SANTHALDISHOM(সানতাল দিশোম)

Friday, 17 January 2020

২২_২৩শে_জানুয়ারি_বৌজাল_স্মরণ_মেলায়_দেশবিদেশের_গুণীজন_আগমনে_নক্ষত্র_সমাবেশ_হতে_চলেছে_সিউড়ি।



সাঁওতাল আদিবাসীরা চিরকাল স্বাধীনচেতা।মৌর্য, গুপ্ত,পাল বা সেনযুগে তাঁরা স্বাধীন ছিলেন এমনকি পাঠান বা মুঘলদের সময়েও তাঁদের স্বাধীন বিচরণ ব্যাহত হয়নি।বিভূতিভূষণের আরণ্যকে আমরা সাঁওতাল রাজা দোবরু পান্নাকে দেখেছি।সাঁওতালরা তাঁকে এবং তাঁর বংশধরদের রাজা মানলেও সেখানেও নিয়মিতভাবে খাজনা দেওয়ার প্রথা ছিল না। ছিল রাজাকে শ্রদ্ধার উপহার দেওয়ার রেওয়াজ।স্মরণাতীত কাল থেকে পাঠান মুঘল যুগ পর্যন্ত এমনকি ইংরেজ শাসনের প্রথম দিকেও সাঁওতালদের খাওয়াপরার অভাব ছিল না।প্রয়োজন হলেই বনজঙ্গল পরিস্কার করে তাঁরা কৃষিজমি তৈরি করে নিতেন।এছাড়া বনজঙ্গলে নানারকম ফলমূল ও শিকারও পাওয়া যেত। কিন্তু বেনিয়া ব্রিটিশ কোম্পানির সামন্ততান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় আদিবাসী সাঁওতালরা শোষনের শিকার হয়ে পড়েন।কোম্পানির লোকজন সাঁওতালদের কাছে খাজনা দাবি করে বসে।খাজনা আদায়ের নামে সহজ সরল শান্তিপ্রিয় মানুষগুলোর উপর অমানুষিক অত্যাচার শুরু করে।সাঁওতালরা কোনদিনই ইংরেজ শাসনকে ভাল চোখে দেখেননি।প্রথম যে মানুষটি ব্রিটিশ শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিলেন তাঁর নাম বাবা তিলকা মাঁঝি(মুর্মু)। তিলকা মুর্মুর নেতৃত্বে ১৭৮৪ সালে সাঁওতালরা প্রথম ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন।একবছর ধরে তাঁরা কোম্পানির সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই চালান। শেষপর্যন্ত তিলকা ধরা পড়েন।ইংরেজ বাহিনী তিলকা মাঁঝিকে ভাগলপুরে ধরে এনে তাঁকে পৈশাচিক ভাবে হত্যা করে।শহীদ তিলকার কথা ইতিহাসে সেভাবে লেখা হয়নি,লেখা হয়নি ১৮৫৫ সালের সাঁওতাল বিদ্রোহের প্রকৃত ইতিহাস। প্রকৃত ইতিহাস লেখা হলে সাঁওতাল বিদ্রোহকে ঐতিহাসিকরা স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস বলতে দ্বিধাবোধ করতেন না।
তিলকা মাঝির পর ১৮৫৫ সালের ৩০শে জুন বর্তমান ঝাড়খণ্ডের বারহেট থানার ভগ্নাডিহি গ্রামে আর একবার বিদ্রোহের দামামা বেজে ওঠে।অত্যাচারী জমিদার, মহাজন আর অসাধু ব্যবসায়ীদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে এলাকার মানুষ সিদো-কানহুর নেতৃত্বে ইংরেজদের সামন্ততান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে আপোষহীন সংগ্রাম চালান।হাজার হাজার সাঁওতাল বিদ্রোহীর প্রচণ্ড আঘাতে সেদিন দোর্দণ্ডপ্রতাপশালী ইংরেজ বাহিনী বারবার পরাজয়ের মুখে পড়ে।শেষপর্যন্ত ইংরেজ রাজশক্তির কাছে সাঁওতালরা পরাজিত হয় বটে কিন্তু যে সাহস তাঁরা দেখিয়েছিলেন তার কোনো তুলনা হয় না।সিদো-কানহুর নেতৃত্বে এই সংগ্রাম যেভাবে সাঁওতাল পরগনা,বীরভূম, বর্ধমান,মুর্শিদাবাদের বিস্তীর্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছিল তার পিছনে ছিল অনেক সাঁওতাল যুবকের অবদান। ইতিহাসের পাতায় সেসব বীর সন্তানদের কথা লেখা নেই।১৯৭৬ সালে ডঃ ধীরেন্দ্রনাথ বাস্কে যদি 'সাঁওতাল গণসংগ্রামের ইতিহাস ' না লিখতেন তবে হয়তো আমরা সিদো- কানহু-চাঁদ-ভৈরবকে বা তাঁদের আন্দোলনকে এভাবে জানতে পারতাম না।আজও যেমন অনক বীর সাঁওতালদের কথা আমরা জানি না।বৌজাল সরেনও তেমনি একজন সাঁওতাল বিদ্রোহের নায়ক।ঝাড়খণ্ডের গোড্ডার কালহাজোড় গ্রামের সন্তান। সিদো-কানহুর ডাকে সাড়া দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন মহাজন,সুদখোর, আর অত্যাচারী জমিদারদের বিরুদ্ধে। অত্যাচারী,চরিত্রহীন,সুদখোর রূপসিং তামুলীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে তিনি তাকে হত্যা করেন।এই বৌজাল সরেন ছিলেন একজন শিল্পিও।অসাধারণ বাঁশি বাজাতে পারতেন।বাজাতে পারতেন বেহালা। যাঁর বাশির সুরে মোহিত হয়ে পড়তো হাজার হাজার মানুষ সেই মানুষটি তামুলী হত্যার দায়ে ইংরেজ বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন।তাঁকে কালহাজোড় থেকে সিউড়ি জেলে নিয়ো আসা হয়।ঠিক সেইসময় বৌজাল বা বাজাল সরেনের রত্নগর্ভা মা বাজালকে জিজ্ঞেস করলেন -
