SANTHALDISHOM(সানতাল দিশোম)

Friday, 13 July 2018

গোপিবল্লভপুরে ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহলের উদ্যোগে আদিবাসী সমাবেশ।


গত রবিবার ৮ ই জুলাই, ২০১৮ ঝাড়গ্রাম জেলার গোপিবল্লভপুরে ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহলের উদ্যোগে এক বিরাট আদিবাসী সমাবেশ হয়। সমাবেশে বেলাকাটিয়া মুলুক ও বিলাত মুলুক এর আদিবাসীরা উপস্থিত ছিলেন। এই সমাবেশে সাঁওতালী মাধ্যমে ২০১৮ তে উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এই সমাবেশে উপস্থিতি ছিলেন ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহলের সুপ্রিমো তথা দিশম পারগানা নিত্যানন্দ হেম্ব্রম, পূর্ব মেদিনীপুর-পশ্চিম মেদিনীপুর-ঝাড়গ্রাম জেলা পারগানা রবিন টুডু মহাশয়, পূর্ব মেদিনীপুর-পশ্চিম মেদিনীপুর-ঝাড়গ্রাম জেলা গডেত রাইসেন হাঁসদা মহাশয়, পূর্ব মেদিনীপুর-পশ্চিম মেদিনীপুর-ঝাড়গ্রাম জেলা পরামর্শদাতা ডাঃ শিবশঙ্কর সরেন মহাশয়, ওড়িশ্যার ভঞ্জ মুলুক পারগানা মাগাদ চপয়া ও জেলার অন্যন্য মাঝি, পারগানা ও সম্মানীয় অথিতি বৃন্দ।
এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত বক্তারা তাদের বক্তব্যে আদিবাসী সমাজের শিক্ষা, সংস্কৃতি, ভাষা, জমি, বাসস্থান ইত্যাদি নানা সমস্যায় বিষয়ে আলোচনা করেন। বর্তমানে কিভাবে আদিবাসীদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে আদিবাসি সমাজের ঐক্য ভেঙ্গে দেওয়ার প্রানপন চেষ্টা চলছে তা নিয়ে বক্তব্য পেশ করেন প্রায় সকল বক্তারা, সেইসঙ্গে জানান যে এই চেষ্টা সফল হবে না। তারা দাবি করেন যে মুঘল শাসন, ইংরেজ শাসন আদিবাসীদের ঐক্য ভেঙ্গে দিতে পারেনি। তারা দাবি জানান –
১। সাঁওতালী মাধ্যমের স্কুলের সমস্থ পরিকাঠামো অবিলম্বে দিতে হবে।
২। সাঁওতালী মাধ্যমে শিক্ষার ১০-১১ বছর অতিক্রান্ত হলেও স্থায়ী শিক্ষক নিয়োক করা হল না কেন?
৩। পশ্চিমবঙ্গের সমস্থ আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকাকে পঞ্চম তপশিলে অন্তর্ভুক্ত করে সাঁওতালী ভাষা, ধর্ম অ সংস্কৃতির অধিকার কে সুনিশ্চিত করতে হবে।

আদিবাসীদের উন্নয়নের জন্য কমিটি গড়লেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।



