কী এই স্থির তড়িৎ? বিজ্ঞানীরা বলছেন শীতকালে চিরুণি দিয়ে চুল আঁচড়ানোর পর চিরুণিকে কাগজের টুকরোর সামনে ধরলে, দেখা যায় চিরুণি আকর্ষণ করছে কাগজের টুকরোকে। এই ঘটনা আসলে স্থির তড়িতের কারসাজি। বিজ্ঞানীরা এই Electrostatics এর ধর্মকে কাজে লাগিয়ে বানিয়েছেন একটি তিন পর্দার স্মার্ট মাস্ক। প্রথম দুটি Triboelectric পদার্থ দিয়ে তৈরি এবং একেবারে বাইরে রয়েছে একটি স্মার্ট ফিল্টার। মাস্ক ব্যবহারকারীর শ্বাস-প্রশ্বাস, কথাবার্তা ও ঠোঁটের নড়াচড়ার কারণে উৎপন্ন হবে স্থির তড়িৎ এবং তা জমা থাকবে মাস্কে। ফলে মাস্ককে ঘিরে সৃষ্টি হবে একটি তড়িৎ ক্ষেত্র। এর ফলে যখনই কোনো অবাঞ্ছিত ড্রপলেট ভাইরাস মানুষের কাছাকাছি এসে পৌঁছবে, তখনই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়বে সে।
এই অভিনব মাস্কটি প্রখ্যাত বিজ্ঞানী তথা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের Instrumentation and Electronics Engineering বিভাগের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান ড. বিপন টুডুর মস্তিষ্কপ্রসূত।
বিপন বাবুর বাড়ি পুরুলিয়া জেলার কাশিপুর থানার সোনাথলি অঞ্চলের পাবড়া গ্রামে। বিজ্ঞান চর্চায় অসামান্য কৃতিত্বের জন্য গত বছরই পুরুলিয়ার সিধো কানহো বিরষা বিশ্ববিদ্যালয় DSc সম্মানে ভূষিত করে জেলার এই ভূমিপুত্রকে। নপাড়া স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র বিপন বাবু জানালেন, তাঁদের নির্মিত মাস্ক বিশ্ব অতিমারী নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম। তিনি আরও বলেন, মাস্কের মডেল ইতিমধ্যে জমা পড়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্কাইভে। শীঘ্রই শুরু হবে এর বাণিজ্যিক উৎপাদন। এই গবেষক দলের অন্যতম সদস্য হলেন কাশিপুর থানার সোনাথলি গ্রাম পঞ্চায়েতের কালাপাথর গ্রামের বাসিন্দা ড. নিত্যানন্দ দাস। পুরুলিয়ার JK কলেজের পদার্থবিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. দাস জানালেন, সাধারণ মানুষ সুলভে যাতে এটি সংগ্রহ করতে পারেন, তাই মাস্ক নির্মাণে মাথায় রাখা হয়েছে সেই দিকটিও। বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত একটি স্মার্ট মাস্কের দাম পড়বে প্রায় একশো টাকা।
এই মাস্কে লাগবে না কোন বাহ্যিক পাওয়ার সাপ্লাই। তাই সাধারণ মানুষ একবার হাতে পেলেই, তা ব্যবহার করতে পারবেন বহুদিন। স্মার্ট মাস্কটির বিশেষত্ব সম্পর্কে বলতে গিয়ে জানালেন এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত জেলার আরেক বিজ্ঞানী, কাশিপুর থানার বড়রা অঞ্চলের চাপড়ি গ্রামের বাসিন্দা, পাঞ্জাবের মোহালির Institute of Nano Science and Technology এর অধ্যাপক ড. দীপঙ্কর মন্ডল। সাত সদস্যের গবেষক দলের অন্য সদস্যরা হলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের Instrumentation and Electronics Engineering বিভাগের গবেষক ড. রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, বর্ণালি ঘটক, সঞ্জয় ব্যানার্জি ও শেখ বাবর আলি। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের যখন বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর দিশেহারা অবস্থা, তখন পুরুলিয়ার মতো পিছিয়ে পড়া জেলার গবেষকদের এমন চমকপ্রদ সাফল্য সাড়া ফেলে দিয়েছে দেশের বিজ্ঞানী মহলে। এখন ভূমিপুত্রদের গৌরবে গর্বিত গোটা জেলা। সেই সঙ্গে আরো একবার প্রমাণ হলো যে সংরক্ষণের কারণে কোনোদিনেই মেধা নিম্নগামী হয়না| যারা অপপ্রচার করে যে সংরকষণের কারণে দেশ পিছিয়ে পড়ছে তাদের মুখে আর একবার ঝামা ঘষে দিলেন আদিবাসী সাঁওতাল জাতির বিপন টুডু| (সংবাদ সূত্র – পলাশ মুখার্জীর মুখবই দেওয়াল থেকে)
ঝাড়খণ্ডের হেমন্ত সরেন সরকারের সুপারিশ ক্রমে রাজ্যপাল দ্রৌপদী মুর্মু ঝাড়খণ্ড রাজ্যের সিদো কানহো বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিযুক্ত করলেন মহিলা আদিবাসী প্রফেসর সোনা ঝরিয়া মিনজকে| বর্তমানে সোনা ঝরিয়া মিনজ দিল্লীর জহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ে School of Computer & Systems Science এ প্রফেসর পদে চাকরি করছেন| ১৯৯২ সাল থেকে জহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াচ্ছেন সোনা ঝরিয়া মিনজ| এর আগে মাদুরাই কামরাজ বিশ্ববিদ্যালয় (তামিলনাডু) ও বরকততুল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (মধ্যপ্রদেশ) এ পড়িয়েছেন সোনা ঝরিয়া মিনজ| জহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর সময় Jawaharlal Nehru University Teachers’ Association (JNUTA) এর সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন সোনা ঝরিয়া মিনজ|
দিল্লীর জহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই Computer Science এ Phd ও Mphil করেছেন সোনা ঝরিয়া মিনজ| মাদ্রাস খৃষ্টান কলেজ থেকে Mathematics এ MSc করেছেন সোনা ঝরিয়া মিনজ|
একজন মহিলা আদিবাসী প্রফেসর হিসেবে সোনা ঝরিয়া মিনজ ঝাড়খণ্ড রাজ্যের সিদো কানহো মুর্মু বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিযুক্ত হওয়ায় খুব খুশি ঝাড়খণ্ড সহ সারা দেশের আদিবাসী জনগণ|
এই ছবিটি শ্রীমতি সন্ধ্যা মান্ডির ,19/05/2020,মঙ্গলবার সন্ধ্যাবেলা থেকে নিখোঁজ, পরনে লাল শাড়ি, গলায় লাল গামছা, কানে রিং,মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন, কথা বলতে পারে না।কেউ যদি সন্ধান পান দয়া করে নিম্নলিখিত ঠিকানায় যোগাযোগ করুন। গ্রাম-বালিবান্দা,পোষ্ট-মুকসুদপুর, থানা-ডেবরা,জেলা-পশ্চিম মেদিনীপুর, পিন-৭২১১২৬।Contact no.-8145056145
সম্প্রতি SC/ST সম্প্রদায়ের এক কর্মী তার কর্মক্ষেত্রে দলিত বলে অপমান করার জেরে আত্মহত্যা করেছিলেন, উত্তরপ্রদেশে দলিত কে পিটিয়ে মারার ঘটনা কারো অজানা নয় বা মধ্যপ্রদেশের ওই দুটো বাচ্চাকে পিটিয়ে মারার ঘটনাও আজ কিছু মিডিয়ার দৌলতে দেশ থেকে আন্তর্জাতিক খবরের রূপ নিয়েছে। তবে আমার মতে এটা কোনো নূতন ঘটনা নয়, এমন ঘটনা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে আমাদের দেশে। শুধু পার্থক্য এটাই যে সমাজ থেকে শুরু করে সোশাল মিডিয়াতে দলিতদের নিয়ে মজা করার প্রবণতা আগের থেকে কয়েক ধাপ এগিয়ে গেছে সম্প্রতি।
