Wednesday, 22 April 2020
Tuesday, 21 April 2020
Friday, 17 April 2020
জ্যৈষ্ঠ পূর্ণিমায় ‘বাহা মা মড়ে’ উৎসব

ডা.তিলক পুরকায়স্থ
জ্যৈষ্ঠ মাসের কাঠফাটা গরমে চলেছি ধামসা মাদলের খোঁজে- বাঁকুড়া জেলার সাঁওতাল আদিবাসী অধ্যুষিত বাঁশকানালি গ্রামে। এখানে বুদ্ধ পূর্ণিমার পরের পূর্ণিমায় প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয় “বাহা- মা: মড়ে অনুষ্ঠান” । আমার এই যাত্রার উদ্দেশ্য আমার দেশ, আমার বাংলা, আমার ভারতবর্ষের দর্শন ।
সাঁওতাল উপজাতিদের নিয়ে কিছু বলা যাক।এরা বিশ্বাস করে এদেরই পূর্বপুরুষ ছিলেন একলব্য, যাঁকে অত্যন্ত অন্যায় ভাবে দ্রোণাচার্য তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুল গুরুদক্ষিণা হিসাবে চেয়েছিলেন। তাই জানেন কিনা জানিনা, আজকেও সাঁওতালরা তীর ছোড়ার সময় বুড়ো আঙুল ব্যবহার করে না। অবশ্য এরকম অন্যায় কাজের উদাহরণ তো আমাদের দেশে ভুরি ভুরি ঘটেছে- শত শত একলব্য, শম্বুকদের কথা আর কেই বা মনে রাখে !সাঁওতালরা কিসকু, মুর্মু, হাঁসদা, সরেন, টুডু,মানডি, বাস্কে এই সাতটি গোষ্ঠী বা গোত্রে বিভক্ত।
সাঁওতাল নামে এঁদের পরিচিতি পরে হয়েছে, আদিতে সাঁওতাল, মুন্ডা, কোল, মাহালি সবাই এরা পরিচিত ছিল খেরওয়াল গোষ্ঠী হিসাবে। পরে অনেক ছোট ছোট গোষ্ঠী খেরওয়াল গোষ্ঠী থেকে বেরিয়ে গিয়ে নিজেদের স্বতন্ত্র গোষ্ঠী গড়ে তোলে, অনেকে হিন্দুও হয়ে যান। যেমন শুধু ঝাড় খণ্ডের কথাই যদি ধরি তাহলে দেখতে পাচ্ছি সাঁওতাল ছাড়াও ঝাড়খণ্ডে সর্বমোট ৩২ টি জন জাতির বাস। এদের মধ্যে পুরোপুরি কৃষিজীবী জন জাতি হচ্ছে সাঁওতাল, মুন্ডা, হো,ওঁরাও , খারিয়া, ভূমিজ ইত্যাদি। পক্ষান্তরে বিরহর, পাহাড়ি খারিয়া ইত্যাদি জাতির আদিতে শিকার করাই ছিল মুখ্য জীবিকা। শিল্প এবং দৈনন্দিন ব্যাবহারের সামগ্রী তৈরি করত মালহার, লোহার, কারমালি, অসুর ইত্যাদি জনজাতি। পাহাড়িয়া জনজাতির লোকেরা ঘুরে ঘুরে কৃষিকাজ করতেন।
সাঁওতাল উপজাতিদের বাহা- মা: মড়ে উৎসবে মেতে ওঠার আগে এবং কিছু বলার আগে রাঢ় বাংলা এবং বাঙালির নৃতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের কিছু দরকার আছে বলে মনে হয়।আমরা বাঙালিরা গর্বিত আর্য জাতি, আমাদের নিয়ে কবি লেখেন-” মোক্ষ মুলার বলেছে আর্য,/ সেই থেকে মোরা ছেড়েছি কার্য।”
দেখেনি আমরা কতটা আর্য, আর যাঁদের আমরা অনার্য বলছি, তাঁদের নিয়েও কিছু আলোচনা করছি।আর্য জাতি তাঁদের ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে যখন ভারতে, ভালো করে বললে উত্তর ভারতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বা প্রতিষ্ঠা পাবার জন্য যুদ্ধ বিগ্রহে লিপ্ত আছে, বাংলাদেশে তখন আদিতম দ্রাবিড় গোষ্ঠী এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ আদিম জনজাতি গোষ্ঠী বা প্রটো অস্ট্রোলয়েড গোষ্ঠীর লোকেদেরই বসবাস। এরা ছিল অতি উন্নত জাতি, এরা অস্ট্রিক ভাষায় কথা বলত।
পরবর্তী কালে অবৈদিক আর্য যেমন আলপিও, দিনারিও ইত্যাদি জন গোষ্টিও বাংলার মাটিকে বাসভূমি হিসাবে গ্রহণ করে থিতু হয়ে বসে। এই দ্রাবিড় এবং মুখ্যত অবৈদিক আর্য আলেপিও , দিনারিও গোষ্ঠীর লোকেদের সঙ্গে অস্ট্রিক সংস্কৃতি ও সভ্যতার ধারক গোষ্ঠীর মিলনের ফলেই আজকের বাংলাদেশের বাঙালি গোষ্ঠীর নৃতাত্ত্বিক উৎপত্তি। অর্থাৎ বাঙালি হচ্ছে মিশ্র শংকর জাতি।বৈদিক আর্যদের বঙ্গ বিজয় এবং বৈদিক সংস্কৃতির আবির্ভাব এর অনেক পরের ঘটনা।বঙ্গ সংস্কৃতিতে অনার্য প্রভাব নিয়ে বলা যায় যে নৃতাত্ত্বিক ভাবে বাঙালি যে উন্নত জাতি তার কারণ হচ্ছে, বাঙালির রক্তে আছে তিনটি সভ্যতার – প্রোট অস্ট্রোলয়েড, দ্রাবিড় এবং মিশ্র আর্যভাষী- সভ্যতার মিশ্রণ। তাই বঙ্গ সংস্কৃতি বলতে কেবল ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতি আদৌ বোঝায় না। এর পরতে পরতে মিশে আছে আদিম জনজাতি, অবৈদিক সভ্যতার প্রভাব। এর সঙ্গে সংযুক্তি করন ঘটেছে বৌদ্ধ ও জৈন সংস্কৃতির প্রভাব। অর্থাৎ এই ভারতের মহামানবেরা হচ্ছেন আদিম যুগ থেকে বসবাসকারী অসংখ্য জাতি-উপজাতিরা।

টর্চের আলোয় আমগাছে মুরগি
তাই বিদেশি পন্ডিতেরা যখন বলেন বহিরাগত আর্যদের দ্বারা ভারতবর্ষের সু সভ্যতার প্রচলন ঘটেছে, এমন কি ভারতীয় ধর্ম চেতনা ও বৈদিক মন্ত্র সমূহ, বহিরাগত আর্যদের দান, তখন বোঝা যায়, এনাদের চেতনায় ছড়িয়ে আছে, ভারতীয়দের সম্মন্ধে এক তুচ্ছতাচ্ছিল্য মনোভাব। বাইরের সভ্যতার সংস্পর্শে এসেই ভারতীয়রা সভ্য হয়েছে। এর থেকে মিথ্যা মিথ আর হয়না- অতি উন্নত সিন্ধু সভ্যতার প্রচলন কারা করেছিল ? কোথায় ছিল তখন সভ্য আর্যরা ?
সুর- অসুর, আর্য-অনার্য ইত্যাদি শব্দগুলি নিয়ে চমৎকার নৃতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করেছেন সুহৃদকুমার বাবু তাঁর আর্য রহস্য বইয়ে। তাঁর লেখা কয়েকটি লাইন তুলে ধরছি-” আমরা সকলেই জানি যে ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতি আর কিছুই নয়, খুব কম হলেও চারটি মৌলিক ভাষা-গোষ্ঠীর মানুষের সমবায়ে গঠিত এক সাংস্কৃতিক পরিমন্ডল। কাল অনুসারে তারা হল অস্ট্র-এশিয়াটিক কোল গোষ্ঠী দ্রাবিড়, ইন্দো- যুরোপীয় বেদিয়া শ্রেণী ও ভোটচিনীয়।। ম্যাক্স মুলরের সময় থেকে বিনা কারণে যাযাবর জাতিটি সহসা আর্য নামে অভিহিত হতে লাগল।ঐ যাযাবর জাতিটি ছাড়া অপর সকলেই ছিল স্থায়ী বসবাসকারী কৃষিনির্ভর জনগোষ্ঠী। আর যাযাবর বেদিয়ারা স্থায়ী বসবাসকারী মানুষের কাছে আসত ঔষধ বিক্রয় করতে, তুকতাক করতে আর সাধারণ মানুষের ভালোর জন্য দুর্বোধ্য সব জাদুমন্ত্রে ভগবানকে ডাকতে।…..”
