এমনকি, স্বাধীনতা সংগ্রামীদের জমি নিজের নামে লিখে নিতে ভুয়ো দলিল তৈরি করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এবার সেসবের বিষয়েও খোঁজখবর শুরু করেছে নালগোন্ডা পুলিশ।

সাঁওতালি ভাষায় শপথ গ্রহণ পূর্ব বর্ধমানের সহকারী সভাধিপতি মাননীয় দেবু টুডু মহাশয়ের।

সাঁওতালি ভাষায় শপথ গ্রহণ করলেন পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের নব নির্বাচিত সহকারী সভাধিপতি মাননীয় দেবু টুডু মহাশয়।

পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদে গত মঙ্গলবার ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি হিসেবে শপথ নিলেন শম্পা ধাড়া। সহকারী সভাধিপতি হিসেবে শপথ নেন দেবু টুডু। শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ, দুই সংসদ সদস্য মমতাজ সংঘমিতা ও সুনীল মণ্ডল, জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব, পুলিস সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় সহ বিভিন্ন বিধানসভার বিধায়ক, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি এবং জেলা পরিষদ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এদিন শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানকে স্মরণীয় করতে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা, কর্মী ও সমর্থকরা বাসে চেপে বর্ধমানে আসেন। সভা পরিচালনা করেন অতিরিক্ত জেলাশাসক(জেলা পরিষদ) প্রবীরকুমার চট্টোপাধ্যায়।
এদিন দেবু টুডু সাঁওতালি ভাষায় শপথ নেন। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আদিবাসী শিল্পীরা শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে এসে আদিবাসী নৃত্য পরিবেশন করেন। নিউ কালেক্টরেট বিল্ডিং লাগোয়া গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গায় বিশাল ম্যারাপ বেঁধে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান উপলক্ষে ভালোই ভিড় হয়। সেজন্য জেলাশাসকের অফিসের সামনের রাস্তায় যাবতীয় যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছিল।
পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের ৫৮টি আসনই তৃণমূল কংগ্রেস দখল করায় তারা বিরোধীশূন্য বোর্ড গঠন করেছে। এদিন প্রত্যেক জেলা পরিষদ সদস্য শপথ নেন। সভাধিপতি হিসেবে শম্পা ধাড়া ও সহকারী সভাধিপতি হিসেবে দেবু টুডু শপথ নিয়েছেন। পুজোর পর ন’টি স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ নির্বাচন সম্পন্ন হবে। আগের বোর্ডের সভাধিপতি ও সহকারী সভাধিপতির মধ্যে চেয়ার বদল হয়েছে। এবার পুরনো কর্মাধ্যক্ষদের মধ্যে কারা থাকবেন এবং কারা বাদ পড়বেন সেটাই আলোচনার মূল বিষয়বস্তু। এবার বেশ কয়েকজন ওজনদার নেতা জেলা পরিষদে জয়ী হয়েছেন।
এদিন সভাধিপতি শম্পা ধাড়া শপথ নেওয়ার পর জেলা পরিষদে তৃণমূল কংগ্রেসের জয়কে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেন। তিনি বলেন, এই জয়ের কারিগর স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। তাই এই জয় তাঁকেই উৎসর্গ করছি।
এদিন সহকারী সভাধিপতির শপথ নেওয়ার পর দেবু টুডু বলেন, আমরা পাঁচ বছর জেলা পরিষদ বোর্ড পরিচালনা করেছি। সেখানে কিছু ত্রুটিবিচ্যুতি হয়েছে। তবে কথা দিচ্ছি, আগামী পাঁচ বছর নিজেদের ভুল, ত্রুটি সংশোধন করে নেব। সেইসঙ্গে এই পথ চলার ক্ষেত্রে সকলের সহযোগিতা চাইছি।

বীরভূম জেলার সিউড়িতে স্বাধীনতা সংগ্রামী বাজাল এর নামে মেলা

 বীরভূম জেলার সিউড়ির বড়বাগানের আব্দারপুর ফুটবল ময়দানে আয়োজিত হতে চলেছে ‘বীরবান্টা বাজাল মেলা-২০১৯’। ১৯শে জানুয়ারি এই মেলা আয়োজিত...