Monday, 21 January 2019
Wednesday, 16 January 2019
অনেক অধিকার মেয়েদের জন্য সংবিধানে লিখে গেছেন বাবাসাহেব আম্বেদকর
To Show The video click below link
১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট ভারত স্বাধীন হলে ডঃ আম্বেদকর আইনমন্ত্রী নিযুক্ত হন। মেয়েদের অধিকার দেওয়ার জন্য তিনি সংসদে একটি বিল এনেছিলেন, সেটি হল- ''হিন্দু কোড বিল''। কিন্তু উচ্চবর্ণের সদস্যদের বিরোধিতার জন্য এই বিল পাশ হয়নি। এর প্রতিবাদে তিনি মন্ত্রীসভা থেকে পদত্যাগ করেন (11 অক্টোবর, 1951)।
এই বিলে যা যা ছিল তার কয়েকটি হলো-.
🔹(1) বাল্যবিবাহ রদ :- নারীশিক্ষার স্বার্থে মেয়েদের বিয়ের বয়স সর্বনিম্ন ষোলো বছর করা।
🔹(2) বহুবিবাহ প্রথার বিলোপ :- কোনো কারণ ছাড়া ইচ্ছামতো এক স্ত্রী থাকতে দ্বিতীয়বার বিয়ে করা যাবে না।
🔹(3) বিবাহবিচ্ছেদ আইন :- স্বামী বিনা কারণে ইচ্ছামতো স্ত্রীকে ত্যাগ করতে পারবে না। আবার স্ত্রীও অত্যাচারী বা ব্যভিচারী স্বামীকে পরিত্যাগ করতে পারবে।
🔹(4) মেয়েদের পিতার সম্পত্তিতে অধিকার :- ডঃ আম্বেদকর ছেলেদের মতো মেয়েদেরও পিতৃসম্পত্তিতে সমান অধিকারের ব্যবস্থা করেন এই বিলে।
🔹(5) বিধবা নারীর সম্পত্তি ও দত্তক নেবার অধিকার :-মৃত স্বামীর সম্পত্তিতে স্ত্রীর অধিকার দেওয়া হয় এই বিলে এবং ইচ্ছামতো দত্তকও নিতে পারবে।
▪ডঃ আম্বেদকরের এই চিন্তাধারার মধ্যে সব নারীদের মুক্তির বার্তা আছে। কিন্তু হিন্দুত্ববাদী পত্রপত্রিকায় এই বিলের বিরূপ সমালোচনায় বাবাসাহেব আম্বেদকরকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করা হয়। আম্বেদকরের বিরুদ্ধে গোঁড়া হিন্দুরা ভীষণ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। অগত্যা প্রধানমন্ত্রী নেহরুর নির্দেশেই বিলটিকে প্রত্যাহার করা হয়।
🔴পরবর্তীকালে সংবিধান লেখার সময় মেয়েদের জন্য তিনি সাংবিধানিকভাবে এইসব আইন লিপিবদ্ধ করে গেছেন। তার মধ্যে কয়েকটি হলো -
🔹(আর্টিকেল 14) -সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সুযোগের সমান অধিকার
🔹(আর্টিকেল 15) - লিঙ্গ বৈষম্যের উপর নিষেধাজ্ঞা।
🔹(আর্টিকেল 15(iii))- নারীদের উপর ভেদভাবের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া ।
🔹(আর্টিকেল 39) - জীবিকা নির্বাহের সমান অধিকার এবং সমান কজের সমান বেতন।
🔹(আর্টিকেল 14)- কাজের জায়গায় মানবিক পরিবেশ এবং মাতৃত্বকালীন ছুটি।
🔹আর্টিকেল 24 iii(D) , iii(T) , iii(R) - পঞ্চায়েত রাজ ব্যবস্থায় মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষণ ।
▫এছাড়া আরও অনেক অধিকার মেয়েদের জন্য সংবিধানে লিখে গেছেন বাবাসাহেব আম্বেদকর। আজ মেয়েরা সেসব অধিকার ভোগ করছে। কিন্তু তারা জানে না তাদের এই অধিকার দানের মূল দাতা বাবাসাহেব আম্বেদকর l
বাজাল সরেন মুক্তি সংগ্রামের প্রতীক

মলিন্দ হাঁসদা। বাঁকুড়া। পব।
কার হুকুমে বাজাল কার কথাতে
রুপু সিং তাম্বলিকে কেটে দিলে?
সিদু'র হুকুমে মা গো কানু'র কথাতে
রুপু সিং তাম্বলিকে কেটে দিলাম।
হাতেতে শিকল বাজাল পায়েতে বেড়ি
তুমি যাচ্ছ বাজাল সিউড়ি থানাতে।
হাতে তিরয়ো মাগো পায়ে নুপুর
আমি যাচ্ছি মাগো সিউড়ি মেলা দেখতে।
সাঁওতালি ভাষার মূল গান---- তকয় হুকুম তে বাজাল তকয় বলেতে------ ভাবানুবাদ। উপরের গানটি বহুল প্রচারিত, প্রচলিত। এই গান আজও সাঁওতাল সমাজ সংস্কৃতিতে প্রবাহমান।
বাজাল সরেন।ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন প্রচার হীন
বীর সৈনিক। বর্তমান ঝাড়খণ্ডের গোড্ডা জেলার সুন্দর পাহাড়ি ঢোকার মুখে বারি বাস স্ট্যান্ড গ্রামে বাড়ি । সাঁওতাল বিদ্রোহের আগে। যে সময় সিধু কানু অত্যাচার, শোষণ থেকে মুক্তি পেতে জনমত তৈরী করতে,হুলের প্রস্তুতি নিতে বিভিন্ন জায়গায় সভা করছেন।সেই সমস্ত সভায় যোগদান করে বাজাল মুক্তির আশা, স্বাদ অনুভব করেন।
সেই সমস্ত অনুপ্রেরণা থেকেই এলাকার সুদখোর, রক্ত শোষক,নারীবাজ ,অত্যাচারী রুপু সিং তাম্বলি মহাজনকে
তরোয়ালের আঘাতে শরীর থেকে মাথা সরিয়ে দিয়ে ছিল। আর হ্যাঁ, বাজাল বাঁশি বাজাতে পারতেন। পরে পুলিশের হাতে ধরা পড়লে, তাঁকে সিউড়ি জেলে নিয়ে যাওয়ার সময়ের এই গান।বাজাল সরেনকে অমর করে রেখেছে।
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন সাঁওতালদের মধ্যে যারা দেশের জন্য প্রাণ উৎসর্গ করেছেন, বাজাল সোরেনের নাম অবশ্যই প্রথম সারিতে স্থান পাবে। সাঁওতাল হুলের ইতিহাস কিছু লেখা ,কিছু জানা যায়। কিন্তু বাজাল সরেন কে নিয়ে কিছু লিখতে অপমান বোধ করেন সেই সময় কার লেখককূল।ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন সাঁওতালদের অবদান উল্লেখ করার মতো। কিন্তু ইংরেজ
দের পা চাটা দেশি বিদেশি ঐতিহাসিক রা সাঁওতাল বিদ্রোহীদের সঠিক ইতিহাস লিখতে কুণ্ঠা বোধ করেছেন।অপমান বোধ করেছেন। আর এই জন্যই বাজাল সোরেনের মতো কত যে বীর বান্টা ইতিহাসের আড়ালে চলে গেছেন, তার ইতিহাস যদি পুনঃরুদ্ধার হয়
তাহলে বদলে যেতে পারে দেশের ইতিহাস। আর এই জন্যই বীরভূমের সিউড়ি 'র আব্দারপুর আদিবাসী সু সার গাঁওতা সাঁওতাল দের ইতিহাস সন্ধানে নেমে পড়েছেন।
2019 সালের 19 শে জানুয়ারি। শনিবার। দুপুর বার টা।আব্দারপুর ফুটবল ময়দানে বাজাল সরেন কে নিয়ে এক সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে।।বাজাল সরেন কে পুনরুদ্ধার প্রচেষ্টায় "স্মরণিকা " প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেমিনারে উপস্থিত থাকবেন - তেতরে পত্রিকার সম্পাদক-মহাদেব হাঁসদা, সিলি পত্রিকার সম্পাদক-কলেন্দ্র নাথ মান্ডী, প্রখ্যাত সাঁওতালি সাহিত্যক-সারদা প্রসাদ কিস্কু, সার সাগুন পত্রিকার সম্পাদক-মলিন্দ হাঁসদা, বাংলা দেশের প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী -স্টিফান টুডু, গড্ডা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা-হোলিকা মারান্ডি, উমুল পত্রিকার সম্পাদক-অধ্যাপক ড.বিনয় সরেন, লেখক ড.জলধর কর্মকার, সাইথিয়ার জয়েন্ট বিডিও- বংশীবদন মুরমু, যাদবপুর কেপিপি'র সুপারেন্টেডেন্ট-রমেশ কিস্কু, সমাজ সেবী- ডা:সুরজিৎ সিং হাঁসদা, সমাজ সেবক ডা:শিব শঙ্কর সরেন, সমাজ সেবী-বড় বাস্কে, বাকজুলু পত্রিকার সম্পাদক- শিবু সরেন। বিশিষ্ট লেখক-গোকুল হাঁসদা, বিখ্যাত সাহিত্যক-লক্ষী নারায়ন হাঁসদা, ঝাড়খণ্ডের খ্যাত নামা লেখক-জনজন্তু সরেন।এবং বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও ছাত্রছাত্রী।
কার হুকুমে বাজাল কার কথাতে
রুপু সিং তাম্বলিকে কেটে দিলে?