"তকয় হুকুমতে বাজাল,তকয় বলেতে.."
সেই হৃদয়বিদারক গানের বাংলা তর্জমা করলে মোটামুটি এরকম দাঁড়ায় -
"কার হুকুমে বাজাল তুমি রূপসিং তামুলিকে হত্যা করলে"?
বাজালের উত্তর ছিল-" সিদোর হুকুমে মাগো কানহুর কথাতে"।
মা জিজ্ঞেস করলেন-" তোমার হাতে শিকল পায়ে বেড়ি বাজাল তুমি যাচ্ছ জেলখানায়।
বাজালের নির্ভীক উত্তর -" শিকল নয় মাগো এ আমার হাতের বাঁশি, বেড়ি নয় মাগো এ আমার পায়ের নূপুর, জেলখানায় নয় মা,আমি যাচ্ছি সিউড়ি বড়বাগানের মেলা দেখতে"।
কী অসম্ভব সাহাস ছিল বীরবান্টা বৌজালের।সেই কথা সেই গানের সুরের কথা ইতিহাসের পাতায় না থাকলেও আছে হাজার হাজার সাঁওতালের হৃদয়ে।মুখে মুখে সে গান আজ বহুল প্রচলিত এবং প্রচারিত।
সিউড়ি জেলখানাতে যাওয়ার পর বাজালের কী হয়েছিল সে নিয়ে মতান্তরের শেষ নেই।কেউ বলেন তাঁকে কালাপানিতে নির্বাসনে পাঠানো হয় কেউ বলেন তাঁর বাঁশির সুরে মোহিত হয়ে জেলার সাহেব তাঁকে নিয়ে লণ্ডনে চলে যান।কেউ বলেন জেলার সাহেবের স্ত্রীর বা কন্যার অনুরোধে বাজালকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তাঁরা বাজালের বাঁশিতে মুগ্ধ হয়েছিলেন।তাঁরা শিল্পীর কদর বুঝতেন।তবে সবটাই কিংবদন্তী। আসলে বাজালের জেল পরবর্তী জীবনের সঠিক বিবরণ কেউ দিতে পারেননি।বাজাল যেন নেতাজী সুভাষ। সুভাষকে নিয়ে যেমন আলোচনার শেষ নেই,সাঁওতাল সমাজেও তেমনি বাজালকে নিয়ে আলোচনার শেষ নেই।সুভাষের মতোই একটা কথা বলা যায়-" বাজাল ঘরে ফিরে নাই"। সুভাষের মতো বাজালও ব্রিটিশ বিরোধী বীর নায়ক।তিনি মিথ হয়ে থেকে যাবেন এলাকার প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে।
বীরবান্টা বৌজালকে ইতিমধ্যেই স্বীকৃতি দিয়েছে ঝাড়খণ্ড সরকার।বৌজাল সরেনের জীবনকথা সাধারণের মধ্যে পৌঁছে দেওয়ার জন্য বীরভূমের সিউড়ির আব্দারপুরের আদিবাসী সুসার গাঁওতার সদস্যরা এক বিরাট মেলার আয়োজন করেছেন।মেলাটি ২২ এবং ২৩ শে জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে চলেছে সিউড়ি আব্দারপুর ফুটবল ময়দানে। অনুষ্ঠানটির সার্বিক সাফল্যের জন্য দেশবিদেশের গুনীজনরা আসছেন সেই অনুষ্ঠানে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির আসন গ্রহণ করবেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট সমাজসেবী আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মাননীয় রবিন সরেন মহাশয়।বিশেষ অতিথি হিসাবে থাকছেন নেপালের বিশিষ্ট গুনীজনরা।উপস্থিত থাকবেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক সারদা প্রসাদ কিস্কু,তেতরে পত্রিকার সম্পাদক মহাদেব হাঁসদা,সিলি পত্রিকার সম্পাদক কলেন্দ্রনাথ মাণ্ডী,সার সাগুন পত্রিকার সম্পাদক মলিন্দ হাঁসদা,থাকছেন আসেকার পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক সুবোধ হাঁসদা।এছাড়াও থাকছেন ডাঃ সুরজিত সিং হাঁসদা,গোড্ডা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা হোলিকা মারাণ্ডি সহ বিশিষ্ট অধ্যাপক,কবিসাহিত্যিক, পত্রপত্রিকার সম্পাদক এবং বিভিন্ন কলেজ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ও ছাত্রছাত্রীরা।দুদিনই বেলা বারোটার পর শুরু হবে গুনীজনদের সম্বর্ধনা এবং তাঁদের মূল্যবান বক্তব্য। বিকাল পর্যন্ত চলবে সেমিনার। বিকালের দিকে থাকছে বিভিন্ন নৃত্যদলের নৃত্য পরিবেশন। সন্ধ্যা ছ'টার পর বৌজাল সরেন এবং হুলের নায়কদের স্মরণে নাটক।রাত্রী আটটার পর সংগীতের অনুষ্ঠান। সংগীত পরিবেশন করবেন বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী কল্পনা হাঁসদা,রথীন কিস্কু,কেরানী হেমব্রোম, স্টিফেন টুডু প্রমুখ।
বিশদে জানতে যোগাযোগ করতে পারেন আয়োজন কমিটির সম্পাদক চন্দ্রমোহন মুর্মুর সাথে।আরেকজনের কথা না বললে লেখাটি অসম্পূর্ন থেকে যাবে তিনি পশ্চিমবঙ্গ আদিবাসী গাঁওতার সম্পাদক রবীন সরেন।এই সাহিত্যানুরাগী সমাজসেবী মানুষটি সুসার গাঁওতার এই আয়োজনের একজন অন্যতম সহযোগী।
বীরবান্টা বৌজালের কথা বিশদভাবে জানতে চলুন ২২ আর ২৩ জানুয়ারী সিউড়ি আব্দারপুর থেকে ঘুরে আসি।আসছেনতো? সুসার গাঁওতার সদস্যরা কিন্তু আপনার অপেক্ষায় থাকবেন ।
Image may contain: people standing and outdoor