২০১১ সালে প্রথম বার পশ্চিমবঙ্গের শাসনক্ষমতা লাভ করার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বার বার ইঙ্গিত দিয়েছেন যে তার সরকারের উন্নয়নের কর্মকাণ্ডে অন্যতম অভিমুখ আদিবাসীরা। আদিবাসীদের উন্নয়নের তদারকি করতে বার বার ছুটে গিয়েছেন জঙ্গলমহল। আদিবাসীদের উন্নয়নে চালু করেছেন অনেক নতুন নতুন সরকারী প্রকল্প। কিন্তু কোথায় যেন তাল কেটেছে। শাসক তৃণমূল কংগ্রেস ও রাজ্য সরকারের ওপর বিরূপ হয়েছেন আদিবাসীরা। বিভিন্ন ইস্যুতে বার বার রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে পথে নামছেন আদিবাসীরা। আদিবাসীদের দেখাদেখি আরও অনেকে শাসক তৃণমূল কংগ্রেস ও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সরব হচ্ছেন। তার জেরে গত পঞ্চায়েত ভোটে জঙ্গলমহল এবং উত্তরবঙ্গের আদিবাসী প্রধান এলাকায় আশানুরূপ ফল করতে পারেনি শাসকদল। এর প্রতিক্রিয়ায় দলীয় স্তরে অন্তর্তদন্ত, সাংগঠনিক এবং প্রশাসনিক স্তরে ব্যাপক রদবদলের ধারাবাহিকতায় এ বার আদিবাসী উন্নয়নে বিশেষ কমিটি গড়লেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ব্লক, জেলা এবং রাজ্য – তিন স্তরেই কমিটি তৈরি হবে। এই কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে সিপিএমের বহিষ্কৃত সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
আদিবাসীদের ক্ষোভের কারন ও উন্নয়নের পন্থা খুঁজে বের করতে গত ০৬ ই জুলাই, ২০১৮ (শুক্রবার) দুপুরে নবান্নে বিশেষ বৈঠক ডেকেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আদিবাসী অধ্যুষিত ১৫০ টি ব্লক থেকে বাছাই করা আদিবাসীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। ছিলেন আদিবাসী উন্নয়ন বোর্ডের প্রতিনিধিরা। হাজির ছিলেন ডিএম এবং এসপি’রা। তবে সরাসরি রাজনীতির লোক বলতে বিধায়ক, সাংসদ এবং পঞ্চায়েতের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে গোনা কয়েক জনকেই মাত্র ডাকা হয়েছিল। এই বৈঠকেই আদিবাসী এলাকার সামগ্রিক উন্নয়নে ব্লক, জেলা এবং রাজ্যস্তরে আলাদা কমিটি গঠনের কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। কমিটির মুখ্য কাজ হবে, আদিবাসী উন্নয়নে প্রশাসন এবং সরকারকে পরামর্শ দেওয়া এবং পঞ্চায়েতের কাজে তদারকি করা।
রাজ্যের প্রতিটি জেলা থেকে দু’জন করে আদিবাসী প্রতিনিধি রাজ্যস্তরে এই কমিটির সদস্য হবেন। তাঁরা সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সুপারিশ করবেন। নব গঠিত কমিটির চেয়ারম্যান ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে রাজ্য আদিবাসী উন্নয়ন কমিটি গঠন করা হয়েছে। আদিবাসীদের উন্নয়ন কী ভাবে করা যায়, সেটা খতিয়ে দেখে সরকারকে সব রকম সাহায্য করবে কমিটি। আগামী দিনে জেলা এবং ব্লক স্তর পর্যন্ত কমিটির কাজ ছড়িয়ে দেওয়া হবে।’
২০১১-য় তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর আদিবাসীদের উন্নয়নে একাধিক কর্মসূচি ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। রেশনে সস্তার চাল, পাট্টা বিলি, গরিব আদিবাসীদের জন্য পাকা বাড়ি, নতুন রাস্তাঘাট নির্মাণ, বেকার যুবকদের সিভিক ভলান্টিয়ারের চাকরি দেওয়া-সহ একের পর এক উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। গঠিত হয়েছে আদিবাসী উন্নয়ন বোর্ড। তার পরেও কেন আবার নতুন করে আদিবাসী উন্নয়ন কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত মুখ্যমন্ত্রীর?
রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, সদ্য সমাপ্ত পঞ্চায়েত ভোটে আদিবাসী অধ্যুষিত ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া জেলায় ধাক্কা খেয়েছে শাসকদল। তৃণমূলকে হারিয়ে বহু আসনে জয়ী হয়েছেন বিজেপি প্রার্থীরা। বাঁকুড়া, বীরভূম, জলপাইগুড়ি, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলাতেও তৃণমূলের আদিবাসী ভোটব্যাঙ্কে থাবা বসিয়েছে বিজেপি। আদিবাসীদের সংগঠিত করতে কিছু দিন আগেই পুরুলিয়ায় সভা করে গিয়েছেন বিজেপি’র সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। সব মিলিয়েই আদিবাসীদের মুখ ফেরানোর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে শাসক শিবিরে। আদিবাসীদের সমর্থন ফিরে পেতে এবং মজবুত করতেই পদক্ষেপ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বৈঠকে উপস্থিত আদিবাসী নেতাদের আরএসএস সম্পর্কে সতর্কও করে দিয়েছেন তিনি।
পঞ্চায়েতে তৃণমূলের অপেক্ষাকৃত খারাপ ফলের জন্য দলের স্থানীয় নেতাদের লাগাম ছাড়া দুর্নীতি এবং বেহিসাবি জীবন-যাপনকে দায়ী করেছেন অনেকে। দলীয় তদন্তেও সেটা উঠে এসেছে। তাই দলের নেতাদের দূরে রেখে আদিবাসী অরাজনৈতিক সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের সামনে রেখেই আদিবাসী এলাকার উন্নয়নে ব্রতী হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। জঙ্গলমহলের অনেক পরিচিত রাজনৈতিক নেতাই আমন্ত্রণ পাননি বৈঠকে। ঝাড়গ্রামের তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী চূড়ামনি মাহাতোকে ডাকা হয়নি। তবে উমা সোরেন, সুকুমার হাঁসদা, শান্তিরাম মাহাতোর মতো তৃণমূলের কয়েক জন আদিবাসী নেতাকে বৈঠকে দেখা গিয়েছে। পঞ্চায়েতের কয়েক জন মাত্র প্রতিনিধি ডাক পেয়েছিলেন। জঙ্গলমহলের বিভিন্ন ব্লক থেকে গড়ে সাত থেকে আট জন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। এক দিন আগেই বাসে করে তাঁদের কলকাতায় আনা হয়েছিল। বৈঠকের পর জঙ্গলমহলের নেতারা বাড়ি ফিরে গেলেও উত্তরবঙ্গের প্রতিনিধিরা শহরে সরকারি আতিথেয়তায় রয়েছেন। নতুন কমিটির সদস্যদের ভাতা দেওয়া যায় কিনা, সেই বিষয়টি সরকার বিবেচনা করে দেখবে বলে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন।
এই কমিটি আপাতত কাজ করবে জনজাতি অধ্যুষিত ১৫০ ব্লকে। বাসিন্দাদের অভাব-অভিযোগ শোনা, আরও উন্নয়ন প্রকল্প করা, চালু প্রকল্পগুলির সুবিধা তৃণমূল স্তর পর্যন্ত পৌঁছচ্ছে কি না, তার দেখভাল, সরকার ও আদিবাসী সমাজের মধ্যে সমন্বয়ের কাজ করবে কমিটি। ‘‘বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের নির্যাস, উন্নয়নের সমবণ্টন হতে হবে,’’ বলেন এক মন্ত্রী।
শাসক-নেতাদের একটি অংশের ধারণা, ভেবেচিন্তেই ওই কমিটিতে পরিচিত তৃণমূল নেতাদের রাখেননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁদের যুক্তি, জঙ্গলমহল, বিশেষত আদিবাসী এলাকার ভোটে ফল যে আশানুরূপ হয়নি, তার জন্য অনেকাংশে দায়ী সেখানকার নেতাদের একাংশের ভাবমূর্তি। তাঁদের আচরণ, জনসংযোগ ঠিকঠাক ছিল না। অনেক ক্ষেত্রে সরকারি প্রকল্পের সুবিধা তৃণমূল স্তরে না-পৌঁছনোয় ক্ষোভ বেড়েছে। একেবারে নতুন মুখ নিয়ে গঠিত কমিটি আদিবাসী সমাজের মুখ ফেরানো অংশের মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারবে বলে আশা করছেন মন্ত্রীদের অনেকেই।
নবান্ন থেকে সব জেলা প্রশাসনকে লিখিত নির্দেশ দিয়েছে, আদিবাসী সমাজের কারও জমি কেনা বা তার চরিত্র বদল করা যাবে না। প্রশাসনের একাংশের অনুমান, আদিবাসী সমাজের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ার অন্যতম কারণ জমির হাতবদল। এ দিনের বৈঠকে উপস্থিত জনজাতি-প্রতিনিধিদের এই বিষয়টি পৃথক ভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বৈঠকে প্রায় ৮০০ প্রতিনিধিকে স্মার্টফোন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আদিবাসী সমাজে প্রচলিত সব ভাষায় তৈরি একটি অ্যাপ থাকবে তাতে। সরকারি পদক্ষেপ, প্রকল্পের কথা জানা যাবে তার মাধ্যমে। প্রতিনিধিরা সেই অনুযায়ী প্রচার করবেন। তথ্য আদানপ্রদানের জন্য তৈরি হবে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ। গোটা কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণের জন্য অবসরপ্রাপ্ত এক আইপিএস-কে ‘নোডাল অফিসার’ হিসেবে নিয়োগ করবে রাজ্য।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফেসবুকে জানান, ‘আমাদের সরকার সব সম্প্রদায়ের মানুষের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। এই ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অনেক কাজ হয়েছে। আগামী দিনে তা আরও ছড়িয়ে দিতে চাই আমরা।’
বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আদিবাসী সমাজের প্রতিনিধিদের কাছে জানতে চান, দু’টাকা কেজি চাল, জাতিগত শংসাপত্র এবং উন্নয়নের যে সমস্ত কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে, তার সুবিধা তাঁরা পাচ্ছেন কি না। তখন কয়েকজন নানা সমস্যার কথা উল্লেখ করেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল, জমির পাট্টা দেওয়া হলেও রেকর্ড নেই। সেই রেকর্ড না থাকায় অসুবিধা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী তা শুনে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা ঩নিতে বলেন। একজন বলেন, জাতিগত বৈষম্য খুবই শুরু হয়েছে। বিভিন্ন পুজো পার্বণে উচ্চবর্ণের লোকেরা আমাদের সামাজিক বয়কট করে। আমরা একঘরে হয়ে যাই। রীতিমতো ফতোয়া দিয়ে বয়কট করা হয়।
তা শুনে অসন্তুষ্ট হন মুখ্যমন্ত্রী। সঙ্গে সঙ্গে তার কড়া নিন্দা করে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের বলেছেন, এরকম ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় থানায় অভিযোগ করতে হবে। না হলে তাঁকে জানাতে পরামর্শ দিয়েছেন। আদিবাসী সম্প্রদায়ের পক্ষে একজন বলেন, এখনও ডাইনি প্রথা চলছে। এটা বন্ধ করতে পাঠ্যপুস্তকের সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করা হোক। তাহলে সচেতনতা বৃদ্ধি হবে। সেই সঙ্গে অলচিকি হরফের আরও স্কুল এবং কমিউনিটি সেন্টার তৈরির দাবিও জানানো হয়।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আদিবাসী ছেলেমেয়েদের জন্য স্কলারশিপ চালু করা হয়েছে। ২০১১ সালের আগে আদিবাসীদের উন্নয়নে ৩৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। ২০১৮ সালে তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৮৭৮ কোটি টাকা। ২০১৩ সালে নতুন দপ্তর তৈরি করা হয়েছে। একইরকমভাবে অনগ্রসর শ্রেণী কল্যাণ দপ্তরের বাজেট বরাদ্দ বাড়িয়ে করা হয়েছে ৯০৭ কোটি ১০ লক্ষ টাকা। আদিবাসীদের পাশে আছে রাজ্য সরকার।
এদিনের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী, পূর্তমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু, শান্তিরাম মাহাত, সৌমেন মহাপাত্র, অনুব্রত মণ্ডল, মুখ্যসচিব মলয় দে, নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুরজিৎ করপুরকায়স্থ, ডিজি বীরেন্দ্র, সিপিএমের বহিষ্কৃত সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় উপস্থিত ছিলেন। এদিন বাসে করে আদিবাসীদের নিয়ে আসা হয়। তাঁদের খাওয়ার ব্যবস্থা করা হলেও তা ছিল সামান্য। ব্যয় সঙ্কোচের জন্য মেনুও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।