সুর- অসুর, আর্য-অনার্য ইত্যাদি শব্দগুলি নিয়ে চমৎকার নৃতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করেছেন সুহৃদকুমার বাবু তাঁর আর্য রহস্য বইয়ে। তাঁর লেখা কয়েকটি লাইন তুলে ধরছি-” আমরা সকলেই জানি যে ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতি আর কিছুই নয়, খুব কম হলেও চারটি মৌলিক ভাষা-গোষ্ঠীর মানুষের সমবায়ে গঠিত এক সাংস্কৃতিক পরিমন্ডল। কাল অনুসারে তারা হল অস্ট্র-এশিয়াটিক কোল গোষ্ঠী দ্রাবিড়, ইন্দো- যুরোপীয় বেদিয়া শ্রেণী ও ভোটচিনীয়।। ম্যাক্স মুলরের সময় থেকে বিনা কারণে যাযাবর জাতিটি সহসা আর্য নামে অভিহিত হতে লাগল।ঐ যাযাবর জাতিটি ছাড়া অপর সকলেই ছিল স্থায়ী বসবাসকারী কৃষিনির্ভর জনগোষ্ঠী। আর যাযাবর বেদিয়ারা স্থায়ী বসবাসকারী মানুষের কাছে আসত ঔষধ বিক্রয় করতে, তুকতাক করতে আর সাধারণ মানুষের ভালোর জন্য দুর্বোধ্য সব জাদুমন্ত্রে ভগবানকে ডাকতে।…..”
বাংলা ভাষার ক্ষেত্রেও সেই পরিবর্তন সমানে ঘটেছে। প্রোট অস্ট্রোলয়েড, দ্রাবিড় এবং মিশ্র আর্যভাষী- সভ্যতার মিশ্রনে খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দীর আগেই তৈরি হয়েছে পূর্বমগধী জাত প্রাকৃত ভাষা। এর প্রমাণ পাওয়া যায় সপ্তম শতকে বঙ্গে আগত চৈনিক পর্যটক হিউএন সাংগের বর্ণনায়।আদি মানভূম, সাঁওতাল পরগনা, বাঁকুড়া ইত্যাদি স্থানের ( হিউএন সাংগের বর্ণনায় যে কজঙ্গল পাওয়া যায় তা কিন্তু একদিকে ছোট নাগপুরের মালভূমি, অন্য দিকে ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ, কেওনঝর এবং বালেশ্বর অবধি বিস্তৃত ছিল।)এখানকার ভাষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে সমতল নদীয়া এবং বর্তমানের কলকাতার ভাষা ও সংস্কৃতির থেকে বেশ কিছুটা আলাদাআরেকটা কথা- সাঁওতালরা প্রকৃতির উপাসক, মূর্তি পুজো করেনা।

নাইকির উঠোনে প্রথম রাতের গানের আসর
দুই
রাত প্রায় আটটা, আমরা এসে পৌঁছেছি , বাঁকুড়া জেলার সাঁওতাল আদিবাসী অধ্যুষিত বাঁশকানালি গ্রামে । এখানে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে বাহা- মা: মড়ে অনুষ্ঠান , পুরোহিত বা নায়কের বাড়ীতে। সিমলাপাল থেকে এই গ্রামের দূরত্ব ১০ কিমি র মতন।
আমরা উঠেছি, শ্রী মহেন্দ্রনাথ সরেন এই বাঁশকানালি গ্রামের মোড়লের বাড়িতে। এনার ছোটভাই ডাক্তার এবং আমার স্ত্রীর সহকর্মী। ডাক্তার ও সপরিবারে এসেছে। একগাড়ি পল্টন এসে তিনদিনের জন্য খুঁটি গেড়ে বসলাম, মোড়লের বাড়িতে। কিন্তু মোড়ল ই তো এই আনন্দ উৎসবের মুখ্য হোতা। আমাদের সামলাবে কে ? কুছ পরোয়া নেই, মোড়ল মশাইয়ের বৌদি, আমাদের সবার বড় বৌদি, সদা হাস্যময়ী , সাক্ষাৎ মা অন্নপূর্ণা- মকরি সরেন বৌদি স্বেচ্ছায় সব ভার নিজের কাঁধে তুলে নিলেন। তার আগে বাচ্চা বাচ্চা মেয়েরা এসে সোনা রঙের কাঁসার ঘটি থেকে জল ঢেলে, কাপড় দিয়ে পা মুছিয়ে দিয়ে, একে একে সবাই ভূমিষ্ট হয়ে প্রনাম করল। কিচ্ছু করার নেই, এই রীতিই এখানকার দস্তুর। সরল আদিবাসীদের এই অকৃত্রিম ভালোবাসায় চোখ ভিজে উঠবে। নব্য বঙ্গজদের কাছে, এসব হয়ত ফালতু মনে হবে। বাচ্চা মেয়ে বলতে যাঁদের বুঝিয়েছি, সেই শান্তি হেমব্রম, শ্যামলী সরেন ইত্যাদি ভাইজি, ভাগ্নীরা সবাই কমপক্ষে এম এ পাস এবং স্কুল শিক্ষিকা।
আমরা উঠেছি, শ্রী মহেন্দ্রনাথ সরেন এই বাঁশকানালি গ্রামের মোড়লের বাড়িতে। এনার ছোটভাই ডাক্তার এবং আমার স্ত্রীর সহকর্মী। ডাক্তার ও সপরিবারে এসেছে। একগাড়ি পল্টন এসে তিনদিনের জন্য খুঁটি গেড়ে বসলাম, মোড়লের বাড়িতে। কিন্তু মোড়ল ই তো এই আনন্দ উৎসবের মুখ্য হোতা। আমাদের সামলাবে কে ? কুছ পরোয়া নেই, মোড়ল মশাইয়ের বৌদি, আমাদের সবার বড় বৌদি, সদা হাস্যময়ী , সাক্ষাৎ মা অন্নপূর্ণা- মকরি সরেন বৌদি স্বেচ্ছায় সব ভার নিজের কাঁধে তুলে নিলেন। তার আগে বাচ্চা বাচ্চা মেয়েরা এসে সোনা রঙের কাঁসার ঘটি থেকে জল ঢেলে, কাপড় দিয়ে পা মুছিয়ে দিয়ে, একে একে সবাই ভূমিষ্ট হয়ে প্রনাম করল। কিচ্ছু করার নেই, এই রীতিই এখানকার দস্তুর। সরল আদিবাসীদের এই অকৃত্রিম ভালোবাসায় চোখ ভিজে উঠবে। নব্য বঙ্গজদের কাছে, এসব হয়ত ফালতু মনে হবে। বাচ্চা মেয়ে বলতে যাঁদের বুঝিয়েছি, সেই শান্তি হেমব্রম, শ্যামলী সরেন ইত্যাদি ভাইজি, ভাগ্নীরা সবাই কমপক্ষে এম এ পাস এবং স্কুল শিক্ষিকা।
বিশাল উঠোন, পূর্ণিমার চাঁদের আলোয় ভেসে যাচ্ছে। সারি সারি খাটিয়া পাতা। এতেই চলেছে, গান, আড্ডা, নাচের মহড়া। তালবাদ্যের রণ সংগীতে, এর মধ্যেই রক্ত গরম হতে শুরু করেছে। ঝকঝকে নিকানো উঠোনে, এই বাড়ির মেয়েদের হাতে বোনা আসনে বসে, বড় বৌদির হাতের অমৃত সম রান্নার স্বাদ, সারা জীবনের মণিকোঠায় তোলা থাকলো।রাত নয়টা থেকে পুরোহিতের বাড়িতে তুলসীমঞ্চকে ঘিরে শুরু হয়েছে অনুষ্ঠান । আধো অন্ধকারে এক আধি দৈবিক, আধি ভৌতিক পরিবেশ তৈরি হয়েছে। ধামসা, মাদল, রেগড়া, সাঁকোয়া কত রকম বাদ্যযন্ত্র , বিশাল জায়গাজুড়ে কি অসাধারণ একটি পরিবেশ তৈরি করেছে, লিখে বোঝান যাবেনা। তিনদিনের উৎসবের আজকে অনুষ্ঠানের প্রথম দিন, ওঁম ।

মোড়লের ঘর
মোড়ল মশাইকে ঘিরে গল্প শুনছি। ঠিক গল্প নয়, অজানা সংস্কৃতির গল্প। এই গল্প আমাদের শোনানো হয়না। যে অস্ট্রিক সভ্যতা- ভারতীয় সভ্যতার অন্যতম ভিত্তি, তাঁদের কথা তাঁদের উত্তরসূরিদের মুখ থেকেই শোনা যাক।
মহেন্দ্রনাথ সরেন হচ্ছেন মোড়ল বা মাঝি হাড়াম। ইনি হচ্ছেন এই গ্রাম সমাজের মুখ্য কর্তা। এ ছাড়াও আরো চারজন কর্তা আছেন। পারানিক বা পরামানিক , পরামানিকের সহকারী- জগ পারানিক, গোড়ায়েৎ বা কাইলি( উৎসবের বার্তাবাহক), জগ মাঝি( মরাল পুলিশ বলা যায়)।
এই যে বাহা- মা মড়ে অনুষ্ঠানে আমরা এসেছি, এর নির্ঘন্ট কিন্তু তৈরি করেছেন- সমাজ কর্তারা মিলে । একটি (জেনারেল বডি মিটিং) আলোচনা সভা বা ” কুলহি দুড়ুপ:” এ বসে এই নির্ঘন্ট তৈরি হয়েছিল।
মহেন্দ্রনাথ সরেন হচ্ছেন মোড়ল বা মাঝি হাড়াম। ইনি হচ্ছেন এই গ্রাম সমাজের মুখ্য কর্তা। এ ছাড়াও আরো চারজন কর্তা আছেন। পারানিক বা পরামানিক , পরামানিকের সহকারী- জগ পারানিক, গোড়ায়েৎ বা কাইলি( উৎসবের বার্তাবাহক), জগ মাঝি( মরাল পুলিশ বলা যায়)।
এই যে বাহা- মা মড়ে অনুষ্ঠানে আমরা এসেছি, এর নির্ঘন্ট কিন্তু তৈরি করেছেন- সমাজ কর্তারা মিলে । একটি (জেনারেল বডি মিটিং) আলোচনা সভা বা ” কুলহি দুড়ুপ:” এ বসে এই নির্ঘন্ট তৈরি হয়েছিল।
