SANTHALDISHOM(সানতাল দিশোম): 5 ই মার্চ গনবিবাহর দিনে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মহাশয়ার বক্তব্য শুনে এক অজানা বিপদের প্রতিচ্ছবি দেখতে পেলাম।

Sunday 8 March 2020

5 ই মার্চ গনবিবাহর দিনে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মহাশয়ার বক্তব্য শুনে এক অজানা বিপদের প্রতিচ্ছবি দেখতে পেলাম।

প্রথমে গনবিবাহ ব্যাপার টা খুব ক্যাজুয়েল মনে করেছিলাম। ভেবেছিলাম এই রকম ছিঁটে ফোঁটা দু একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলে কি এমন ক্ষতি হয় !
যেরকম দু এক জন আদিবাসী ছেলেমেয়ে, অ-আদিবাসীদের সংগে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়, এটা নিয়ে খুব একটা ভাবি না। এই প্রতিযোগিতার জীবন যাত্রায় সবাই এর সংগে সবাই এর মেলামেশা হতে বাধ্য হচ্ছি।
সুতরাং দু একটা দূর্ঘটনা হবেই,এটা আটকানো সম্ভব নয় । সমস্ত সম্প্রদায়ের মধ্যে এইরকম বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটছে , আদিবাসী সম্প্রদায় বা বাদ থাকবে কেন।

      কিন্তু গত 5 ই মার্চ গনবিবাহর দিনে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মহাশয়ার বক্তব্য শুনে এক অজানা বিপদের প্রতিচ্ছবি দেখতে পেলাম।
উনি বলছেন প্রতি জেলায় এই গনবিবাহ অনুষ্ঠিত হবে। এটা শুনেই আমার ধারণা পরিবর্তন হতে থাকে।
     আমার পূর্ববর্তী প্রতিবেদনে গনবিবাহ বিষয়ে এক সুপ্ত সমর্থন প্রকাশ পেয়েছিল, কিন্তু এখন বুঝতে পারছি এই গনবিবাহ, ভবিষ্যতে এক ভয়ংকর রূপ ধারণ করবে।
 পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী আদিবাসী গনবিবাহ, একটা রাজনৈতিক কর্মসূচির মধ্যে নিয়ে আসতে চলেছে এবং ভবিষ্যতে রাজনৈতিক পালা বদল হলেও যে কোনো দলের কাছে এই কর্মসূচি চলতে থাকবে বলে আমার মনে হয়।
     আদিবাসীদের গনবিবাহ প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের একটা কর্মসূচি হয়ে দাঁড়াবে। সেক্ষেত্রে এর ব্যাপ্তি অনেকটা বিস্তার করবে। আদিবাসীদের নিজস্ব সমাজ ব্যবস্থা সংকট দেখা দেবে, যার উপর নির্ভর করে আজ স্ব-মহিমায় আদিবাসী গোষ্ঠী নিজস্ব পরিচিতি বহন করে দাঁড়িয়ে আছে । যদিও এই সমাজ ব্যবস্থাও অনেক পরিবর্তন পরিমার্জন করার প্রয়োজন আছে। সুতরাং এক্ষুনি এর বিরোধিতা না করলে বিপদ যে ভয়ংকর আকার ধারণ করবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
     এই গনবিবাহ বা যে কোন অন্য ধর্মে ধর্মান্তরিত রোধ করা গ্রামের মাঝি এবং তার দলবলের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। গ্রাম থেকে শুরু হোক আমাদের সেই আন্দোলন, যে আন্দোলনের মাধ্যমে সারা আদিবাসী তথা সাঁওতাল সমাজ আমূল পরিবর্তন করে আধুনিক বিজ্ঞান সম্মত সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলবে , যার মাধ্যমে মানব সমাজে আদিবাসীদের সম্মান আলাদা মাত্রায় যুক্ত হবে ।
         আদিবাসী সমাজ থেকে বহু জিনিস তথাকথিত সভ্য সমাজ ধার নিয়েছে —এটা অনেক সমাজ বিজ্ঞানী রাও মানে। পঞ্চায়েত ব্যবস্থা বা গনতান্ত্রিক কাঠামো, প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে আদিবাসী সমাজে ছিল এবং এখনও আছে। শিকারের মাংস রান্না করে খাওয়ার আগে উনুন (অগ্নি) এবং কুকুরের ভাগ পর্যন্ত দিতে ভুলে না। এই ধরনের সাম্যবাদ ভাবনা কোনো সমাজে আছে কিনা, আমার জানা নেই। 
       এ ছাড়া আদিবাসী সমাজ মহিলাদের যথেষ্ট সম্মান দেয়। বিয়ের সম্বন্ধের সময়ে, সব সময় বর পক্ষকেই আগে কনে পক্ষের কাছে যেতে হয় এবং কন্যা পন দিয়ে বিবাহ করে নিয়ে আসতে হয়। বর পনের কোন প্রশ্নই নেই। female foeticide বা কন্যা ভ্রুন হত্যা করা হয় না।
    অথবা ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর এর বিধবা বিবাহ প্রথা প্রচলন , আদিবাসীদের কাছ থেকেই শেখা, এটা তো উনি দু একটা জায়গায় স্বীকারও করে নিয়েছেন। 
    এই গুলি সামান্য দু একটা বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করলাম। এরকম বহু exclusive features আদিবাসী সমাজে বিদ্যমান ।
    প্রত্যেক টা গ্রাম এক একটা shelf governing body (মাঝি আরি) আছে। এই body র মাধ্যমে গ্রামের সমস্ত সামাজিক কাজ কর্ম সম্পাদন করা হয়। কত যুগ থেকে এই পঞ্চায়েত ব্যবস্থা আদিবাসী সমাজে আছে, সঠিক করে কেউ বলতে পারবে না।
যা দেখে আজকের আধুনিক গনতান্ত্রিক দেশের গভর্নিংবডি তৈরী হয়েছে বললেও বেশি বলা হয় না। আদিবাসী সমাজের এই shelf governing body এবং তার function নিয়ে এবং বিচার ব্যবস্থা এইসব নিয়ে Adibasi constitution রচনা করলে ভারতবর্ষের সংবিধান থেকে কোনো অংশে কম হবে না। আজ আদিবাসীদের এই সব ব্যবস্থা, অ-আদিবাসীরা জানেনা। হাজার হাজার বছর ধরে পাশাপাশি অবস্থান করছি, কিন্তু দূ:খের বিষয় আজও তাদের কাছে রয়ে গেল আদিবাসী সমাজ অস্পৃশ্য।
     আদিবাসীকে না জানার অনেক গুলি কারন আছে। বিশেষত আদিবাসী রা গরীব বলে এদের জীবন যাত্রা কাউকে আকর্ষণ করে না। আদিবাসীদের মধ্যে প্রচুর খারাপ কাজ ছিল এবং কিছু কিছু এখনোও আছে।
  