কোনো দলিত বা SC/ST সম্প্রদায়ের ব্যক্তি যদি নিজের যোগ্যতায় ভালো চাকরি করে তাহলেও তাকে শুনতে হয় "ও তো সংরক্ষণের আওতায় তাই চাকরি পেয়েছে"। আসলে কিছু লোক সম্প্রতি এমন ভাবে সংরক্ষনকে সবার সামনে তুলে ধরছে যাতে করে সবার মনেহয় যেন এর জন্যই দেশ পিছিয়ে যাচ্ছে, সমাজ পিছিয়ে যাচ্ছে, দুনিয়া পিছিয়ে যাচ্ছে, অন্য কেউ চাকরি পাচ্ছে না ইত্যাদি ইত্যাদি। আর সেই অপপ্রচারের স্বীকার হচ্ছে আজকের শিক্ষিত যুব সমাজও, তারাও কিছু না ভেবে বা এবিষয়ে না পড়াশোনা করে অজথা তর্ক করছে। জাতির ভিত্তিতে সংরক্ষণের বিরুদ্ধে কিছু লোক (নিজেদের উচু জাত ভাবা লোকজন) জোর কদমে প্রচার চালাচ্ছে। কিন্তু আপনি যদি তথ্য ভালো করে ঘেঁটে দেখেন তাহলে দেখবেন কোন উচু জাতির লোক (নিজেরাই নিজেদের বানিয়েছিলেন) নালা, নর্দমা পরিষ্কার করছে না। আপনার বাড়ির ঘর মোছার লোক থেকে শুরু করে পায়খানা পরিস্কার করার ব্যক্তি পর্যন্ত প্রায় সবাই ওই দলিত সম্প্রদায়ের লোক। তাহলে কথা হল কিছু শিশু দলিতদের ঘরে জন্মেছে বলে তাকে নিচু মানের কাজ করতে হবে কেন? আর আরেক শিশু উচু জাতির ঘরে জন্মেছে বলে তাকে দিয়েই কেন উচু মানের কাজ করানো হবে? কেন উচু জাতির লোকেরা সেই সব কাজ করবেনা যে সব কাজ নিচু জাতির লোকেরা যুগ যুগ ধরে করে যাচ্ছে? আপনি যদি বলেন সবার জন্য কাজ আলাদা তাই করে তাহলে মশাই উচু জাতির লোকদের বলুন বস্তিতে এসে থাকতে, নোংরা পরিষ্কার করতে । তারপর সংরক্ষন জাতির ভিত্তিতে কেন সেটা নিয়ে প্রশ্ন করুন দেখবেন সবাই মানবে।
আপনি মুচি তো হতে পারবেন না, জঙ্গলের সেই দুর্ভোগে জীবন যাপন করতে পারবেন না, আর্থিক অনটনে জীবন কাটাননি, সারাজীবন জুড়ে অন্যের গোলামী করেন নি, তাহলে আপনার কি অধিকার আছে এদের নিয়ে মজা করার? এদের অপমান করার? না নেই।
অন্যদিকে আপনি বলতেই পারেন যে যেসব SC/ST সম্প্রদায়ের লোক আজ স্বাবলম্বী তারা কেন সংরক্ষণের সুবিধা নিচ্ছে? তার উত্তর হলো আজ একবিংশ শতকে দাঁড়িয়েও সেই সংখ্যাটা খুবই সামান্য। তাছাড়া একদিন এমন সময় আসবে যেদিন দলিত সম্প্রদায়ের মধ্যেও যারা বেশি পিছিয়ে তারা আন্দোলনে নামবেন বা অনুরোধ করবেন এই নিয়ে যে 'যেসব দলিত সম্প্রদায়ের লোক আজ স্বাবলম্বী তারা সংরক্ষণের সুবিধে নেওয়া বন্ধ করুন'। তারপর সরকার সংরক্ষণের জন্য একটা বাৎসরিক আয় বেঁধে দেবেন হয়তো (যেমনটা OBC বা EWS দের ক্ষেত্রে আছে)। তাই তাদের সংরক্ষন নিয়ে বাকিদের ভাবার তো কোন দরকার নেই, তাদেরকেই ভাবতে দিন।
তাছাড়া ভারতের মোট চাকরির মাত্র ২% (প্রায়) সরকারি চাকরি আর শুধুমাত্র এখানেই সংরক্ষণের নীতি মানা হয় আর বাকি ৯৮% বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্রে কোনও সংরক্ষণ নীতি মানা হয় না। তাহলে যারা বলছেন যে সংরক্ষণের জন্য সমাজ পিছিয়ে যাচ্ছে তারা যে একদমই ভুল সেটা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। পৃথিবীর প্রায় সব দেশ নিজেদের অনুসারে সংরক্ষণ নীতি মেনে চলে সমাজের পিছিয়ে পরা সম্প্রদায়কে এগিয়ে নিয়ে আসার জন্য। আমাদের দেশে পিছিয়ে আছে প্রায় ৭০% লোক কিন্তু তাদের মধ্যেও খুব বেশি পিছিয়ে দলিত সম্প্রদায়ের মানুষেরা।
অনেকেই বলেন যে আর্থিক দিক দিয়ে সংরক্ষণ দেওয়া দরকার কারণ অসংরক্ষিতদের মধ্যেও কিছু গরিব আছে। প্রথমত তাদের গরিব থাকার কারণ অনুসন্ধান করে দেখুন দেখবেন তারা বরাবরই গরিব ছিলোনা, তারা কোথাও না কোথাও নিজেদের দোষে আজ গরিব। যেমন ধরুন যারা ব্রাহ্মণ পুরোহিত তারা কখনোই নিচু মানের কাজ করতে চান না। তাছাড়া নিজেদের উচু জাতি বানানো পরিবারগুলো স্বঘোষিত নিচু কাজ থেকে নিজেদের দশহাত দূরে রাখেন, তাতে যদি তাদের না খেয়ে থাকতে হয় তাতেও চলবে। মানে সেই বিখ্যাত হিন্দি গানের উক্তির মত "যান যায় পার মান না যায়" অবস্থা। তাছাড়া সম্প্রতি তাদেরও সংরক্ষণের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে EWS নামে (১০%)। আজ মাত্র ৫% এর কম মানুষ, যাদের বাৎসরিক উপার্জন ৮ লক্ষ টাকা (মোটামোটি), শুধু তারাই সংরক্ষণের অন্তর্ভুক্ত নয়।
সংরক্ষণের বন্টন টা একবার দেখুন-
সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে বা পড়াশুনার ক্ষেত্রে SC দের জন্য সংরক্ষন ১৫% এবং ST দের জন্য বরাদ্দ ৭.৫% এবং OBC, FH দের মিলিয়ে সংরক্ষন ছিল ৫০% এর মত, সেটা আজ বেড়ে ৬০% (১০% EWS মিলিয়ে) হয়েছে। বাকি ৪০ শতাংশ ক্ষেত্রে সংরক্ষণ নেই। এখানে একটা মজার ঘটনা হল অসংরক্ষিতদের সাথে সাথে নিজেদের উচু দেখানোর জন্য OBC সম্প্রদায়ের কিছু ব্যক্তি SC /ST দের সংরক্ষণের বিরুদ্ধে কথা বলতে দেখা যায় এবং এরা নিজেদের জেনারেল হিসেবে বলতেও দেখা যায় অন্যের সামনে নিজেদের উচু দেখানোর জন্য। হাস্যকর।
সমাজের নিচু মানের কাজ (কোনো কাজ ছোট নয় কিন্তু আমাদের দেশে নিজেদের উচু জাতি বলা লোকেরা এগুলোকে নিচু বানিয়েছে) করা থেকে শুরু করে সবথেকে বেশি অত্যাচারের স্বীকারও হয়ে থাকে এই দলিত সম্প্রদায়ের লোকেরা। আজও না খেয়ে যারা মারা যায় তাদের প্রায় সবাই SC/ST সম্প্রদায়ের অন্তর্গত। সংরক্ষন দেওয়ার ৭০ বছর পেরিয়ে গেলেও খুব সামান্য SC/ST পরিবার যেখানে পড়াশুনা এবং ভালো জীবন যাপন করছেন সেখানে সংরক্ষন উঠিয়ে দিলে এরা কখনও কি আর উপরে উঠে আসতে পারবে? আর আপনি যে ওদের কথায় কথায় অযোগ্য বলেন, পরিহাস করেন, নিজের ব্যর্থতার দায় ওদের ওপর চাপিয়ে দেন সেটা কি যুক্তিযুক্ত? এবার থেকে নিজেকে নিজে বোকা বানিয়ে, নিজের ব্যর্থতার দায় দলিতদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার দিন শেষ হতে চলেছে কারণ আজ ডিজিটাল দুনিয়ায় দলিতদের কাছেও স্মার্ট ফোন পৌঁছে গেছে, ওরা আজ আইন জানতে শিখেছে, ওরাও আজ আপনার উপহাস থেকে শুরু করে অত্যাচারের বিরুদ্ধে আওয়াজ ওঠাতে শিখছে। আপনাদের অপদার্থতার জন্যই শিক্ষিত বুদ্ধিমানেরা ১৯৮৯ সালে SC ST Act গঠন করেছিল যাতে কেউ SC/ST দের বিরুদ্ধে কটূক্তি না করে, যাতে তাদের নিয়ে সোশাল মিডিয়াতে হাসাহাসি না করতে পারে, যাতে নিচু জাতি বলে কেউ এদের অত্যাচার করে পার পেয়ে যেতে না পারে (আর্টিকেল ১৫ সিনেমা দেখুন, ওটা তো একটা ঘটনা, এরকম ঘটনা প্রতিদিন হচ্ছে)। ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্ট সেই আইনে কিছু পরিবর্তন করেছিলেন কিন্তু গত পহেলা অক্টোবর আবার আগের নিয়ম কেই বহাল রাখলেন। যেদিন সব দলিত শিক্ষিত হয়ে যাবে, যেদিন নিজেদের উচুজাত বলা লোকেরা নিজেদের মতো দলিতদেরও মানুষ ভাবতে শুরু করবে, যেদিন সমাজে সবাই সবাইকে সমান ভাবা শুরু করবে, যেদিন বিয়ে করার জন্য উচু জাতের ছেলে বা মেয়ে খোঁজা বন্ধ হয়ে প্রকৃত শিক্ষিত মানুষ খোঁজা শুরু হবে, যেদিন দলিত মহিলাদের রেপ করা বন্ধ হবে, সেদিন পুরো সংরক্ষন প্রথাটাই সমাজ থেকে উঠে যাবে। সমাজের সবাই যখন এক ছাতার তলায় আসবে সেদিন ধর্ম, জাতি নিয়ে কেউ কথা বলবে না।
সুপ্রিম কোর্ট ১৯৮৯ এর SC and ST (Prevention of Atrocities) Ammendments Act. কেই বহাল রাখলেন। কি বলা আছে এই Act এ?