মা: অর্থ জাহেরআয়ু মা, যিনি আবার সৃষ্টিকর্তা মারাং বুরুর স্ত্রী। আর মড়ে অর্থ পাঁচ। বৃহত্তর অর্থে পাঁচ ঠাকুরের কাছে মানসিকের কমপক্ষে পাঁচটি পাঁঠা/ছাগল বলি। বসন্ত উৎসবের বা ফুলের উৎসবের অনুষ্ঠান বাহা পড়ব তো চৈত্র মাসে হয়ে গেছে। কিন্তু বংগা দেবতার থানে যারা মানসিকের ব্রত করেছিল, সেই মানসিকের ব্রত রাখা মানুষ গুলির জন্য, বুদ্ধ পূর্ণিমার পরের পূর্ণিমায় এখানে পালন করা হয় মা: মড়ে উৎসব। মারাং বুরু, জাহেরআয়ু, মড়ে-কো-তুড়েইক, সেন্দ্রা বঙ্গা, হারাং বঙ্গা- এই পাঁচটি মুখ্য দেব-দেবীর থানে চারটি পাঁঠা ও একটি ছাগি বলি হচ্ছে পুজোর অঙ্গ। জাহের আয়ু দেবীর নামে ছাগি বলি হয়।এই মুখ্য দেবতাদের থানেই আছেন রস্কে বঙ্গা। ইনি সাঁওতাল সমাজের রসে বসে থাকা আনন্দের ঠাকুর বলতে পারি।

এই বলি উৎসব কিন্তু হবে দ্বিতীয় দিনে, অর্থাৎ আগামীকাল, যাকে বলা হয় সারদি-র দিনে।রাত নয়টায় ঢুকলাম- প্রধান পুরোহিত বা নাইকির বাড়ির উঠানে। লোকে লোকারণ্য। দুই দিকে বাজনাদারেরা বসে গ্যাছে তাঁদের বাজনার যন্ত্র নিয়ে।আরেকদিকে মেয়েরা বসে। বাকি দিকে নাইকি- বীরেন সরেনের ঘর। মূল ধর্মীয় অনুষ্ঠান চলছে, নাইকির উঠানের তুলসী মঞ্চ ঘিরে। নাইকির সহকারী একটি কম বয়সী ছেলে- যাকে ডাকা হয় ” কুডম নাইকি” বলে।
একদিকে পুজো আর্চা চলছে, মাঝে মধ্যে ধুনোর ধোঁয়ায় চারদিক অন্ধকার। সমস্ত ইলেকট্রিক আলো নিভিয়ে দিয়ে একটিমাত্র হ্যাজাকের আলোতে এতবড় অনুষ্ঠান চলছে।
একদিকে পুজো আর্চা চলছে, মাঝে মধ্যে ধুনোর ধোঁয়ায় চারদিক অন্ধকার। সমস্ত ইলেকট্রিক আলো নিভিয়ে দিয়ে একটিমাত্র হ্যাজাকের আলোতে এতবড় অনুষ্ঠান চলছে।
ধামসা, মাদল, খোল এগুলি সবই হচ্ছে আনন্ধ শ্রেণীর বাদ্যযন্ত্র, অর্থাৎ প্রতিটি বাদ্যযন্ত্র চামড়ার আচ্ছাধন দিয়ে তৈরি।ধামসা বা নাগারা আদিতে রণসঙ্গীত হিসাবে যুদ্ধের সময় বাজানো হত। তবে বর্তমানে মানভূম এবং ছোটনাগপুর জেলার বিভিন্ন নৃত্যগীত এবং শোভাযাত্রায় ব্যাপকভাবে এটি বাজানো হয়। ধামসা বা নাগারার অন্য নামগুলো হচ্ছে টিকারা, দামামা, ঢক্কা, ডঙ্কা ইত্যাদি( Samuel Johnson 1834, A Dictionary in English and Bengalee.)
আগে শিশুকাঠ দিয়ে ধামসার খোল তৈরি হতো। তবে বর্তমানে লোহার চাড়ির মুখে গরু বা মহিষের চামড়া দিয়ে এর ছাউনী তৈরি হয়। ছাউনী তৈরিতে গাব(গাব ফলের আঠা) বা খিরণ লাগানো হয় না।
ধামসা দুটি মোটা কাঠির সাহায্যে বাজানো হয়। ধামসা কিন্তু ছোট ও বড় – দুটি মাপের হয়। বোলের শব্দ শুনে দ্রিমি দ্রিমি, দ্রিম দ্রিম ধ্বনি বলে মনে হয়। বাঁশ পাহাড়ির অনুষ্ঠানে দুই সাইজের ধামসা দেখতে পেলাম।
প্রায় এরকমই আওয়াজ বেরোচ্ছে আরেকটি বিশাল বাদ্যযন্ত্র থেকে। এটির নাম রেগড়া। এটি কিন্তু সমান দৈর্ঘ্যের দুটি কাঠি দিয়ে বাজানো হচ্ছে।
বিশাল আকারের মহিষের শিঙে প্রস্তুত আরেকটি বাদ্যযন্ত্র হচ্ছে সাঁকোয়া। শিঙের মধ্যে একটি ফুটো থাকে। এই ফুটোতেই ফুঁ দিয়ে সুর তুলছে। মধ্যে মধ্যে শিল্পীকে যন্ত্রের মধ্যে জল ঢেলে পরিষ্কার করতে দেখলাম। সাঁকোয়া বহু প্রাচীন বাদ্যযন্ত্র। একজন শিল্পীর সঙ্গে আলাপ হল- ওনার নাম লখিন্দর মুর্মু। উনি এই যন্ত্র বাজাতে শিখেছেন উনার গুরু মহেন্দ্রনাথ সরেনের কাছে।

এবার আসি মাদলে।
মাদল দেখতে অনেকটা সিলিনড্রিকাল , এরকমই দেখতে একটু ছোট বাদ্যযন্ত্র কে লাগা বলে। এটি তৈরিতে পোড়ামাটির খোল লাগে। এখানেও খোলা মুখ দুটিতে গরু/মোষের চামড়ার ছাউনী লাগানো হয়। ছাউনির মাঝখানে গাব ফলের আঠা বা খিরণ লাগিয়ে চামড়া শক্ত ও টেকসই করা হয়। এছাড়া খোলের উপর তবলার মতন সরু সরু চামড়ার ফিতের বাঁধি লাগানো হয়। নাচ গানের সময় বেশির ভাগ জায়গায়, দুটি মাদল এবং একটি লাগা ব্যবহার করা হয়। তাই দুটি মাদল এবং একটি লাগা নিয়ে মাদলের একটি সেট হয়। আদিবাসী নাচে গানে, ঝুমুর গান এবং নাচে, মাদল বাজবেই।
মাদল দেখতে অনেকটা সিলিনড্রিকাল , এরকমই দেখতে একটু ছোট বাদ্যযন্ত্র কে লাগা বলে। এটি তৈরিতে পোড়ামাটির খোল লাগে। এখানেও খোলা মুখ দুটিতে গরু/মোষের চামড়ার ছাউনী লাগানো হয়। ছাউনির মাঝখানে গাব ফলের আঠা বা খিরণ লাগিয়ে চামড়া শক্ত ও টেকসই করা হয়। এছাড়া খোলের উপর তবলার মতন সরু সরু চামড়ার ফিতের বাঁধি লাগানো হয়। নাচ গানের সময় বেশির ভাগ জায়গায়, দুটি মাদল এবং একটি লাগা ব্যবহার করা হয়। তাই দুটি মাদল এবং একটি লাগা নিয়ে মাদলের একটি সেট হয়। আদিবাসী নাচে গানে, ঝুমুর গান এবং নাচে, মাদল বাজবেই।
খোলও একটি পোড়ামাটির বাদ্যযন্ত্র।মৃৎ বা মাটির তৈরি বলে এর আরেকটি নাম মৃদঙ্গ। খোলের আকার অনেকটা কলার মোচার আকৃতির। দুই দিকের খোলা মুখ দুটিতে চামড়ার আচ্ছাদন বা ছাউনী লাগানো হয়। ডানদিকের মুখটি অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র , বামদিকের মুখের চেয়ে। এখানেও চামড়ার মাঝখানে গাব বা খিরণ লাগান হয়।বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে, কীর্তন গানের সঙ্গে খোলের বহুল ব্যবহার করা হয়, তাই একে কীর্তন খোল ও বলে।
রাত একটা বেজে গেছে, , নাচ- গান, ধর্মীয় অনুষ্ঠান চলছেই। শুনলাম চলবে রাত তিনটে অবধি। অনেকের উপরে দেখলাম দেবতার ভর হয়েছে। তাঁদের ব্যাবহার ও চলন বলন, কেমন অদ্ভুতভাবে বদলে যাচ্ছে।
ফিরে এলাম ঘরে। সত্যিকারের রাম রাজত্ব দেখতে হলে এই সাঁওতাল গ্রামগুলিতে আসতে হবে। এত লোক রাস্তা দিয়ে চলাচল করছে, বাইরে থেকে এত লোক এসেছে, বাড়ির সামনে থেকে পিছন অবধি সব দরজা/জানলা খোলা। আমি তো চাঁদের আলোয় শুয়ে পড়লাম, উঠানের খাটিয়াতে। শেষ রাতে শুনি মাথার উপরে মোরগের ডাক। তখনও ঠিকমতন আলো ফোটেনি, কিছু বুঝতে না পেরে, মাথার উপরের আমগাছে ,টর্চের আলো ফেলে চক্ষুস্থির। গাছের উপরে কাতারে কাতারে মুরগি চড়ে বসেছে। এমন অদ্ভুত দৃশ্য, জীবনে প্রথম দেখলাম।

পরের দিন সকালে এই মুরগি রহস্য উদ্ধার হল। এখানে প্রত্যেকের ঘরেই লড়াকু কাশিপুর মোরগ পোষা হয়। এই মোরগ পোষা হলেও, মোটামুটিভাবে উড়তে পারে। চোর ডাকাত না থাক, মুরগির খোঁজে শিয়াল বা হুরাল প্রায় গ্রামে হানা দেয়। তাই ডারউইন সাহেবের মতকে মেনে নিয়ে এরাও শিয়ালকে কাঁচকলা দেখিয়ে, রাতের বেলা গাছের মগডালে চড়ে বসে থাকে- survival for the fittest .