সিদু'র হুকুমে মা গো কানু'র কথাতে
রুপু সিং তাম্বলিকে কেটে দিলাম।
হাতেতে শিকল বাজাল পায়েতে বেড়ি
তুমি যাচ্ছ বাজাল সিউড়ি থানাতে।
হাতে তিরয়ো মাগো পায়ে নুপুর
আমি যাচ্ছি মাগো সিউড়ি মেলা দেখতে।
সাঁওতালি ভাষার মূল গান---- তকয় হুকুম তে বাজাল তকয় বলেতে------ ভাবানুবাদ। উপরের গানটি বহুল প্রচারিত, প্রচলিত। এই গান আজও সাঁওতাল সমাজ সংস্কৃতিতে প্রবাহমান।
বাজাল সরেন।ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন প্রচার হীন
বীর সৈনিক। বর্তমান ঝাড়খণ্ডের গোড্ডা জেলার সুন্দর পাহাড়ি ঢোকার মুখে বারি বাস স্ট্যান্ড গ্রামে বাড়ি । সাঁওতাল বিদ্রোহের আগে। যে সময় সিধু কানু অত্যাচার, শোষণ থেকে মুক্তি পেতে জনমত তৈরী করতে,হুলের প্রস্তুতি নিতে বিভিন্ন জায়গায় সভা করছেন।সেই সমস্ত সভায় যোগদান করে বাজাল মুক্তির আশা, স্বাদ অনুভব করেন।
সেই সমস্ত অনুপ্রেরণা থেকেই এলাকার সুদখোর, রক্ত শোষক,নারীবাজ ,অত্যাচারী রুপু সিং তাম্বলি মহাজনকে
তরোয়ালের আঘাতে শরীর থেকে মাথা সরিয়ে দিয়ে ছিল। আর হ্যাঁ, বাজাল বাঁশি বাজাতে পারতেন। পরে পুলিশের হাতে ধরা পড়লে, তাঁকে সিউড়ি জেলে নিয়ে যাওয়ার সময়ের এই গান।বাজাল সরেনকে অমর করে রেখেছে।
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন সাঁওতালদের মধ্যে যারা দেশের জন্য প্রাণ উৎসর্গ করেছেন, বাজাল সোরেনের নাম অবশ্যই প্রথম সারিতে স্থান পাবে। সাঁওতাল হুলের ইতিহাস কিছু লেখা ,কিছু জানা যায়। কিন্তু বাজাল সরেন কে নিয়ে কিছু লিখতে অপমান বোধ করেন সেই সময় কার লেখককূল।ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন সাঁওতালদের অবদান উল্লেখ করার মতো। কিন্তু ইংরেজ
দের পা চাটা দেশি বিদেশি ঐতিহাসিক রা সাঁওতাল বিদ্রোহীদের সঠিক ইতিহাস লিখতে কুণ্ঠা বোধ করেছেন।অপমান বোধ করেছেন। আর এই জন্যই বাজাল সোরেনের মতো কত যে বীর বান্টা ইতিহাসের আড়ালে চলে গেছেন, তার ইতিহাস যদি পুনঃরুদ্ধার হয়
তাহলে বদলে যেতে পারে দেশের ইতিহাস। আর এই জন্যই বীরভূমের সিউড়ি 'র আব্দারপুর আদিবাসী সু সার গাঁওতা সাঁওতাল দের ইতিহাস সন্ধানে নেমে পড়েছেন।
2019 সালের 19 শে জানুয়ারি। শনিবার। দুপুর বার টা।আব্দারপুর ফুটবল ময়দানে বাজাল সরেন কে নিয়ে এক সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে।।বাজাল সরেন কে পুনরুদ্ধার প্রচেষ্টায় "স্মরণিকা " প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেমিনারে উপস্থিত থাকবেন - তেতরে পত্রিকার সম্পাদক-মহাদেব হাঁসদা, সিলি পত্রিকার সম্পাদক-কলেন্দ্র নাথ মান্ডী, প্রখ্যাত সাঁওতালি সাহিত্যক-সারদা প্রসাদ কিস্কু, সার সাগুন পত্রিকার সম্পাদক-মলিন্দ হাঁসদা, বাংলা দেশের প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী -স্টিফান টুডু, গড্ডা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা-হোলিকা মারান্ডি, উমুল পত্রিকার সম্পাদক-অধ্যাপক ড.বিনয় সরেন, লেখক ড.জলধর কর্মকার, সাইথিয়ার জয়েন্ট বিডিও- বংশীবদন মুরমু, যাদবপুর কেপিপি'র সুপারেন্টেডেন্ট-রমেশ কিস্কু, সমাজ সেবী- ডা:সুরজিৎ সিং হাঁসদা, সমাজ সেবক ডা:শিব শঙ্কর সরেন, সমাজ সেবী-বড় বাস্কে, বাকজুলু পত্রিকার সম্পাদক- শিবু সরেন। বিশিষ্ট লেখক-গোকুল হাঁসদা, বিখ্যাত সাহিত্যক-লক্ষী নারায়ন হাঁসদা, ঝাড়খণ্ডের খ্যাত নামা লেখক-জনজন্তু সরেন।এবং বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও ছাত্রছাত্রী।

আয়োজন থাকছে-"বীর বান্টা বাজাল মেলা-2019"
তাতে মিলবে সাঁওতালি ফুড প্লাজা। বিকাল থেকে পাতা ও লাগড়ে নৃত্য প্রতিযোগিতা। বসবে সাঁওতালি বই পত্রের দোকান পাট। মেলায় পাওয়া যাবে খাঁডি শাড়ি,লুঙ্গি পাঞ্চি, সান্তালি ড্রেস, তির ধনুক, টাঙ্গি, তরোয়াল,, মাদল টামাক, তিরয়ো বানাম, রেগড়া, লিপুর, ঝুনকা পাইন দোকান।
আয়োজন কমিটির সম্পাদক চন্দ্র মোহন মুরমু জানিয়েছেন-মেলায় মিলবে -বাজু, বাংকি, হাঁসলি, তাগা, মালা ,সুলক, মারাঃ পিঞ্চার, তারা পানকানা,ফিরি দোকান তার সঙ্গে সাঁওতালদের সংসারে ব্যবহৃত সমস্ত সামগ্রী।
মেলা কমিটির সভাপতি- বড় টুডু এক বার্তায় জানান-সারারাত ব্যাপী থাকছে অর্কেস্ট্রা অনুষ্ঠান। সঙ্গীত পরিবেশন করবেন - প্রখ্যাত, বিখ্যাত, নামী দামি সঙ্গীতশিল্পী- কল্পনা হাঁসদা, রথীন কিস্কু, স্টিফান টুডু, কেরানী হেমব্রম, সাগুন কুইলি-ডিগির সরেন।
বাজাল সরেন শুধু শহীদ নন। বাজাল যে জাদুকরী তিরয়ো বাদক। বহু বছর পর। বাজালে আবির্ভাব আবার আব্দারপুর ময়দানে। তাঁর উপস্থিতি অনুভব করতে কাতারে কাতারে, হাজারে হাজারে সাঁওতাল মানুষজন হাজির হবেন বলে অনুমান করা হচ্ছে।
তাতে মিলবে সাঁওতালি ফুড প্লাজা। বিকাল থেকে পাতা ও লাগড়ে নৃত্য প্রতিযোগিতা। বসবে সাঁওতালি বই পত্রের দোকান পাট। মেলায় পাওয়া যাবে খাঁডি শাড়ি,লুঙ্গি পাঞ্চি, সান্তালি ড্রেস, তির ধনুক, টাঙ্গি, তরোয়াল,, মাদল টামাক, তিরয়ো বানাম, রেগড়া, লিপুর, ঝুনকা পাইন দোকান।