Section 18A (1) (a), 1989 Act. এ বলা আছে যে "কারো বিরুদ্ধে যদি কোনো দলিত বা জনজাতির লোক FIR করতে চায় তাহলে তার জন্য আগে সেই ব্যাক্তির প্রাথমিক তদন্ত করার দরকার নেই" অর্থাৎ ধরুন যদি কোনো SC/ST সম্প্রদায়ের লোক কারো বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাতে গিয়েছেন, তাহলে পুলিশ FIR নিতে বাধ্য থাকবেন। তার জন্য পুলিশ বলতে পারবেন না যে - " আগে আপনার অভিযোগের ভিত্তিতে সেই ব্যাক্তির বিরুদ্ধে প্রাথমিক তদন্ত করবো তারপর FIR লিখব"
Section 18A (1) (b), 1989 Act. তে লেখা আছে যে "যে তদন্তকারী পুলিশ অফিসার এই দায়িত্বে থাকবেন, তিনি যখন তখন সেই অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেফতার করতে পারেন কারো অনুমতি ছাড়াই"।
অর্থাৎ সহজ ভাষায় বললে SC বা ST পরিবারের কোনো ব্যাক্তি যার বিরুদ্ধে অভিযোগ করবেন তার বিরুদ্ধে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ কে FIR লিখতে হবে এবং কারো অনুমতি ছাড়াই গ্রেফতার করতে হবে বা করতে পারবেন, তা সে বড় বা ছোট নেতা, মন্ত্রী, কোন জনপ্রিয় বা অজনপ্রিয় ব্যাক্তি বা গোষ্ঠীই হোক না কেন।
আগামী ২রা মে বিকেল তিনটায় সরাসরি সাঁওতালি মিডিয়ামে ক্লাস শুরু হচ্ছে এবিপি আনন্দ নিউজ চ্যানেলে। এদিন দশম শ্রেণী ছাত্র-ছাত্রীদের প্রথম ভাষা সাঁওহেদ (সাহিত্য) এর "আনাট কাহানি" থেকে আলোচিত হবে। উল্লেখিত কাহানি থেকে ছাত্রছাত্রীরা সরাসরি হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে তাদের প্রশ্ন পাঠাতে পারবেন। এদিন শিক্ষক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সিংরাই মুর্মু বেলপাহাড়ি এসসি হাই স্কুল, মন্ডল সরেন বাহিরগ্রাম কে বি হাই স্কুল, শোভারাম হেমরম দহিজুড়ি মহাতমা বিদ্যাপীঠ। বর্তমানে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধ করতে দেশজুড়ে চলছে লকডাউন। সরকারি অফিস-আদালত স্কুল-কলেজ সমস্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
তবুও দিনকে দিন বেড়ে চলেছে করোনা ভাইরাসের আক্রান্ত সংখ্যা। এবং তারই সঙ্গে সঙ্গে লকডাউনের সময়সীমাও বেড়ে চলেছে। অফিস আদালত খোলা তো দুরের কথা ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যৎ কথা লক্ষ্য করে স্কুল কলেজ খোলাও সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু স্কুল-কলেজ খোলা সম্ভব না হলেও ছাত্রছাত্রীদের কথা মাথায় রেখে শিক্ষা দপ্তরের পক্ষ থেকে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে ক্লাস চলছে। যদিও বাংলা মিডিয়াম ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ইতিমধ্যে ক্লাস শুরু হয়েছে। অভিজ্ঞ শিক্ষকমন্ডলী দ্বারা বিভিন্ন বিষয়ে ক্লাস চলছে। কিন্তু অপরদিকে জঙ্গলমহল এলাকায় সাঁওতালি মিডিয়ামে ছাত্র ছাত্রীরা বর্তমানে পাঠরত।এখনো পর্যন্ত যদিও সাঁওতালি মিডিয়ামে শিক্ষার পরিকাঠামো সঠিকভাবে গড়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। তবু এই বছর সাঁওতালি মিডিয়ামে পাঠরত ছাত্র ছাত্রীরা প্রথম উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেন।
সাঁওতালি মিডিয়াম শিক্ষা পরিকাঠামো কে সঠিকভাবে তৈরি করার দাবিতে বিভিন্ন আদিবাসী সংগঠন বিভিন্ন সময় আন্দোলন করেছে পথে নেমে। গত ১০ই এপ্রিল পশ্চিমবঙ্গ সানতাড় টিচার এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে শিক্ষা মন্ত্রীকে চিঠি দেওয়া হয়। সংগঠনের পক্ষ থেকে চিঠিতে উল্লেখ করা হয় যে লকডাউন এর মধ্যেও সাঁওতালি মিডিয়াম শিক্ষাব্যবস্থাকে যাতে সচল রাখা যায়। পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষা পর্ষদ থেকে সাঁওতালি মিডিয়াম ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে আগামী কাল থেকে এবিপি আনন্দে শুরু হচ্ছে ক্লাস। এবিপি আনন্দে সাঁওতালি মিডিয়ামে ক্লাস করার জন্য ঝাড়গ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উল্লেখিত শিক্ষকদের চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে বলে শিক্ষকরা জানান। আগামীকাল ক্লাসের জন্য সাঁওতালি মিডিয়ামে পাঠরত ছাত্রছাত্রীরা আজ সন্ধ্যা ছটার মধ্যে উল্লেখিত অধ্যায় থেকে প্রশ্নপত্র পাঠাতে পারবেন। অবশ্যই ছাত্র-ছাত্রীদের নাম ঠিকানা ও স্কুলের নাম উল্লেখ করতে হবে। উল্লিখিত অধ্যায় থেকে প্রশ্নপত্র পাঠানোর জন্য হোয়াটসঅ্যাপ নং হল-9748217201
জ্যৈষ্ঠ মাসের কাঠফাটা গরমে চলেছি ধামসা মাদলের খোঁজে- বাঁকুড়া জেলার সাঁওতাল আদিবাসী অধ্যুষিত বাঁশকানালি গ্রামে। এখানে বুদ্ধ পূর্ণিমার পরের পূর্ণিমায় প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয় “বাহা- মা: মড়ে অনুষ্ঠান” । আমার এই যাত্রার উদ্দেশ্য আমার দেশ, আমার বাংলা, আমার ভারতবর্ষের দর্শন ।