হ্যাজাকের আলোতে নাচ-গানের মহড়া
তথ্যসূত্র
১) আবাদভূমি, তৃতীয় বর্ষ, সপ্তম সংখ্যা, নভেম্বর ২০১৬ – এপ্রিল ২০১৭।
২)সুহৃদকুমার ভৌমিক । আর্য্ রহস্য। মনফকিরা।
৩) আদিবাসী সমাজ ও পালপার্বন : ধীরেন্দ্রনাথ বাস্কে।লোকসংস্কৃতি ও আদিবাসী সংস্কৃতি কেন্দ্র, পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
৪) বাংলার জনজাতি, প্রদ্যোত ঘোষ। পুস্তকবিপণি।
১) আবাদভূমি, তৃতীয় বর্ষ, সপ্তম সংখ্যা, নভেম্বর ২০১৬ – এপ্রিল ২০১৭।
২)সুহৃদকুমার ভৌমিক । আর্য্ রহস্য। মনফকিরা।
৩) আদিবাসী সমাজ ও পালপার্বন : ধীরেন্দ্রনাথ বাস্কে।লোকসংস্কৃতি ও আদিবাসী সংস্কৃতি কেন্দ্র, পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
৪) বাংলার জনজাতি, প্রদ্যোত ঘোষ। পুস্তকবিপণি।
Sunday, 5 April 2020
ভালডুংরীর শিশুরা
তরতাজা এক যুবকের নাম নরেন হাঁসদা। অনাথ ও গরিব আদিবাসী শিশুদের একটা আবাসিক স্কুল চালান। পুরুলিয়া শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে আর্শা ব্লকে ভালডুংরি নামে একটা স্বপ্ন-পাহাড়ের নীচে সে স্কুল। আবাসিকের সংখ্যা এইমুহূর্তে ২৮ জন। আশপাশের গ্রামগুলো থেকে আরও ২০০ বাচ্চা আসে ওর স্কুলে। নরেন রাজ্যের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত ছুটে বেড়ান কণ্ঠে ঝুমুর গান নিয়ে, শিশুগুলোর অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা— একটু সোনালির জন্য। এছাড়া মাঝেমধ্যে এদিক ওদিক থেকে জুটে যায় কিছু দরদী মানুষের সহায়তা, এভাবেই চলে। আমি ও আমাদের আবৃত্তির দল কবিতাবাড়ি কিছুদিন আগে ওদের কাছে গিয়েছিলাম এরকম আশ্চর্য উদ্যোগের স্পর্শ নিতে। ওদের কাছে সাধ্যমত কিছু পৌঁছে দিয়েছি।
সে আর কতটুকুই বা। এই করোনার আবহে নরেন শিশুগুলোকে নিয়ে খুব সংকটে! খাবার ফুরিয়ে আসছে দ্রুত। নরেন গান গাইতেও যেতে পারছেন না কোথাও। কীভাবে অনাথ শিশুগুলোকে বাঁচিয়ে রাখবে ওঁ!
বন্ধুরা ওদের একটু সাহায্য করুন। নরেনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট দিলাম। দু-একশ করে টাকা আমরা অনেকেই দিতে পারি! ওটুকুই বিন্দু বিন্দু করে যুক্ত হলে বাঁচবে অনেকগুলো প্রাণ।
PURULIA DHARTI MARSHAL SOCIETY
Bank : SBI Purulia
A/c No. : 37328725490
IFSC : SBIN0000160
Bank : SBI Purulia
A/c No. : 37328725490
IFSC : SBIN0000160






Sunday, 8 March 2020
লটা দাঃ (ঘটি জল)

এক বৃদ্ধ পিতা তার আদরিনী কন্যার বিবাহের পর স্নেহের টানে মেয়ের বাড়ি চলে এসেছেন তার মেয়ে জামাই কি রকম আছে তা দেখতে। অভাব অনটনের সংসারেও মেয়ে বাবাকে পেয়ে অসীম চঞ্চল হয়ে উঠল। সাঁওতাল সমাজে চিরাচরিত প্রথা অনুসারে অতিথি এলে যেমন এক ঘটি জল শুভ অতিথির পায়ের কাছে রেখে দিতে হয় অভ্যর্থনার জন্য। মেয়েও তাই করলেন বাবার সমামন ,আর ভূমি পিষ্ট হয়ে প্রণাম করলো। তারপর মেয়ে বাবা তুমি বিশ্রাম করো বলেই বাইরে বেরিয়ে গেল। পিতা অনুমান করলেন দারিদ্র্যের সংসারে আত্মীয়তার জন্য মেয়ে নিশ্চয়ই কোনো কিছু ধার করতে বেরিয়েছে। ভাবতে ভাবতে বেদনায় কাতর হয়ে উঠলেন তিনি এবং এমন সময় বাইরে কোলাহলে বৃদ্ধ এসে দেখেন সেই পাড়ায় আগুন লেগেছে।আর একটার পর একটা ঘর পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। সমস্ত লোক একত্রে হয়েও কুয়ো ঝর্না ডাডির জল দিয়ে নেভাতে পাচ্ছে না সেই আগুন। বৃদ্ধ ভুলে গেলেন মেয়ের দেওয়া ঘটির জলে হাত পা ধুতে ও আচমন করতে - যা অবশ্যই করণীয় অতিথি হিসেবে। কারণ তা আতিথ্য স্বীকারের প্রতীক। তিনি সেই ঘটির জলই দিশাহারা হয়ে আগুনের লেলিহান শিখায় ছিটিয়ে দিলেন।আর বিস্ময়ের সঙ্গে মানুষ দেখল মুহূর্তেই আগুন নির্বাপিত হয়েছে।সমবেত ক্লান্ত জনতা সমস্বরে বলে, আপনি নিশ্চয়ই মন্ত্রপূত বারি ব্যবহার করেছেন। বৃদ্ধ বললেন না এ হল আমার আদরিনী কন্যার হৃদয় উৎসারিত করা ভালোবাসা দেওয়া অতিথি গ্রহণের লটা দাঃ ( ঘটি জল)। অতিথিকে দেবতা মনে করে আমার নির্দ্বিধায় তাকে গ্রহণের জন্য যে পূর্ণ ঘটির জল দিয়ে অভ্যর্থনা করি তা এত বিশুদ্ধ পবিত্র ও শক্তিশালী - আমি তা নিজেই জানতাম না। যাইহোক অতিথি হিসেবে তোমার ঘরে কেউ এলে তাকে লটা দাঃ দিয়ে অভর্থনা করবে। এই লটা দাঃ এর কথা কখনোই ভুলবে না।
সাঁওতাল সাহিত্যের নক্ষত্র সারদাপ্রসাদ কিস্কু
তিনি ‘টটকো মলং’, তিনি ‘পাতাং সুরাই’, তিনিই সাঁওতাল সাহিত্যের অন্যতম উজ্জ্বল ‘ইপিল’। সাঁওতাল ভাষার স্বতন্ত্র লিপি তাঁর আঙুলের ছোঁয়ায় অমর হয়েছে। কবির জন্মদিনে তাঁকে স্মরণ করলেন নচিকেতা বন্দ্যোপাধ্যায়
সারদাপ্রসাদ। ছবি: লেখক
সাঁওতালি অতি প্রাচীন ভাষা। দীর্ঘ জীবন ধরে মূলত মৌখিক সাহিত্যই এই ভাষাকে ধরে রেখেছে। এর সঙ্গে সংরক্ষিত হয়েছে সাঁওতালদের জাতি গোষ্ঠীর সংস্কৃতি ও পুরাণতত্ত্ব। এই আদিম আদিবাসীদের বৌদ্ধিক সংস্কৃতি ও প্রাত্যহিক যাপন আর্য সভ্যতার নিকট তেমন ঋণী নয়। কৃষি ও শিল্পে ওঁদের নিজস্ব রীতি প্রাচীন ও বহমান। তাঁদের ইতিহাস, প্রাক আর্যযুগের ইতিহাস। তাঁদের ভাষাও তাঁদেরই মতো প্রাচীন।