Friday, 29 June 2018

সাঁওতাল বিদ্রোহ বা সান্তাল হুল


## ঐতিহাসিক সাঁওতাল বিদ্রোহের ১৬৩ তম বার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি## 

##শুরু>> 

সাঁওতাল বিদ্রোহ বা সান্তাল হুল এর সূচনা হয় ১৮৫৫ সালে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ ও বিহারের ভাগলপুর জেলায়। ইংরেজ আমলে স্থানীয় জমিদার, মহাজন ও ইংরেজ কর্মচারীদের অন্যায় অত্যাচারের শিকার হয়ে সাঁওতালরা ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলে।এটি ছিল তাদের বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র গণ-সংগ্রাম। তাদের এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয় সীধু, কানু, চাঁদ প্রমুখ।১৮৫২ সালে লর্ড কর্নওয়ালিসের প্রবর্তিত চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে তাদের উপর অত্যাচার বেড়ে গিয়েছিল। তাই সিপাহী বিদ্রোহের আগে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সাঁওতালরা সোচ্চার হয়েছিল

##ইতিহাস কথা বলে>>

১৮৫৫ সালে সাঁওতালরা সশস্ত্র সংগ্রাম করেছিল তাদের অধিকার আদায়ের জন্য। তারা এ যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল ইংরেজদের শাসন-শোষণ, সুদখোর, মহাজন ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে। এ যুদ্ধের উদ্দেশ্য ছিল ব্রিটিশ সৈন্য ও তাদের দোসর অসৎ ব্যবসায়ী, মুনাফাখোর ও মহাজনদের অত্যাচার, নিপীড়ন ও নির্যাতনের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করা এবং একটি স্বাধীন সার্বভৌম সাঁওতাল রাজ্য প্রতিষ্ঠা করা। সান্তাল হুলের ইতিহাস হতে জানা যায় দামিন-ই কোহ ছিল সাঁওতালদের নিজস্ব গ্রাম, নিজস্ব দেশ।

১৮৫৫ সালের ৩০ জুন যুদ্ধ শুরু হয় এবং ১৮৫৬ সালের নভেম্বর মাসে তা শেষ হয়। সাঁওতালরা তীর-ধনুক ও দেশীয় অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করলেও ইংরেজ বাহিনীর হাতে ছিলও বন্দুক ও কামান। তারা ঘোড়া ও হাতি যুদ্ধে ব্যবহার করেছিল। এ যুদ্ধে ইংরেজ সৈন্যসহ প্রায় ১০ হাজার সাঁওতাল যোদ্ধা শাহাদত বরণ করেন।সাঁওতাল বিদ্রোহের লেলিহান শিখা ব্রিটিশ সরকারের মসনদ কাঁপিয়ে দিয়েছিল। যুদ্ধে সিঁদ-কানহু-চান্দ ও ভাইরব পর্যায়ক্রমে নিহত হলে ১৮৫৬ সালের নভেম্বর মাসে যুদ্ধ শেষ হয় ও বিদ্রোহের পরিসমাপ্তি ঘটে।

##উল্লেখযোগ্য দিকগুলো >> 

>>১৮৫৫ খ্রি. ৩০শে জুন প্রায় ত্রিশ হাজার সাঁওতাল কৃষকের বীরভূমের ভগনাডিহি থেকে সমতলভূমির উপর দিয়ে কলিকাতাভিমুখে পদযাত্রা- ভারতের ইতিহাসে এটাই প্রথম গণ পদযাত্রা।

>>৭ই জুলাই দিঘী থানার মহেশ-লাল দারোগাসহ ১৯ জনকে হত্যার মধ্যে দিয়ে বিদ্রোহের আগুন জ্বলে উঠে।

>>ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে জমিদার-মহাজন-সুদখোর ও নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে সাঁওতাল কৃষকরা সঙ্গে নিয়েছিলেন- কুমার, তেলী, কর্মকার, চামার, ডোম, মোমিন সম্প্রদায়ের গরিব মুসলমান ও গরিব হিন্দু জনসাধারণ।

>>সাঁওতাল বিদ্রোহ ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে শুধুমাত্র প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রামই নয়- ব্যাপক কৃষক সম্প্রদায়ের দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে, বাঁচার অধিকারের দাবীতে কৃষক সমাজের প্রথম গণ-সংগ্রাম হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

>>বিদ্রোহকে নির্মূল করার জন্য কোম্পানির বড় কর্তারা ৩৭শ, ৭ম, ৩১শ রেজিমেন্ট, হিল রেঞ্জার্স, ৪৩, ৪২ ও ১৩ রেজিমেন্ট প্রভৃতিকে ব্যবহার করেছিলো।

>>সাঁওতাল নেতাদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য সেদিন কমিশনার প্রধান নায়কের জন্য দশ হাজার টাকা, সহকারী নায়কের প্রত্যেকের জন্য পাঁচ হাজার টাকা এবং বিভিন্ন অঞ্চলের স্থানীয় নায়কদের জন্য এক হাজার টাকা পুরষ্কার ঘোষণা করেছিলেন।

>>১৮০৪ খ্রি. ১০ নং রেগুলেশনের ৩ ধারা অনুযায়ী ১০ই নভেম্বর, সামরিক আইন জারি করা হয়।

>>সিদু-কানুকে ষড়যন্ত্র করে ধরিয়ে দেওয়া এবং হত্যার পরই স্তিমিত হয়ে পড়ে বিদ্রোহ। এই ইতিহাসখ্যাত আন্দোলনে আদিবাসী সাঁওতাল নারীদের অংশগ্রহণ ছিলও অত্যন্ত স্বতঃস্ফূর্তভাবে। অধিকার আদায়ের আন্দোলনে আদিবাসী নারীরা ঘরের কোণে লুকিয়ে থাকেনি, তারাও হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিলো। ২৩.৭. ১৮৫৫’র Hindu Intelligence পত্রিকাতে এক সাঁওতাল প্রধানের স্ত্রীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার কথা কারণ হিসেবে উল্লেখিত হয়েছে। এ থেকে সাঁওতাল নারীদের উপর প্রচলিত নির্যাতন/সহিংসতার যেমন প্রমাণ মেলে; তেমিন এটি যে বিদ্রোহের পিছনে একটি কারণ ছিলো সেটিও বোঝা যায়।

>>বিদ্রোহে নারীদের অংশগ্রহণ ছিলো প্রত্যক্ষভাবে, পুরুষের সহযোগী বা সশস্ত্র ভূমিকার প্রমাণ মেলে- ‘তাহাদিগের স্ত্রীলোকেরাও অস্ত্র ধরিয়া নিবিড় অরণ্য হইতে বহিষ্কৃত হইয়াছে।

>>বারো জন সাঁওতাল পুরুষ ও ১০০ জন নারীর এক দল মহা-রাজপুর নামক গ্রামে প্রবেশ করে পুরুষরা গ্রামের প্রজাদের প্রহার করতে থাকে এবং স্ত্রীলোকেরা লুটপাট করে।

>>যানা-রোহী এক সান্তাল সরদার ঐ দলের সঙ্গে ছিল, গুলি দ্বারা তাহার পঞ্চত্ব লাভ হইয়াছে তাহার মৃত্যুর পরে প্রকাশ যে ঐ সরদার পুরুষ নহে, রমণী পুরুষ বেশে আসিয়াছিল।

>>সিদু-কানুর বোন ফুলমনির লাশ উদ্ধার করা হয় রেললাইনের ধার থেকে। শোনা যায়, ধর্ষণ ও শারীরিক নির্যাতনের পর ব্রিটিশ সেপাইরা তাকে হত্যা করে সেখানে ফেলে যায়। এই ফুল-মনিকে নিয়ে আদিবাসী সাঁওতালদের গান রয়েছে। বিদ্রোহের পরবর্তীতে ভাগলপুর ও বীরভূমের কিছু অংশ নিয়ে ৫, ৫০০ বর্গ মাইল জুড়ে এবং প্রথমে দেওঘর ও পরে দুমকায় প্রধান কার্যালয় নির্দিষ্ট করে সাঁওতাল পরগণা জেলা গঠিত হয়, সেটি বিদ্রোহ প্রশমনের পর প্রশাসনিক ক্ষেত্রে একটি বিশিষ্ট পরিবর্তন। এই পরগণাকে অনিয়ন্ত্রিত (নন- রেগুলেটেড) একটি জেলা ঘোষণা করা হয়।