সাঁওতাল উপজাতিদের নিয়ে কিছু বলা যাক।এরা বিশ্বাস করে এদেরই পূর্বপুরুষ ছিলেন একলব্য, যাঁকে অত্যন্ত অন্যায় ভাবে দ্রোণাচার্য তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুল গুরুদক্ষিণা হিসাবে চেয়েছিলেন। তাই জানেন কিনা জানিনা, আজকেও সাঁওতালরা তীর ছোড়ার সময় বুড়ো আঙুল ব্যবহার করে না। অবশ্য এরকম অন্যায় কাজের উদাহরণ তো আমাদের দেশে ভুরি ভুরি ঘটেছে- শত শত একলব্য, শম্বুকদের কথা আর কেই বা মনে রাখে !সাঁওতালরা কিসকু, মুর্মু, হাঁসদা, সরেন, টুডু,মানডি, বাস্কে এই সাতটি গোষ্ঠী বা গোত্রে বিভক্ত।
সাঁওতাল নামে এঁদের পরিচিতি পরে হয়েছে, আদিতে সাঁওতাল, মুন্ডা, কোল, মাহালি সবাই এরা পরিচিত ছিল খেরওয়াল গোষ্ঠী হিসাবে। পরে অনেক ছোট ছোট গোষ্ঠী খেরওয়াল গোষ্ঠী থেকে বেরিয়ে গিয়ে নিজেদের স্বতন্ত্র গোষ্ঠী গড়ে তোলে, অনেকে হিন্দুও হয়ে যান। যেমন শুধু ঝাড় খণ্ডের কথাই যদি ধরি তাহলে দেখতে পাচ্ছি সাঁওতাল ছাড়াও ঝাড়খণ্ডে সর্বমোট ৩২ টি জন জাতির বাস। এদের মধ্যে পুরোপুরি কৃষিজীবী জন জাতি হচ্ছে সাঁওতাল, মুন্ডা, হো,ওঁরাও , খারিয়া, ভূমিজ ইত্যাদি। পক্ষান্তরে বিরহর, পাহাড়ি খারিয়া ইত্যাদি জাতির আদিতে শিকার করাই ছিল মুখ্য জীবিকা। শিল্প এবং দৈনন্দিন ব্যাবহারের সামগ্রী তৈরি করত মালহার, লোহার, কারমালি, অসুর ইত্যাদি জনজাতি। পাহাড়িয়া জনজাতির লোকেরা ঘুরে ঘুরে কৃষিকাজ করতেন।
সাঁওতাল উপজাতিদের বাহা- মা: মড়ে উৎসবে মেতে ওঠার আগে এবং কিছু বলার আগে রাঢ় বাংলা এবং বাঙালির নৃতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের কিছু দরকার আছে বলে মনে হয়।আমরা বাঙালিরা গর্বিত আর্য জাতি, আমাদের নিয়ে কবি লেখেন-” মোক্ষ মুলার বলেছে আর্য,/ সেই থেকে মোরা ছেড়েছি কার্য।”
দেখেনি আমরা কতটা আর্য, আর যাঁদের আমরা অনার্য বলছি, তাঁদের নিয়েও কিছু আলোচনা করছি।আর্য জাতি তাঁদের ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে যখন ভারতে, ভালো করে বললে উত্তর ভারতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বা প্রতিষ্ঠা পাবার জন্য যুদ্ধ বিগ্রহে লিপ্ত আছে, বাংলাদেশে তখন আদিতম দ্রাবিড় গোষ্ঠী এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ আদিম জনজাতি গোষ্ঠী বা প্রটো অস্ট্রোলয়েড গোষ্ঠীর লোকেদেরই বসবাস। এরা ছিল অতি উন্নত জাতি, এরা অস্ট্রিক ভাষায় কথা বলত।
পরবর্তী কালে অবৈদিক আর্য যেমন আলপিও, দিনারিও ইত্যাদি জন গোষ্টিও বাংলার মাটিকে বাসভূমি হিসাবে গ্রহণ করে থিতু হয়ে বসে। এই দ্রাবিড় এবং মুখ্যত অবৈদিক আর্য আলেপিও , দিনারিও গোষ্ঠীর লোকেদের সঙ্গে অস্ট্রিক সংস্কৃতি ও সভ্যতার ধারক গোষ্ঠীর মিলনের ফলেই আজকের বাংলাদেশের বাঙালি গোষ্ঠীর নৃতাত্ত্বিক উৎপত্তি। অর্থাৎ বাঙালি হচ্ছে মিশ্র শংকর জাতি।বৈদিক আর্যদের বঙ্গ বিজয় এবং বৈদিক সংস্কৃতির আবির্ভাব এর অনেক পরের ঘটনা।বঙ্গ সংস্কৃতিতে অনার্য প্রভাব নিয়ে বলা যায় যে নৃতাত্ত্বিক ভাবে বাঙালি যে উন্নত জাতি তার কারণ হচ্ছে, বাঙালির রক্তে আছে তিনটি সভ্যতার – প্রোট অস্ট্রোলয়েড, দ্রাবিড় এবং মিশ্র আর্যভাষী- সভ্যতার মিশ্রণ। তাই বঙ্গ সংস্কৃতি বলতে কেবল ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতি আদৌ বোঝায় না। এর পরতে পরতে মিশে আছে আদিম জনজাতি, অবৈদিক সভ্যতার প্রভাব। এর সঙ্গে সংযুক্তি করন ঘটেছে বৌদ্ধ ও জৈন সংস্কৃতির প্রভাব। অর্থাৎ এই ভারতের মহামানবেরা হচ্ছেন আদিম যুগ থেকে বসবাসকারী অসংখ্য জাতি-উপজাতিরা।
টর্চের আলোয় আমগাছে মুরগি
তাই বিদেশি পন্ডিতেরা যখন বলেন বহিরাগত আর্যদের দ্বারা ভারতবর্ষের সু সভ্যতার প্রচলন ঘটেছে, এমন কি ভারতীয় ধর্ম চেতনা ও বৈদিক মন্ত্র সমূহ, বহিরাগত আর্যদের দান, তখন বোঝা যায়, এনাদের চেতনায় ছড়িয়ে আছে, ভারতীয়দের সম্মন্ধে এক তুচ্ছতাচ্ছিল্য মনোভাব। বাইরের সভ্যতার সংস্পর্শে এসেই ভারতীয়রা সভ্য হয়েছে। এর থেকে মিথ্যা মিথ আর হয়না- অতি উন্নত সিন্ধু সভ্যতার প্রচলন কারা করেছিল ? কোথায় ছিল তখন সভ্য আর্যরা ? সুর- অসুর, আর্য-অনার্য ইত্যাদি শব্দগুলি নিয়ে চমৎকার নৃতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করেছেন সুহৃদকুমার বাবু তাঁর আর্য রহস্য বইয়ে। তাঁর লেখা কয়েকটি লাইন তুলে ধরছি-” আমরা সকলেই জানি যে ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতি আর কিছুই নয়, খুব কম হলেও চারটি মৌলিক ভাষা-গোষ্ঠীর মানুষের সমবায়ে গঠিত এক সাংস্কৃতিক পরিমন্ডল। কাল অনুসারে তারা হল অস্ট্র-এশিয়াটিক কোল গোষ্ঠী দ্রাবিড়, ইন্দো- যুরোপীয় বেদিয়া শ্রেণী ও ভোটচিনীয়।। ম্যাক্স মুলরের সময় থেকে বিনা কারণে যাযাবর জাতিটি সহসা আর্য নামে অভিহিত হতে লাগল।ঐ যাযাবর জাতিটি ছাড়া অপর সকলেই ছিল স্থায়ী বসবাসকারী কৃষিনির্ভর জনগোষ্ঠী। আর যাযাবর বেদিয়ারা স্থায়ী বসবাসকারী মানুষের কাছে আসত ঔষধ বিক্রয় করতে, তুকতাক করতে আর সাধারণ মানুষের ভালোর জন্য দুর্বোধ্য সব জাদুমন্ত্রে ভগবানকে ডাকতে।…..”