সাঁওতালি সাহিত্য আদিযুগের শ্রুতি সাহিত্য। সুপ্রাচীন এই লোকসাহিত্যের কাল নির্ধারণ কার্যত অসম্ভব। ইতিহাসের মধ্যযুগেও এই শ্রুতি সাহিত্যই সাঁওতালদের সংস্কৃতির মাধ্যম ছিল। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে আসার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে ভারতে মিশনারিদের আগমন হয়। উদ্দেশ্য, খ্রিস্টান ধর্মের প্রচার। বাংলা, বিহার, ওড়িশার সাঁওতাল অধ্যুষিত এলাকায় আদিবাসীদের ধর্মান্তরের কর্মসূচি উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগ থেকেই শুরু হয়ে যায়। সাঁওতাল ভাষার সম্পদ অন্বেষণ তন্নিষ্ঠ হয়। মিশনারিরা ভাষাটির চর্চা, যত্ন ও উন্নয়নে সচেষ্ট হন। মিশনারিদের অবদান—এ ভাষার লিখিত রূপ। রোমান লিপিতে সাঁওতাল ভাষার প্রথম মুদ্রণ এই সময়েই। এ ভাষাও সাহিত্যের ‘মধ্যযুগ’ সূচনা করে। আধুনিক কাল সেদিনের। মিশনারি প্রভাবমুক্ত হওয়া বিংশ শতাব্দীর তিরিশ দশকে। সাধু রামচাঁদ মুর্মু, পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মু, মঙ্গলচন্দ্র সরেন প্রমুখ সে দশকের প্রতিনিধি।
কবি সারদাপ্রসাদ কিস্কু সাঁওতালি ভাষায় পদ্য লিখতেন। জন্ম দাঁড়িকাডোবা, পুরুলিয়ার বান্দোয়ান সন্নিহিত গ্রাম। ১৯২৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। পিতা চরণ কিস্কু। মা ধনমণি। কবির বেড়ে ওঠা প্রান্তিকতা ও দারিদ্রের পটভূমিতে। অনুশীলনে সততা ও দৃঢ় সংকল্প। জেরোবারি গ্রামে নিম্ন প্রাথমিক, বড়গড়িয়া গ্রামে উচ্চ প্রাথমিক, রানিবাঁধ মিডল স্কুল (এখানেই মেরিট স্কলারশিপ প্রাপ্তি) ও খাতড়া হাইস্কুলে ছাত্রজীবন। ১৯৪৮ এ প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাশ। রামানন্দ কলেজে (বিষ্ণুপুর) ভর্তি হয়েছিলেন আই এ পড়বেন বলে। কিন্তু দারিদ্র অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। আটকে যায় উচ্চশিক্ষা।
এর পরে জীবনযাপন এবং জীবিকার জন্য তিন মাসের ‘হিন্দি শিক্ষন’। প্রশিক্ষণ নেন বান্দোয়ানে ১৯৫০ সালে। তার পরে সুযোগ পেলেন জামতোড়িয়া সিনিয়র বেসিক স্কুলে শিক্ষকতার। ১৯৬২ সালে বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা, পরাজয় এবং চাকরি হারানো। পুনরায় চাকরি জীবন শুরু বড়দিহি প্রাথমিক স্কুলে। একেবারে ১৯৮৯ সালে অবসর গ্রহণ পর্যন্ত তিনি সেখানেই কর্মরত ছিলেন। রাষ্ট্রপতির পুরস্কার প্রাপ্তি ১৯৭৩ সালে।
জীবন তাঁর মসৃণ ছিল না। বন্ধুর পথে সাহিত্যই তাঁর সখা। তিনি আদ্যন্ত কবি ও কথা সাহিত্যিক। পদ্য রচনার হাতেখড়ি ছাত্রজীবনে। অনুপ্রেরণায় কবি সাধু রামচাঁদ মুর্মুর ‘সৌরি ধরম সেরেঞ পুঁথি’। ছন্দমিলে সারদাপ্রসাদের আসক্তি বরাবরের। প্রথম লেখা প্রকাশ ‘হড় সম্বাদ’ পত্রিকায়। ‘টটকো মলং’ (অর্থ, উঁচু কপালধারী) ছদ্মনামে লিখতেন গল্প। ‘তেতরে’ পত্রিকায় লিখতেন ‘পাতাং সুরাই’ (অর্থ, পাতার পোকা) ছদ্মনামে। স্বঘোষণায় সাধু রামচাঁদ তাঁর গুরু। রামচাঁদ ছিলেন প্রতিবাদী কবি। সাঁওতালদের ‘সারি ধরম’ (শাশ্বত ধর্ম) জাগরণের কবি। ‘দেবন তিঙ্গুন আদিবাসী বীর’ তাঁর জাগানিয়া গান সাঁওতাল মানসে যেন জাতীয় মন্ত্র। মাতৃভাষাই যে শিক্ষার বাহন, সেটা তিনি বুঝতেন। তাই ১৯২৩ সালে তৈরি করেছিলেন সাঁওতাল ভাষার স্বতন্ত্র লিপি। ‘মঁজ দাঁদের আঁক’। এ লিপিতেই তাঁর অধিকাংশ রচনা। ‘অলচিকি’ অপেক্ষা এই লিপি প্রাচীনতর। তিনি কবি ও দার্শনিক, শিল্পী ও সংস্কারক। সারদাপ্রসাদের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ভুরকৌ ইপিল’ (১৯৫৩)। সাঁওতাল ভাষায় ‘ইপিল’ কথার অর্থ ‘নক্ষত্র’। ‘ভুরকৌ ইপিল’ অর্থাৎ, শুকতারা। এই বইয়ে গানও লিপিবদ্ধ হয়েছে।
ক্রমান্বয়ে ‘কুহূবউ’ (অর্থ, কোকিল), ‘গাম গঁদার’ (অর্থ, মধুর বাণী) (১৯৬৭), ‘লাহা হররে’ (অর্থ, এগিয়ে চলার পথে) (১৯৮৫) গান ও কবিতা সংকলনগুলো প্রকাশিত হয়। এগুলো প্রধান। আরও আছে। সমালোচকদের মতে, তাঁর কবিতার তিনটি ধারা। অন্তর্মুখিতা, কল্পনাশ্রয় ও ‘মিস্টিক ভাবনা’ নিয়ে প্রথম ধারা। দ্বিতীয় ধারায় প্রকৃতি পর্যায়। অন্তিম ধারায় জীবন ঘনিষ্ঠতা। আদিবাসী জীবনের যন্ত্রণা, শোক, আশা এবং আকাঙ্ক্ষা। তিনি পঞ্চাশের দশকের কবি। সবে ভারত স্বাধীন হয়েছে। স্বদেশি আন্দোলন দেখেছেন কাছ থেকে। তাই সাহিত্যে যতটা নিবেদিত, ততটাই নিবেদিত সমাজচেতনা ও সামাজিক সংস্কারে। এই দশকেই বিহার, বাংলা ও ওড়িশার সাঁওতালি সাহিত্যের নবজাগরণ। নারায়ণ সরেন, ডমন সাহু ‘সমীর’, আদিত্য মিত্র ‘সান্থালি’ প্রমুখ কবি পুনর্প্রতিষ্ঠিত।
তিনি কথা সাহিত্যিকও বটে। ‘সলম লটম’ (অর্থ, তালগোল) প্রকাশিত হয় ১৯৮৮ সালে গল্প সংকলনরুপে। ‘জুডৌসি অণল মালা’ (অর্থ, মনোরম প্রবন্ধ সংগ্রহ) (১৯৯৪) একমাত্র প্রবন্ধ সংকলন। গানে-কবিতায়-গল্পে দেশ ও সমাজের কথা বলেছেন। সাহিত্যে সাঁওতালি যাপন শেষকথা নয়, শেষকথা মানবতা। ইতিহাস বোধে, সাহিত্য বোধে, সংস্কৃতি বোধে দেশ ও কালের ঊর্ধ্বে অবস্থান করেন। তিনি মানুষের কবি। তিনি নক্ষত্র। তিনি ইপিল।