##ফলাফল >>

সাঁওতাল জাতির ইতিহাসে সিধু-কানুর নেতৃত্বে সাঁওতাল যুদ্ধই ছিলো সর্বাধিক বৃহত্তম এবং গৌরবের বিষয়। তাদের এই বিদ্রোহই ভারতবর্ষে স্বাধীনতার বীজ বপন করে গিয়েছিল। এই যুদ্ধের ফলাফল হল এই যে, ইংরেজ সরকার সাঁওতালদের অভিযোগ সম্পর্কে তদন্তের ব্যবস্থা করলেন। ম্যাজিট্রেট এডন সাহেব সাঁওতালদের আবেদন শুনলেন। যুদ্ধের পরে সাঁওতালদের সমস্যা বিবেচনা করে আদিবাসী সাঁওতালদের জন্য একটি জেলা বরাদ্দ করা হল। এই জেলার নাম হল ডুমকা। এটাই সাঁওতাল পরগনা নামে পরিচিত। এখানে সাঁওতাল মানঝি্, পরানিক, পরগনা জেলার শাসন পরিচালনার জন্য দারোগা, পুলিশ ও বিভিন্ন সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী ক্ষমতা প্রাপ্ত হল। সাঁওতালদের বিচার সালিশ তাদের আইনে করার জন্য সরকার ক্ষমতা প্রদান করলেন। খাজনা, কর প্রভৃতি তাদের হাতে অর্পণ করা হল। তারা জেলা প্রশাসক বা ডিসির নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হতে থাকলো। ১৮৮৫ সালে বেঙ্গল টেনান্সি এ্যাক্ট অনুযায়ী আদিবাসীরা তাদের জমি সরকারী অনুমতি ছাড়া বিক্রি করতে পারতো না। এই আইন এখন পর্যন্ত কার্যকর আছে। 

##বর্তমান অবস্থা: 

আর বর্তমানে সাঁওতালদের বসবাসের জমি গুলি জোর করে দখল করা হচ্ছে। এ ছাড়া তাদের জমি দখলের জন্য বিভিন্ন হুমকি ও রাজনৈতিক প্রভাবও ব্যবহার করা হচ্ছে। আমি সচেতন প্রত্যেক নাগরিক কে অনুরোধ করব সাঁওতালদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য এবং এ ব্যাপারে আমি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণও করছি।

SANTALI VIDEO SONG 

New Santali Video Song 2018 Chandoy Rakab

https://youtu.be/xwfyaNH6Shc

ORIGINAL-O SANAM SANAM RE KITNE TADAPOGE RE NAGPURI 2017(Kishor Group)

https://youtu.be/Dy6F5YO5WPE

Tuesday, 26 June 2018

SANTALI VIDEO SONG

Santali Video Song(26.06.18)

Mone Mone Te.....

https://www.youtube.com/watch?v=oR2l5BRH_Lw

A B C D Santali Album_Full HD video || Rata Rusika present || new Santali album T20 Kuli