বাংলা ভাষার ক্ষেত্রেও সেই পরিবর্তন সমানে ঘটেছে। প্রোট অস্ট্রোলয়েড, দ্রাবিড় এবং মিশ্র আর্যভাষী- সভ্যতার মিশ্রনে খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দীর আগেই তৈরি হয়েছে পূর্বমগধী জাত প্রাকৃত ভাষা। এর প্রমাণ পাওয়া যায় সপ্তম শতকে বঙ্গে আগত চৈনিক পর্যটক হিউএন সাংগের বর্ণনায়।আদি মানভূম, সাঁওতাল পরগনা, বাঁকুড়া ইত্যাদি স্থানের ( হিউএন সাংগের বর্ণনায় যে কজঙ্গল পাওয়া যায় তা কিন্তু একদিকে ছোট নাগপুরের মালভূমি, অন্য দিকে ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ, কেওনঝর এবং বালেশ্বর অবধি বিস্তৃত ছিল।)এখানকার ভাষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে সমতল নদীয়া এবং বর্তমানের কলকাতার ভাষা ও সংস্কৃতির থেকে বেশ কিছুটা আলাদাআরেকটা কথা- সাঁওতালরা প্রকৃতির উপাসক, মূর্তি পুজো করেনা।
নাইকির উঠোনে প্রথম রাতের গানের আসর
দুই
রাত প্রায় আটটা, আমরা এসে পৌঁছেছি , বাঁকুড়া জেলার সাঁওতাল আদিবাসী অধ্যুষিত বাঁশকানালি গ্রামে । এখানে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে বাহা- মা: মড়ে অনুষ্ঠান , পুরোহিত বা নায়কের বাড়ীতে। সিমলাপাল থেকে এই গ্রামের দূরত্ব ১০ কিমি র মতন। আমরা উঠেছি, শ্রী মহেন্দ্রনাথ সরেন এই বাঁশকানালি গ্রামের মোড়লের বাড়িতে। এনার ছোটভাই ডাক্তার এবং আমার স্ত্রীর সহকর্মী। ডাক্তার ও সপরিবারে এসেছে। একগাড়ি পল্টন এসে তিনদিনের জন্য খুঁটি গেড়ে বসলাম, মোড়লের বাড়িতে। কিন্তু মোড়ল ই তো এই আনন্দ উৎসবের মুখ্য হোতা। আমাদের সামলাবে কে ? কুছ পরোয়া নেই, মোড়ল মশাইয়ের বৌদি, আমাদের সবার বড় বৌদি, সদা হাস্যময়ী , সাক্ষাৎ মা অন্নপূর্ণা- মকরি সরেন বৌদি স্বেচ্ছায় সব ভার নিজের কাঁধে তুলে নিলেন। তার আগে বাচ্চা বাচ্চা মেয়েরা এসে সোনা রঙের কাঁসার ঘটি থেকে জল ঢেলে, কাপড় দিয়ে পা মুছিয়ে দিয়ে, একে একে সবাই ভূমিষ্ট হয়ে প্রনাম করল। কিচ্ছু করার নেই, এই রীতিই এখানকার দস্তুর। সরল আদিবাসীদের এই অকৃত্রিম ভালোবাসায় চোখ ভিজে উঠবে। নব্য বঙ্গজদের কাছে, এসব হয়ত ফালতু মনে হবে। বাচ্চা মেয়ে বলতে যাঁদের বুঝিয়েছি, সেই শান্তি হেমব্রম, শ্যামলী সরেন ইত্যাদি ভাইজি, ভাগ্নীরা সবাই কমপক্ষে এম এ পাস এবং স্কুল শিক্ষিকা।
বিশাল উঠোন, পূর্ণিমার চাঁদের আলোয় ভেসে যাচ্ছে। সারি সারি খাটিয়া পাতা। এতেই চলেছে, গান, আড্ডা, নাচের মহড়া। তালবাদ্যের রণ সংগীতে, এর মধ্যেই রক্ত গরম হতে শুরু করেছে। ঝকঝকে নিকানো উঠোনে, এই বাড়ির মেয়েদের হাতে বোনা আসনে বসে, বড় বৌদির হাতের অমৃত সম রান্নার স্বাদ, সারা জীবনের মণিকোঠায় তোলা থাকলো।রাত নয়টা থেকে পুরোহিতের বাড়িতে তুলসীমঞ্চকে ঘিরে শুরু হয়েছে অনুষ্ঠান । আধো অন্ধকারে এক আধি দৈবিক, আধি ভৌতিক পরিবেশ তৈরি হয়েছে। ধামসা, মাদল, রেগড়া, সাঁকোয়া কত রকম বাদ্যযন্ত্র , বিশাল জায়গাজুড়ে কি অসাধারণ একটি পরিবেশ তৈরি করেছে, লিখে বোঝান যাবেনা। তিনদিনের উৎসবের আজকে অনুষ্ঠানের প্রথম দিন, ওঁম ।
মোড়লের ঘর
মোড়ল মশাইকে ঘিরে গল্প শুনছি। ঠিক গল্প নয়, অজানা সংস্কৃতির গল্প। এই গল্প আমাদের শোনানো হয়না। যে অস্ট্রিক সভ্যতা- ভারতীয় সভ্যতার অন্যতম ভিত্তি, তাঁদের কথা তাঁদের উত্তরসূরিদের মুখ থেকেই শোনা যাক। মহেন্দ্রনাথ সরেন হচ্ছেন মোড়ল বা মাঝি হাড়াম। ইনি হচ্ছেন এই গ্রাম সমাজের মুখ্য কর্তা। এ ছাড়াও আরো চারজন কর্তা আছেন। পারানিক বা পরামানিক , পরামানিকের সহকারী- জগ পারানিক, গোড়ায়েৎ বা কাইলি( উৎসবের বার্তাবাহক), জগ মাঝি( মরাল পুলিশ বলা যায়)। এই যে বাহা- মা মড়ে অনুষ্ঠানে আমরা এসেছি, এর নির্ঘন্ট কিন্তু তৈরি করেছেন- সমাজ কর্তারা মিলে । একটি (জেনারেল বডি মিটিং) আলোচনা সভা বা ” কুলহি দুড়ুপ:” এ বসে এই নির্ঘন্ট তৈরি হয়েছিল।
মা: অর্থ জাহেরআয়ু মা, যিনি আবার সৃষ্টিকর্তা মারাং বুরুর স্ত্রী। আর মড়ে অর্থ পাঁচ। বৃহত্তর অর্থে পাঁচ ঠাকুরের কাছে মানসিকের কমপক্ষে পাঁচটি পাঁঠা/ছাগল বলি। বসন্ত উৎসবের বা ফুলের উৎসবের অনুষ্ঠান বাহা পড়ব তো চৈত্র মাসে হয়ে গেছে। কিন্তু বংগা দেবতার থানে যারা মানসিকের ব্রত করেছিল, সেই মানসিকের ব্রত রাখা মানুষ গুলির জন্য, বুদ্ধ পূর্ণিমার পরের পূর্ণিমায় এখানে পালন করা হয় মা: মড়ে উৎসব। মারাং বুরু, জাহেরআয়ু, মড়ে-কো-তুড়েইক, সেন্দ্রা বঙ্গা, হারাং বঙ্গা- এই পাঁচটি মুখ্য দেব-দেবীর থানে চারটি পাঁঠা ও একটি ছাগি বলি হচ্ছে পুজোর অঙ্গ। জাহের আয়ু দেবীর নামে ছাগি বলি হয়।এই মুখ্য দেবতাদের থানেই আছেন রস্কে বঙ্গা। ইনি সাঁওতাল সমাজের রসে বসে থাকা আনন্দের ঠাকুর বলতে পারি।
এই বলি উৎসব কিন্তু হবে দ্বিতীয় দিনে, অর্থাৎ আগামীকাল, যাকে বলা হয় সারদি-র দিনে।রাত নয়টায় ঢুকলাম- প্রধান পুরোহিত বা নাইকির বাড়ির উঠানে। লোকে লোকারণ্য। দুই দিকে বাজনাদারেরা বসে গ্যাছে তাঁদের বাজনার যন্ত্র নিয়ে।আরেকদিকে মেয়েরা বসে। বাকি দিকে নাইকি- বীরেন সরেনের ঘর। মূল ধর্মীয় অনুষ্ঠান চলছে, নাইকির উঠানের তুলসী মঞ্চ ঘিরে। নাইকির সহকারী একটি কম বয়সী ছেলে- যাকে ডাকা হয় ” কুডম নাইকি” বলে। একদিকে পুজো আর্চা চলছে, মাঝে মধ্যে ধুনোর ধোঁয়ায় চারদিক অন্ধকার। সমস্ত ইলেকট্রিক আলো নিভিয়ে দিয়ে একটিমাত্র হ্যাজাকের আলোতে এতবড় অনুষ্ঠান চলছে।
ধামসা, মাদল, খোল এগুলি সবই হচ্ছে আনন্ধ শ্রেণীর বাদ্যযন্ত্র, অর্থাৎ প্রতিটি বাদ্যযন্ত্র চামড়ার আচ্ছাধন দিয়ে তৈরি।ধামসা বা নাগারা আদিতে রণসঙ্গীত হিসাবে যুদ্ধের সময় বাজানো হত। তবে বর্তমানে মানভূম এবং ছোটনাগপুর জেলার বিভিন্ন নৃত্যগীত এবং শোভাযাত্রায় ব্যাপকভাবে এটি বাজানো হয়। ধামসা বা নাগারার অন্য নামগুলো হচ্ছে টিকারা, দামামা, ঢক্কা, ডঙ্কা ইত্যাদি( Samuel Johnson 1834, A Dictionary in English and Bengalee.)