সাঁওতাল বিদ্রোহ, খেরোয়ালি আন্দোলন, ছোটনাগপুর উন্নতি সমাজ, আদিবাসী মহাসভা প্রভৃতির ইতিহাস তাঁর জানা। তিনি জানতেন অস্ট্রো-এশিয়াটিক গোষ্ঠীর মধ্যে সাঁওতাল সম্প্রদায়ই সংখ্যাগরিষ্ঠ। সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও মানসিক সুসংবদ্ধতার মাপকাঠিতে তারাই শীর্ষে। তবু বহমান সমাজে কখনও কখনও কুসংস্কার আসে। তাই সমাজ সংস্কারক তিনি ডাইনি-বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। বিরুদ্ধতা এসেছে ফলশ্রুতিতে। জীবনে বিপন্নতা ও ঝুঁকি এসেছে। অটল সারদাপ্রসাদ জানতেন সততা ছাড়া কবির আশ্রয় নেই। ১৯৯৬ সালের ১৮ মার্চ কবির জীবনাবসান ঘটে। রেখে যান সাহিত্যকীর্তি, পাঠক ও পরবর্তী প্রজন্মের অনুপ্রেরণা।
লেখক সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসচিব
রাষ্ট্রপতির হাত থেকে নারী শক্তি সন্মান ২০১৯ পেলেন শ্রীমতি চামি মুর্মু|
আজ ০৮ ই মার্চ, ২০২০, আন্তর্জাতিক নারী দিবসে দিল্লীতে রাষ্ট্রপতি ভবনে
মাননীয় রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ ‘নারী শক্তি সন্মান, ২০১৯’ তুলে দিলেন
শ্রীমতি চামি মুর্মুর হাতে| জঙ্গল রক্ষায় উল্লেখ্যযোগ্য অবদানের জন্য
ঝাড়খণ্ড রাজ্য নিবাসী ৪৭ বছর বয়সী শ্রীমতি চামি মুর্মু পরিচিত ‘লেডি
টারজান’ হিসেবে|
নিজের গ্রাম ও সংলগ্ন এলাকায় গত ২৪ বছরে প্রায় ২৫ লক্ষ গাছ লাগিয়েছেন
শ্রীমতি চামি মুর্মু| নিজের এই কর্মকাণ্ডে ৩০০০ মহিলার এক সবুজ বাহিনী তৈরী
করেছেন| নকশাল প্রভাবিত এলাকা হওয়া সত্বেও জঙ্গলে ভয়ডরহীন ভাবে ঘুরে
বেড়ান শ্রীমতি চামি মুর্মু ও তাঁর বাহিনীর সদস্যরা| এলাকার জঙ্গল
মাফিয়াদের ত্রাস শ্রীমতি চামি মুর্মু ও তাঁর বাহিনীর সদস্যরা|
এর আগেও ১৯৯৬ সালে কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রক থেকে ইন্দিরা প্রিয়দর্শিনি বৃক্ষ মিত্র পুরস্কার পেয়েছেন শ্রীমতি চামি মুর্মু|
অভিনন্দন জানাই আপনাকে শ্রীমতি চামি মুর্মু| আপনার এই সন্মানে সমস্ত আদিবাসী সমাজই সন্মানিত বোধ করছে|
সান্তাড়ী মিডিয়ামতে পৌয়লো HS 2020 বিনিড ক এম এদা 15 গটাং বাবু-মাই তাকো হিড়বাঁধ হাই স্কুল খন
সান্তাড়ী মিডিয়ামতে পৌয়লো HS 2020 বিনিড ক এম এদা 15 গটাং বাবু-মাই তাকো
হিড়বাঁধ হাই স্কুল খন।নাপায়তে বিনিড এম লাগিদ আশিস থুম।তিহিঞ ঞেল ঞেল তেগে
2012-2020 অকা লেকা চং পারম গৎ এনা।সান্তাড়ীতে অলঃ পাড়হাও চাচৌ লাগিদ
যাঁহায় গগ-বাবা, মাচেৎ-মাচেতানী,মাঝি বাবা ক, আডি গান গাতে গাঁওতা ক গড়ো
লেনা সানাম কগে গুন মানাও জঁহার।।


সাঁওতালি ভাষা অলচিকি লিপিতে ভর্তি ও ক্লাস চলছে। ভর্তির শেষ তারিখ ১৫ ই মার্চ
সাঁওতালি ভাষা অলচিকি লিপি তে সার্টিফিকেট ও ডিপ্লোমা কোর্সে পঠন পাঠনের জন্য ভর্তি চিলতেছে। সাঁওতালি শিক্ষা বোর্ড আসেকা(দিল্লি সাহিত্য একাডেমী এমপ্লয়মেন্ট প্রাপ্ত) থেকে উত্তীর্ণ ছাত্র-ছাত্রীদের সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। ইতিমধ্যে ভর্তি ও ক্লাস শূরু হয়েছে। অভিজ্ঞ শিক্ষকমন্ডলী দ্বারা এখানে পড়ানো হয়। আসেকা সাঁওতালি শিক্ষা বোর্ডের অধীন মেদিনীপুর সদর ব্রাঞ্চে এই ভর্তি প্রক্রিয়া চলছে। আগামী ১৫ মার্চ ভর্তির শেষ তারিখ। ভর্তি হওয়ার জন্য সমস্ত স্তরের ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে আবেদন পত্র আহবান করা হচ্ছে।
সীমিত সংখ্যক আসন সংরক্ষন করা হয়েছে। আবেদনের ভিত্তিতে ছাত্রছাত্রীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলে জানা যায় সংস্থা পক্ষ থেকে। এখানে সাঁওতালি ভাষা অলচিকি লিপিতে প্রাথমিক থেকে সুষ্ঠু সহকারে পড়ানো হয়। সার্টিফিকেট ও ডিপ্লোমা কোর্সের জন্য এখানে ভর্তি নেওয়া হচ্ছে। কোর্সের শেষে সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। সাঁওতালি ভাষা অলচিকি লিপিতে মেদিনীপুর সদর ব্রাঞ্চ থেকে ভর্তি ও পঠন পাঠনের জন্য, আরও বিস্তারিত জানার জন্য নিচে দেওয়া সংস্থা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। সংস্থা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য মোবাইল নম্বর হল- 6294405083/ 90646 34904
সীমিত সংখ্যক আসন সংরক্ষন করা হয়েছে। আবেদনের ভিত্তিতে ছাত্রছাত্রীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলে জানা যায় সংস্থা পক্ষ থেকে। এখানে সাঁওতালি ভাষা অলচিকি লিপিতে প্রাথমিক থেকে সুষ্ঠু সহকারে পড়ানো হয়। সার্টিফিকেট ও ডিপ্লোমা কোর্সের জন্য এখানে ভর্তি নেওয়া হচ্ছে। কোর্সের শেষে সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। সাঁওতালি ভাষা অলচিকি লিপিতে মেদিনীপুর সদর ব্রাঞ্চ থেকে ভর্তি ও পঠন পাঠনের জন্য, আরও বিস্তারিত জানার জন্য নিচে দেওয়া সংস্থা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। সংস্থা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য মোবাইল নম্বর হল- 6294405083/ 90646 34904
5 ই মার্চ গনবিবাহর দিনে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মহাশয়ার বক্তব্য শুনে এক অজানা বিপদের প্রতিচ্ছবি দেখতে পেলাম।
প্রথমে গনবিবাহ ব্যাপার টা খুব ক্যাজুয়েল মনে করেছিলাম। ভেবেছিলাম এই রকম ছিঁটে ফোঁটা দু একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলে কি এমন ক্ষতি হয় !