Wednesday, 11 December 2019

নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল অনুসারে আদিবাসীরা কি ধর্মান্তরিত হওয়ার পথে ?

Dinamkhobor
আদিবাসী মূল বাসী আজ সত্যিই কি ধর্মান্তরিত হওয়ার পথে ? আদিবাসীরা কি সত্যিই অনুপ্রবেশকারী? আদিবাসীদের দেশ তাহলে কোথায়? প্রাচীনকালের প্রাচীন অধিবাসী আদিবাসীরাই কি? তাহলে কেন আজ আদিবাসীরা বঞ্চিত? তাহলে কি দ্য সিটিজেনশিপ আমেন্ডমেন্ট বিল (CAB) বা নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল অনুসারে আদিবাসীরা ধর্মান্তরিত হওয়ার পথে?
এরকম আরো নানান প্রশ্ন আদিবাসী সমাজ ও বুদ্ধিজীবী মহলে ঘুরপাক খাচ্ছে। তাহলে কি আদিবাসীদের বাদ দিয়ে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল অনুসারে হিন্দু ,খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন এবং পারসি এই ছটি ধর্মকে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে? তাহলে আদিবাসীরা কোথায় থাকে? তাদের আদৌও কি নাগরিকত্ব দেওয়া হবে? নাকি ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখা হবে? নাকি দেশ থেকে তাড়ানো হবে? এখানে বলে রাখা দরকার আফগানিস্থান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ এই ৩ টিই মুসলিম কান্ট্রি। তাহলে আদিবাসীদের দেশটি কোথায়?সব থেকে বেশি সমস্যার মুখে পড়তে হবে আদিবাসীদের তাদের কোথাও যাওয়ার জায়গা থাকবেনা। ওই ছয় ধর্মের বাইরে, তাদের নিয়ে এখনো পরিষ্কার কিছু বলা হয়নি।
নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল অনুসারে আদিবাসী সমাজের বুদ্ধিজীবীদের মাথায় এখন হাত। সত্যিই কি আদিবাসীদের এদেশে থাকার জন্য অন্য ধর্মে ধর্মান্তরিত হতে হবে? না নিজের ধর্মকে রক্ষা করার তাগিদে অন্যত্রে দেশ ছেড়ে চলে যেতে হবে?যে দেশ কে রক্ষা করার জন্য ইংরেজদের বিরুদ্ধে আদিবাসীরা জীবন দিয়েছে এবং সে দেশে আজ আদিবাসীদের নাগরিকত্ব নিয়ে অনিশ্চিত। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে এই ভারত বর্ষ কে স্বাধীন করার জন্য টিলকা মাঝির নেতৃত্বে ১৭৮৫ সালে, সিধু কানুর নেতৃত্বে ১৮৫৫ সালে এবং বিরসা মুন্ডার নেতৃত্বে ১৮৯৯ সালে ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল প্রথম আদিবাসী জনগোষ্ঠী। আর আজ সেই স্বাধীন ভারতবর্ষে আদিবাসীদের নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে ভবিষ্যৎ কি হবে? এ নিয়ে আজ পর্যন্ত পার্লামেন্টেও কোন আদিবাসী এমপি নিজের জাতিসত্তার জন্য মুখ খুলেনি।

Tuesday, 10 December 2019

আগামী ২২শে ডিসেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে সাঁওতালি বই মেলা, পশ্চিম মেদিনীপুর গোয়ালতোড়ে