আয়োজন কমিটির সম্পাদক চন্দ্র মোহন মুরমু জানিয়েছেন-মেলায় মিলবে -বাজু, বাংকি, হাঁসলি, তাগা, মালা ,সুলক, মারাঃ পিঞ্চার, তারা পানকানা,ফিরি দোকান তার সঙ্গে সাঁওতালদের সংসারে ব্যবহৃত সমস্ত সামগ্রী।
মেলা কমিটির সভাপতি- বড় টুডু এক বার্তায় জানান-সারারাত ব্যাপী থাকছে অর্কেস্ট্রা অনুষ্ঠান। সঙ্গীত পরিবেশন করবেন - প্রখ্যাত, বিখ্যাত, নামী দামি সঙ্গীতশিল্পী- কল্পনা হাঁসদা, রথীন কিস্কু, স্টিফান টুডু, কেরানী হেমব্রম, সাগুন কুইলি-ডিগির সরেন।
বাজাল সরেন শুধু শহীদ নন। বাজাল যে জাদুকরী তিরয়ো বাদক। বহু বছর পর। বাজালে আবির্ভাব আবার আব্দারপুর ময়দানে। তাঁর উপস্থিতি অনুভব করতে কাতারে কাতারে, হাজারে হাজারে সাঁওতাল মানুষজন হাজির হবেন বলে অনুমান করা হচ্ছে।
Tuesday, 15 January 2019
সহজ সরল মানুষগুলির 'টুসু পরব',,, রূপসী বাংলার শ্রেষ্ঠ রঙ্গীণ উৎসব!!

সহজ সরল মানুষগুলির 'টুসু পরব',,, রূপসী বাংলার শ্রেষ্ঠ রঙ্গীণ উৎসব!!
তালতলে দাঁড়ালে টুসু
তালপাতে কি জল টেকে
ধর লক্ষণ মোমের ছাতা
টুসুর অঙ্গে জল পড়ে।’
শীতের আমেজ এখন মানভূমের আকাশে বাতাসে। পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়খণ্ডের ধানবাদ, বোকারো, রাঁচি, পূর্ব সিংভূম এবং জামশেদপুর জুড়ে মানভূমের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল। ‘গীত ও গান মানভূমের প্রাণ। মানভূম তো নয়, যেন গানভূম। এখানে চললেই নাচ, বললেই গান। সাঁওতালি ভাষায় গড়ে উঠেছে প্রবাদ – ‘রৌড় আতে রড়গে সেরেঞ’।’
গাঙ্গেয় বঙ্গের প্রধান উৎসব দুর্গাপুজো যে উদ্বেলতা সৃষ্টি করে, সমগ্র মানভুমে তা অনেকাংশে নিস্তেজ। যে উৎসব এখানে আরও বেশি গুরুত্ব পায়, যে উৎসবে এই ভূখণ্ডের গভীর, বর্ণময় সঙ্গীতাকারে ধরা পড়ে সবচেয়ে বেশি তা হল টুসু পরব।
‘ইস্টিশনের লাল লৈটা হে,/ ধর ছোঁড়াকে কইরব লটপৈটা হে।’
পৌষ মাসে হয় টুসু উৎসব। টুসু উৎসবকে পুরুলিয়ার ‘জাতীয় উৎসব’ও বলা চলে – এত জনপ্রিয় এই উৎসব। এর আর একটি নাম আছে পৌষালী বিজয়া। পৌষে টুসু আর পৌষ সংক্রান্তির দিনে ‘মকর’। ‘...আসছে মকর দুদিন সবুর কর/ তুরা পিঠা-মুড়ির যোগাড় কর...’।
এই পুজোর পুরোহিত নেই, নেই পূজন-মন্ত্র। এই পুজো মূলত মেয়েরাই করে, পূজন-মন্ত্র হল গান। এ ভাষা সহজ, সরল লোকজীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। সুখ-দুঃখ, বাৎসল্যরস, প্রেম-বিরহ, ঈর্ষা-অভি ফুটে ওঠে চাকচিক্যহীন ভাষায়।
মূল আকর্ষণ এক মাস ধরে গাওয়া টুসু গান, সন্ধ্যা নামলেই সমবেত কন্ঠে গায় পূজারিণীরা। এরপর আসে পৌষ সংক্রান্তি। পৌষের শীতল রাতে, পাড়ার মেয়ে-বউরা সুরের মূর্চ্ছনায় জাগিয়ে রাখে রুখামাটির গ্রামগুলোকে। বক্স, লাউড স্পিকারে বাজতে থাকে এসব গান। টুসু গানের কথায় ফুটে ওঠে ছোটনাগপুরের সামাজিক চিত্র, সুখ-দুখের কাহিনী। টুসু জাগরণের রাত বাঁউড়ি নামে পরিচিত।
একটা বিখ্যাত টুসু গানের কথা শুনলেই বোঝা যায় টুসু তাদের ঘরে মেয়ে।
কেমন করে করা হয় এই টুসু পুজো? ধানের তুষ দিয়ে টুসু পাতা হয়। গুঁড়িগোলা জলে গাবানো হয় একটি নতুন সরা। পাঁচটি বা সাতটি সিঁদুরের লম্বা দাগ টানা হয়। কাড়ুলী বাছুরের গোবরের গুলি রাখা হয়। রাখা হয় আকন্দ ও গাঁদা ফুলের মালা। পরিষ্কার ঘরে বা চালায় পিঁড়ির উপর রেখে টুসুকে বন্দনা করা হয়। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর প্রদীপ জ্বালিয়ে, ফুল দিয়ে পুজো করা হয় সরাটিকে। গাওয়া হয় টুসুর গান। টুসু পুজোর সবচেয়ে বর্ণাঢ্য অংশ বিসর্জনের দিন সকালে চোড়ল নিয়ে শোভাযাত্রা।
চোড়ল বা চৌড়োল বা চৌডোল অর্থাত চতুর্দোলা টুসু পুজোর এক অপরিহার্য অঙ্গ। বাঁশের বাখারি বা চেলা কাঠ আর গাছের সরু ডাল দিয়ে তৈরি খাঁচার ওপর রঙিন কাগজ মুড়ে নানা নকশা আর কাগজের ফুলে-মালায় সাজিয়ে তৈরি করা হয় এক চমত্কার চারপায়া রথ।
পৌষ-সংক্রান্তির কয়েক দিন আগের থেকেই চোড়ল বিক্রি শুরু হয়। টাঁড়, ডহি-ডুংরি পেরিয়ে, পায়ের-পাতা-ডোবা ধুলো বাতাসে উড়িয়ে, উঁচু-নিচু আলের পথ ভেঙে লাল-নীল-সবুজ-হলুদ শাড়ি-জামা পরা মেয়েদের চোড়ল মাথায় নিয়ে গান গাইতে গাইতে নদী বা বাঁধের দিকে শোভাযাত্রা এক অনুপম চিত্তহারী দৃশ্য রচনা করে। এক দলের সঙ্গে আরেক দলের দেখা হলে গান আরও উচ্চগ্রামে ওঠে এবং গানের লড়াই শুরু হয়ে যায়। দুই টুসুতে সই পাতানো হয়। আবার কার টুসু কত গুণের তাই নিয়ে বিবাদও হয়। সবই গানে গানে। বিসর্জন ঘাটের পথে শোভাযাত্রা করে গানে গানে এগিয়ে যায় সবাই। ঘরের মেয়েকে বিদায় জানানোর পালা, শোকবিহ্বল হয়ে পড়ে গ্রাম্য নারীরা। চোখের জলে আত্মমর্যাদার প্রতীক নয়ণের মনি টুসুকে বিদায় জানায় ভূম। গানের ভাষাতেই সেই দুঃখ ফুটে ওঠে।
" আমার টুসু ধনে
বিদায় দিব কেমনে
মাসাবধি টুসুধন কে
পুজেছি যতনে।
শাঁখা সাড়ি সিঁদুর দিলাম
আলতা দিলাম চরণে।
মনে দুঃখু হয় বড়
ফিরে যাতে ভবনে
দয়া কইরে আসবে আবার
থাকে যেন মনে
ভুইলনা ভুইলনা টুসু
আসবে আমার সনে।"