যেরকম দু এক জন আদিবাসী ছেলেমেয়ে, অ-আদিবাসীদের সংগে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়, এটা নিয়ে খুব একটা ভাবি না। এই প্রতিযোগিতার জীবন যাত্রায় সবাই এর সংগে সবাই এর মেলামেশা হতে বাধ্য হচ্ছি।
সুতরাং দু একটা দূর্ঘটনা হবেই,এটা আটকানো সম্ভব নয় । সমস্ত সম্প্রদায়ের মধ্যে এইরকম বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটছে , আদিবাসী সম্প্রদায় বা বাদ থাকবে কেন।
কিন্তু গত 5 ই মার্চ গনবিবাহর দিনে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মহাশয়ার বক্তব্য শুনে এক অজানা বিপদের প্রতিচ্ছবি দেখতে পেলাম।
উনি বলছেন প্রতি জেলায় এই গনবিবাহ অনুষ্ঠিত হবে। এটা শুনেই আমার ধারণা পরিবর্তন হতে থাকে।
আমার পূর্ববর্তী প্রতিবেদনে গনবিবাহ বিষয়ে এক সুপ্ত সমর্থন প্রকাশ পেয়েছিল, কিন্তু এখন বুঝতে পারছি এই গনবিবাহ, ভবিষ্যতে এক ভয়ংকর রূপ ধারণ করবে।
পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী আদিবাসী গনবিবাহ, একটা রাজনৈতিক কর্মসূচির মধ্যে নিয়ে আসতে চলেছে এবং ভবিষ্যতে রাজনৈতিক পালা বদল হলেও যে কোনো দলের কাছে এই কর্মসূচি চলতে থাকবে বলে আমার মনে হয়।
আদিবাসীদের গনবিবাহ প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের একটা কর্মসূচি হয়ে দাঁড়াবে। সেক্ষেত্রে এর ব্যাপ্তি অনেকটা বিস্তার করবে। আদিবাসীদের নিজস্ব সমাজ ব্যবস্থা সংকট দেখা দেবে, যার উপর নির্ভর করে আজ স্ব-মহিমায় আদিবাসী গোষ্ঠী নিজস্ব পরিচিতি বহন করে দাঁড়িয়ে আছে । যদিও এই সমাজ ব্যবস্থাও অনেক পরিবর্তন পরিমার্জন করার প্রয়োজন আছে। সুতরাং এক্ষুনি এর বিরোধিতা না করলে বিপদ যে ভয়ংকর আকার ধারণ করবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
এই গনবিবাহ বা যে কোন অন্য ধর্মে ধর্মান্তরিত রোধ করা গ্রামের মাঝি এবং তার দলবলের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। গ্রাম থেকে শুরু হোক আমাদের সেই আন্দোলন, যে আন্দোলনের মাধ্যমে সারা আদিবাসী তথা সাঁওতাল সমাজ আমূল পরিবর্তন করে আধুনিক বিজ্ঞান সম্মত সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলবে , যার মাধ্যমে মানব সমাজে আদিবাসীদের সম্মান আলাদা মাত্রায় যুক্ত হবে ।
আদিবাসী সমাজ থেকে বহু জিনিস তথাকথিত সভ্য সমাজ ধার নিয়েছে —এটা অনেক সমাজ বিজ্ঞানী রাও মানে। পঞ্চায়েত ব্যবস্থা বা গনতান্ত্রিক কাঠামো, প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে আদিবাসী সমাজে ছিল এবং এখনও আছে। শিকারের মাংস রান্না করে খাওয়ার আগে উনুন (অগ্নি) এবং কুকুরের ভাগ পর্যন্ত দিতে ভুলে না। এই ধরনের সাম্যবাদ ভাবনা কোনো সমাজে আছে কিনা, আমার জানা নেই।
এ ছাড়া আদিবাসী সমাজ মহিলাদের যথেষ্ট সম্মান দেয়। বিয়ের সম্বন্ধের সময়ে, সব সময় বর পক্ষকেই আগে কনে পক্ষের কাছে যেতে হয় এবং কন্যা পন দিয়ে বিবাহ করে নিয়ে আসতে হয়। বর পনের কোন প্রশ্নই নেই। female foeticide বা কন্যা ভ্রুন হত্যা করা হয় না।
অথবা ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর এর বিধবা বিবাহ প্রথা প্রচলন , আদিবাসীদের কাছ থেকেই শেখা, এটা তো উনি দু একটা জায়গায় স্বীকারও করে নিয়েছেন।
এই গুলি সামান্য দু একটা বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করলাম। এরকম বহু exclusive features আদিবাসী সমাজে বিদ্যমান ।
প্রত্যেক টা গ্রাম এক একটা shelf governing body (মাঝি আরি) আছে। এই body র মাধ্যমে গ্রামের সমস্ত সামাজিক কাজ কর্ম সম্পাদন করা হয়। কত যুগ থেকে এই পঞ্চায়েত ব্যবস্থা আদিবাসী সমাজে আছে, সঠিক করে কেউ বলতে পারবে না।
যা দেখে আজকের আধুনিক গনতান্ত্রিক দেশের গভর্নিংবডি তৈরী হয়েছে বললেও বেশি বলা হয় না। আদিবাসী সমাজের এই shelf governing body এবং তার function নিয়ে এবং বিচার ব্যবস্থা এইসব নিয়ে Adibasi constitution রচনা করলে ভারতবর্ষের সংবিধান থেকে কোনো অংশে কম হবে না। আজ আদিবাসীদের এই সব ব্যবস্থা, অ-আদিবাসীরা জানেনা। হাজার হাজার বছর ধরে পাশাপাশি অবস্থান করছি, কিন্তু দূ:খের বিষয় আজও তাদের কাছে রয়ে গেল আদিবাসী সমাজ অস্পৃশ্য।
আদিবাসীকে না জানার অনেক গুলি কারন আছে। বিশেষত আদিবাসী রা গরীব বলে এদের জীবন যাত্রা কাউকে আকর্ষণ করে না। আদিবাসীদের মধ্যে প্রচুর খারাপ কাজ ছিল এবং কিছু কিছু এখনোও আছে।
ᱥᱮᱫᱟᱭ ᱫᱚ ᱵᱷᱟᱜᱟᱲ ᱠᱷᱚᱱᱟᱜ ᱜᱚᱡ ᱰᱟᱝᱨᱤ ᱡᱤᱞ ᱵᱚᱱ ᱠᱷᱟᱞ ᱟᱜᱩ ᱮᱫ ᱛᱟᱸᱦᱮᱸᱫ ᱾
এরা অধিকাংশই গরীব বলে সামান্য এক টুকরো কাপড় ছাড়া পরিধানের বিশেষ কোন পোশাক ছিল না। প্রত্যেক এর বাড়িতে গরু ছাগল মুরগি শুয়োরের থাকত বলে ঘরবাড়ি নোংরা ছিল। hygiene সম্বন্ধে কোনো knowledge ছিল না। নিজের সৌখিনতা সম্বন্ধে সচেতন নয়। সুতরাং স্বাভাবিক ভাবেই এরা অ-আদিবাসীদের কাছে ঘৃণার পাত্র। সর্বোপরি যেকোনো অনুষ্ঠানে এরা মাদক দ্রব্য ব্যবহারের জন্যই সব থেকে বেশি সামাজিক ভাবে অবনতি হয়েছে। অনেক ব্যাবস্থা পরিবর্তন হলেও হাঁডিয়া ও মদের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য ভাবে এখনও বিদ্যমান । সামাজিক ভাবে পিছিয়ে থাকা এটা একটা বড় কারণ, এটা অস্বীকার করার কিছু নেই ।
তবুও আদিবাসী সমাজ নিজের সমস্ত ভালো বৈশিষ্ট্য কে রক্ষা করে মানব সমাজে বেঁচে থাকতে চায়। আজ এই গনবিবাহ এদের সামাজিক পরিচিতি রক্ষায় বাধা দিচ্ছে বলে অনেকেই মনে করছে।
আদিবাসীদের অলিখিত সংবিধান সময়ের তালে তালে সংশোধন সংযোজন হতে পারছে না। তাছাড়া ভারতীয় সংবিধানের প্রভাবে আস্তে আস্তে এদের সংবিধান গ্রাস করতে বসেছে। ।
ভারতবর্ষের বর্তমান সামাজিক এবং ধর্মীয় কার্য্যকলাপের প্রতিযোগিতায় আদিবাসীদের সমাজ সংস্কৃতি কঠিন এক বিপদ সংকূলে পতিত। কয়েকটি সামাজিক রীতি নীতি দেখলে তা অনুভব করা যায়।
ধরুন, স্বাদভাত, অন্নপ্রাশন, বরপন, বরযাত্রীদের খাওয়ানোর দায়িত্ব কন্যা পক্ষের - এই সব অনুষ্ঠান, কোনদিন ছিল না। অথচ আজকে প্রায়ই আদিবাসীদের মধ্যে এই সব কর্ম কান্ড উল্লেখযোগ্য ভাবে চোখে পড়ে। এগুলি যে অ-আদিবাসীদের কাছ থেকে শেখা, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