২২শে ডিসেম্বর সাঁওতালি ভাষা বিজয় দিবস।এবং এই দিনটি কে আদিবাসী সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মানুষরা নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতিবছর পালন করে থাকে। ২০০৩ সালের ২২শে ডিসেম্বর সংবিধানের অষ্টম তফসিলিতে সাঁওতালি ভাষা স্বীকৃতি পায়। সাঁওতাল সম্প্রদায় মানুষের কাছে এই দিনটিকে স্মরণীয় দিন হিসেবে প্রতিবছর নানান সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেশের প্রতিটি জায়গাতে পালন করা হয়। এমনই প্রতিবছর ওই দিনে পালিত হয়ে আসছে সাঁওতালি বই মেলা পশ্চিম মেদিনীপুরের গোয়ালতোড়ে।এই বছর এই সাঁওতালি বই মেলা চার বছরে পদার্পণ করল। আগামী ২২শে ডিসেম্বর থেকে ২৬ শে ডিসেম্বর পর্যন্ত এই বইমেলা চলতে থাকবে। গোয়ালতোড় সিধু কানু হুলসায় গাঁওতার উদ্যোগে প্রতিবছর চার দিনব্যাপী এই বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়। এই বই মেলায় বই ছাড়াও আদিবাসী সাঁওতাল সম্প্রদায়ের নানান  সামাজিক সাংস্কৃতিক জিনিস ও বাদ্যযন্ত্রের স্টল বসানো হয়। এছাড়াও এই চারদিনব্যাপী আদিবাসীদের নানান সমাজ সচেতন মূলক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। বহু দূর-দূরান্ত থেকে এই বই মেলায় সাঁওতালি ভাষা প্রেমী মানুষ, সাহিত্যিক, লেখক, কবি ও সমাজসেবী রাও উপস্থিত হয়।

সাঁওতালি ভাষা বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে মাঝি ও পারগানা বাবাদের মধ্যে আলোচনা, কেশপুর মুলুক

আগামী ২২শে ডিসেম্বর সাঁওতালি ভাষার বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে এবং সাঁওতালি ভাষা অলচিকি লিপির শতবার্ষিকী সাফল্য করার লক্ষে ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল এর সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হল। গত ৮ই ডিসেম্বর রবিবার কেশপুর বাবন ভুয় মুলুকের ৮নং পন্ডিত রঘুনাথ মুরমু লিখন গড়হন পীড়ের কাপাস টিকরী গ্রামে এই আলোচনা সভাটি হয়। এদিন ওই পীড়ে মাঝি বাবাদের সঙ্গে সঙ্গে   মাঝি হপন ও হপন এরা রাও উপস্থিত ছিল।
২২শে ডিসেম্বর সাঁওতালি ভাষার বিজয় দিবস উদযাপনকে কেন্দ্র করে এদিন পারগানা ও মাঝি বাবাদের সঙ্গে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়।এ দিনটি আদিবাসী সাঁওতাল সমাজের এক ঐতিহাসিক দিন এবং সেই ঐতিহাসিক দিনকে প্রতিবছর স্মরণীয় করে রাখার জন্য মাঝি বাবাদের এই বিশেষ আলোচনা সভা বলে জানা যায় সংগঠনের পক্ষ থেকে। তাছাড়া এদিন সংগঠনের পক্ষ থেকে জানা যায় যে আগামী ২০২৫ সাল অল চিকি লিপির শতবার্ষিকী । এবং সেই শতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রতিটি গ্রামে অল চিকি সাক্ষরতা যাতে করা যায় সেনিয়ে ঐদিন আলোচনা করা হয়।
প্রতিটি গ্রামে গ্রামে ১০০% অল চিকি সাক্ষরতা মিশন অভিযান চালানো হবে। এদিন এই আলোচনায় কেশপুর বাবন ভুয় মুলুকের মুলুক কমিটি পুনর্গঠন নিয়েও আলোচনা করা হয় সংগঠনের পক্ষ থেকে। এদিন এই আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল এর অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার জগপারগানা মনোরঞ্জন মুর্মু,মেদিনীপুর সদর তল্লাট পারগানা স্বপন মান্ডি এবং এছাড়া উপস্থিত ছিল ওই মুলুক ও পীড়ের পারগানা ও মাঝি বাবারাও।

Monday, 2 December 2019

সাঁওতালী ভাষাকে সরকারী কাজে অন্তর্ভুক্ত করার দাবীতে আন্দোলনে কৃষক মজদুর সভা।

#বাঁকুড়া২৪X৭প্রতিবেদন : এবার সাঁওতালী ভাষাকে অফিস,আদালত ও সরকারী কাজে অন্তর্ভুক্ত করার দাবীতে আন্দোলনে নামল সারা ভারত কৃষক মজদুর সভা। বুধবার এই দাবীর পাশাপাশি, ক্ষেত মজুরদের সরকারী নির্ধারিত হারে মজুরী প্রদান,কৃষকদের পেনশনের আওতায় আনা,ক্ষেতমজুরদের জন্য সর্বাঙ্গীন সামাজিক কল্যানকর আইন তৈরি, কৃষকদের বার্ধক্য ও বিধবা ভাতার পরিমান দ্বিগুণ করা,সমস্ত প্রবীন নাগরিকদের মাসে দেড় হাজার টাকা করে ভাতা চালি,প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্তর পর্যন্ত অলচিকি মাধ্যমে পঠনপাঠনের ব্যবস্থা করা সহ এক গুচ্ছ দাবীতে সংগঠনের সারেঙ্গা ও রাইপুর শাখার থেকে আজ রাইপুর বিডিওকে একটি স্মারকলিপিও দেওয়া হয়।