ᱥᱮᱫᱟᱭ ᱫᱚ ᱵᱷᱟᱜᱟᱲ ᱠᱷᱚᱱᱟᱜ ᱜᱚᱡ ᱰᱟᱝᱨᱤ ᱡᱤᱞ ᱵᱚᱱ ᱠᱷᱟᱞ ᱟᱜᱩ ᱮᱫ ᱛᱟᱸᱦᱮᱸᱫ ᱾
    এরা অধিকাংশই গরীব বলে সামান্য এক টুকরো কাপড় ছাড়া পরিধানের বিশেষ কোন পোশাক ছিল না। প্রত্যেক এর বাড়িতে গরু ছাগল মুরগি শুয়োরের থাকত বলে ঘরবাড়ি নোংরা ছিল। hygiene সম্বন্ধে কোনো knowledge ছিল না। নিজের সৌখিনতা সম্বন্ধে সচেতন নয়। সুতরাং স্বাভাবিক ভাবেই এরা অ-আদিবাসীদের কাছে ঘৃণার পাত্র। সর্বোপরি যেকোনো অনুষ্ঠানে এরা মাদক দ্রব্য ব্যবহারের জন্যই সব থেকে বেশি সামাজিক ভাবে অবনতি হয়েছে। অনেক ব্যাবস্থা পরিবর্তন হলেও হাঁডিয়া ও মদের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য ভাবে এখনও বিদ্যমান । সামাজিক ভাবে পিছিয়ে থাকা এটা একটা বড় কারণ, এটা অস্বীকার করার কিছু নেই । 
         তবুও আদিবাসী সমাজ নিজের সমস্ত ভালো বৈশিষ্ট্য কে রক্ষা করে মানব সমাজে বেঁচে থাকতে চায়। আজ এই গনবিবাহ এদের সামাজিক পরিচিতি রক্ষায় বাধা দিচ্ছে বলে অনেকেই মনে করছে।
     আদিবাসীদের অলিখিত সংবিধান সময়ের তালে তালে সংশোধন সংযোজন হতে পারছে না। তাছাড়া ভারতীয় সংবিধানের প্রভাবে আস্তে আস্তে এদের সংবিধান গ্রাস করতে বসেছে। ।
     ভারতবর্ষের বর্তমান সামাজিক এবং ধর্মীয় কার্য্যকলাপের প্রতিযোগিতায় আদিবাসীদের সমাজ সংস্কৃতি কঠিন এক বিপদ সংকূলে পতিত। কয়েকটি সামাজিক রীতি নীতি দেখলে তা অনুভব করা যায়।
ধরুন, স্বাদভাত, অন্নপ্রাশন, বরপন, বরযাত্রীদের খাওয়ানোর দায়িত্ব কন্যা পক্ষের - এই সব অনুষ্ঠান, কোনদিন ছিল না। অথচ আজকে প্রায়ই আদিবাসীদের মধ্যে এই সব কর্ম কান্ড উল্লেখযোগ্য ভাবে চোখে পড়ে। এগুলি যে অ-আদিবাসীদের কাছ থেকে শেখা, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। 
      এখানে আর একটা বিষয়ে সামান্য উল্লেখ করতে চাই, সেটা হল — ""আদিবাসীদের বিবাহ অনুষ্ঠানে কন্যা বিদায় এর সময়, পিতৃগৃহ হইতে কি কি যৌতুক এবং উপহার কন্যা কে দেওয়া হইতেছে তাহা লিপিবদ্ধ করিয়া, উভয় পক্ষের মাঝি বাবাদের স্বাক্ষর করিয়া প্রদান করিতেছে। ভাব খানা এইরূপ , দেখ, কত দামী দামী জিনিস দেওয়া হইল।"" আমার বক্তব্য এই, মাঝি বাবারা স্বাক্ষর করবে কেন? আপনি কি দিচ্ছেন, না দিচ্ছেন, ভবিষ্যতে এদের সংসার বিচ্ছেদ হলে এই সব জিনিস ফেরতের ব্যাপারে মাঝি বাবা রা দায়ী থাকবে কেন? নিয়মে যে টুকু প্রচলন আছে, সেই ব্যাপারে অবশ্যই মাঝি বাবা দায়িত্ব নিতে পারে কিন্তু তার অতিরিক্ত জিনিস পত্রের জন্য মাঝি বাবা দের জড়িত করা হচ্ছে কেন? এই দামী দামী যৌতুক বা উপহার বরপনের নামান্তর নয় কি? ভবিষ্যতে এটাই তো" দাবী "তে দাঁড়াবে। এই বিষয়ে একটু সজাগ হওয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে করছি।