চোড়ল সহ টুসুর বিসর্জন এবং মকরস্নান হয় কাছাকাছি নদী বা বাঁধে। বাঁধ হল বড়ো জলাশয়। মেয়েরা শুধুই চোড়ল বিসর্জন দেয়। সরা বা ঘট ঘরে রেখে দেওয়া হয় এক বছর। একে বলা হয় লক্ষ্মী বাঁধা। লক্ষ্মীকে বেঁধে রাখা হয় ঘরে। চোড়ল বিসর্জন না দিয়ে আবার সেটা ভেঙে টুকরোগুলো ভাগাভাগি করে নেয়। কেউ কেউ আবার চোড়ল ঘরে ফিরিয়েও নিয়ে যায়।
বিসর্জনের দিন নদীর পারে বা বাঁধের পাশে মেলা বসে। বাংলা-বিহার সী্তে সুবর্ণরেখার বাংলা-বিহার সী্তে সুবর্ণরেখার তীরে তুলিনে, কাঁসাই নদীর তীরে দেউলঘাটায়, শীলাবতী নদীর উত্সস্থলে, জয়দা, সতীঘাট প্রভৃতি জায়গায় বসে জমজমাট মেলা।
মকর/টুসু পরবের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হল পুলি-পিঠে। নানা রকমের পিঠের মধ্যে সবচেয়ে রসনালোভন হল বাঁকা পিঠা/পুর পিঠা/ গড়গড়্যা পিঠা। বিসর্জনের শেষে বাড়ি ফিরে খাওয়া হবে পিঠে। পিঠে ছাড়াও সচ্ছল মানুষের খাদ্য-তালিকায় থাকবে খাসির মাংস আর খিচুড়ি।
টুসুর গানের মধ্য দিয়ে পুরুলিয়ার রুখা শুখা মানুষগুলির দুঃখ বেদনা যেন আনন্দের ফল্গুধারার মাঝে প্রবাহিত হতে থাকে।
‘ছোবড়ি লো লবড়ি আরো তিল ছাঁই
বাটিতে করে ঘি গুড় দিব খাও টুসালে মাঈ।
টুসু সিনাছেন, গা দুলাছে হাতে তেলের বাটি
নুয়ে নুয়ে চুল ঝাড়ছেন, গলায় সোনার কাঁটি’।।
( তথ্যসুত্র ,,,সংগৃহীত)
Sunday, 13 January 2019
বাংলা মিডিয়াম ছেড়ে সাঁওতালি মিডিয়ামে ভর্তি হচ্ছে বেশিরভাগ ছাত্র ছাত্রী
পূর্ব পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামে জেলার কয়েকটি ব্লকে কিছু স্কুলে সাঁওতালি মিডিয়াম চালু হওয়াতে কিছু অভিভাবক ও ছাত্র-ছাত্রীদের বেশ ভিড় লক্ষ্য করা যায়! তেমনি পশ্চিম মেদিনিপুর শালবনি ব্লকের সীতানাথপুর সুকান্ত স্মৃতি হাই স্কুলেও বেশ ভিড় লক্ষ্য করা যায়। এখানে দূর-দূরান্ত থেকে ছাত্র ছাত্রী সাঁওতালি মিডিয়ামে পড়াশোনা করার জন্য বিভিন্ন স্কুল থেকে বাংলা মিডিয়ামে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে সাঁওতালি মিডিয়ামে ভর্তি হয়। এখানে বিভিন্ন দূর-দূরান্ত থেকে আসা অভিভাবকদেরকে জিজ্ঞাসা করা হয় যে তাদের স্থানীয় পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলিতে বাংলা মিডিয়াম স্কুল থাকা সত্ত্বেও তাদের ছেলে মেয়েকে কেন সাঁওতালি মিডিয়ামে পড়াশোনা করার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে এই সীতানাথপুর সুকান্ত স্মৃতি হাই স্কুলে ভর্তি করার জন্য নিয়ে আসে। উত্তরে অভিভাবকেরা জানায় যে তারা বাংলা মিডিয়ামে পড়াশোনা করে যে রকম ভাবে আজ বেকার হয়ে আছে তারা চায় না তাদের ছেলেমেয় ভবিষ্যতে তাদের মতো বেকার হোক। তারা এটাও জানাই যে বাংলা মিডিয়ামে পড়াশুনা করে অনেক সমস্যার মধ্যে তাদের কে পড়তে হয়েছে কিন্তু বর্তমানে তাদের ছেলে মেয়ে সাঁওতালি মিডিয়াম অর্থাৎ নিজের মাতৃভাষা তে পড়াশোনা করলে তাদের মতো সেই সমস্যাই আর তাদের কে পড়তে হবে না। তাই তারা তাদের ছেলেমেয়েকে নিজেদের মাতৃভাষা সাঁওতালি মিডিয়ামে পড়াশোনা করার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে ভর্তি করার জন্য নিয়ে আসে। এবং ঐদিন বিভিন্ন দূর-দূরান্ত থেকে আসা অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় এবং কিছু ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় যে সাঁওতালি মিডিয়ামে পড়াশোনা করলে তারা অনেকটা পথ এগোতে পারবে কেননা সাঁওতালি তাদের মাতৃভাষা। এবং মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধ সমান।
বীরভূম জেলার সিউড়িতে স্বাধীনতা সংগ্রামী বাজাল এর নামে মেলা

বীরভূম জেলার সিউড়ির বড়বাগানের আব্দারপুর ফুটবল ময়দানে আয়োজিত হতে চলেছে ‘বীরবান্টা বাজাল মেলা-২০১৯’। ১৯শে জানুয়ারি এই মেলা আয়োজিত হবে। আদিবাসী গাঁওতার উদ্যোগে ও আব্দারপুর আদিবাসী সুশার গাঁওতার পরিচালনায় এবং সিউড়ি আব্দারপুর স্পোর্টিং ক্লাবের সহযোগিতায় এই মেলা আয়োজিত হবে।
Tuesday, 8 January 2019
বাংলার উঠতি ফুটবলার বান্দোয়ানের কুচিয়া হাইস্কুলের দশম শ্রেণির আদিবাসী ছাত্রী কাজলি টুডু।
প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে বাংলার হয়ে খেলতে গিয়ে গোল করে নজর কাড়ল বান্দোয়ানের কুচিয়া হাইস্কুলের দশম শ্রেণির আদিবাসী ছাত্রী কাজলি টুডু।
গত বুধবার ১৯/১২/২০১৮ কাজলি টুডুকে সংবর্ধনা জানিয়ে কুচিয়া হাইস্কুল কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করলেন, তার পড়াশোনা চালিয়ে যেতে স্কুল সবরকম ভাবে সাহায্য করবে। স্কুল সূত্রে আরও জানা যায়, ঝাড়খণ্ড ঘেঁষা পচাপানি গ্রামে কাজলির বাড়ি। সেখান থেকে রোজ আড়াই কিলোমিটার পথ উজিয়ে স্কুলে আসে সে। গ্রামে ছেলেদের ফুটবল খেলতে দেখলেও কোনও দিনই সে ভাবে তাদের সঙ্গে খেলা হয়ে ওঠেনি। স্কুলে এসেই ফুটবল খেলা শুরু করে। বছরখানেক হল স্কুলে কন্যাশ্রী ক্লাবের হয়ে ব্লক ভিত্তিক ম্যাচে তার খেলার দক্ষতা সবার নজর টানে। স্কুলের গ্রন্থাগারিক তুহিনশুভ্র পাত্র জানান, স্কুলের কর্মী আদিত্য সহিসকে সঙ্গে নিয়ে তিনি পড়ুয়াদের শরীরচর্চা করান। সেখানেই তাঁরা কাজলির মধ্যে প্রতিভা খুঁজে পান। তাঁর কথায়, ‘‘কাজলির বড় গুণ হল, মিডফিল্ডার হিসাবে বল নিয়ে দুরন্ত গতিতে উঠে আসতে পারে।’’