Sunday, 3 November 2019

পশ্চিমবাংলায় তপশীলি উপজাতির তালিকা(List of Scheduled Tribe in West Bengal)

Image result for পশ্চিমবঙ্গের তপশিলি উপজাতির

পশ্চিমবাংলায় তপশীলি উপজাতির তালিকা (List of Scheduled Tribe in West Bengal)।

1. অসুর (Asur)
2.  বইগা (Baiga)
3. বেদিয়া (Bedia, Bediya)
4.  ভূমিজ (Bhumij)
5.  ভুটিয়া, শেরপা, টোটো, ডুকপা, কাগাতাই, টিবেটিয়ান, য়োলমো, (Bhutia, Sherpa, Toto, Dukpa, Kagatay, Tibetan, Yolmo)
6. বিরহোর (Birhor)
7. বিরজিয়া (Birjia)
8. চাকমা (Chakma)
9. চেরো (Chero)
10. চিকবরাইক (Chik Baraik)
11. গারো (Garo)
12. গোণ্ড (Gond)
13. গোরাইত (Gorait)
14. হাজাং (Hajang)
15. হো (Ho)
16. কারমালি (Karmali)
17. খারওয়ার (Kharwar)
18. খণ্ড (Khond)
19. কিসান (Kisan)
20. কোড়া (Kora)
21. কোরয়া (Korwa)
22. লেপচা (Lepcha)
23. লোধা, খেড়িয়া, খাড়িয়া, (Lodha, Kheria, Kharia)
24. লোহারা, লোহরা, (Lohara, Lohra)
25. মাঘ (Magh)
26. মাহালি (Mahali)
27. মাহলি (Mahli)
28. মালপাহাড়িয়া (Mal Pahariya)
29. মেচ (Mech)
30. ম্রু (Mru)
31. মুণ্ডা (Munda)
32. নাগেশিয়া (Nagesia)
33. ওঁরাও (Oraon)
34. পাহাড়িয়া (Pahariya)
35. রাভা (Rabha)
36. সাঁওতাল (Santal)
37. সাঁওরিয়া পাহাড়িয়া (Sauria Paharia)
38. শবর (Savar)
39. লিম্বু (Limbu)
40. তামাং (Tamang)

ইউটিউব কাঁপাচ্ছে ডগর টুডুর নতুন ভিডিও “হাওয়া হাওয়া”








































জনপ্রিয় সাঁওতালি অভিনেত্রী ডগর টুডু অভিনীত “হাওয়া হাওয়া” ভিডিওটি ইন্টারনেট দুনিয়ায় দারুন জনপ্রিয় হয়েছে| এই ভিডিওতে অভিনয়ের পাশাপাশি গানও গেয়েছেন অভিনেত্রী ডগর টুডু| ইউটিউবে এই ভিডিওটি এখনও পর্যন্ত 279,625 জন দেখেছেন|

ভিডিও দেখার ইউটিউব লিংক – https://youtu.be/KOn0c0XdshE


Saturday, 2 November 2019

সোহরায়



সোহরায় আদিবাসী জনগোষ্ঠি সাঁওতালদের প্রধান উৎসব সহরায়। সহরায় উৎসব হয়ে থাকে কার্তিক মাসে। তাই সাঁওতালি বর্ষপুঞ্জিতে কার্তিক মাসকে ‘সহরায় বঙগা’ বলে। তবে অর্থনৈতিক কারণে বাংলাদেশের সাঁওতালরা পৌষ মাসে সহরায় পালন করে থাকে। সাম্প্রতিক পৌষ সংক্রান্তিতে সারা বাংলাদেশের সাঁওতালদের মাঝে একযোগে সহরায় পালনের প্রচেষ্টা দেখা যাচ্ছে। সহরায় উৎসবে মানুষসহ গৃহপালিত প্রাণিরও মঙ্গল কামনা করা হয় ঠাকুর জিউ-ঠাকরাণ(স্রষ্টা) এবং বঙগা(দেবতা)দের কাছে।

সময়

সান্তালদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব সহরায়।এই উৎসব কার্তিক(অক্টোবর-নভেম্বর) ও পৌষ(ডিসেম্বর-জানুয়ারি) মাসে হয়।প্রথমটিকে বলা হয় 'সারি সহরায়' এবং দ্বিতীয়টিকে বলা হয় 'সাকারাত সহরায়'। কেন এবং কখন থেকে এই বিভক্তি এ সম্পর্কে স্পষ্ট তথ্য পাওয়া যায়না। তবে ধারণা করা হয় অর্থনৈতিক কারনেই এই বিভক্তি হতে পারে। তবে প্রতি বছর যেকোন একটি পালন করা হয়ে থাকে।

পালনরীতি

বিভিন্ন দলিল, শ্রুতি ও সহরায় গান থেকে জানা যায় সান্তাল সমাজে সহরায় পাঁচ পর্বের।এই পাঁচ পর্ব পাঁচ দিন ধরে পালন করা হয়। সময়ের প্রয়োজনে অনেক গ্রামেই তিন দিনে এই পাঁটি পর্ব পালন করা হয়ে থাকে। পর্ব গুলো হলো-
  1. উম
  2. দাকা
  3. খুন্টাউ
  4. জালে
  5. সাকরাত