আগে শিশুকাঠ দিয়ে ধামসার খোল তৈরি হতো। তবে বর্তমানে লোহার চাড়ির মুখে গরু বা মহিষের চামড়া দিয়ে এর ছাউনী তৈরি হয়। ছাউনী তৈরিতে গাব(গাব ফলের আঠা) বা খিরণ লাগানো হয় না।
ধামসা দুটি মোটা কাঠির সাহায্যে বাজানো হয়। ধামসা কিন্তু ছোট ও বড় – দুটি মাপের হয়। বোলের শব্দ শুনে দ্রিমি দ্রিমি, দ্রিম দ্রিম ধ্বনি বলে মনে হয়। বাঁশ পাহাড়ির অনুষ্ঠানে দুই সাইজের ধামসা দেখতে পেলাম।
প্রায় এরকমই আওয়াজ বেরোচ্ছে আরেকটি বিশাল বাদ্যযন্ত্র থেকে। এটির নাম রেগড়া। এটি কিন্তু সমান দৈর্ঘ্যের দুটি কাঠি দিয়ে বাজানো হচ্ছে।
বিশাল আকারের মহিষের শিঙে প্রস্তুত আরেকটি বাদ্যযন্ত্র হচ্ছে সাঁকোয়া। শিঙের মধ্যে একটি ফুটো থাকে। এই ফুটোতেই ফুঁ দিয়ে সুর তুলছে। মধ্যে মধ্যে শিল্পীকে যন্ত্রের মধ্যে জল ঢেলে পরিষ্কার করতে দেখলাম। সাঁকোয়া বহু প্রাচীন বাদ্যযন্ত্র। একজন শিল্পীর সঙ্গে আলাপ হল- ওনার নাম লখিন্দর মুর্মু। উনি এই যন্ত্র বাজাতে শিখেছেন উনার গুরু মহেন্দ্রনাথ সরেনের কাছে।
এবার আসি মাদলে। মাদল দেখতে অনেকটা সিলিনড্রিকাল , এরকমই দেখতে একটু ছোট বাদ্যযন্ত্র কে লাগা বলে। এটি তৈরিতে পোড়ামাটির খোল লাগে। এখানেও খোলা মুখ দুটিতে গরু/মোষের চামড়ার ছাউনী লাগানো হয়। ছাউনির মাঝখানে গাব ফলের আঠা বা খিরণ লাগিয়ে চামড়া শক্ত ও টেকসই করা হয়। এছাড়া খোলের উপর তবলার মতন সরু সরু চামড়ার ফিতের বাঁধি লাগানো হয়। নাচ গানের সময় বেশির ভাগ জায়গায়, দুটি মাদল এবং একটি লাগা ব্যবহার করা হয়। তাই দুটি মাদল এবং একটি লাগা নিয়ে মাদলের একটি সেট হয়। আদিবাসী নাচে গানে, ঝুমুর গান এবং নাচে, মাদল বাজবেই।
খোলও একটি পোড়ামাটির বাদ্যযন্ত্র।মৃৎ বা মাটির তৈরি বলে এর আরেকটি নাম মৃদঙ্গ। খোলের আকার অনেকটা কলার মোচার আকৃতির। দুই দিকের খোলা মুখ দুটিতে চামড়ার আচ্ছাদন বা ছাউনী লাগানো হয়। ডানদিকের মুখটি অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র , বামদিকের মুখের চেয়ে। এখানেও চামড়ার মাঝখানে গাব বা খিরণ লাগান হয়।বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে, কীর্তন গানের সঙ্গে খোলের বহুল ব্যবহার করা হয়, তাই একে কীর্তন খোল ও বলে।
রাত একটা বেজে গেছে, , নাচ- গান, ধর্মীয় অনুষ্ঠান চলছেই। শুনলাম চলবে রাত তিনটে অবধি। অনেকের উপরে দেখলাম দেবতার ভর হয়েছে। তাঁদের ব্যাবহার ও চলন বলন, কেমন অদ্ভুতভাবে বদলে যাচ্ছে।
ফিরে এলাম ঘরে। সত্যিকারের রাম রাজত্ব দেখতে হলে এই সাঁওতাল গ্রামগুলিতে আসতে হবে। এত লোক রাস্তা দিয়ে চলাচল করছে, বাইরে থেকে এত লোক এসেছে, বাড়ির সামনে থেকে পিছন অবধি সব দরজা/জানলা খোলা। আমি তো চাঁদের আলোয় শুয়ে পড়লাম, উঠানের খাটিয়াতে। শেষ রাতে শুনি মাথার উপরে মোরগের ডাক। তখনও ঠিকমতন আলো ফোটেনি, কিছু বুঝতে না পেরে, মাথার উপরের আমগাছে ,টর্চের আলো ফেলে চক্ষুস্থির। গাছের উপরে কাতারে কাতারে মুরগি চড়ে বসেছে। এমন অদ্ভুত দৃশ্য, জীবনে প্রথম দেখলাম।
পরের দিন সকালে এই মুরগি রহস্য উদ্ধার হল। এখানে প্রত্যেকের ঘরেই লড়াকু কাশিপুর মোরগ পোষা হয়। এই মোরগ পোষা হলেও, মোটামুটিভাবে উড়তে পারে। চোর ডাকাত না থাক, মুরগির খোঁজে শিয়াল বা হুরাল প্রায় গ্রামে হানা দেয়। তাই ডারউইন সাহেবের মতকে মেনে নিয়ে এরাও শিয়ালকে কাঁচকলা দেখিয়ে, রাতের বেলা গাছের মগডালে চড়ে বসে থাকে- survival for the fittest .
হ্যাজাকের আলোতে নাচ-গানের মহড়া
তথ্যসূত্র ১) আবাদভূমি, তৃতীয় বর্ষ, সপ্তম সংখ্যা, নভেম্বর ২০১৬ – এপ্রিল ২০১৭। ২)সুহৃদকুমার ভৌমিক । আর্য্ রহস্য। মনফকিরা। ৩) আদিবাসী সমাজ ও পালপার্বন : ধীরেন্দ্রনাথ বাস্কে।লোকসংস্কৃতি ও আদিবাসী সংস্কৃতি কেন্দ্র, পশ্চিমবঙ্গ সরকার। ৪) বাংলার জনজাতি, প্রদ্যোত ঘোষ। পুস্তকবিপণি।
তরতাজা এক যুবকের নাম নরেন হাঁসদা। অনাথ ও গরিব আদিবাসী শিশুদের একটা আবাসিক স্কুল চালান। পুরুলিয়া শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে আর্শা ব্লকে ভালডুংরি নামে একটা স্বপ্ন-পাহাড়ের নীচে সে স্কুল। আবাসিকের সংখ্যা এইমুহূর্তে ২৮ জন। আশপাশের গ্রামগুলো থেকে আরও ২০০ বাচ্চা আসে ওর স্কুলে। নরেন রাজ্যের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত ছুটে বেড়ান কণ্ঠে ঝুমুর গান নিয়ে, শিশুগুলোর অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা— একটু সোনালির জন্য। এছাড়া মাঝেমধ্যে এদিক ওদিক থেকে জুটে যায় কিছু দরদী মানুষের সহায়তা, এভাবেই চলে। আমি ও আমাদের আবৃত্তির দল কবিতাবাড়ি কিছুদিন আগে ওদের কাছে গিয়েছিলাম এরকম আশ্চর্য উদ্যোগের স্পর্শ নিতে। ওদের কাছে সাধ্যমত কিছু পৌঁছে দিয়েছি।
সে আর কতটুকুই বা। এই করোনার আবহে নরেন শিশুগুলোকে নিয়ে খুব সংকটে! খাবার ফুরিয়ে আসছে দ্রুত। নরেন গান গাইতেও যেতে পারছেন না কোথাও। কীভাবে অনাথ শিশুগুলোকে বাঁচিয়ে রাখবে ওঁ!