বান্দোয়ানের বাসিন্দা জেলার অন্যতম ফুটবল কোচ প্রমোদ মাহাতো স্কুল কর্তৃপক্ষের অনুরোধে কাজলিদের প্রশিক্ষণ দিতে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘কাজলির বল নিয়ে ক্ষিপ্রতা নজরে পড়ে। তখনই বুঝেছিলাম এই ছাত্রী নিয়মিত অনুশীলন করলে অনেক দূর যাবে।’’ ফলও মিলতে শুরু করে। সুব্রত কাপের জেলা স্তরের প্রতিযোগিতায় বান্দোয়ানের দল চ্যাম্পিয়ন হয়। বর্ধমানে রাজ্য স্তরের অনূর্ধ্ব ১৭-র খেলায় পুরুলিয়া রানার্স আপ হয়। তবে, বিচারকেরা কাজলিকে বাংলার দলের হয়ে মনোনীত করেন।
পুরুলিয়া জেলা স্কুল ক্রীড়া কমিটির সম্পাদক শান্তিগোপাল মাহাতো বলেন, ‘‘১১-১৩ ডিসেম্বর ত্রিপুরায় জাতীয়স্তরের খেলায় কোয়ার্টার ফাইনালে হরিয়ানার কাছে ২-০ গোলে পরাজিত হয় বাংলা। তার আগে অন্ধ্রপ্রদেশের হয়ে গোল করেছিল কাজলি। এটা কম কৃতিত্বের নয়।’’
সেই সূত্র ধরে স্কুলের প্রধানশিক্ষক শিবশঙ্কর সিং বলেন, ‘‘কাজলি আমাদের স্কুলের নাম উজ্জ্বল করেছে। সে জন্য তার পড়াশোনার যাবতীয় খরচ আমরা বহন করব।’’ এ দিন মেয়ের সঙ্গে গিয়েছিলেন বাবা পাঁচু টুডুও। তিনি বলেন, ‘‘আমার মেয়ের যাবতীয় উত্তরণের মূলে এই স্কুলের শিক্ষকেরা রয়েছেন। তাঁরা পাশে না দাঁড়ালে মেয়ে বাইরে খেলতে যেতে পারত না।’’ বিডিও (বান্দোয়ান) শুভঙ্কর দাসও আশ্বাস দেন, কাজলির পড়াশোনা ও ফুটবলের অনুশীলন চালিয়ে যেতে পঞ্চায়েত সমিতি সব রকম ভাবে সহযোগিতা করবে। পাশে থাকার আশ্বাস দেন বান্দোয়ানের বিধায়ক রাজীব সোরেন, সহ-সভাধিপতি প্রতিমা সোরেন।
কাজলিও এগোতে চায়। কাজলি বলে, ‘‘স্বপ্নেও ফুটবল খেলি। ফুটবলই আমার চারপাশটা বদলে দিয়েছে। ফুটবলকে কখনও ছাড়ব না।’’
সৌজন্য – আনন্দবাজার পত্রিকা, ২০ ডিসেম্বর, ২০১৮।
মারাং গোমকে জয়পাল সিং মুন্ডার প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি।
লিখেছেন – প্রদীপ কুমার হাঁসদা, কেন্দ্রীয় সভাপতি, ভারত দিশম মাঝি মাডোয়া।
০৩ রা জানুয়ারি আদিবাসী সমাজের গর্ব ‘মারাং গোমকে’ জয়পাল সিং মুন্ডার জন্মদিন। আজকের দিনে ১৯০৩ সালে বর্তমান ঝাড়খণ্ড রাজ্যের খুঁটি জেলার টাকরা গ্রামে এক মুন্ডা পরিবারে জন্মগ্রহন করেন জয়পাল সিং মুন্ডা।
স্থানীয় স্কুলে পড়ার সময় খৃষ্টান মিশনারিরা জয়পাল সিং মুন্ডার মেধা লক্ষ্য করেন এবং উচ্চ শিক্ষার জন্য ইংল্যান্ডে নিয়ে যান। ইংল্যান্ডের বিশ্ববিখ্যাত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সেন্ট জন’স কলেজ থেকে ১৯২৬ সালে অর্থনীতি নিয়ে স্নাতক পাস করেন। সেন্ট জন’স কলেজে থাকাকালীন প্রথম ভারতীয় হিসেবে জুনিয়র কমনরুমের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় প্রথম আদিবাসী হিসেবে অক্সফোর্ড ভারতীয় মজলিশ (Oxford Indian Majlis) এর সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। জনপ্রিয় ভারতীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে তৎকালীন সময়ে সি এফ এন্ড্রুজ, অ্যানি বেসেন্ট, লালা লাজপত রায় দের মতন বিখ্যাত ভারতীয়দের সংস্পর্শে আসেন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে জয়পাল সিং মুন্ডার সমসাময়িক ছিলেন স্বতন্ত্র পার্টির নেতা এন জি রাঙ্গা ও অনান্য বিশিষ্ট ভারতীয়রা।
১৯২৭ সালে তৎকালীন ভারতের সর্বোচ্চ সরকারী চাকরি ICS (Indian Civil Service) এ সসন্মানে উত্তীর্ণ হন ও মৌখিক এ সর্বোচ্চ নম্বর পান। জয়পাল সিং মুন্ডা আদিবাসী সমাজের মধ্যে থেকে সর্বপ্রথম ICS (Indian Civil Service) পাস কারী আদিবাসী ছিলেন। জয়পাল সিং মুন্ডার আত্মসন্মান এতই প্রবল ছিল যে আত্মসন্মানের প্রশ্নে ICS (Indian Civil Service) এর মতন লোভনীয় চাকরি থেকে তিনি হেলায় ইস্তফা দিয়েছিলেন। বর্তমান ভারতের ইতিহাস পড়ে আমরা জেনেছি যে নেতাজী সুভাসচন্দ্র বসু দেশের জন্য ICS (Indian Civil Service) এর মতন লোভনীয় চাকরি ছেড়েছিলেন, কিন্তু তিনিই একমাত্র ভারতীয় ছিলেন না। দেশের জন্য ICS (Indian Civil Service) এর মতন লোভনীয় চাকরি ছেড়েছিলেন জয়পাল সিং মুন্ডাও।
জয়পাল সিং মুন্ডার হকি খেলার দক্ষতা দেখে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের হকি দলের নিয়মিত সদস্য নির্বাচিত ছিলেন ও হকি দলের সঙ্গে বিভিন্ন দেশে ভ্রমন করে হকি প্রতিযোগিতায় অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। হকি খেলায় দক্ষতার কারনে জয়পাল সিং মুন্ডা Oxford Blues এর অন্তর্ভুক্ত হয়েছিলেন।