উম

সহরায়ের প্রথম দিনকে বলা হয় ‘উম মাহা’ যার অর্থ শুচিকরণ বা পবিত্র দিন। এই দিনে ঘরবাড়ি ও পোশাক পরিচ্ছদ পরিষ্কার করার কাজ সমাপ্ত হয়। এই দিনে গ্রামের বাইরে যেকোনো জায়গায় অস্থায়ী পূজার স্থান নির্ধারণ করা হয়। যাকে বলা হয় ‘গট’ বা ‘গট টৗন্ডি’। নায়কে(পুরোহিত)সহ গ্রামের সকালে স্নান করে নতুন পোশাক পরে গট টৗন্ডিতে যায়। সেখানে নায়কে কলা, বাতাসা অন্যান্য ফলে প্রসাদ দিয়ে পূজা করেন এবং গ্রামের সব বাড়ি থেকে নিজ নিজ নিয়ে আসা কবুতর অথবা মুরগি স্রষ্টা ও দেবতার নামে উৎসর্গ করেন। কোথাও সবার অনুদানে কবুতর ও মুরগি কেনা হয়ে থাকে। গ্রামের সকল মানুষ ও গাবাদি পশু এতদিন সুস্থ ছিল সে জন্য নায়কে সেখানে ঠাকুর-ঠাকরান ও মারাং বুরু(প্রধান দেবতা) সহ সকল বঙগাদের ধন্যবাদ জানান এ সময় । সেই সাথে ভবিষতের মঙ্গল কামনা করেন। তারপর কুডৗম নায়কে(সহকারী পুরোহিত) একটু পৃথক জায়গায় প্রার্থনা করেন গ্রামে যেন কোন রোগ, মহামারি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ না আসে। সেই সাথে প্রার্থনা করেন বিভিন্ন জায়গায় অবস্থিত সাঁওতালসহ বিশে^র সকল মানুষের মঙ্গল। তারপর উৎসর্গকৃত মুরগি ও কবুতর দিয়ে পোলাও তৈরি করা হয় গ্রামের সকলের জন্য। দুপুরের খাওয়া হয় সেখানেই। এরপর বাইরে চরানো গ্রামের গাবাদি পশুগুলোকে নিয়ে আসা হয় পূজার স্থানে। পূজার জন্য ব্যবহৃত কলার পাতা যে গাবাদি পশু খাবে তাকে মাথায় সিঁদুর দেওয়া হয়। তার মালিককে সুভাগ্যবান মনে করা হয়। কেননা এটাকে ঐ ব্যক্তির ভবিষৎ মঙ্গলের লক্ষণ মনে করা হয়। সেই খুশিতে মালি পরের বছরের সহরায়ে বড় কোনো অনুদান দেওয়ার কথা দেন। তারপর সবাই নাচ গান করতে করতে গ্রামে ফিরে আসে। সব শেষে বাড়িতে এসে প্রত্যেক বাড়ির গৃহ কর্তা নিজ নিজ বাড়ির ভেতরে মারাং বুরু ও পরিবারে মৃত ব্যক্তিদের আত্মার উদ্দেশ্যে হান্ডি(বিশেষ ধরনের পানীয়) উৎসর্গ করে এবং তারাও যেন তাদের জগতে আনন্দের সাথে সহরায় করে এই কামনা করে। তারপর অবশিষ্ট্য হান্ডি পরিবারের সবাইকে দেওয়া হয়।

দাকা

সহরায়ের দ্বিতীয় দিনকে বল হয় বঙগা মাহা(দেবতা দিবস) ও দাকা মাহা(ভোজ দিবস)। এই দিনে প্রতি বাড়িতেই আত্মীয় সজন চলে আসে। এই দিনে বিশেষ গুরুত্ব পান মেয়ে জামাই। তাকে পা ধুয়ে বরণ করা হয় এবং নতুন কাপড় উপহার দেওয়া হয়। পা ধোওয়ার দায়িত্ব থাকে শালীকার। অনুপস্থিতিতে বাড়ির অন্য মহিলারা দায়িত্ব পালন করে। এই দিনে ব্যাপক খাওয়া দাওয়ার আয়োজন করা হয়। বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জগমাঞ্জহির বাড়ি থেকে শুরু করে গ্রামের এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্ত পর্যন্ত নাচ গান হয়। আবার জগমাঞ্জহির বাড়িতে গিয়েই সমাপ্ত করা হয়।