https://www.youtube.com/watch?v=7ThSYpQNXVY

RASCA 2018 Official Video | Birbaha Dance Group

https://www.youtube.com/watch?v=4QHUlntfaAA

NEW Santali love story //sibil amanj gaate ot serma muchod  ***

https://www.youtube.com/watch?v=cdOWtFa_Ib8

RASCA 2018 Official Video | Santragachi Sagen Sakam Dance Group   ***

https://www.youtube.com/watch?v=vJisbZPp2mo

1st Santali Pre wedding Song 2018 II Song - Fagun Rena Baha Futao En

https://www.youtube.com/watch?v=iht5QHuSkKI

Thursday, 29 March 2018

নারীর অধিকার ও বাবা সাহেব ডঃ বি আর আম্বেদকর

নারীর অধিকার ও বাবা সাহেব ডঃ বি আর আম্বেদকর

লিখেছেন ঃ কৃষ্ণা মণ্ডল বিশ্বাস           

“একজন বালিকা বা যুবতী বা বৃদ্ধা গৃহে স্বাধীন ভাবে কিছু করবেনা”। স্ত্রীলোক বাল্যে পিতার বশ্য থাকবে, যৌবনে স্বামীর অধীনে, স্বামী প্রেতলোক প্রাপ্ত হলে পুত্রের অধীনে থাকবে। কোন পরিস্থিতিতে নারী স্বাধীন থাকবে না’।
 (মনু স্মৃতি, ৫/১৪৭-১৪৮)
অথবা “নারী, বৈশ্য এবং শূদ্রগণ পাপ যোনিতে জন্ম”। (গীতা, ৯/৩২)
“ঢোল গাওয়ার পশু শূদ্র নারী
ইয়ে সারে তদন কী অধিকারী”। (রামচরিত মানস, তুলসী দাস)
“নারী নরকের দ্বার” অথবা “নারীর অধিকার কেবল সন্তান জন্মানোর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে”.
ভারতীয় নারীদের উপর এমন অনুশাসনের পারম্পরিক বোঝা নিশ্চিত ভাবেই নারীকে সম্মানিত করেনি বরং নারীর আত্ত মর্যাদা, আত্ত পরিচয় ও ব্যক্তিত্বকে শাসক ও পুরোহিততান্ত্রিক সংস্কারের বেড়াজালে অবরুদ্ধ করা হয়েছে। পতির পূন্যেই সতীর পুণ্য এমন আপ্ত বাক্যের আবেগে নারীকে মোহাবিষ্ট করে রাখা হয়েছিল বহুকাল। বোঝানো হয়েছিল এতেই নারীর মঙ্গল। এটাই নারীর ইহকাল ও পরকাল। এই কুটিলতা ও ছলনার ভুল ভুলাইয়াতে পড়ে নারী তার অস্তিত্বটাই হারিয়ে ফেলতে বসেছিল। ভুলতে বসেছিল সে মানবী। সার্বিক মানবাধিকারের অর্ধেক দাবীদার। সৃষ্টির অর্ধেক রূপকার। বিবর্তনের ইতিহাসে যা কিছু নিদর্শন তার বিনম্র সহচারী।
পুরুষ ও পুরোহিতের এমন ছলনার মোহে সে ভুলে গিয়েছিল সব। যার জন্যই নারী পরিণত হয়েছিল দাসী, বাদী ও ভোগের সামগ্রিতে। বাল্য বিবাহ, বহু বিবাহ এবং অকাল বৈধব্য ও সতী প্রথার মতো অসংখ্য কুসংস্কারের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল নারীর মাথায়। ঈশ্বরের নামে, ধর্মের নামে নারীকেই বলির যূপকাষ্ঠে চড়ানো হয়েছিল। বাঙলায় পাল যুগ অবসানের পর থেকে ব্রটিশ পূর্ব ভারতের এটাই ছিল অমোঘ বিধান।
নারীদের চেতন অবচেতন মনের মধ্যে এখনো এই কুসংস্কারের জঞ্জাল রয়েগেছে।
আমরা উৎকণ্ঠার সাথে লক্ষ্য করছি যে, ভোগবাদী ছলনা ও প্রলোভনের ফাঁদে পড়ে বহু নারী তাদের দেহ সৌন্দর্য কে বাজারের পণ্য হিসেবে বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করছে। ব্যবসাদারেরা বিজ্ঞাপনে, টিভি সিরিয়ালে, সিনেমাগুলিতে নারীদেহের খোলাবাজার বসিয়ে প্রতিক্রিয়াশীলদের হাতে অস্ত্র তুলে দিচ্ছে।
কিন্তু শ্রদ্ধায় অবনত হয়ে সেই মহামানব কে আমার ভক্তি পূর্ণ প্রনাম জানাচ্ছি যিনি পুরোহিততন্ত্র ও ভোগবাদী এই চিন্তাগুলিকে আবর্জনা হিসেবে প্রত্যাখ্যান করতে বলেছিলেন। তিনি পরম পূজনীয় বাবা সাহেব ডঃ ভীমরাও রামজী আম্বেদকর।
“আমরা অতি শীঘ্রই সেই শুভদিন দেখব এবং আমাদের উন্নয়ন আরো গতিশীল হবে যদি পুরুষের সাথে সাথে আমরা নারী শিক্ষায় মনোযোগী হই। নারী সমাজ কতটা এগোতে পারল সেই নিরিখেই আমি সমাজের অগ্রগতির পরিমাপ করি। একটি নারী শিক্ষিত হলে একটি পরিবার ও সুশিক্ষিত হয়”। ......
১৯২০ সালে মূখনায়ক ও ১৯২৭ সালে ‘বহিষ্কৃত ভারত’এ প্রকাশিত এই যুগান্তকারী বিবৃতির মধ্য দিয়েই মনুবাদী শাসনব্যবস্থার অচলায়তন পাহাড়গুলিকে ভাঙতে শুরু করলেন একালের বোধিসত্ত্ব বাবা সাহেব ডঃ বিআর আম্বেদকর। অথচ এই নারী সত্তাকে অবদমিত, অপমানিত ও শৃঙ্খলিত করে রাখা হয়েছিল যুগের পর যুগ।
নারীদের অধিকার ও আত্মমর্যাদা বিকাশের ক্ষেত্রে তিনি তাঁর ভাবগুরু মহাত্তা জ্যোতি রাও ফুলের পদাঙ্ক অনুসরণ করলেন। যেভাবে মহাত্তা জ্যোতি রাও ফুলে স্ত্রী সাবিত্রী ফুলেকে শিক্ষিতা করে তুলেছিলেন এবং ভারতবর্ষে নারী আন্দোলনের এক যুগান্তকারী অধ্যায়ের সূচনা করেছিলেন, সেই ভাবেই বাবা সাহেব তার স্ত্রী রমাবাই আম্বেদকরকে সভানেত্রী হিসেবে সামনে রেখে মহিলা সংঘ গড়ে তুলেছিলেন। এই মহিলা সংঘের নেতৃত্বেই নাসিকে কলরাম মন্দিরে প্রবেশের সত্যাগ্রহ পালিত হয়েছিল। অধিকাংশ নারীকে বন্দী করা হয়েছিল। নির্মম আচরণ করা হয়েছিল তাদের সাথে। পুরুষের সাথে রাখা হয়েছিল জেলখানায়। কিন্তু নারীরা তাতে দমে না গিয়ে আরো বিপুলভাবে আম্বেদকরের আন্দোলনে সামিল হতে থাকেন। তিনি নারীদের এমনভাবে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন যে এক প্রেস বিবৃতিতে রাধাবাই ভাদালে বলেছিলেন, “ চূড়ান্ত ঘৃণা নিয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে একশবার মরা ভাল। আমরা আত্তবিসর্জন দেবো কিন্তু ছিনিয়ে নেবো আমাদের কাঙ্ক্ষিত জয়”।
বাবা সাহেব সেই আন্দোলনে বেশি উৎসাহিত বোধ করতেন যা নারীদের দ্বারা পরিচালিত। তিনি উল্লেখ করতেন যে নারীরা যদি জীবনের সকল কাজে উৎসাহ বোধ করে তবে তা সামাজিক পুনর্গঠনে একটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হবে। সামাজিক উৎপীড়ন বন্ধ করার জন্য নারীরাই সর্বশ্রেষ্ঠ চালিকা শক্তি। তিনি নারীদের পুরুষকে স্বামী না ভেবে বন্ধু ভাবতে এবং তার সাথে সমান চারিত্রিক সক্ষমতা রাখতে উৎসাহিত করতেন। তিনি মনে করতেন যে, নারীরা এই গুণগুলি অনুসরণ করলে তারা আত্তপরিচয় ও আত্তমর্যাদা অর্জন করতে সক্ষম হবে।
১৯২০ সালে মূখ নায়ক পত্রিকা প্রকাশনার মধ্য দিয়ে বাবা সাহেব আম্বেদকর তাঁর আন্দোলন সূচনা করেন। ১৯২৭ সালে তিনি প্রকাশ করেন বহিষ্কৃত ভারত। এই পত্রিকা গুলির মাধ্যমে তিনি দলিত সমাজের সমস্যাগুলি ও লিঙ্গ সমতার উপর বিশেষ জোর দেন। পুরুষের সাথে সমান দক্ষতায় সমান ক্ষমতা অর্জন করার উপরেই তিনি গুরুত্ব দেন। নারীর সম্পত্তির অধিকার ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে তাঁর অনলস প্রয়াস বিশ্বের সনামধন্য নারীবাদীদেরও উৎসাহিত করে। নেশা বা মাদক দ্রব্য গ্রহণের বিপক্ষে বম্বে বিধান সভায় তিনি বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন যে মনোবিজ্ঞানের মতে নেশাই পারিবারিক কলহের অন্যতম কারণ। এতে নারী পুরুষের আভ্যন্তরীণ সখ্যতা ও সহনশীলতা ধ্বংস হয়ে যায়। তিনি উল্লেখ করেন যে, নারীদের এমন পোশাক পরা সমীচীন নয় যা তাঁর নারী সত্ত্বাকে অপমানিত করে।
খসড়া সংবিধানে তিনি এমন কিছু প্রস্তাব রাখেন যা নারীর কল্যাণ ও সামাজিক অধিকার সুনিশ্চিত করবে। সংসদে তিনি মেটারনিটি বেনিফিট বিল ও নারীর সম্পত্তির অধিকারের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে হিন্দু কোড বিল উপস্থাপন করেন। জহরলাল নেহেরু সহ অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাদের কাছ থেকে এই বিল প্রবল বাঁধার সম্মুখীন হয়। নারীদের অধিকার আদায়ে ভারতীয় নেতৃবৃন্দের এমন অনীহা দেখে তিনি ব্যথিত হন এবং মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করেন। শুধু মাত্র নারীদের ক্ষমতায়নের জন্য এমন আত্তত্যাগ ইতিহাসের এক বিরল বিরলতম ঘটনা।
জহরলাল নেহেরুর নেতৃত্বে তদারকি সরকার হিন্দু কোড বিল স্বীকার না করলেও ভারতের প্রথম আইন মন্ত্রী ও ভারতীয় সংবিধানের রচয়িতা হিসেবে তিনি নারীর অধিকারকে সাংবিধানিক হিসেবে কার্যকর করেন তোলেন। মনুস্মৃতিতে যেভাবে নারীকে দাসী, বাদী, নির্বোধ হিসেবে অবজ্ঞা করা হয়েছিল, বিদ্যা, শিক্ষা, অস্ত্র ধারণ ও সম্পত্তি থেকে বহিষ্কৃত করা হয়েছিল সংবিধানের রূপকার হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে মূলত মনুর বিধানকে একেবারে অকেজো করে দিলেন। নারীদের পূর্ণ মানবী হয়ে ওঠার জন্য তিনি সংবিধানের নানা অধ্যায় রচনা ও নিজে আইন মন্ত্রী হিসেবে সেই অধ্যায় গুলিকে মান্যতা দিয়ে নারীর অধিকারকে শুধু প্রাসঙ্গিক নয় ভারতীয় নারীকে বিশ্ব মানবী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে তুললেন।
নারীদের পর্যাপ্ত ভাগীদারীর জন্য সংবিধানের মধ্যে যে যে ধারাগুলি তিনি সংযোজিত করেছিলেন তার কিছুটা এখানে সংযোজিত হলঃ
অধ্যায় ১৪ ঃ সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সুযোগের সমানাধিকার।
অধ্যায় ১৫ ঃ লিঙ্গ বৈষম্যের উপর নিষেধাজ্ঞা।
অধ্যায় ১৫(৩) ঃ নারীদের উপর ভেদবাবের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা।
অধ্যায় ৩৯ ঃ জীবিকা নির্বাহের সমান অধিকা ও সমান কাজের সমান বেতন।
অধ্যায় ১৪ ঃ কার্যক্ষেত্রে মানবীক পরিবেশ ও মাতৃত্বকালীন ছুটি।
অধ্যায় ২৪(৩ডি), (৩টি) এবং (৩ আর) ঃ পঞ্চায়েতি রাজ ব্যবস্থায় মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষণ।
নারীদের এবং দুর্বলতর সমাজের স্বাধিকারের এই অদম্য লড়াইতে তিনি ছিলে দৃঢ় চিত্ত, দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সম্ভবত একলব্যের ভুলের কাহিনী থেকে শিক্ষা নিয়েছিলেন তিনি। তাই ছিলেন সদা সতর্ক এবং অক্লান্ত। একক ভাবেই ভেদ করেছিলেন মনুবাদীদের চক্রব্যূহ। লাঞ্ছিত, বঞ্চিত ও নিপীড়িতদের সার্বিক উত্থানের সমস্ত সম্ভাবনা নিশ্চিত করেছিলেন সংবিধানের বিভিন্ন অধ্যায়ে। ভোগবাদী অর্থনীতির ফাঁদে পড়ে আজ সমস্ত পৃথিবীর মানুষ বিকল্প কল্যাণকারী ব্যবস্থার সন্ধান শুরু করেছে আর প্রবলভাবে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠছেন বাবা সাহেব এবং তার ভাগীদারী অর্থনৈতিক বিধান। কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির ম্যান অব দ্য মিলেনিয়াম খেতাব, অক্সফোরড ইউনিভার্সিটির ১০০০ বছরের শ্রেষ্ঠ মনিষী ও সিএন,আইবিএন আয়োজিত গ্রেটেস্ট ইন্ডিয়ান খেতাব তার ক্রমবর্ধমান গ্রহণযোগ্যতা প্রমানিত হয়েছে। আমরা আরো বেশি সংবদ্ধ হলে তার প্রদর্শিত পথেই ভারত তথা পৃথিবীর সার্বিক কল্যাণ সূচীত হবে।
জয় ভীম, জয় ভারত।