হকি খেলায় দক্ষতার কারনে তৎকালীন সময়ের ভারতের ভাইসরয় জয়পাল সিং মুন্ডাকে অলিম্পিকে ভারতীয় হকি দলের নেতৃত্ব প্রদানের জন্য অনুরোধ জানান। ১৯২৭ সালে তৎকালীন ভারতের সর্বোচ্চ সরকারী চাকরি ICS (Indian Civil Service) এ সসন্মানে উত্তীর্ণ হবার পর জয়পাল সিং মুন্ডাকে দুই বছরের প্রশিক্ষণ নেওয়া বাধ্যতামূলক ছিল। কিন্তু ১৯২৮ সালে অলিম্পিকে ভারতীয় হকি দলের অধিনায়ক হিসেবে নির্বাচিত হবার পর, জয়পাল সিং মুন্ডা নিজের জীবনের কেরিয়ারের চেয়ে ভারতের সন্মান তুলে ধরা বেশি উচিত মনে করেন ও হকি দলের সাথে যোগ দেন, যা তার ICS (Indian Civil Service) চাকরির প্রশিক্ষণে ছেদ টেনে দেয়। অলিম্পিকে সেমিফাইনেল ম্যাচ অবধি ভারতীয় হকি দলকে সফল ভাবে নেতৃত্ব দেন, কিন্তু ICS (Indian Civil Service) এর ফাইনাল পরিক্ষার জন্য অলিম্পিকে হকির ফাইনাল ম্যাচ না খেলেই লন্ডন ফিরে আসেন। সেই বছর ভারত অলিম্পিকে প্রথম জয়ী হয়ে সোনা জেতে। লন্ডনে ফিরে অলিম্পিকের সাফল্যের জন্য জয়পাল সিং মুন্ডাকে খোদ ভারতের ভাইসরয় অভিনন্দন জানান। কিন্তু হকি খেলার জন্য ICS (Indian Civil Service) প্রশিক্ষণের যে সময়টা বাদ গিয়েছিল, তার জন্য পুনরায় জয়পাল সিং মুন্ডাকে প্রশিক্ষণ নিতে বলা হয়। জয়পাল জানান, সমস্ত পরিক্ষায় তিনি সসন্মানে পাস করেছেন, মৌখিকে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছেন, এবং ছুটি তিনি নিয়েছিলেন দেশের হয়ে হকি খেলার জন্য, ব্যক্তিগত আমোদ প্রমোদের জন্য নয়, তাই কোন অবস্থায় তিনি দ্বিতীয়বারের জন্য ICS (Indian Civil Service) প্রশিক্ষণ নেবেন না। জয়পাল সিং মুন্ডা মনে করলেন যে তিনি ভারতীয় বলেই তাঁর সঙ্গে বৈষম্য করছে ব্রিটিশ কতৃপক্ষ, তাই তিনি নিজের আত্মন্সন্মান রক্ষার্থে ICS (Indian Civil Service) চাকরি থেকে ইস্তফা দেওয়াই শ্রেয় মনে করে ইস্তফা দেন।
এর পর দেশবিদেশে বিভিন্ন কোম্পানি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উচ্চ পদে সন্মানিয় সব চাকরি করেন জয়পাল সিং মুন্ডা।
১৯৩৭ সাল নাগাদ ছত্তিসগড়ের রাজকুমার কলেজ, রাইপুরের ভাইস প্রিন্সিপাল হিসেবে ভারতে ফিরে আসেন। ১৯৩৮ সাল নাগাদ কলোনি মন্ত্রী ও রাজস্ব কমিশনার হিসেবে রাজস্থানের দেশীয় রাজ্য বিকানেরে যোগ দেন। পরবর্তীকালে বিকানের রাজ্যের বিদেশ সচিব পদে নির্বাচিত হন। সেই সময়ে ভারতে চলমান স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দিতে ইচ্ছা প্রকাশ করে বিহারে ডাঃ রাজেন্দ্র প্রসাদের সঙ্গে সাদাকাত আশ্রম, পাটনায় দেখা করেন। কিন্তু ডাঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ জয়পাল সিং মুন্ডার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেননি। বিহার রাজ্যের তৎকালীন গভর্নর স্যার মরিস হ্যালেট জয়পাল সিং মুন্ডাকে বিহারের বিধান পরিষদে মনোনীত করতে চাইলেও জয়পাল অস্বীকার করেন।
এই সময়ের কিছু ঘটনাবলি জয়পাল সিং মুন্ডার জীবন, ভারতীয় রাজনীতি ও আদিবাসীদের ভাগ্য পরিবর্তন করল। ভারতীয় কংগ্রেসের নেতৃবৃন্দের কাছে থেকে কোনরকম সাড়া না পেয়ে জয়পাল সিং মুন্ডা রাজনীতিতে যোগ দানের বিষয়ে হতাশ হয়েই বাকি জীবনটা অধ্যাপনা করে কাটিয়ে দেবেন ভেবেছিলেন। কিন্তু সব হিসেব গুলিয়ে দিল ছোটনাগপুর উন্নতি সমাজের (Chotonagpur Unnati Samaj) আদিবাসী ছাত্র নেতারা।
ছোটনাগপুর উন্নতি সমাজের (Chotonagpur Unnati Samaj) আদিবাসী ছাত্র নেতারা ছোটনাগপুর অঞ্চলের আদিবাসীদের উন্নতি সাধনের জন্য পৃথক আদিবাসী রাজ্য বা অঞ্চল গঠনের জন্য ব্রিটিশ সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আন্দোলন করছিলেন, কিন্তু সাফল্য পাচ্ছিলেন না। আন্দোলন আরও জোরদার করতে ছোটনাগপুর উন্নতি সমাজ (Chotonagpur Unnati Samaj) ও আরও অনান্য আদিবাসী সংগঠন কে মিলিয়ে নতুন সংগঠন “আদিবাসী মহাসভা” গঠনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছিল। সেই সময় জয়পাল সিং মুন্ডা ভারতে প্রত্যাবর্তন করেছেন। জয়পাল সিং মুন্ডার সাথে তাঁর সাফল্যের কাহিনীও ভারতে এসেছিল। একজন আদিবাসী হিসেবে এই অভাবনীয় সাফল্য আদিবাসী সমাজে জয়পাল সিং মুন্ডাকে কিংবদন্তীতে রূপান্তরিত করেছিল। “আদিবাসী মহাসভা”-র নেতৃবৃন্দ আদিবাসী সমাজের জীবন্ত কিংবদন্তী জয়পাল সিং মুন্ডাকেই “আদিবাসী মহাসভা”-র নেতৃত্ব গ্রহণ করে আদিবাসীদের স্বার্থ সুরক্ষিত করার আহ্বান জানালেন।
ছোটনাগপুর উন্নতি সমাজের আদিবাসী ছাত্র নেতাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে “আদিবাসী মহাসভা”-র নেতৃত্ব নিজের হাতে তুলে নিতে সম্মত হলেন জয়পাল সিং মুন্ডা। কৃতজ্ঞ আদিবাসী সমাজ জয়পাল সিং মুন্ডাকে “সর্বোচ্চ নেতা” তথা “মারাং গোমকে” উপাধিতে ভূষিত করেন। পরবর্তীকাল ১০ বছরে জয়পাল সিং মুন্ডার নেতৃত্বে “আদিবাসী মহাসভা” ছোটনাগপুর অঞ্চলের আদিবাসীদের সুসংগঠিত করে জোরদার আদিবাসী আন্দোলন গড়ে তোলে। জয়পাল সিং মুন্ডার নেতৃত্বে আদিবাসী মহাসভা সাঁওতাল পরগনা ও ছোটনাগপুর অঞ্চল নিয়ে একটি পৃথক আদিবাসী রাজ্য গঠনের দাবি তুলল।
এর মধ্যে ১৯৪৭ সালের ১৫ ই আগস্ট ভারতবর্ষ স্বাধীনতা লাভ করে ও নতুন ভারতবর্ষ পরিচালনার জন্য নতুন সংবিধান রচনার দরকার পড়ে। ভারতের সংবিধান রচনা সভায় আদিবাসীদের হয়ে সওয়াল করতে ৫ জন আদিবাসী প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন, তাঁরা হলেন – ১) জয়পাল সিং মুন্ডা (ঝাড়খণ্ড রাজ্য), ২) বনিফেস লাকড়া (ঝাড়খণ্ড রাজ্য), ৩) রাম প্রকাশ পটাই (ছত্তিসগড় রাজ্য), ৪) মাংরু উকে (মধ্যপ্রদেশ রাজ্য) ও ৫) ধরণীধর বসুমাতারি (আসাম রাজ্য)। এদের মধ্যে সবথেকে জোরদার ছিল মারাং গোমকে জয়পাল সিং মুন্ডার সওয়াল।