খুন্টাউ

সহরায়ের তৃতীয় দিনকে বলা হয় ‘খুন্টাউ’ যার অর্থ গাবাদি পশুকে ঘাস খাওয়ানোর জন্য বাইরে বেধে রাখা। এর আগের দিন ময়দা পানি দিয়ে গোওয়াল ঘরের দুওয়ারে সাঁওতালদের পদবী ভেদে ভিন্ন ভিন্ন বিশেষ নকশা আঁকা হয়। এই দিন সকালে গাবাদি পশুর মাথায় শিঙে ধানের শিশের মাল পিঠা বেধে দিয়ে বের করে দেওয়া হয়। তারপর নায়কে, জগমাঞ্জহি ও অন্যান্য দায়িত্ব প্রাপ্ত ব্যক্তিসহ গ্রামের অনেকে বাড়ি গিয়ে গোওয়াল ঘরের সামনে গাবাদি পশুর মঙ্গল কামনা করে গানের মাধ্যমে বন্দনা করে। প্রতি বাড়িতেই তাদের আপ্যায়ন করা হয়। এই দিনও বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জগমাঞ্জহির বাড়ি থেকে শুরু করে গ্রামের এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্ত পর্যন্ত নাচ গান হয়। আবার জগমাঞ্জহির বাড়িতে গিয়েই সমাপ্ত করা হয়।

জালে

সহরায়ের চতুর্থ দিনকে বলা হয় ‘জালে’ যার অর্থ তৃপ্তি ভোরে খাওয়া। এই দিনে সবাই সবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে হান্ডি পান করে। এই দিনও বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জগমাঞ্জহির বাড়ি থেকে শুরু করে গ্রামের এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্ত পর্যন্ত নাচ গান হয়। তবে জগমাঞ্জহির বাড়িতে না গিয়ে মাঞ্জহি(গ্রাম প্রধান)র বাড়িতে গিয়েই সমাপ্ত করা হয়। এই দিন মাঞ্জহির বাড়িতে পিঠা ও মুড়ি দিয়ে সবাইকে আপ্যায়ন করা হয়। যারা হান্ডি পান করে তাদের হান্ডি দেওয়া হয়।

সাকরাত

সাকরাত কে ভিন্ন উৎসব হিসেবেও পালন হয়ে থাকে। তবে যে সব জায়গায় কার্তিক মাসের পরিবর্তে পৌষ মাসে সহরায় পালন করা হয় সেখানে এই চারটি দিনের সাথে আর একটি দিন যুক্ত করা হয়। সেটা হলো ‘সাকরাত’ যা অর্থ সমাপ্তি বা সংক্রান্তি। এই সাকরাত উৎসবের মাধ্যমে সাঁওতালি বর্ষে সমাপ্ত হয়। এই দিনে গ্রামরে পুরুষেরা শিকার করতে যায়। শিকার থেকে ফিরে এসে নাচ গানের মাধ্যমে তাদের গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর হাত পা ধুয়ে যে যার বাড়ি যায়। তারপর তীর ধনুক নিয়ে ‘বজহা তুঞ’ করতে যায়। বজহা তুঞ হচ্ছে একটি কলা গাছকে অশুভ শক্তির প্রতীক হিসেবে তার উদ্দেশে তীর নিক্ষেপ করা। যে কলা গাছকে তীরবিদ্ধ করতে পারে তাকে জগমাঞ্জহি ঘাড়ে করে গ্রাম পর্যন্ত নিয়ে আসে। কলাগাছকে ৭টি ভাগে ভাগ করে নাগরা বাজাতে বাজাতে গ্রামরে দায়িত্ব প্রাপ্ত সাত জনের(নায়কে, জগমাঞ্জহি, মাঞ্জহি, পারানিক, জগপারানিক, গডিৎ, কুডৗম নায়কে) বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়।
আবার কোথাও কোথাও এই পাঁচ দিনের সাথে আরও একদিন পালন করা হয়। যাকে বল হয় 'হাকো কাটকম' যার অর্থ 'মাছ কাকড়া'। এই দিনে দল বেধে মাছ ধরতে যায় গ্রামের অনেকেই।
সব শেষে বলা যায় সহরায় উৎসবের গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এই উৎসবে শুধু মানুষে অংশগ্রহণে পূর্ণতা লাভ করেনি। এখানে গাবাদি পশুর জন্যও একটি অংশ রাখা হয়েছে। কেননা এই গাবাদি পশুর মাধ্যমে চাষ আবাদ থেকে শুরু করে একটি পরিবারের অনেক অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধিত হয়। আপদ বিপদ থেকে গাবাদি পশুর বিনিময়ে অনেক সময় মানুষ মুক্তি পায়। সহরায় আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় শুধু মানুষ নয় সকল প্রাণিই প্রকৃতির সন্তান। তাই সব আনন্দই সবার মাঝে ভাগ করা উচিৎ।

তথ্যসূত্র


  • হড়কোরেন মারে হাপড়াকো রেয়াঃ কাথা
  • সারি ধরম - সোমাই কিস্কু

Saturday, 26 October 2019

"সারি সহরায়" ।। জ্যোৎস্না সোরেন ।।


হাতি লেকান সারি সহরায়..
      সেটের আকান দাই না...
    দেসে দাই না, দেসে দাই না..
      আতাং দারাম মেম ৷
       দেসে দাই না,লটা দাঃ,
       দেসে দাই না, টেন্ডার মাচি...
   হাতি লেকান সারি সহরায়....
      দাই না লাং আতাং দারামে ৷

( হাতি এখানে বৃহৎ অর্থে উপমা অলঙ্কার)
  হাতি সম পরব দিদি...
   মোদের ঘরে এসেছে...
এসো দিদি এসো দিদি....
    বরন করি তাকে...৷৷
ঘটির জলে আতিথ্য করো
    বসার জন্য চেয়ার দিওয়ো..
হাতি সম পরব দিদি
           বরন করি এসো )