রক্ষাকবচ -১, SC/ST prevention of Atrocities Act. 1989

রক্ষাকবচ -১, SC/ST prevention of Atrocities Act. 1989

ভারতীয়  সংবিধানের প্রস্তাবনায় লেখা হয়েছেঃ
WE, THE PEOPLE OF INDIA, having solemnly resolved to constitute India into a SOVEREIGN SOCIALIST SECULAR DEMOCRATIC REPUBLIC and to secure to all its citizens:
JUSTICE, social, economic and political;
LIBERTY, of thought, expression, belief, faith and worship; 
EQUALITY of status and of opportunity;
and to promote among them all
FRATERNITY assuring the dignity of the individual and the unity and integrity of the Nation;
IN OUR CONSTITUENT ASSEMBLY this twenty-sixth day of November, 1949, DO HEREBY ADOPT, ENACT AND GIVE TO OURSELVES THIS CONSTITUTION.

ভারতের সংবিধানে সমস্ত মানুষকে সমান মর্যাদা দানের কথা উল্লেখ করলেও সমাজ ব্যবস্থায় রয়েগেছে জাতপাতের বিভেদ। তথাকথিত স্বাধীনতার ৭১ বছর পেরিয়ে এসেও ভারতের জাতিগতবৈষম্যের প্রভাব এতটুকুও কমেনি। এখনো এদেশের ভদ্রলোক নাগরিকেরা বঞ্চিত মানুষদের পশুরথেকেও খারাপ নজরে দেখে। এই মানসিকতা আরো প্রকট হয়ে দেখা দেয় জাতপাতের  প্রশ্নে এইজাতপাতের ধারনা ভারতের নাগরিক সমাজের মধ্যে এত প্রবল যে মানব জাতি এখানে ৬৭৪৮টিজাতিতে বিভক্ত হয়ে পড়েছে (Anthropological Survey of India, Oxford University Press, 1998) এবং এই বিভাজনের পরতে পরতে রয়েছে দুর্ভেদ্য বিভেদ  ঘৃণার বেড়াজাল। এই বিভেদ আবার ধর্মীয়রসায়নে জারিত হয়ে ভারতের মানুষের মজ্জায় মজ্জায় গিয়ে একটি স্থায়ী রূপ ধারন করেছে এবংজন্মান্তরের সাথে প্রথিত হয়ে গেছে।



বাবা সাহেব ডঃ বিআর আম্বেদকর ভারতীয় সংবিধানের মধ্যে জাতপাত বিলুপ্তির জন্য  নানা অবকাশরাখলেও মানুষের মন থেকে জাতের বৈষম্য ঘোচে নি। মেটানো যায় নি অস্পৃশ্যতার গ্লানি। ভারতসরকারকে তাই  Untouchability (Offences) Act 1955  প্রয়োগ করে জাতপাত এবং অস্পৃশ্যতারঘৃণাকে নিয়ন্ত্রিত করতে হয়। ১৯৭৬ সালে এই আইন নিপীড়িত নিষ্পেষিত মানুষগুলিকে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সাথে যুক্ত করে এই আইনকে Protection of Civil Rights Act.  রূপান্তরিত করাহয়।


ভারতীয় সংবিধানের তৃতীয় অধ্যায়ে মৌলিক অধিকারের কথা বলা হয়েছে এবং জাতপাত ধ্বংস করারকথা উল্লেখ রা হয়েছে। সংবিধানের ১৪ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে ভারতের প্রতিটি নাগরিক আইনেরচোখে সমান   বর্ণধর্ম জাতজাতিজন্মস্থানলিঙ্গ বৈষম্য বা ভেদাভেদ সংবিধানে নিষেধ করাহয়েছে। অনুচ্ছেদ ১৭তে কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়েছে অস্পৃশ্যতা। তবুও তথাকথিত উচ্চবর্ণের দ্বারাএসসি/এসটি মানুষেরা চরম ভাবে নির্যাতিত হয়েছে। উচ্চ বর্ণের মানুষেরা নিজেদের নিয়ন্ত্রিত মিলিটারীবাহিনী তৈরি করে সংগঠিত ভাবে জল-জঙ্গল-জমির উপর দখলদারী করেছে। এসসি /এসটিদেরঘরবাড়ী জ্বালিয়ে দিয়েছে। নির্বিচারে কেড়ে নিয়েছে তাঁদের ভিটে মাটি। নারীদের ইজ্জৎ লুটেছে,ল্যাংটো করে ঘোরানো হয়েছে এবং খুন করে গাছে টাঙ্গিয়ে দিয়েছে নরনারীর লাশ। রাস্তা কেটেপানীয়জল বন্ধ করে এমনকি হাটবাজার বন্ধ করে চলেছে সামাজিক বয়কট।  এই ধরণের পাশবিকঅত্যাচারের শিকার হয়েছিলেন ফুলন দেবী। যাকে রাজপুত বা ঠাকুর সমাজের গুন্ডা বাহিনী ধর্ষণ করে উলঙ্গ ভাবে  সমগ্র গ্রাম ঘুরিয়েছিল। তাঁদের অত্যাচারের ফুলন গ্রাম ছাড়তে বাধ্য হন এবং প্রতিশোধ নেবার জন্য গড়ে তোলেন নিজস্ব বাহিনী।

এসসি/এসটিদের উপর যে নির্মম অত্যাচার চলত তা সরাসরি প্রত্যক্ষ করে সাইমন কমিশন। ১৯২৮সালের ২৯শে মে বাবা সাহেব আম্বেদকর বহিষ্কৃত হিতকারিণী সভার পক্ষ থেকে এসসি এবং এসটিদেরউপর সংগঠিত নানা অত্যাচারের ঘটনাকে উল্লেখ করে  সাইমন কমিশনকে একটি প্রতিবেদন পেশকরেন।

ব্রিটিশের কাছ থেকে শাসন ক্ষমতা হস্তান্তরের পরে সারা ভারত জুড়ে এই অত্যাচার আরো বেড়ে যায়।ইমানুয়েল শেখরণ নামে তামিলনাডুর একজন শিক্ষিত দলিত নেতা অস্পৃশ্যতা সম্পর্কিত কেসগুলিনিয়ে হাইকোর্টে লড়াই শুরু করলে তাকে হত্যা করা হয়। এই হত্যার প্রতিবাদে ১৯৫৭ সালেতামিলনাডুর রামানাথপুরমে শুরু হয়ে যায় দাঙ্গা। ১৯৬৮ সালে তামিলনাডুর কিলাভেনমানিতেগণহত্যার শিকার হয় ৪২জন দলিত। ১৯৬৯ সালে অন্ধ্রপ্রদেশের  কাঞ্চিকাচেরলার   দলিত নেতাকোটেসুকে হত্যা করা হয়। ১৯৭৮ সালে অন্ধ্রপ্রদেশের ইন্দ্রভেলিতে  জমি নিয়ে বিবাদের ফলে ১০জনআদিবাসীকে হত্যা করে ব্রাহ্মন্যবাদিরা।                       

১৯৭৯ সালে বিহারের বেলচি এবং ১৯৮০ সালে পিপরাতে গণহত্যার শিকার হয় এসসিরা।  ওই বছরেউত্তর প্রদেশের এক দলিত ঘোড়ার পিঠে চড়ে বরযাত্রী নিয়ে যাবার অপরাধে খুন হয়ে যায়।  ১৯৮৫সালে বিহারের শিবগঞ্জ জেলার বানঝিতে পুলিশের গুলিতে মারা যায় ১৫জন আদিবাসী।

এই সব অত্যাচার এবং হত্যার প্রতিবাদে দলিত নেতা এবং এমপিরা কংগ্রেস সরকারের উপর প্রবলচাপ সৃষ্টি করেন। ১৯৮৭ সালের ১৫ই আগস্টের ভাষণে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী এসসি/এসটিদের উপর নির্যাতন এবং নিপীড়ন বন্ধ করার জন্যে একটি কঠোর আইন তৈরি করবেন বলেঘোষণা করেন। (Wikipedia, Scheduled Caste and Scheduled Tribe (Prevention of Atrocities) Act, 1989. )


এসসি এবং এসটিদের উপর নিপীড়ন নিয়ন্ত্রণ আইন

No. 33 OF 1989   [11th September, 1989.]