বন্ধুরা ওদের একটু সাহায্য করুন। নরেনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট দিলাম। দু-একশ করে টাকা আমরা অনেকেই দিতে পারি! ওটুকুই বিন্দু বিন্দু করে যুক্ত হলে বাঁচবে অনেকগুলো প্রাণ।
PURULIA DHARTI MARSHAL SOCIETY Bank : SBI Purulia A/c No. : 37328725490 IFSC : SBIN0000160
এক বৃদ্ধ পিতা তার আদরিনী কন্যার বিবাহের পর স্নেহের টানে মেয়ের বাড়ি চলে এসেছেন তার মেয়ে জামাই কি রকম আছে তা দেখতে। অভাব অনটনের সংসারেও মেয়ে বাবাকে পেয়ে অসীম চঞ্চল হয়ে উঠল। সাঁওতাল সমাজে চিরাচরিত প্রথা অনুসারে অতিথি এলে যেমন এক ঘটি জল শুভ অতিথির পায়ের কাছে রেখে দিতে হয় অভ্যর্থনার জন্য। মেয়েও তাই করলেন বাবার সমামন ,আর ভূমি পিষ্ট হয়ে প্রণাম করলো। তারপর মেয়ে বাবা তুমি বিশ্রাম করো বলেই বাইরে বেরিয়ে গেল। পিতা অনুমান করলেন দারিদ্র্যের সংসারে আত্মীয়তার জন্য মেয়ে নিশ্চয়ই কোনো কিছু ধার করতে বেরিয়েছে। ভাবতে ভাবতে বেদনায় কাতর হয়ে উঠলেন তিনি এবং এমন সময় বাইরে কোলাহলে বৃদ্ধ এসে দেখেন সেই পাড়ায় আগুন লেগেছে।আর একটার পর একটা ঘর পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। সমস্ত লোক একত্রে হয়েও কুয়ো ঝর্না ডাডির জল দিয়ে নেভাতে পাচ্ছে না সেই আগুন। বৃদ্ধ ভুলে গেলেন মেয়ের দেওয়া ঘটির জলে হাত পা ধুতে ও আচমন করতে - যা অবশ্যই করণীয় অতিথি হিসেবে। কারণ তা আতিথ্য স্বীকারের প্রতীক। তিনি সেই ঘটির জলই দিশাহারা হয়ে আগুনের লেলিহান শিখায় ছিটিয়ে দিলেন।আর বিস্ময়ের সঙ্গে মানুষ দেখল মুহূর্তেই আগুন নির্বাপিত হয়েছে।সমবেত ক্লান্ত জনতা সমস্বরে বলে, আপনি নিশ্চয়ই মন্ত্রপূত বারি ব্যবহার করেছেন। বৃদ্ধ বললেন না এ হল আমার আদরিনী কন্যার হৃদয় উৎসারিত করা ভালোবাসা দেওয়া অতিথি গ্রহণের লটা দাঃ ( ঘটি জল)। অতিথিকে দেবতা মনে করে আমার নির্দ্বিধায় তাকে গ্রহণের জন্য যে পূর্ণ ঘটির জল দিয়ে অভ্যর্থনা করি তা এত বিশুদ্ধ পবিত্র ও শক্তিশালী - আমি তা নিজেই জানতাম না। যাইহোক অতিথি হিসেবে তোমার ঘরে কেউ এলে তাকে লটা দাঃ দিয়ে অভর্থনা করবে। এই লটা দাঃ এর কথা কখনোই ভুলবে না।
তিনি ‘টটকো মলং’, তিনি ‘পাতাং সুরাই’, তিনিই সাঁওতাল সাহিত্যের অন্যতম উজ্জ্বল ‘ইপিল’। সাঁওতাল ভাষার স্বতন্ত্র লিপি তাঁর আঙুলের ছোঁয়ায় অমর হয়েছে। কবির জন্মদিনে তাঁকে স্মরণ করলেন নচিকেতা বন্দ্যোপাধ্যায়
সারদাপ্রসাদ। ছবি: লেখক
সাঁওতালি অতি প্রাচীন ভাষা। দীর্ঘ জীবন ধরে মূলত মৌখিক সাহিত্যই এই ভাষাকে ধরে রেখেছে। এর সঙ্গে সংরক্ষিত হয়েছে সাঁওতালদের জাতি গোষ্ঠীর সংস্কৃতি ও পুরাণতত্ত্ব। এই আদিম আদিবাসীদের বৌদ্ধিক সংস্কৃতি ও প্রাত্যহিক যাপন আর্য সভ্যতার নিকট তেমন ঋণী নয়। কৃষি ও শিল্পে ওঁদের নিজস্ব রীতি প্রাচীন ও বহমান। তাঁদের ইতিহাস, প্রাক আর্যযুগের ইতিহাস। তাঁদের ভাষাও তাঁদেরই মতো প্রাচীন।
সাঁওতালি সাহিত্য আদিযুগের শ্রুতি সাহিত্য। সুপ্রাচীন এই লোকসাহিত্যের কাল নির্ধারণ কার্যত অসম্ভব। ইতিহাসের মধ্যযুগেও এই শ্রুতি সাহিত্যই সাঁওতালদের সংস্কৃতির মাধ্যম ছিল। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে আসার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে ভারতে মিশনারিদের আগমন হয়। উদ্দেশ্য, খ্রিস্টান ধর্মের প্রচার। বাংলা, বিহার, ওড়িশার সাঁওতাল অধ্যুষিত এলাকায় আদিবাসীদের ধর্মান্তরের কর্মসূচি উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগ থেকেই শুরু হয়ে যায়। সাঁওতাল ভাষার সম্পদ অন্বেষণ তন্নিষ্ঠ হয়। মিশনারিরা ভাষাটির চর্চা, যত্ন ও উন্নয়নে সচেষ্ট হন। মিশনারিদের অবদান—এ ভাষার লিখিত রূপ। রোমান লিপিতে সাঁওতাল ভাষার প্রথম মুদ্রণ এই সময়েই। এ ভাষাও সাহিত্যের ‘মধ্যযুগ’ সূচনা করে। আধুনিক কাল সেদিনের। মিশনারি প্রভাবমুক্ত হওয়া বিংশ শতাব্দীর তিরিশ দশকে। সাধু রামচাঁদ মুর্মু, পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মু, মঙ্গলচন্দ্র সরেন প্রমুখ সে দশকের প্রতিনিধি।
কবি সারদাপ্রসাদ কিস্কু সাঁওতালি ভাষায় পদ্য লিখতেন। জন্ম দাঁড়িকাডোবা, পুরুলিয়ার বান্দোয়ান সন্নিহিত গ্রাম। ১৯২৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। পিতা চরণ কিস্কু। মা ধনমণি। কবির বেড়ে ওঠা প্রান্তিকতা ও দারিদ্রের পটভূমিতে। অনুশীলনে সততা ও দৃঢ় সংকল্প। জেরোবারি গ্রামে নিম্ন প্রাথমিক, বড়গড়িয়া গ্রামে উচ্চ প্রাথমিক, রানিবাঁধ মিডল স্কুল (এখানেই মেরিট স্কলারশিপ প্রাপ্তি) ও খাতড়া হাইস্কুলে ছাত্রজীবন। ১৯৪৮ এ প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাশ। রামানন্দ কলেজে (বিষ্ণুপুর) ভর্তি হয়েছিলেন আই এ পড়বেন বলে। কিন্তু দারিদ্র অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। আটকে যায় উচ্চশিক্ষা।