এখানে আর একটা বিষয়ে সামান্য উল্লেখ করতে চাই, সেটা হল — ""আদিবাসীদের বিবাহ অনুষ্ঠানে কন্যা বিদায় এর সময়, পিতৃগৃহ হইতে কি কি যৌতুক এবং উপহার কন্যা কে দেওয়া হইতেছে তাহা লিপিবদ্ধ করিয়া, উভয় পক্ষের মাঝি বাবাদের স্বাক্ষর করিয়া প্রদান করিতেছে। ভাব খানা এইরূপ , দেখ, কত দামী দামী জিনিস দেওয়া হইল।"" আমার বক্তব্য এই, মাঝি বাবারা স্বাক্ষর করবে কেন? আপনি কি দিচ্ছেন, না দিচ্ছেন, ভবিষ্যতে এদের সংসার বিচ্ছেদ হলে এই সব জিনিস ফেরতের ব্যাপারে মাঝি বাবা রা দায়ী থাকবে কেন? নিয়মে যে টুকু প্রচলন আছে, সেই ব্যাপারে অবশ্যই মাঝি বাবা দায়িত্ব নিতে পারে কিন্তু তার অতিরিক্ত জিনিস পত্রের জন্য মাঝি বাবা দের জড়িত করা হচ্ছে কেন? এই দামী দামী যৌতুক বা উপহার বরপনের নামান্তর নয় কি? ভবিষ্যতে এটাই তো" দাবী "তে দাঁড়াবে। এই বিষয়ে একটু সজাগ হওয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে করছি।
আদিবাসীদের সমস্ত সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান (কয়েক টি পারিবারিক অনুষ্ঠান ছাড়া) গ্রামবাসী সম্মিলিত ভাবে সম্পাদন করে। যেহেতু গ্রামের মানুষ অধিকাংশই অ-শিক্ষিত, তাই অনেক সময় কোনো সমস্যা সম্মুখীন হলে, তা সঠিক ভাবে বিচার বিবেচনা করা হয় না। এই জন্য বর্তমান একটা বড় অংশ এই shelf governing body র উপর ক্ষুব্ধ।
পাশাপাশি অন্য ধর্মের মানুষের টাকার প্রলোভন দেখিয়ে অ-শিক্ষিত গরীব মানুষের মনে হাত ছানি দেয়।
এই রকম একটা পরিস্থিতি থেকে আদিবাসী সমাজ কে বাঁচাতে গেলে শিক্ষিত যুবক যুবতী, সব অভিমান ভুলে গিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। নিজ নিজ গ্রামের দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিতে হবে। সবাইকেই ভাবতে হবে —
শিক্ষার হার কি ভাবে বাড়ানো যায় এবং সমাজে মাদক দ্রব্য কি করে কমানো যায়, এই বিষয়ে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে সমস্ত মাঝি পারগানা লেখক বুদ্ধিজীবী ছাত্র যুব মহিলা দের ভাবতেই হবে, নচেৎ অন্য সমাজের আগ্রাসন থেকে আদিবাসী সমাজ কে বাঁচানো যাবে না।
পরিশেষে পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রী কে অনুরোধ জানাই, আপনি মানুষ দরদী,
আপনি আদিবাসী দরদী,
আপনি বিধবা ভাতা, বৃদ্ধ ভাতা' র মত গরীব আদিবাসী যুবক যুবতীর জন্য গনবিবাহ বন্ধ করে "" বিবাহ ভাতা"" চালু করুন, আমরা আদিবাসী সমাজ পক্ষ থেকে আপনার কাছে চিরকৃতগ্য থাকব।
জহার সালা:—
ইঞগে বাপুড়িজ,
ভঞ্জ ভংকড় বানাম বায়ার,
ঢাক রুশিকা —"বালকা সান্তাড়"
Thursday, 27 February 2020
সাঁওতালি বিভাগ চালু করতে চায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, বিবেচনা শুরু উচ্চশিক্ষা দফতরে

#কলকাতা:
এবার সাঁওতালি বিভাগ চালুর আগ্রহ প্রকাশ করল যাদবপুর
বিশ্ববিদ্যালয়। আগামী শিক্ষাবর্ষে শুরুতে যাতে সাঁওতালি বিভাগ চালু করা
যায় তা নিয়ে প্রয়োজনীয় তৎপরতা শুরু করেছে উচ্চ শিক্ষা দফতর।
রাজ্যে
এই মুহুর্তে বিদ্যাসাগর ,বর্ধমান ও পুরুলিয়ার সিধু কানহু বিশ্ববিদ্যালয়
সাঁওতালি ভাষা নিয়ে পড়ানো হয়। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কলকাতার কোন কলেজ বা
বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে সাঁওতালি ভাষা পড়ানোর আবেদন জমা পড়েনি রাজ্যের
কাছে। এবার সেই আগ্রহই প্রকাশ করেছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। ইতিমধ্যেই
উপাচার্য সুরঞ্জন দাস আবেদনের চিঠি পাঠিয়েছেন রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতরে।
চিঠি পেয়ে তা নিয়ে বিবেচনায় শুরু করেছে রাজ্যের উচ্চ শিক্ষা দফতর। আগামী
শিক্ষাবর্ষ থেকেই যাতে সাঁওতালি বিভাগ চালু করা যায়, তা নিয়ে
প্রয়োজনীয় তৎপরতা শুরু করেছে দফতর। এ প্রসঙ্গে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের
উপাচার্য সুরঞ্জন দাস বলেন "আমরা সাঁওতালি বিভাগ খোলার আবেদন জানিয়েছি
উচ্চ শিক্ষা দপ্তরের কাছে। সম্মতি আসলেই খুব দ্রুত তা চালু করা হবে।"
গত
কয়েক বছর ধরেই রাজ্যে সরকারি স্তরে অলচিকি ভাষা ও সাঁওতালি নিয়ে তৎপরতা
বেড়েছে। শুধু তাই নয় কেন্দ্রীয় স্তরে গবেষণার প্রবেশিকা 'নেট' এও
সাঁওতালি ভাষার অন্তর্ভুক্তি হয়েছে। রাজ্যের কলেজ শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা
'সেট' ও সাঁওতালি ভাষায় প্রশ্নপত্র করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, মাধ্যমিক
এবং উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষাতেও সাঁওতালি ভাষায়় প্রশ্নপত্র থাকছে গত কয়েক
বছর ধরেই।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা
গিয়েছে, সম্প্রতি যাদবপুরের আদিবাসী পড়ুয়ারা সাঁওতালি বিভাগ চালুর
দাবি জানায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে। তার সঙ্গে সহমত হয়
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তারপর পূর্ণাঙ্গ বিভাগ খোলার ব্যাপারে আবেদন
জানান হয়েছে। তারপরই পূর্ণাঙ্গ সাঁওতালি বিভাগ চালুর আবেদন করেছে রাজ্যের
উচ্চশিক্ষা দফতরে।
রাজ্যের
উচ্চশিক্ষা দফতর সূত্রে খবর, বর্তমানে সাঁওতালি ভাষার পড়ার চাহিদা ক্রমশই
বাড়ছে। কিন্তু তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আসন বৃদ্ধি হয়নি। স্কুলগুলিতে ও
সাঁওতালি ভাষার শিক্ষকের অভাব দেখা দিচ্ছে। সূত্রের খবর. স্কুল সার্ভিস
কমিশন খুব শীঘ্রই সাঁওতালি ভাষার শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করতে
চলেছে। ফলে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় সাঁওতালি ভাষার বিভাগ খুললে কলকাতা ও
শহরতলীর পড়ুয়াদের কাছে সাঁওতালি ভাষা নিয়ে চর্চা অনেকটাই সহজ হবে বলে মত
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাংশের।
Wednesday, 12 February 2020
Monday, 3 February 2020
Subscribe to:
Posts (Atom)
বীরভূম জেলার সিউড়িতে স্বাধীনতা সংগ্রামী বাজাল এর নামে মেলা
বীরভূম জেলার সিউড়ির বড়বাগানের আব্দারপুর ফুটবল ময়দানে আয়োজিত হতে চলেছে ‘বীরবান্টা বাজাল মেলা-২০১৯’। ১৯শে জানুয়ারি এই মেলা আয়োজিত...

-
বিশ্বজুড়ে ক্রমশ বেড়েই চলেছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। করোনা ভাইরাস থাবা বসিয়েছে পুরুলিয়াতেও। COVID-19 প্রতিরোধের উপায় খুঁজতে কার্যত...
-
জিতুর রক্তে রাঙা সাঁওতাল-রাজের গড় আদিনা মসজিদ চন্দ্রশেখর সিধো-কানু-র বিদ্রোহ ‘দামিনে কোহ’-র অনেক পরে মালদার বুকে জ্বলে উঠেছিল সাঁওতাল...
-
সোহরায় আদিবাসী জনগোষ্ঠি সাঁওতালদের প্রধান উৎসব সহরায়। সহরায় উৎসব হয়ে থাকে কার্তিক মাসে। তাই সাঁওতালি বর্ষপুঞ্জিতে ...
-
সদ্য সমাপ্ত সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় পাশ করে নজির গড়লেন কেরলের ওয়ানারের বছর বাইশের যুবতী শ্রীধন্যা সুরেশ। কেরল থেকে প্রথম আদিবাসী মহিলা ...
-
হাতি লেকান সারি সহরায়.. সেটের আকান দাই না... দেসে দাই না, দেসে দাই না.. আতাং দারাম মেম ৷ দেসে দাই না,লটা দাঃ...