আইনটির মধ্যে ৫টি অধ্যায় এবং ২৩টি ধারা রয়েছে। আইনটিতে ভারতীয় সংবিধানের ১৭ অনুচ্ছেদেঅস্পৃশ্যতাঅত্যাচারজাতের নামে অপমান এবং ঘৃণা নিয়ন্ত্রণের জন্য যে অধ্যাদেশ রয়েছে তারঅধীনে এসসি এসটিদের আর্থ-সামাজিকরাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক অধিকারকে   মৌলিক অধিকারহিসেবে মান্যতা দেওয়া হয়েছে।              


এই আইনটি ভারতের সমস্ত এসসি এবং এসটিদের উপর নিপীড়ন নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ভারতীয়সংসদ দ্বারা  ১১ই সেপ্টেম্বর ১৯৮৯ সালে পাশ করা হয়েছে এবং ভারতের রাষ্ট্রপতি সই করেসরকারী গেজেটে নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে।  ১৯৯০ সালের ৩০শে জানুয়ারী থেকে এই আইনসমগ্র দেশে কার্যকরী করা হয়।

এই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে যেঃ  (আইনটিকে Scheduled Castes and the Scheduled Tribes (Prevention of Atrocities) Act, 1989 হিসেবে গণ্য করা হবে।


(এই আইন জম্মু-কাশ্মীর ছাড়া ভারতের সকল রাজ্য এবং কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলের জন্য কার্যকরীহবে।

(কেন্দ্রীয় সরকারের গেজেটে বিবৃতি দিয়ে এই আইন বলবত করা হবে।


২। (এই আইনে নিপীড়নের সংজ্ঞাকে সেকশন  ধারার অধীনে একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলেগণ্য করা হয়েছে।


৩। দ্বিতীয় অধ্যায়ে রয়েছে নৃশংসতা জনিত অসন্তোষ এবং তার শাস্তি বিধান।

এখাণে বলা হয়েছে যেকোন ব্যক্তি সে যদি এসসি বা এসটি সমাজের কেউ না হয়তবে সে যদি

 ()  দলিত সমাজের কোন ব্যক্তিকে অখাদ্য খেতে বাধ্য করে।

(আঘাত করে,  জাতপাত তুলে ব্যঙ্গ করেবাডিরপাশে নোংরা আবর্জনাবিষ্ঠা বা হানিকারক কোনপদার্থ জমা করে,

(জোর করে কাপড় খুলে নেয়বিবস্ত্র করে লোকালয়ে ঘোরাতে বাধ্য করেমুখে চুনকালি লাগায় বাকোন ধরণের অমানবিক আচরণ করে যা অমর্যাদাকর

(অন্যায় ভাবে চাষের জমিঘরবাড়িতার আওতায় থাকা কোন সম্পত্তি দখল করে নেয়,

(এসসি এবং এসটির দখলে থাকা কোন জঙ্গলজলাভূমিবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়,

(দলিত সমাজের কোন সরকারী চাকরীজীবীকে যদি জোর করে ভিখারীকৃতদাস বানানোর চেষ্টাকরা হয়

(দলিত সমাজের কারুর বিরুদ্ধে যদি মিথ্যে বিদ্বেষপূর্ণহয়রানীকর   প্রাতিষ্ঠানিক ষড়যন্ত্র করাহয়

(দলিত সমাজের চাকরিজীবীদের বিরুদ্ধে যদি কোন মিথ্যে অসার গুজব রটানো হয় যা ওই ব্যক্তিরআইনি  অধিকারকে ক্ষুন্ন করে

(১১দলিত সমাজের কোন নারীকে আঘাত করাতার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা বা তাকে যৌন নির্যাতনকরাতার সম্মানহানী করা,

(১৩দলিত সমাজ যেখান থেকে পানীয় জল সংগ্রহ করে তা নোংরা করাবন্ধ করে দেওয়া,

(১৫দলিত সমাজের মানুষকে ঘরবাড়িজমি জায়গা থেকে উচ্ছেদ করে তাকে বিতাড়িত করা এইসবই চরম শাস্তিযোগ্য অপরাধ।


বিশেষ আদালতঃ

দ্রুত শুনানি এবং বিচারের জন্য এই আইনে একটি বিশেষ আদালতের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। রুল ১৩(১)এ বলা হয়েছে যে বিচারক এই কেসগুলিকে অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিবেচনা করে এই কেসের দ্রুত রায় দেবেন।  এই সমস্ত অপরাধগুলিকেই Non bell able ধারায় নিতে হবে  এই আইনে  ন্যুনতম মাস প্রয়োজনে  বছরের জেলের বিধান দেওয়া হয়েছে। হত্যা এবং সম্পদ লুন্ঠনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।                                   

তদন্ত ব্যবস্থাঃ

রুল ৭(১) অনুযায়ী SC/ST Atrocities Act. 1989 এর তদন্ত একজন ডেপুটি সুপারিন্টেনডেন্ট অফ পুলিশ (ডিএসপি) এর  নিচে কোন অফিসারকে দিয়ে করা যাবে না।

ক্ষতিপূরণঃ

দাঙ্গা, অগ্নিসংযোগ বা নির্যাতনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এসসি এসটি সমাজের মানুষেরা দারুন ভাবে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। তাঁদের পুনর্বাসন এবং নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য এই আইনে রাজ্য সরকারকে যথোপযুক্ত আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেবার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।           

সদিচ্ছার অভাবঃ

SC/ST Atrocities Act. 1989 এর মধ্যে দলিত মানুষদের সমস্ত সুযোগ দেওয়া সত্ত্বেও রাজ্য সরকারগুলির এই আইন প্রয়োগ করার ব্যাপারে সদিচ্ছার অভাব এবং অনীহা রয়েছে। সমস্ত রাজ্যে নামমাত্র বিশেষ আদালত গঠন করলেও সাধারণ মানুষ  এই আইন সম্পর্কে একেবারে অজ্ঞ রয়েগেছে। সরকারী প্রচার মাধ্যমেও এই আইন সম্পর্কে দলিত মানুষদের সচেতনতা বাড়ানোর কোন ব্যবস্থা করা হয় নি। দলিত মানুষ এই আদালতের সুযোগ কিমি. নিলেও ৮০% কেস পেন্ডিং হয়ে পড়ে আছে। একটি ক্ষেত্র সমীক্ষায় দেখা গেছে যে এই বিশেষ আদালতের জন্য  ৭৭০০০ দলিত মানুষের জন্য একজন আইপিএস অফিসার নিযুক্ত করা হয়েছে।     

দেশে দলিতদের বিরুদ্ধে সংগঠিত অত্যাচার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য দেশে এতবড় একটি রক্ষা কবচ থাকা সত্ত্বেও সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় ক্রাইম ব্যুরোর রিপোর্ট অন্য কথা বলছে।       

২০১১ এর সরকারী পরিসংখ্যান  বলছে-

অপরাধের ক্ষেত্রে দলিত হওয়ার কারণে,

প্রতি ১৮ মিনিটে একজন দলিত হেনস্থার শিকার হয়।

প্রতি দিন  জন দলিত নারী ধর্ষিতা হয়।

প্রতি দিন   জন দলিতকে হত্যা করা হয়।

প্রতি দিন  টি দলিত বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

প্রতি দিন কম বেশী একজন দলিতকে অপহরণ করা হয়। [সপ্তাহে  টি]

গ্রামের অবস্থা আরো খারাপঃ

গ্রাম্য এলাকায় প্রতি ৩টি বিদ্যালয়ের মধ্যে অন্তত পক্ষে একটি বিদ্যালয়ে দলিতদের জন্য আলাদাকরে বসার ব্যবস্থা থাকে।