সংবিধান সভা রচনার প্রথম দিকে আদিবাসীদের ভাগ্য নিয়ে কারোর কোন মাথা ব্যথা ছিল না। জয়পাল সিং মুন্ডাকেও কংগ্রেস নেতৃত্ব বা অনান্য জাতীয় দলের নেতৃত্বরা গুরুত্ব দিচ্ছিলেন না। সংবিধান রচনা সভায় ১৭ টি কমিটি গঠন করা হয়েছিল, কিন্তু কোনটাতেই জয়পাল সিং মুন্ডাকে বা কোন আদিবাসী প্রতিনিধিকে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়নি।
আদিবাসী বিষয়ক প্রায় ৫ টি কমিটি ছিল যথাক্রমে – ১) Advisory Committee on Fundamental Rights, Minorities and Tribal and Excluded Areas, চেয়ারম্যান ছিলেন মাননীয় Vallavbai Patel, ২) Minorities Sub-committee, চেয়ারম্যান ছিলেন মাননীয় HC Mookherjee, ৩) Fundamental Rights Sub-Committee, চেয়ারম্যান ছিলেন মাননীয়া JB Kripalani, ৪) North-East Frontier Tribal Areas and Assam, Excluded and Partially Excluded Areas Sub-Committee, চেয়ারম্যান ছিলেন মাননীয় Gopinath Bardoloi, ও ৫) Excluded and Partially Excluded Area (other than those in Assam) Sub-Committee, চেয়ারম্যান ছিলেন মাননীয় AV Thakur।
কিন্তু জয়পাল সিং মুন্ডা আদিবাসী স্বার্থ রক্ষার্থে বারে বারেই জোরদার সওয়াল করে গিয়েছেন। তার প্রমাণ আমরা পায় সংবিধান রচনা সভায় বিভিন্ন বিষয়ে জয়পাল সিং মুন্ডার বক্তব্য থেকে (Debates of Jaipal Singh Munda in Constituent Assembly of India)।
প্রখ্যাত ঐতিহাসিক রামচন্দ্র গুহের লিখিত বই “India After Gandhi” থেকে জানা যায় যে সংখ্যালঘু অধিকার সংক্রান্ত প্রথম প্রকাশিত রিপোর্টে শুধুমাত্র দলিতদের জন্য সংরক্ষনের সুবিধের সুপারিশ করা হয়েছিল। সেই রিপোর্টে মুসলিমদের জন্য সংরক্ষণের সুবিধে খারিজ করা হয়েছিল, আর আদিবাসীদের বিষয়ে কোন উচ্চ বাচ্যই করা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে জয়পাল সিং মুন্ডা জোরদার বিরোধিতা করেন ও আদিবাসীদের জন্যেও সংরক্ষণের সুবিধে দাবি করেন। জয়পাল সিং মুন্ডার বিরোধিতার কারনে AV Thakur এর নেতৃত্বে একটি সাব-কমিটি আদিবাসীদের বিষয়টি খতিয়ে দেখে এবং পরবর্তীকালে আদিবাসীদের জন্যেও Scheduled Caste এর মতন সংরক্ষণের সুবিধের সুপারিশ করে।
সংবিধান সভায় জয়পাল সিং মুন্ডা আদিবাসীদের আত্মপরিচিতি প্রতিষ্ঠা করতে জোরদার সওয়াল করেছিলেন। জয়পাল সিং মুন্ডা চেয়েছিলেন ভারতীয় সংবিধানে আদিবাসীদের পরিচিতি হোক “আদিবাসী” হিসেবেই, কিন্তু অধিকাংশ সদস্যের আপত্তিতে আদিবাসীদের ভারতীয় সংবিধান অভিহিত করা হল Scheduled Tribe বা তপশিলী জনজাতি বা তপশিলী উপজাতি হিসেবে।
সংবিধান সভায় আদিবাসীদের স্বার্থ রক্ষার্থে জয়পাল সিং মুন্ডা অনেকগুলি দাবি তুলেছিলেন, কিন্তু প্রায় সবগুলিই খারিজ হয়। তাই প্রথম সাধারণ নির্বাচনের আগে জয়পাল সিং মুন্ডা “আদিবাসী মহাসভা”-কে পুরোপুরি রাজনৈতিক সংগঠনে রূপান্তরিত করতে মনস্থির করলেন। জয়পাল সিং মুন্ডা বুঝতে পেরেছিলেন যে রাজনৈতিক ভাবে আদিবাসীদের সুসংগঠিত করতে না পারলে আদিবাসীদের স্বার্থ রক্ষা করা যাবে না। ১৯৪৯ সালের ৩১ শে ডিসেম্বর ও ১৯৫০ সালে ১ লা জানুয়ারি “আদিবাসী মহাসভা”-র অধিবেশনে সংগঠনের নতুন নামকরন হল “ঝাড়খণ্ড পার্টি” রুপে। (একটি সুত্র থেকে জানা যায় যে ৫ ই মার্চ, ১৯৪৯ এ ঝাড়খণ্ড পার্টি গঠিত হয়েছিল)। ১৯৫২ সালের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে জয়পাল সিং মুন্ডার নেতৃত্বে ঝাড়খণ্ড পার্টি আদিবাসীদের জন্য পৃথক রাজ্য “ঝাড়খণ্ড রাজ্য” গঠনের জন্য “অলগ প্রান্ত” এর ডাক দিয়ে ব্যাপক নির্বাচনী সাফল্য লাভ করে। লোকসভায় ৩ টি আসন ও বিহার বিধানসভায় ৩২ টি আসন জয়লাভ করে সমস্ত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের চমকে দেয় ঝাড়খণ্ড পার্টি। বিহার বিধানসভায় প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবে স্বীকৃতি পায় ঝাড়খণ্ড পার্টি।
প্রথম দিকে নির্বাচনী সাফল্য লাভ করলেও আদিবাসীদের জন্য পৃথক রাজ্যের দাবি আদায় করতে না পারায় ঝাড়খণ্ড পার্টির জনপ্রিয়তা কমতে থাকে ও নির্বাচনে ব্যর্থতার সম্মুখীন হতে হয়। হতাশ জয়পাল সিং মুন্ডা ১৯৬৩ সালে ঝাড়খণ্ড পার্টিকে কংগ্রেস দলের সাথে মিলিয়ে দিলে আদিবাসী জনতা জয়পাল সিং মুন্ডার ওপর বিরুপ হয় ও জনপ্রিয়তা হাস্র পায়। ১৯৭০ সালের ২০ শে মার্চ ভগ্ন হৃদয়ে প্রায় লোকচক্ষুর আড়ালে আদিবাসীদের কিংবদন্তী নায়ক মারা যান।