এর পরে জীবনযাপন এবং জীবিকার জন্য তিন মাসের ‘হিন্দি শিক্ষন’। প্রশিক্ষণ নেন বান্দোয়ানে ১৯৫০ সালে। তার পরে সুযোগ পেলেন জামতোড়িয়া সিনিয়র বেসিক স্কুলে শিক্ষকতার। ১৯৬২ সালে বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা, পরাজয় এবং চাকরি হারানো। পুনরায় চাকরি জীবন শুরু বড়দিহি প্রাথমিক স্কুলে। একেবারে ১৯৮৯ সালে অবসর গ্রহণ পর্যন্ত তিনি সেখানেই কর্মরত ছিলেন। রাষ্ট্রপতির পুরস্কার প্রাপ্তি ১৯৭৩ সালে।
জীবন তাঁর মসৃণ ছিল না। বন্ধুর পথে সাহিত্যই তাঁর সখা। তিনি আদ্যন্ত কবি ও কথা সাহিত্যিক। পদ্য রচনার হাতেখড়ি ছাত্রজীবনে। অনুপ্রেরণায় কবি সাধু রামচাঁদ মুর্মুর ‘সৌরি ধরম সেরেঞ পুঁথি’। ছন্দমিলে সারদাপ্রসাদের আসক্তি বরাবরের। প্রথম লেখা প্রকাশ ‘হড় সম্বাদ’ পত্রিকায়। ‘টটকো মলং’ (অর্থ, উঁচু কপালধারী) ছদ্মনামে লিখতেন গল্প। ‘তেতরে’ পত্রিকায় লিখতেন ‘পাতাং সুরাই’ (অর্থ, পাতার পোকা) ছদ্মনামে। স্বঘোষণায় সাধু রামচাঁদ তাঁর গুরু। রামচাঁদ ছিলেন প্রতিবাদী কবি। সাঁওতালদের ‘সারি ধরম’ (শাশ্বত ধর্ম) জাগরণের কবি। ‘দেবন তিঙ্গুন আদিবাসী বীর’ তাঁর জাগানিয়া গান সাঁওতাল মানসে যেন জাতীয় মন্ত্র। মাতৃভাষাই যে শিক্ষার বাহন, সেটা তিনি বুঝতেন। তাই ১৯২৩ সালে তৈরি করেছিলেন সাঁওতাল ভাষার স্বতন্ত্র লিপি। ‘মঁজ দাঁদের আঁক’। এ লিপিতেই তাঁর অধিকাংশ রচনা। ‘অলচিকি’ অপেক্ষা এই লিপি প্রাচীনতর। তিনি কবি ও দার্শনিক, শিল্পী ও সংস্কারক। সারদাপ্রসাদের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ভুরকৌ ইপিল’ (১৯৫৩)। সাঁওতাল ভাষায় ‘ইপিল’ কথার অর্থ ‘নক্ষত্র’। ‘ভুরকৌ ইপিল’ অর্থাৎ, শুকতারা। এই বইয়ে গানও লিপিবদ্ধ হয়েছে।
ক্রমান্বয়ে ‘কুহূবউ’ (অর্থ, কোকিল), ‘গাম গঁদার’ (অর্থ, মধুর বাণী) (১৯৬৭), ‘লাহা হররে’ (অর্থ, এগিয়ে চলার পথে) (১৯৮৫) গান ও কবিতা সংকলনগুলো প্রকাশিত হয়। এগুলো প্রধান। আরও আছে। সমালোচকদের মতে, তাঁর কবিতার তিনটি ধারা। অন্তর্মুখিতা, কল্পনাশ্রয় ও ‘মিস্টিক ভাবনা’ নিয়ে প্রথম ধারা। দ্বিতীয় ধারায় প্রকৃতি পর্যায়। অন্তিম ধারায় জীবন ঘনিষ্ঠতা। আদিবাসী জীবনের যন্ত্রণা, শোক, আশা এবং আকাঙ্ক্ষা। তিনি পঞ্চাশের দশকের কবি। সবে ভারত স্বাধীন হয়েছে। স্বদেশি আন্দোলন দেখেছেন কাছ থেকে। তাই সাহিত্যে যতটা নিবেদিত, ততটাই নিবেদিত সমাজচেতনা ও সামাজিক সংস্কারে। এই দশকেই বিহার, বাংলা ও ওড়িশার সাঁওতালি সাহিত্যের নবজাগরণ। নারায়ণ সরেন, ডমন সাহু ‘সমীর’, আদিত্য মিত্র ‘সান্থালি’ প্রমুখ কবি পুনর্প্রতিষ্ঠিত।
তিনি কথা সাহিত্যিকও বটে। ‘সলম লটম’ (অর্থ, তালগোল) প্রকাশিত হয় ১৯৮৮ সালে গল্প সংকলনরুপে। ‘জুডৌসি অণল মালা’ (অর্থ, মনোরম প্রবন্ধ সংগ্রহ) (১৯৯৪) একমাত্র প্রবন্ধ সংকলন। গানে-কবিতায়-গল্পে দেশ ও সমাজের কথা বলেছেন। সাহিত্যে সাঁওতালি যাপন শেষকথা নয়, শেষকথা মানবতা। ইতিহাস বোধে, সাহিত্য বোধে, সংস্কৃতি বোধে দেশ ও কালের ঊর্ধ্বে অবস্থান করেন। তিনি মানুষের কবি। তিনি নক্ষত্র। তিনি ইপিল।
সাঁওতাল বিদ্রোহ, খেরোয়ালি আন্দোলন, ছোটনাগপুর উন্নতি সমাজ, আদিবাসী মহাসভা প্রভৃতির ইতিহাস তাঁর জানা। তিনি জানতেন অস্ট্রো-এশিয়াটিক গোষ্ঠীর মধ্যে সাঁওতাল সম্প্রদায়ই সংখ্যাগরিষ্ঠ। সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও মানসিক সুসংবদ্ধতার মাপকাঠিতে তারাই শীর্ষে। তবু বহমান সমাজে কখনও কখনও কুসংস্কার আসে। তাই সমাজ সংস্কারক তিনি ডাইনি-বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। বিরুদ্ধতা এসেছে ফলশ্রুতিতে। জীবনে বিপন্নতা ও ঝুঁকি এসেছে। অটল সারদাপ্রসাদ জানতেন সততা ছাড়া কবির আশ্রয় নেই। ১৯৯৬ সালের ১৮ মার্চ কবির জীবনাবসান ঘটে। রেখে যান সাহিত্যকীর্তি, পাঠক ও পরবর্তী প্রজন্মের অনুপ্রেরণা।
আজ ০৮ ই মার্চ, ২০২০, আন্তর্জাতিক নারী দিবসে দিল্লীতে রাষ্ট্রপতি ভবনে
মাননীয় রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ ‘নারী শক্তি সন্মান, ২০১৯’ তুলে দিলেন
শ্রীমতি চামি মুর্মুর হাতে| জঙ্গল রক্ষায় উল্লেখ্যযোগ্য অবদানের জন্য
ঝাড়খণ্ড রাজ্য নিবাসী ৪৭ বছর বয়সী শ্রীমতি চামি মুর্মু পরিচিত ‘লেডি
টারজান’ হিসেবে|
নিজের গ্রাম ও সংলগ্ন এলাকায় গত ২৪ বছরে প্রায় ২৫ লক্ষ গাছ লাগিয়েছেন
শ্রীমতি চামি মুর্মু| নিজের এই কর্মকাণ্ডে ৩০০০ মহিলার এক সবুজ বাহিনী তৈরী
করেছেন| নকশাল প্রভাবিত এলাকা হওয়া সত্বেও জঙ্গলে ভয়ডরহীন ভাবে ঘুরে
বেড়ান শ্রীমতি চামি মুর্মু ও তাঁর বাহিনীর সদস্যরা| এলাকার জঙ্গল
মাফিয়াদের ত্রাস শ্রীমতি চামি মুর্মু ও তাঁর বাহিনীর সদস্যরা|
এর আগেও ১৯৯৬ সালে কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রক থেকে ইন্দিরা প্রিয়দর্শিনি বৃক্ষ মিত্র পুরস্কার পেয়েছেন শ্রীমতি চামি মুর্মু|
অভিনন্দন জানাই আপনাকে শ্রীমতি চামি মুর্মু| আপনার এই সন্মানে সমস্ত আদিবাসী সমাজই সন্মানিত বোধ করছে|
President Kovind presented the Nari Shakti Puraskar to Smt Chami Murmu. She is known as the 'Lady Tarzan' of Jharkhand for her determination to protect the forests, local wildlife and improve the livelihood of locals.