২৭. শতাংশ গ্রামের দলিতদের থানায় ঢুকতে দেওয়া হয় না।

৩টি দলিত বাড়ির মধ্যে অন্তত ১টি বাড়িতে স্বাস্থ্য কর্মীরা যেতে অস্বীকার করেন।

অন্তত অর্ধেক গ্রামে একই জায়গা থেকে দলিতদের জল নিতে দেওয়া হয় না।

৭০ শতাংশ গ্রামে দলিতদের সাথে উঁচু জাতের মানুষেরা এক সাথে খেতে অস্বীকার করেন।

দলিত মেয়েদের উপরে নির্যাতনঃ 

)প্রতিদিন  জন দলিত মেয়ে ধর্ষিতা হয়।

গ্রামের অন্তত ৭০ শতাংশ দলিত মেয়ে নিরক্ষর।

হাজারে হাজারে দলিত মেয়ে তাঁদের বয়ঃসন্ধি হওয়ার আগেই পতিতালয়ে পাচার হয়ে যায়। এবংদেশের পতিতালয়ের অন্তত ৯০ শতাংশই দলিত।

দেশে যত ধর্ষণ হয় তাঁর সিংহ ভাগই দলিত মহিলা। বেশিরভাগই তাঁদের ভূ-স্বামী অর্থাৎ যাদেরজমিতে খেটে খায় তাঁদের দ্বারাই ধর্ষিতা হয়। আর এই ধর্ষণের মাত্র  শতাংশ থানায় রিপোর্ট হয়যারভেতরে ৩০ শতাংশ রিপোর্ট পুলিশ মানতে অস্বীকার করে কারণ উঁচু জাতের সামাজিক প্রতিপত্তির কথাভেবে। [তথ্য সুত্রঃ ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক নিউজ। ন্যাশন্যাল জিওগ্রাফিক  আশঙ্কাও করেছে যেঅনেকেই সংখ্যার এই পরি সংখ্যান মানতে চাইবেন নাকারণ এতটাই ভয়ংকর পরিসংখ্যান!(“No one believes these numbers are anywhere close to the reality of crimes committed against Dalits. Because the police, village councils, and government officials often support the caste system…”)]

দলিতদের অর্থনৈতিক অবস্থা  সামাজিক অবস্থাঃ

দেশে দলিত সম্প্রদায়মুসলিম সম্প্রদায়ের থেকেও দরিদ্র২০১১ সালের পরিসংখ্যানে এমনটাইবলছে সরকারের রিপোর্ট। গ্রামের ৪৪. শতাংশ ST এবং ৩৩. শতাংশ SC দরিদ্র সীমার নীচে বসবাসকরেযেখানে মুসলিমদের শতাংশ হল ৩০. শতাংশ। শহরে ST ২৭. এবং SC ২১. শতাংশদরিদ্রসীমার নীচে বসবাস করে। যেখানে মুসলিম ২৬. শতাংশ। [সুত্রঃ DNA INDIA]

সবচেয়ে খারাপ অবস্থা কর্ণাটকেসেখানে ৯৩ শতাংশ দলিত পরিবার দারিদ্র সীমার নীচে বসবাসকরে!!! [সুত্রঃ টাইমস অফ ইন্ডিয়া২০১৩]

প্রায় অর্ধেকের বেশী(৫৪%) দলিত শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে।

১০০০ এর ভেতর ৮৩ জন দলিত শিশু জন্মের একবছরের মধ্যে মারা যায়।

এতো সব কিছুর পরেও যারা দাবী করেন যেএখন তো অবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে। তাঁদের জন্যগত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান দিইঃ

ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো (NCRB) – তথ্য অনুযায়ীঃ

২০০৯হত্যা-৬২৪ধর্ষণ-,৩৪৬মোট অপরাধ-৩৩,৫৯৪

২০১০হত্যা-৫৭০ ; ধর্ষণ-,৩১৯ ; মোট অপরাধ-৩২,৭১২

২০১১হত্যা-৬৭৩ ; ধর্ষণ-,৫৫৭ ; মোট অপরাধ-৩৩,৭১৯

২০১২হত্যা-৬৫১ ; ধর্ষণ-,৫৭৬ ; মোট অপরাধ-৩৩,৬৫৫

২০১৩হত্যা-৬৭৬ ; ধর্ষণ-,০৭৩ ; মোট অপরাধ-৩৯,৪০৮

২০১৪হত্যা- ; ধর্ষণ-,২৩৩ ; মোট অপরাধ-৪৭,০৬৪

সম্প্রতি ঘটনা এবং দলিত আইনের প্রয়োগঃ

SC ST Atrocities Act. 1989 এর আওতায় যে ২০% কেস হয় তার যে কি দশা হয় তা রোহিত ভেমুলার প্রাতিষ্ঠানিক হত্যার কেস থেকে প্রমানিত। এই কেসের অন্যতম আসামী ছিলেন তৎকালীন মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানী, বাঙ্গারু দত্তাত্রেয় এবং হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আপ্পা রাও। সরকার প্রথমেই এই কেসকে দুর্বল করে দেবার জন্য রোহিত ভেমুলার জাতি সূচক শংসাপত্রকে জাল প্রমান করার চেষ্টা শুরু করে। তদন্তের পর ম্যাজিস্ট্রেট এই শংসাপত্রকে সঠিক বললেও পরে তা আবার ফিরিয়ে নেওয়া হয়। ঝুলে থাকে রোহিতের কেস।
উত্তর প্রদেশের সাহারানপুরে দলিত ঘর জ্বালিয়ে দিয়ে মানুষ হত্যা করে রান প্রতাপের জন্মদিন পালন করে রাজপুত সমাজ। এতে ৭০জনেরো বেশী রাজপুতদের উপরে এই দলিত আইন অনুসারে কেস করা হয়। এই কেসের পরে পুলিশ আসামীদের ছেড়ে দিলেও ভীম আর্মির চন্দ্রশেখর আজাদ সহ একাধিক দলিতের বিরুদ্ধে জাতীয় নিরাপত্তা আইন অনুসারে কেস করে এবং বিজেপির যোগী সরকার অত্যাচারী রাজপুতদের বিরুদ্ধে সমস্ত কেস তুলে নেয়।

 ২০১৮ সালের ১লা জানুয়ারী ছিল ভীমা কোরেগাঁওয়ের শৌর্য দিবসের ২০০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠান। এইঅনুষ্ঠানকে বানচাল করে দেবার জন্য একেবারে অতর্কিতে সন্ত্রাসবাদী কায়দায়  আক্রমণ করে "ব্রাহ্মণসভাএবং আরএসএস। তারা আগুন জ্বালিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে এবং নিরীহনিরস্ত্র নারীপুরুষেরউপরে লাঠিরডপাথর চালিয়ে রক্তাক্ত করে দেয়। এই ঘটনায় প্রতক্ষ্য সংযোগ থাকার জন্য মিলিন্দ একবোটে এবং প্রধানমন্ত্রী মোদির গুরুজী সাম্বাজী ভীড়ের বিরুদ্ধে   SC ST (Prevention of Atrocities) Act. 1989  অনুসারে কেস হয়। এই কেসে মিলন্দ একবোটে এরেস্ট হলেও এখনো সাম্বাজী ভিড়েকে এরেস্ট করা হয় নি।

রক্ষা কবচ ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রঃ     ঠিক এই সময়  SLP (Crl.) No. 5661 of 2017, Subhash Kashinath Mahajan v. State of Maharashtra. Vide its order dated 20.11.2017, একটি ৮৯ পাতার নির্দেশিকা জারি করে  SC ST (Prevention of Atrocities) Act. 1989 কে দুর্বল এবং কার্যত অকেজো করে দেওয়া হল।   (চলবে, এর পরে সুপ্রিমকোর্টের ৮৯ পাতার সংক্ষিপ্ত নির্দেশিকা)  

বীরভূম জেলার সিউড়িতে স্বাধীনতা সংগ্রামী বাজাল এর নামে মেলা

 বীরভূম জেলার সিউড়ির বড়বাগানের আব্দারপুর ফুটবল ময়দানে আয়োজিত হতে চলেছে ‘বীরবান্টা বাজাল মেলা-২০১৯’। ১৯শে জানুয়ারি এই মেলা আয়োজিত...