তৎকালীন সময়ের রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক, ঐতিহাসিকরা জয়পাল সিং মুন্ডার সঠিক মূল্যায়ন করতে পারেননি, আজও সঠিক ভাবে মুল্যায়ন হচ্ছে না। কিন্তু বর্তমানের এই ডিজিটাল যুগে সত্য কে লুকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। আজ যখন জয়পাল সিং মুন্ডা সম্পর্কিত দলিল গুলি একে একে বেরিয়ে আসছে, সাধারণ মানুষ জানতে পারছে, তখন বোঝা যাচ্ছে যে জয়পাল সিং মুন্ডা কত বড় মাপের মানুষ ছিলেন। ইতিহাস শুধু নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোসের কথা আমাদের জানিয়েছে, যিনি দেশের সেবার জন্য তৎকালীন সময়ের ICS (Indian Civil Service) এর মতন লোভনীয় চাকরি থেকে হেলায় ইস্তফা দিয়েছিলেন। কিন্তু ইতিহাস জয়পাল সিং মুন্ডার কথা লেখেনি। জয়পাল সিং মুন্ডাও দেশের সেবার জন্য তৎকালীন সময়ের ICS (Indian Civil Service) এর মতন লোভনীয় চাকরি থেকে হেলায় ইস্তফা দিয়েছিলেন। আজ সত্যের আলোকে সকলের জানা উচিত যে ভারতীয় সংবিধান রচনা সভায় আদিবাসীদের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য জয়পাল সিং মুন্ডার মতন কিংবদন্তী উপস্থিত ছিলেন। আদিবাসীদের সংরক্ষণের সুযোগ সুবিধে প্রদানের ক্ষেত্রে জয়পাল সিং মুন্ডার অবদান কারোর পক্ষে উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। আজ যখন বিভিন্ন আদিবাসী সংগঠন “আদিবাসী” শব্দটিকে নিজেদের পরিচিতি হিসেবে সংবিধান অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আন্দোলন চালাচ্ছেন, তখন আমরা জানতে পারছি যে ১৯৪৭ সালেই ভারতীয় সংবিধান রচনার সময় জয়পাল সিং মুন্ডা এই দাবি জোরদার ভাবে উত্থাপন করেছিলেন। আজ যখন সারা দেশ জুড়ে ভারতীয় সংবিধানের পঞ্চম ও ষষ্ঠ তপশীল নিয়ে নিজেদের অধিকার প্রচেষ্টার জন্য আন্দোলন চালাছেন বিভিন্ন আদিবাসী সংগঠন, তখন সংবিধান রচনা সভায় পঞ্চম ও ষষ্ঠ তপশীল নিয়ে জয়পাল সিং মুন্ডার সওয়াল আদিবাসীদের অনুপ্রেরণা জাগায়। জয়পাল সিং মুন্ডা আদিবাসীদের জন্য পৃথক রাজ্য “ঝাড়খণ্ড রাজ্য” গঠনের স্বপ্ন দেখেছিলেন। ২০০০ সালে “খণ্ডিত ঝাড়খণ্ড রাজ্য” গঠিত হয়ে জয়পাল সিং মুন্ডার স্বপ্নকে ব্যঙ্গ করেছে।
আদিবাসী কিংবদন্তী মারাং গোমকে জয়পাল সিং মুন্ডা আজও যথাযথ সন্মান পাননি। “ভারত রত্ন” সন্মান পাবার যোগ্য দাবিদার ছিলেন জয়পাল সিং মুন্ডা। কিন্তু ভারত সরকার জয়পাল সিং মুন্ডাকে এই সন্মান দেবার প্রয়োজন বোধ করেননি ও আদিবাসী সংগঠনগুলিও এই দাবি জোরদার ভাবে তুলতে পারেনি। কেন্দ্রীয় সরকার ও মহারাষ্ট্র রাজ্য সরকার যেভাবে বাবা সাহেব আম্বেদকরের চিন্তা ধারা, জীবনী, বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত বাবা সাহেব আম্বেদকরের লেখা, রচনাবলী প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন সময়ে, সেটা জয়পাল সিং মুন্ডার ক্ষেত্রে হয়নি। কেন্দ্রীয় সরকার ও বর্তমান ঝাড়খণ্ড রাজ্য সরকার জয়পাল সিং মুন্ডার বিভিন্ন লেখা, বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখা, রচনাবলী, জীবনী প্রকাশ করার কোন উদ্যোগ এখন পর্যন্ত জানা নেই। কেন্দ্রীয় সরকার বাবা সাহেব আম্বেদকরের চিন্তা ধারা ছড়িয়ে দিতে Ambedkar Foundation (http://ambedkarfoundation.nic.in/html/index.html) গঠন করেছে, কিন্তু জয়পাল সিং মুন্ডার ক্ষেত্রে সেইরকম কোন উদ্যোগ নেই। নিদেনপক্ষে জয়পাল সিং মুন্ডার নামাঙ্কিত ডাক টিকিট ভারত সরকার প্রকাশ করে সন্মান প্রদর্শন করতে পারত, কিন্তু তাও করেনি। বর্তমান প্রজন্মকে জয়পাল সিং মুন্ডার মতন কিংবদন্তীকে পরিচিত করাতে জয়পাল সিং মুন্ডার জীবনী, সংগ্রাম, ঝাড়খণ্ড আন্দোলনের কথা, ভারতীয় সংবিধান রচনা সভায় জয়পাল সিং মুন্ডার বক্তব্য, বিস্তারিত ভাবে স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করা দরকার, কিন্তু সেইরকম কোন উদ্যোগ নেই। জয়পাল সিং মুন্ডার জীবনী, সংগ্রাম, ঝাড়খণ্ড আন্দোলনের কথা, ভারতীয় সংবিধান রচনা সভায় জয়পাল সিং মুন্ডার বক্তব্য নিয়ে তরুন গবেষকদের উৎসাহ দিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (University Grants Commission – UGC) এর পক্ষ থেকে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া উচিত।
তবেই হয়ত আগামি দিনে আদিবাসী কিংবদন্তী মারাং গোমকে জয়পাল সিং মুন্ডার যথাযথ সন্মান ও মুল্যায়ন সম্ভব হবে।
Subscribe to:
Posts (Atom)
বীরভূম জেলার সিউড়িতে স্বাধীনতা সংগ্রামী বাজাল এর নামে মেলা
বীরভূম জেলার সিউড়ির বড়বাগানের আব্দারপুর ফুটবল ময়দানে আয়োজিত হতে চলেছে ‘বীরবান্টা বাজাল মেলা-২০১৯’। ১৯শে জানুয়ারি এই মেলা আয়োজিত...

-
বিশ্বজুড়ে ক্রমশ বেড়েই চলেছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। করোনা ভাইরাস থাবা বসিয়েছে পুরুলিয়াতেও। COVID-19 প্রতিরোধের উপায় খুঁজতে কার্যত...
-
জিতুর রক্তে রাঙা সাঁওতাল-রাজের গড় আদিনা মসজিদ চন্দ্রশেখর সিধো-কানু-র বিদ্রোহ ‘দামিনে কোহ’-র অনেক পরে মালদার বুকে জ্বলে উঠেছিল সাঁওতাল...
-
সোহরায় আদিবাসী জনগোষ্ঠি সাঁওতালদের প্রধান উৎসব সহরায়। সহরায় উৎসব হয়ে থাকে কার্তিক মাসে। তাই সাঁওতালি বর্ষপুঞ্জিতে ...
-
সদ্য সমাপ্ত সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় পাশ করে নজির গড়লেন কেরলের ওয়ানারের বছর বাইশের যুবতী শ্রীধন্যা সুরেশ। কেরল থেকে প্রথম আদিবাসী মহিলা ...
-
হাতি লেকান সারি সহরায়.. সেটের আকান দাই না... দেসে দাই না, দেসে দাই না.. আতাং দারাম মেম ৷ দেসে দাই না,লটা দাঃ...