     আদিবাসীদের সমস্ত সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান (কয়েক টি পারিবারিক অনুষ্ঠান ছাড়া) গ্রামবাসী সম্মিলিত ভাবে সম্পাদন করে। যেহেতু গ্রামের মানুষ অধিকাংশই অ-শিক্ষিত, তাই অনেক সময় কোনো সমস্যা সম্মুখীন হলে, তা সঠিক ভাবে বিচার বিবেচনা করা হয় না। এই জন্য বর্তমান একটা বড় অংশ এই shelf governing body র উপর ক্ষুব্ধ। 
  পাশাপাশি অন্য ধর্মের মানুষের টাকার প্রলোভন দেখিয়ে অ-শিক্ষিত গরীব মানুষের মনে হাত ছানি দেয়। 
       এই রকম একটা পরিস্থিতি থেকে আদিবাসী সমাজ কে বাঁচাতে গেলে শিক্ষিত যুবক যুবতী, সব অভিমান ভুলে গিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। নিজ নিজ গ্রামের দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিতে হবে। সবাইকেই ভাবতে হবে —
      শিক্ষার হার কি ভাবে বাড়ানো যায় এবং সমাজে মাদক দ্রব্য কি করে কমানো যায়, এই বিষয়ে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে সমস্ত মাঝি পারগানা লেখক বুদ্ধিজীবী ছাত্র যুব মহিলা দের ভাবতেই হবে, নচেৎ অন্য সমাজের আগ্রাসন থেকে আদিবাসী সমাজ কে বাঁচানো যাবে না।
      পরিশেষে পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রী কে অনুরোধ জানাই, আপনি মানুষ দরদী,
আপনি আদিবাসী দরদী,
আপনি বিধবা ভাতা, বৃদ্ধ ভাতা' র মত গরীব আদিবাসী যুবক যুবতীর জন্য গনবিবাহ বন্ধ করে "" বিবাহ ভাতা"" চালু করুন, আমরা আদিবাসী সমাজ পক্ষ থেকে আপনার কাছে চিরকৃতগ্য থাকব।


      জহার সালা:—
               ইঞগে বাপুড়িজ,
          ভঞ্জ ভংকড় বানাম বায়ার,
          ঢাক রুশিকা —"বালকা সান্তাড়"

No comments:

Post a Comment

বীরভূম জেলার সিউড়িতে স্বাধীনতা সংগ্রামী বাজাল এর নামে মেলা

 বীরভূম জেলার সিউড়ির বড়বাগানের আব্দারপুর ফুটবল ময়দানে আয়োজিত হতে চলেছে ‘বীরবান্টা বাজাল মেলা-২০১৯’। ১৯শে জানুয়ারি এই মেলা আয়োজিত...