মহামিলনের বীজ মন্ত্রে দীক্ষিত মানব সমাজ একে অপরের পরিপূরক ৷ অন্যান্য ভাষাভাষীর মতোই আদি সমাজ জীবনেও খুশির প্রাবল্য ধরা পড়ে সারি সহরায় পরব বা উৎসবে ৷৷
সারি অর্থ্যাৎ সত্য, আর সহর+ আয়(লাভ/উপার্জন ) =সহরায় ৷
সহর এর আক্ষরিক কোনো অর্থ বাংলা শব্দ ভান্ডারে নেই ৷ তবে আদিবাসী সাঁওতালি শব্দ সহর অর্থে আগমন বোঝায় ৷ সহরেনায় বা সহর সেটেরেনায় ৷শহর ও সহর শব্দ দুটি বিশেষ্য পদ,এবং ফার্সি গোত্রিয় ৷  প্রাচীন সিন্ধু  বা হরপ্পা মহেঞ্জোদারো সভ্যতায় তিন ধরনের সামাজিক বিন্যাস চোখে পড়ে ৷ সহর অর্থে শষ্যপূর্ন আধার কে বোঝানো হয়েছে ৷ আর শহর অর্থে নগর কে বোঝানো হয়েছে ৷

আদিবাসী ঘরানায় সহরায় (কার্তিক)মাস বর্তমান ৷ কার্তিক মাস জুড়ে  শষ্যপূর্ন ভান্ডার ভরে ওঠে ৷ সেই জন্যই পুরো মাসের নাম সহরায় ৷

আদিবাসী মাইথোলোজিতে দেখা যায় গিরু নাই এর উপস্থিতি ৷ লোহিত সাগর আর সিন্ধু নদ এর তীরে আদিবাসী অনার্যরাই প্রথম কৃষির পত্তন করেছিল ৷

সব মিলিয়ে এ কথায় প্রমান করে আদিবাসী মাইথোলোজিতে শষ্যপূর্ন আধার কে সামনে রেখে তৎকালিন কৃষিজীবি মানুষ মাসের নাম সহরায়  (কার্তিক) রেখেছিল ৷ আর ফসল ভরে ওঠার কাল কে  সত্য অর্থাৎ সারি বলে মান্যতা দিয়েছিল , আবাহন করেছিল ,বন্দনা করেছিল ৷ আদিবাসী মানুষ সত্যের উপাসক ,তাঁরা সবকিছুতে সত্যকে প্রতিষ্ঠা করেন !তাই হয়ত কৃষি বন্দনার মাসটিতে তাঁরা  শষ্যপুর্নতার কারন সমূহের  সারসত্ব কেই সারি অর্থে স্বীকৃতি দিয়েছেন ৷

সহরায় উৎসবে গোরুকে বন্দনা করার চল প্রচলিত ৷ শষ্যপূর্ন্য গোলা ভরে উঠতে লাঙ্গল বলদের ভূমিকা ছিল ৷ তাই নিজেদের   অানন্দ যজ্ঞে সেই পশুদের অবদানকেও স্বীকার করে পৃথিবীর এই প্রাচীন জনপদ ৷

গো জাগরন (জাগানো )করে তাদের কে চুমাড়া (বন্দনা)করে ৷  তাদের প্রাকৃতিক রং দিয়ে ছাপ দেওয়া হয় গোটা গায়ে ৷ আমরা যেমন নূতন পোশাকে সেজে উঠি তাদেরকেও সাজানো হয় ৷ এই সময়  গোায়াল ঘরের দুয়ারে ঘাসের আঁটি বাঁধা হয় ৷ধান, দূর্বা , এবং প্রদীপ জ্বালিয়ে তাদের সিং এ তেল মাখানো হয় ৷শষ্যপূর্ন গোলার পিছনে তাদের ভূমিকা অপরিসীম ৷ কি অসাধারন গার্হস্থ জীবন চর্চা ৷ দুধি লটা (বন্য লতা) ওই লতা থেকে দুধের মতো আঠালো রস বের হয় বলে এই নাম ৷দুধ +লতা=দুধলতা অপভ্রংসে দুধের লতা বা দুধিলটা ৷ দুধিলটা  গলায় পরিয়ে বলদের সঙ্গে গাভীর বিবাহ দেওয়া হয় ৷ এখানেও সামাজিক রসবোধের পরিচয় পাওয়া যায়
সৃষ্টির ধারা বজায় রাখার প্রথাকে মান্যতা দেওয়া পশুদের ক্ষেত্রেও ৷ জীবনাদর্শের  পরতে পরতে বাস্তুতন্ত্রের এমন প্রতিফলন    শিক্ষনীয় ৷  ছবি ঋণ : পল্লব মন্ডল
        ( পরবর্তী সংখ্যায় বাকি টা)

বীরভূম জেলার সিউড়িতে স্বাধীনতা সংগ্রামী বাজাল এর নামে মেলা

 বীরভূম জেলার সিউড়ির বড়বাগানের আব্দারপুর ফুটবল ময়দানে আয়োজিত হতে চলেছে ‘বীরবান্টা বাজাল মেলা-২০১৯’। ১৯শে জানুয়ারি এই মেলা আয়োজিত...