SANTHALDISHOM(সানতাল দিশোম): কৃতী আদিবাসীদের সংবর্ধনা করলেন পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Sunday 19 August 2018

কৃতী আদিবাসীদের সংবর্ধনা করলেন পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।



৯ ই আগস্ট ২০১৮ বিশ্ব আদিবাসী দিবসের মঞ্চে ঝাড়গ্রামে কৃতী আদিবাসীদের সংবর্ধনা করলেন পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

জঙ্গলমহলের কৃতী আদিবাসীদের সংবর্ধনায় রাজনীতিকে দূরে সরিয়ে রাখলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ সাঁওতালি চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেত্রী বীরবাহা হাঁসদার হাতে তুলে দিলেন মানপত্র, শাল ও উত্তরীয়। অথচ ২০১৬ সালে বিনপুর বিধানসভা থেকে তৃণমূল প্রার্থীর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন) এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি প্রয়াত নরেন হাঁসদার কন্যা বীরবাহা হাঁসদা। কিন্তু এ দিন তাঁকে সংবর্ধনা দিয়ে রাজধর্ম পালনে রাজনীতির ছোঁয়াচ লাগতে দিলেন না মমতা।
কয়েক বছর আগে রাজ্যের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন বিরবাহা। অনুমতি না নিয়ে মুক্তিধারা প্রকল্পের বিজ্ঞাপনে তাঁর ছবি ব্যবহার করা হয়েছিল বলে অভিযোগ করেছিলেন তিনি। এই নিয়ে জলঘোলা হলেও সরকারি তরফে কেউ মুখ খোলেননি। নব্বইয়ের দশকে পর পর দু’দফায় বিনপুরের বিধায়ক ছিলেন নরেন হাঁসদা। জঙ্গল মহলের আদিবাসী-মুলবাসী মানুষদের কাছে এখন দারুন জনপ্রিয় প্রয়াত ঝাড়খণ্ডী নেতা নরেন হাঁসদা। ১৯৯৯ সালে নরেনবাবু প্রয়াত হওয়ার পরে তাঁর স্ত্রী চুনিবালা হাঁসদাও বিনপুরের বিধায়ক হয়েছিলেন। মায়ের মতো বিরবাহাও সক্রিয় রাজনীতিতে পা রেখেছিলেন। তবে সফল হননি। ২০১১ সালে বিনপুর বিধানসভা নির্বাচনে ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন) দলের হয়ে দাঁড়িয়ে সিপিএমের কাছে হেরে যান বিরবাহা। ২০১৩ সালে ঝাড়গ্রাম পুরভোটে ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন) দলের প্রার্থী হয়ে ফের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীর পরাজিত হন।
এর আগে মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি জনসভায় ঝাড়গ্রামের বিভিন্ন শিল্পী ও সাংস্কৃতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হলেও ব্রাত্য ছিলেন বিরবাহা। ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন)-এর বর্তমান সভানেত্রী চুনিবালা হাঁসদার কন্যা বীরবাহা এহেন স্বীকৃতি পেয়ে আপ্লুত। তিনি এ দিন বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী আমাকে সংবর্ধনা দিয়েছেন৷ এর আগে ওডিশা, ঝাড়খণ্ড এবং বাংলাদেশ থেকেও পুরস্কার পেয়েছি৷ এখন নিজের ‘বাড়ি’তে সংবর্ধিত হয়ে বড় ভালো লাগছে৷ আমার রাজনীতির রং ছেড়েই মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার নিয়েছি৷’
সাঁওতালি ভাষার নাটক ‘চেৎ রে চিকেয়েনা’ (কীসে কী হল!) লিখে ২০০৭ সালে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পেয়েছেন ঝাড়গ্রাম শহরের বাসিন্দা খেরওয়াল সোরেন৷ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী খেরওয়াল সরেন এ দিন বেজায় খুশি৷ বললেন, ‘এর আগে রাজ্য সরকারের তরফে সারদাপ্রসাদ কিস্কু ও সাধু রামচাঁদ মুর্মু পুরস্কার পেয়েছি৷ কিন্তু আজকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে সংবর্ধনা পেয়ে আমি আপ্লুত৷ এই স্বীকৃতিই সাঁওতালি ভাষার একজন লেখক হিসেবে আমার কাছে বড় প্রাপ্তি৷ সাঁওতালি সাহিত্যের উপর প্রচুর লেখালেখি করলেও সবটা এখনও প্রকাশ করতে পারিনি৷ সরকার উদ্যোগী হলে সাঁওতালি সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রে আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছনো যাবে৷ পশ্চিমবঙ্গ সাঁওতালি আকাদেমি থেকে বই প্রকাশনা বিষয়ে সাহায্য করা হলে সুবিধে হয়৷’
শুধু শিল্প-সাহিত্য জগৎ নয়, খেলাধুলার আঙিনাতেও জঙ্গলমহলের কৃতীরা নজর এড়াননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দপাধ্যায়ের৷ যেমন, তিরন্দাজিতে এশিয়া কাপে জয়ী হয়েছেন ঝাড়গ্রাম শহর থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরের নয়াগ্রামের ভালিয়াঘাটি গ্রামের বাসিন্দা সুপর্ণা সিং৷ তাঁকেও এ দিন ঝাড়গ্রাম স্টেডিয়ামের বিশ্ব আদিবাসী দিবসে অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে সংবর্ধনা দেন মমতা৷ ঝাড়গ্রাম জেলার নয়াগ্রামের বড়খাঁকরি জনকল্যাণ বিদ্যালয়ের দ্বাদশ শ্রেণিতে কলা বিভাগের ছাত্রী সুপর্ণা৷ তিনি তাইওয়ানে অনুষ্ঠিত ‘এশিয়া কাপ-২০১৮’ তে ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছিলেন৷ এ দিন সুপর্ণা বলেন, ‘খুব ভালো লাগছে মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে পুরস্কার নিয়ে৷ তিনি বলেছেন ভালো হয়েছে, আরও ভালো করতে হবে৷’ জঙ্গলমহলের ভূমিপুত্র না হলেও, সুপর্ণার সাফল্যের কাণ্ডারি, তাঁর কোচ পি গঙ্গাধরকেও এ দিন সংবর্ধনা দেন মুখ্যমন্ত্রী৷ তাঁর আশ্বাস, এ বার থেকে ব্লকে ব্লকে কৃতী আদিবাসীদের সংবর্ধনা দেওয়ার ব্যবস্থা করবে সরকার।
আদিবাসী শিল্পকলার পৃষ্ঠপোষকতায় মুখ্যমন্ত্রীর আগ্রহ কতটা, এ দিন তার সাক্ষী রইল জঙ্গলমহল৷ এ দিন তিনি বিভিন্ন আদিবাসী পুরুষ ও মহিলাদের ধামসা-মাদল সহ নানা বাদ্যযন্ত্র উপহার দেন৷ পরিষেবা প্রদানের অনুষ্ঠানে দেখা গেল তিন আদিবাসী মহিলা লোকশিল্পীকে বুকে টেনে নিয়ে আলিঙ্গন করলেন মুখ্যমন্ত্রী৷

No comments:

Post a Comment

বীরভূম জেলার সিউড়িতে স্বাধীনতা সংগ্রামী বাজাল এর নামে মেলা

 বীরভূম জেলার সিউড়ির বড়বাগানের আব্দারপুর ফুটবল ময়দানে আয়োজিত হতে চলেছে ‘বীরবান্টা বাজাল মেলা-২০১৯’। ১৯শে জানুয়ারি এই মেলা আয়োজিত...